অাসীরদের প্রতি করণীয় || Al Burqan Media
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি আসমান ও জমিনের রব। সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক নাবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর, তার পরিবার এবং তার সাহাবীগণের উপর এবং রহমত বর্ষিত হোক কিয়ামাতের আগ পর্যন্ত আগত সকল ঈমানদারের উপর। অতঃপর, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনি ভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না । (সূরা আল ইমরান : ১০২)
তিঁনি আরও বলেন,
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا ، إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا
অর্থ: তারা আল্লাহর ভালবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। (সূরা আল-ইনসান : ৮-৯)
আবু মূসা আল আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা বন্দীকে মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে আহার দান কর এবং রুগীর সেবা-শুশ্রুষা কর। (সহিহ বুখারি, অধ্যায়ঃ আল জিহাদ ওয়াস সিয়ার, হাদীস নং-২৮৮১)
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা!
ঈমান এবং কুফরের যুদ্ধ চিরন্তন। এ যুদ্ধ ততদিন চলবে যতদিন না আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমিনে পরির্পূণ কায়েম হয় এবং সকল প্রকার কুফর দূরীভূত হয়। উপমহাদেশের এ অঞ্চলে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য যে সকল ভাইয়েরা নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে এই জিহাদি কাফেলায় শরীক হয়েছিলেন তাদের অনেকেই আজ ত্বাগুতের জিন্দান খানায় বন্দি হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তাদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে, অনেকের উপর চালানো হয়েছে নির্যাতনের স্টিম রোলার, এখনও চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন যা এ স্বল্প পরিসরে উপস্থাপন করা অসম্ভব।
অনেককে দীর্ঘ কারাভোগের পর ত্বাগুতের প্রহসনমূলক বিচারে মৃত্যুদন্ডাদেশের মাধ্যমে শহীদ করে দেয়া হয়েছে, আবার অনেকের এখন তা কার্যকর করার ঘৃণ্য পরিকল্পনা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু একটাই তারা চেয়েছেন আল্লাহর দ্বীনের বিজয়। তারাতো আমাদেরই ভাই, আমরা কি করে তাদেরকে ভূলে থাকতে পারি! কি করে ভূলে থাকতে পারি ওই সকল মাযলুম বোনদেরকে যারা এ অঞ্চলের ত্বাগুতের বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে ত্বাগুতের টর্চার সেল রূপী কারাগারে বন্দি রয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছেন।
অথচ আমরা মুক্ত অবস্থায় আমাদের পরিবার পরিজনের নিকট অবস্থান করে আরাম-আয়েশে সময় কাটাচ্ছি। সুস্বাদু ও মুখরোচক পানাহারে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি। কি জবাব দেবো আল্লাহর কাছে! যদি আমরা ওই মাযলুমদের আর্তনাদে তাদের উদ্ধারে এগিয়ে না যাই। যুলমের চার দেয়ালের মাঝে অন্তরীণ থাকার তাদের কষ্টের আহাজারি তো ঔ দেয়াল ভেদ করে আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে না। কিন্তু মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের অসহায়ত্ব জানেন, মাযলুমের আর্তি শুনে থাকেন, তারা তো ওই সকল অসহায় মানুষ যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ ও সর্তক হতে বলেছেন; নিতে বলেছেন যুদ্ধের প্রস্তুতি। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا
