১৬ বাণিজ্যের নীতি: কাফেরদের কাছে যুদ্ধ সরঞ্জাম বিক্রি নিষেধ
মতন: وَلَمْ نَبِعْ سِلَاحًا مِنْهُمْ – তাদের কাছে কোনো অস্ত্র বিক্রি করবো না।
শরাহ: ‘বিক্রি করবো না’ বলতে শুধু বিক্রি না করা উদ্দেশ্য না; উদ্দেশ্য: কোনোভাবেই যেন তাদের হাতে না যায়- বিক্রির মাধ্যমেই হোক, যেকোনোভাবেই হোক। কাজেই বিনামূল্যে উপহার হিসেবে দিলে যে নাজায়েয হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।[1]
এমনিভাবে ‘অস্ত্র’ বলতে শুধু অস্ত্র উদ্দেশ্য না; উদ্দেশ্য: যা যুদ্ধে কাজে আসে। এমনকি রেশমের কাপড় বিক্রি করাও ফুকাহায়ে কেরাম নাজায়েয বলেছেন। কারণ, এর দ্বারা যুদ্ধের পতাকা বানানো হতো। অতএব, সব ধরনের অস্ত্রপাতি ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।
এমনিভাবে সরাসরি যুদ্ধাস্ত্র বা যুদ্ধ সরঞ্জাম নয় কিন্তু যুদ্ধের সরঞ্জাম তৈরিতে লাগে- এমন জিনিসও নাজায়েয। এ হিসেবে ফুকাহায়ে কেরাম লোহা বিক্রি নাজায়েয বলেছেন, যেহেতু তখনকার ব্যবহৃত ঢাল তলোয়ার বর্শা বর্ম ইত্যাদি যুদ্ধাস্ত্র লোহা দিয়ে তৈরি হতো।
ঘোড়া যুদ্ধে ব্যবহৃত হতো বলে ঘোড়ারও একই বিধান বলেছেন।[2]
মোটকথা যেসব জিনিস মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে, কাফেরদের মদদ যোগাবে- সেগুলো নাজায়েয।
এই মূলনীতির আলোকে বর্তমান আধুনিক টেকনোলজির যামানায় কোন কোন বস্তু কাফেরদের কাছে বিক্রি করা জায়েয হবে আর কোন কোনটি নাজায়েয হবে তা নির্ধারণ করা যাবে।
যেসব বস্তু স্বাভাবিক সময়ে বিক্রি করা যায়, বিশেষ মূহুর্তে যখন সেগুলো কাফেরদের মদদ যোগায় এবং মুসলিমদের দুর্বল করে, তখন সেসব স্বাভাবিক জিনিসও বিক্রি করা নাজায়েয। এ হিসেবে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চলাবস্থায় খাদ্য-পানীয় জাতীয় সাধারণ জিনিসপত্র বিক্রি করাও নাজায়েয। এ সময়ে তাদেরকে আমরা যত বেশি রসদ সংকটে ফেলতে পারবো, তারা তত বেশি দুর্বল হবে এবং আমাদের বিজয় তত ত্বরান্বিত হবে।[3]
আমরা যেকোনো জিনিসই কাফেরদের কাছে বিক্রি করি না কেন তা দ্বারা তাদের কিছু না কিছু উপকার হবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তাকাতে গেলে কাফেরদের সাথে সব ধরনের বেচাকেনাই নাজায়েয হতো। তবে তাদের উপকারের পাশাপাশি আমাদের উপকারের বিষয়টিও আছে। তাই শরীয়ত তাদের সাথে বেচাকেনা, লেনদেন, মুআমালা নিষিদ্ধ করেনি। যেসব জিনিস তাদের হাতে গেলে তাদের মদদ হবে মুসলিমদের ক্ষতি হবে শুধু সেগুলোর লেনদেন নিষিদ্ধ, এছাড়া অন্যান্য জিনিস জায়েয।[4]
কাফেরদের সাথে বাণিজ্যের ভিত্তি হবে মুসলিমদের স্বার্থ। মুসলিমদের স্বার্থবিরোধী হয় এমন সব জিনিসের বেচাকেনা নিষিদ্ধ। খাদ্যদ্রব্য পোশাকাশাক ইত্যাদি সাধারণ জিনিসপত্রের বেলায়ও একই নীতি। যখন এগুলো বিক্রি করে দিলে মুসলিমদের সংকট দেখা দিবে কিংবা বিশেষ মূহুর্তে যখন এগুলো কাফেরদের রসদ হিসেবে ব্যবহার হবে, তখন এসব সাধারণ জিনিসপত্র বিক্রি করাও নাজায়েয।[5]
বর্তমান মুসলিম নামধারী তাগুত শাসকগোষ্ঠী সব দিক দিয়ে কাফেরদের সহযোগিতা আর মুসলিমদের দুর্বল করে যাচ্ছে। মুসলিমদের অর্থ-সম্পদগুলো কাফেরদের কাছে পাচার করছে। এক বোতল পেপসির দামে এক বোতল পেট্রোল বিক্রির মতো দুঃখজনক দৃশ্যও দেখতে হচ্ছে সরাসরি হারামাইন শরীফাইনের দেশে। এই তেল দিয়ে কাফেরদের বিমানগুলো ফিলিস্তিনের মুসলিমদের উপর বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে। দেশের চামড়া শিল্প ধ্বংস করে কাফেরদের থেকে চড়া দামে চামড়াজাত দ্রব্য আমদানী করে দেশকে পঙ্গুত্ব ও ডলারশূন্যতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের ইলিশ আমাদের খেতে না দিয়ে প্রভুদের পূজায় উপহার দিয়ে খুশি করছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি এদের হাকিকত বুঝতে পারবো ততই আমাদের কল্যাণ। হে আল্লাহ, তুমি মুসলিমদের হুঁশ দান কর।