অর্থঃ তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছো না ওই সকল অসহায় পুরুষ, নারী এবং শিশুর জন্য, যারা বলছে হে আমাদের রব! আমারদেরকে এই যালিম অধ্যুষিত এলাকা থেকে বের করে নিয়ে যান। আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন ওয়ালী নিয়োগ করে দিন। এবং আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী নিয়োগ করে দিন। (সূরা নিসা : ৭৫)
সুতরাং এই সকল মাযলুম বন্দি মুসলিমদের সাহায্যে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে মুক্ত করতে একদিকে যেমন আমাদেরকে আল্লাহর রাহে অস্ত্র ধরতে হবে, নিতে হবে সামরিক প্রস্তুতি। অন্যদিকে ব্যয় করতে হবে আমাদের ধন সম্পদ, আমাদের প্রিয় জিনিস। এটাই আল্লাহর হুকুম। নতুবা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে আমাদের জবাব দেয়ার মতো কোন ওজর থাকবে না। সমগ্র মানবজাতির সামনে লজ্জিত ও অপমানিত হতে হবে। পাকড়াও হতে হবে কঠিন শাস্তিতে। আমরা আল্লাহর সেই শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই যা তিনি তার হুকুম অমান্যকারী বান্দাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল বান্দারা যথার্থই আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করেছেন। আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন অনুসরণীয় অনুপম আদর্শ। তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সাঃ) হুকুম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, আমাদের আলিমগণ এই মত প্রকাশ করেছেন যে, মুক্তিপণ দিয়ে বন্দীদের মুক্ত করা হচ্ছে ওয়াজিব, যদিওবা ইসলামী কোষাগারে এক দিরহাম পরিমাণ সঞ্চয় অবশিষ্ট না থাকে। ইব্ন খুওয়াইয মিনদাদ বন্দী মুক্তির আবশ্যকতা বিষয়ক কুরআনে বর্ণিত দিক নির্দেশনা থেকে এটি নিশ্চিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং বন্দী মুক্তি করেছেন এবং অপরকেও অনুরূপ করতে আদেশ করেছেন, পরবর্তী কালের মুসলিমগণও তদ্রুপ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এ বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে যে, ইসলামী কোষাগার হতে মুক্তিপণের অর্থ নিয়ে হলেও বন্দীদের মুক্ত করা হচ্ছে একটি আবশ্যক দায়িত্ব, যদি তা সম্ভবপর না হয়, তবে সকলের উপর তা ফরযে কিফায়া হয়ে দাঁড়ায়; অর্থাৎ কেউ আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে এবং সকলে গুনাহ মুক্ত হবে। (কুরতুবী, ২/২৩)
ইমাম ইবন আল আরাবী (রহ.) বলেন, ইমাম মালিক বলেছেন সমস্ত মুসলিমের উপর ওয়াজিব হচ্ছে তাদের বন্দিদের মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করা যদিও এতে সকল অর্থ ব্যয় হয়। (আহকামুল কুরআন, ১/১০৭)
ইমাম আল হাফিয ইবন হাযর আল আসকালানী (রহ.) বলেন, ‘বন্দী মুক্তির অধ্যায়’-এ ইমাম বুখারির আলোচনা ও বক্তব্য কাফিরদের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তিপণ বা যেকোন উপায়ে মুক্তির ব্যবস্থার কথা নির্দেশ করে..। ইবনে বাত্তাল বলেন যে, বন্দী মুক্ত করা সমষ্টিগত ভাবে ফরয। অধিকাংশ আলেমগণ অনুরূপ মত পোষণ করেন। (ফাতহুল বারী, ৬/১৬৭)
ইমাম আবু বকর আল জাসসাস (রহ.) বলেন, আমাদের উপর অর্পিত ওয়াজিব দায়িত্ব সমূহের মধ্যে অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে, মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করা। আল হাজ্জাজ বিন আরতাহ্ এ বিধান সম্পর্কে তার পিতামহ হতে বর্ণনা করেছেন যে, “রাসূলুল্লাহ্ ﷺ মুহাজিরীন ও আনসারদের উদ্দেশ্যে রচিত একটি চিঠিতে শত্রু সৈন্যদের বন্দী করতে এবং মুসলিমদের জন্য উপযুক্ত সম্মান বিবেচনা ও শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে মুক্তিপণের বিনিময়ে বন্দী মুক্ত করতে আদেশ করেন।”
আবু মূসা আল-আশ’আরী (রা.) এবং শাক্বীক ইবনে সালামার বরাত দিয়ে মানসুর বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “ক্ষুধার্তকে খাওয়াও, সালামের ব্যাপক প্রচলন কর, অসুস্থকে দেখতে যাও এবং বন্দীকে মুক্ত কর।” বন্দীদেরকে মুক্ত করার জন্য এই দু’টি হাদীস হচ্ছে দলীল স্বরূপ, কারণ এর মধ্যে আরবী যে শব্দ “আল-আনী” ব্যবহার করা হয়েছে তা বন্দীদের দিকেই ইঙ্গিত দেয়। ইমরান বিন হুসাইন এবং সালামাহ্ বিন আল-আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, “রাসূলুল্লাহ ﷺ মুসলিম বন্দীদের মুক্তিপণ হিসেবে মুশরিকদের দিয়েছিলেন। (আহ্কামুল কুরআন-১/৪৮)।
ইমাম ইবন জুযাই আল মালিকী (র.) বলেনঃ মুসলিম বন্দীদেরকে কাফেরদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করা হচ্ছে আবশ্যক। তবে, মুসলিমরা যদি তা করতে সক্ষম না হয়, তাহলে মুক্তিপণ দিয়ে হলেও তাদেরকে মুক্ত করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। স্বচ্ছল ব্যক্তি নিজের এবং গরীব ব্যক্তির জন্য ইসলামী কোষাগার হতে অর্থ নিয়ে ইমাম মুক্তিপণ আদায় করবেন। যদি তাতেও অর্থের সংকুলান না হয়, তবে সমস্ত মুসলিমের সম্পদ হতে মুক্তিপণ আদায় করা আবশ্যক, যদিও বা তাতে যাবতীয় সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায়। (কিতাব ক্বাওয়ানীন আল আহ্কাম আশ শারীআহ্, পৃষ্ঠা নং ২/৪)।
আবু গালিব হাম্মাম বিন আল মুহাযিব আল মা’রি তার ইতিহাসগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন সাইফ আদ-দৌলা তার সমস্ত কোষাগার খালি করে অর্থ খরচ করেছেন রোমানদের হাত থেকে মুসলিম বন্দিদের মুক্তিপণ হিসেবে। আরো উল্লেখ করেছেন আবুল আব্বাস আল খুযাই, শাম দেশের যিনি গভর্ণর ছিলেন তিনি তুর্কিদের থেকে মুসলিম বন্দিদের মুক্ত করার জন্য সেই আমলে এক মিলিয়ন দিরহাম পর্যন্ত ব্যয় করেছেন। আর হ্যাঁ, এজন্যেই খলিফা উমার বিন আবদুল আযীয (রহ.) এর মতো আল্লাহ ভীরু ব্যক্তি তার মন্ত্রীকে এই মর্মে পত্র লিখে পাঠিয়েছিলেন “যদি একজন মাত্র মুসলিম কারাবন্দিকে মুক্ত করার জন্যে সমগ্র ইসলামি রাষ্ট্রের কোষাগার খালি করে দিতে হয় তবে তাই করো”।
সুবহানাল্লাহ! চিন্তা করুন এর উপর তাঁরা কিভাবে আমল করেছেন, এই ছিল সেই সব মুসলিম ও মুসলিম দেশের শাসকেরা যারা গত হয়েছেন, যখনই তারা কোন সাহায্যের আর্তচিৎকার শুনেছেন, তারা তীরের মত সেখানে সাড়া দিতে ছুটে গেছেন, সাহায্য করেছেন এবং মাযলুমকে যালিমের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। তাহলে আমরা কি করে বসে থাকতে পারি!!
বর্তমান সময়ে ত্বাগুতের হাতে বন্দি মুজাহিদ ভাই-বোনদের মুক্ত করতে সর্বাত্মক চেষ্টার অংশ হিসেবে সাধ্যমতো আমাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করা একান্ত কর্তব্য। আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, চাহিদার তুলনায় সামান্যই পূরণ করতে পারছি। এজন্য আমাদের সম্মানিত ভাই ও বোনদের বিশেষভাবে আহবান করছি এককালীন বেশী করে দান করতে, সাথে সাথে বাৎসরিক যাকাত বন্দি মুক্তি খাতে প্রদান করতে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
অর্থঃ তোমরা কখনই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় কর। আর তোমরা যা ব্যয় কর আল্লাহ তা সম্যক জানেন। (সূরা আল-ইমরান ৩ : ৯২)
বন্দিদের মুক্ত করতে সামর্থ্যানুযায়ী সম্পদ ব্যয় করুন । আর অংশীদার হোন বন্দি মুক্তির বরকতময় সওয়াবের কাজে।
সম্পদে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে এমন প্রত্যেকের উপর যাকাত প্রদান ফরজ ঠিক যেমনিভাবে সলাত ফরজ। যাকাতের ৮ টি খাতের (সূরা তাওবাহ্ ৯ : ৬০) গুরুত্বপূর্ণ ২ টি খাত হল ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ এবং ‘বন্দি মুক্ত করণ (ফির রিক্বাব)’। এই ২ টি খাতে যাকাত প্রদান করলে বাকী প্রায় সব খাতে যাকাত প্রদানের হক্ব আদায় হয়ে যায়। কারণ এখানেই রয়েছে ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী, ঋণগ্রস্থ, মুসাফির এবং কিছু ক্ষেত্রে এমন মানুষ যাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হয়।