বি.দ্র. কাফেরদের সাথে বাণিজ্যের উপর্যুক্ত নীতি তাদের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি না থাকার সময়ে যেমন প্রযোজ্য, চুক্তি থাকলেও প্রযোজ্য। কাফের সর্বাবস্থায় মুসলিমদের শত্রু। তাদের সাথে কৃত চুক্তির কোনো বিশ্বাস নাই, যেকোনো সময় গাদ্দারি করে তারা চুক্তি ভেঙ্গে দিতে পারে। কিংবা মেয়াদ শেষ হলে চুক্তি এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের সাথে আমাদের মোকাবেলায় জড়াতে হবে। তাই তাদের সাথে এমন কোনো বাণিজ্য করা যাবে না যার দ্বারা তারা মদদ পাবে আর মুসলিমরা দুর্বল হবে।[6]
ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলা আ’লাম।
***
[1] الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 134): (قوله ولم نبع إلخ) أراد به التمليك بوجه كالهبة قهستاني، بل الظاهر أن الإيجار والإعارة كذلك أفاده الحموي؛ لأن العلة منع ما فيه تقوية على قتالنا كما أفاده كلام المصنف. اهـ
[2] البحر الرائق شرح كنز الدقائق ومنحة الخالق وتكملة الطوري (5/ 86): أراد من السلاح ما يكون سببا لتقويتهم على الحرب فدخل الكراع، والحديد؛ لأنه أصل السلاح وهو ظاهر الرواية، والكراع الخيل ودخل الرقيق؛ لأنهم يتوالدون عندهم فيعودون حربا علينا مسلما كان الرقيق أو كافرا. اهـ
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 134): (قوله كحديد) وكسلاح مما استعمل للحرب، ولو صغيرا كالإبرة، وكذا ما في حكمه من الحرير والديباج فإن تمليكه مكروه؛ لأنه يصنع منه الراية قهستاني. اهـ
[3] شرح السير الكبير (ص: 1243): ثُمَّ هَذَا الْحُكْمُ إذَا لَمْ يُحَاصِرُوا مِنْ حُصُونِهِمْ، فَأَمَّا إذَا حَاصَرُوا حِصْنًا مِنْ حُصُونِهِمْ فَلَا يَنْبَغِي لَهُمْ أَنْ يَبِيعُوا مِنْ أَهْلِ الْحِصْنِ طَعَامًا وَلَا شَرَابًا وَلَا شَيْئًا يُقَوِّيهِمْ عَلَى الْمُقَامِ. لِأَنَّهُمْ إنَّمَا حَاصَرُوهُمْ لِيَنْفُذَ طَعَامُهُمْ وَشَرَابُهُمْ حَتَّى يُعْطُوا بِأَيْدِيهِمْ وَيَخْرُجُوا عَلَى حُكْمِ اللَّهِ تَعَالَى، فَفِي بَيْعِ الطَّعَامِ وَغَيْرِهِ مِنْهُمْ اكْتِسَابُ سَبَبِ تَقْوِيَتِهِمْ عَلَى الْمُقَامِ فِي حِصْنِهِمْ، ... وَمَنْ فَعَلَهُ فَعَلِمَ بِهِ الْإِمَامُ أَدَّبَهُ عَلَى ذَلِكَ لِارْتِكَابِهِ مَا لَا يَحِلُّ. اهـ
[4] الهداية في شرح بداية المبتدي المكتبة الإسلامية (2/ 139): ولا ينبغي أن يباع السلاح من أهل الحرب ... لأن فيه تقويتهم على قتال المسلمين فيمنع من ذلك وكذا الكراع لما بينا وكذا الحديد لأنه أصل السلاح ... وهذا هو القياس في الطعام والثوب، إلا أنا عرفناه بالنص. اهـ
[5] الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 134): لا يخفى أن هذا إذا لم يكن بالمسلمين حاجة إلى الطعام فلو احتاجوه لم يجز. اهـ
[6] البحر الرائق شرح كنز الدقائق ومنحة الخالق وتكملة الطوري (5/ 87): وشمل كلامه ما قبل الموادعة وما بعدها؛ لأنها على شرف الانقضاء أو النقض. اهـ
Comment