তাই শরীয়াহর হুকুম ও বাস্তবতার আলোকে এ ২টি খাতে যাকাতের অর্থ প্রদান করা বেশী জরুরী। সম্পদ থেকে যাকাত প্রদান কারও প্রতি অনুগ্রহ করা নয় বরং যাকাত প্রদানকারী তার সম্পদকে পবিত্র করেন প্রাপকদের প্রাপ্য প্রদান করেন। সুতরাং কোন মুসলিমের এমন চিন্তা করা কখনই যথার্থ হবে না যে, নামে মাত্র যাকাত প্রদান করে নিজেদেরকে তার দায় থেকে মুক্ত করবে। তাই আমরা যাকাত প্রদানে সামর্থ্যবান আমাদের দ্বীনি ভাই ও বোনদের নাসীহা দিচ্ছি আপনারা যাকাত, উশর, ফিতরা সঠিকভাবে হিসাব করে বের করুন এবং সঠিক খাতে প্রদান করুন।
মনে রাখবেন, এটা আল্লাহর ফরজ বিধান। শরীয়াহ মোতাবেক আদায় না হলে অবশ্যই আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। নিজে সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করুন এবং অন্য ভাইদেরকেও প্রদানে নাসীহা দিন। মনে রাখবেন, আল্লাহ আপনাকে সম্পদশালী করেছেন, আপনি কী আমল করেন সেটা তিনি দেখবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে এবং নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আল-বাকারাহ্ ২ : ১৯৫)
পরিশেষে একটি হাদিস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এর উপর আমল করতে সর্বদা চেষ্টা করুন,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের পার্থিব কষ্ট সমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেয়, মহান আল্লাহ্ কিয়ামাতের দিন তার একটি (বড়) কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে দেয়, মহান আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাবের কষ্ট লাঘব করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, মহান আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, আল্লাহ্ও ততক্ষণ তার সাহায্য সহায়তা করতে থাকেন। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
আমরা আল্লাহরই কাছে নেক আমল করার তাওফীক্ব কামনা করছি এবং তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
PDF DOWNLOAD (17.6 MB)
------------------------------
WORDPRESS
https://alehsar1.wordpress.com
YOUTUBE
https://www.youtube.com/channel/UC4F...0o_0zIB0RsAWTA
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি আসমান ও জমিনের রব। সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক নাবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর, তার পরিবার এবং তার সাহাবীগণের উপর এবং রহমত বর্ষিত হোক কিয়ামাতের আগ পর্যন্ত আগত সকল ঈমানদারের উপর। অতঃপর, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনি ভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না । (সূরা আল ইমরান : ১০২)
তিঁনি আরও বলেন,
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا ، إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا
অর্থ: তারা আল্লাহর ভালবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। (সূরা আল-ইনসান : ৮-৯)
আবু মূসা আল আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা বন্দীকে মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে আহার দান কর এবং রুগীর সেবা-শুশ্রুষা কর। (সহিহ বুখারি, অধ্যায়ঃ আল জিহাদ ওয়াস সিয়ার, হাদীস নং-২৮৮১)
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা!
ঈমান এবং কুফরের যুদ্ধ চিরন্তন। এ যুদ্ধ ততদিন চলবে যতদিন না আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমিনে পরির্পূণ কায়েম হয় এবং সকল প্রকার কুফর দূরীভূত হয়। উপমহাদেশের এ অঞ্চলে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য যে সকল ভাইয়েরা নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে এই জিহাদি কাফেলায় শরীক হয়েছিলেন তাদের অনেকেই আজ ত্বাগুতের জিন্দান খানায় বন্দি হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তাদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে, অনেকের উপর চালানো হয়েছে নির্যাতনের স্টিম রোলার, এখনও চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন যা এ স্বল্প পরিসরে উপস্থাপন করা অসম্ভব।
অনেককে দীর্ঘ কারাভোগের পর ত্বাগুতের প্রহসনমূলক বিচারে মৃত্যুদন্ডাদেশের মাধ্যমে শহীদ করে দেয়া হয়েছে, আবার অনেকের এখন তা কার্যকর করার ঘৃণ্য পরিকল্পনা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু একটাই তারা চেয়েছেন আল্লাহর দ্বীনের বিজয়। তারাতো আমাদেরই ভাই, আমরা কি করে তাদেরকে ভূলে থাকতে পারি! কি করে ভূলে থাকতে পারি ওই সকল মাযলুম বোনদেরকে যারা এ অঞ্চলের ত্বাগুতের বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে ত্বাগুতের টর্চার সেল রূপী কারাগারে বন্দি রয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছেন।
অথচ আমরা মুক্ত অবস্থায় আমাদের পরিবার পরিজনের নিকট অবস্থান করে আরাম-আয়েশে সময় কাটাচ্ছি। সুস্বাদু ও মুখরোচক পানাহারে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি। কি জবাব দেবো আল্লাহর কাছে! যদি আমরা ওই মাযলুমদের আর্তনাদে তাদের উদ্ধারে এগিয়ে না যাই। যুলমের চার দেয়ালের মাঝে অন্তরীণ থাকার তাদের কষ্টের আহাজারি তো ঔ দেয়াল ভেদ করে আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে না। কিন্তু মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের অসহায়ত্ব জানেন, মাযলুমের আর্তি শুনে থাকেন, তারা তো ওই সকল অসহায় মানুষ যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ ও সর্তক হতে বলেছেন; নিতে বলেছেন যুদ্ধের প্রস্তুতি। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا
অর্থঃ তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছো না ওই সকল অসহায় পুরুষ, নারী এবং শিশুর জন্য, যারা বলছে হে আমাদের রব! আমারদেরকে এই যালিম অধ্যুষিত এলাকা থেকে বের করে নিয়ে যান। আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন ওয়ালী নিয়োগ করে দিন। এবং আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী নিয়োগ করে দিন। (সূরা নিসা : ৭৫)
সুতরাং এই সকল মাযলুম বন্দি মুসলিমদের সাহায্যে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে মুক্ত করতে একদিকে যেমন আমাদেরকে আল্লাহর রাহে অস্ত্র ধরতে হবে, নিতে হবে সামরিক প্রস্তুতি। অন্যদিকে ব্যয় করতে হবে আমাদের ধন সম্পদ, আমাদের প্রিয় জিনিস। এটাই আল্লাহর হুকুম। নতুবা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে আমাদের জবাব দেয়ার মতো কোন ওজর থাকবে না। সমগ্র মানবজাতির সামনে লজ্জিত ও অপমানিত হতে হবে। পাকড়াও হতে হবে কঠিন শাস্তিতে। আমরা আল্লাহর সেই শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই যা তিনি তার হুকুম অমান্যকারী বান্দাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল বান্দারা যথার্থই আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করেছেন। আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন অনুসরণীয় অনুপম আদর্শ। তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সাঃ) হুকুম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, আমাদের আলিমগণ এই মত প্রকাশ করেছেন যে, মুক্তিপণ দিয়ে বন্দীদের মুক্ত করা হচ্ছে ওয়াজিব, যদিওবা ইসলামী কোষাগারে এক দিরহাম পরিমাণ সঞ্চয় অবশিষ্ট না থাকে। ইব্ন খুওয়াইয মিনদাদ বন্দী মুক্তির আবশ্যকতা বিষয়ক কুরআনে বর্ণিত দিক নির্দেশনা থেকে এটি নিশ্চিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং বন্দী মুক্তি করেছেন এবং অপরকেও অনুরূপ করতে আদেশ করেছেন, পরবর্তী কালের মুসলিমগণও তদ্রুপ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এ বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে যে, ইসলামী কোষাগার হতে মুক্তিপণের অর্থ নিয়ে হলেও বন্দীদের মুক্ত করা হচ্ছে একটি আবশ্যক দায়িত্ব, যদি তা সম্ভবপর না হয়, তবে সকলের উপর তা ফরযে কিফায়া হয়ে দাঁড়ায়; অর্থাৎ কেউ আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে এবং সকলে গুনাহ মুক্ত হবে। (কুরতুবী, ২/২৩)
ইমাম ইবন আল আরাবী (রহ.) বলেন, ইমাম মালিক বলেছেন সমস্ত মুসলিমের উপর ওয়াজিব হচ্ছে তাদের বন্দিদের মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করা যদিও এতে সকল অর্থ ব্যয় হয়। (আহকামুল কুরআন, ১/১০৭)
ইমাম আল হাফিয ইবন হাযর আল আসকালানী (রহ.) বলেন, ‘বন্দী মুক্তির অধ্যায়’-এ ইমাম বুখারির আলোচনা ও বক্তব্য কাফিরদের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তিপণ বা যেকোন উপায়ে মুক্তির ব্যবস্থার কথা নির্দেশ করে..। ইবনে বাত্তাল বলেন যে, বন্দী মুক্ত করা সমষ্টিগত ভাবে ফরয। অধিকাংশ আলেমগণ অনুরূপ মত পোষণ করেন। (ফাতহুল বারী, ৬/১৬৭)
ইমাম আবু বকর আল জাসসাস (রহ.) বলেন, আমাদের উপর অর্পিত ওয়াজিব দায়িত্ব সমূহের মধ্যে অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে, মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করা। আল হাজ্জাজ বিন আরতাহ্ এ বিধান সম্পর্কে তার পিতামহ হতে বর্ণনা করেছেন যে, “রাসূলুল্লাহ্ ﷺ মুহাজিরীন ও আনসারদের উদ্দেশ্যে রচিত একটি চিঠিতে শত্রু সৈন্যদের বন্দী করতে এবং মুসলিমদের জন্য উপযুক্ত সম্মান বিবেচনা ও শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে মুক্তিপণের বিনিময়ে বন্দী মুক্ত করতে আদেশ করেন।”
আবু মূসা আল-আশ’আরী (রা.) এবং শাক্বীক ইবনে সালামার বরাত দিয়ে মানসুর বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “ক্ষুধার্তকে খাওয়াও, সালামের ব্যাপক প্রচলন কর, অসুস্থকে দেখতে যাও এবং বন্দীকে মুক্ত কর।” বন্দীদেরকে মুক্ত করার জন্য এই দু’টি হাদীস হচ্ছে দলীল স্বরূপ, কারণ এর মধ্যে আরবী যে শব্দ “আল-আনী” ব্যবহার করা হয়েছে তা বন্দীদের দিকেই ইঙ্গিত দেয়। ইমরান বিন হুসাইন এবং সালামাহ্ বিন আল-আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, “রাসূলুল্লাহ ﷺ মুসলিম বন্দীদের মুক্তিপণ হিসেবে মুশরিকদের দিয়েছিলেন। (আহ্কামুল কুরআন-১/৪৮)।
ইমাম ইবন জুযাই আল মালিকী (র.) বলেনঃ মুসলিম বন্দীদেরকে কাফেরদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করা হচ্ছে আবশ্যক। তবে, মুসলিমরা যদি তা করতে সক্ষম না হয়, তাহলে মুক্তিপণ দিয়ে হলেও তাদেরকে মুক্ত করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। স্বচ্ছল ব্যক্তি নিজের এবং গরীব ব্যক্তির জন্য ইসলামী কোষাগার হতে অর্থ নিয়ে ইমাম মুক্তিপণ আদায় করবেন। যদি তাতেও অর্থের সংকুলান না হয়, তবে সমস্ত মুসলিমের সম্পদ হতে মুক্তিপণ আদায় করা আবশ্যক, যদিও বা তাতে যাবতীয় সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায়। (কিতাব ক্বাওয়ানীন আল আহ্কাম আশ শারীআহ্, পৃষ্ঠা নং ২/৪)।
আবু গালিব হাম্মাম বিন আল মুহাযিব আল মা’রি তার ইতিহাসগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন সাইফ আদ-দৌলা তার সমস্ত কোষাগার খালি করে অর্থ খরচ করেছেন রোমানদের হাত থেকে মুসলিম বন্দিদের মুক্তিপণ হিসেবে। আরো উল্লেখ করেছেন আবুল আব্বাস আল খুযাই, শাম দেশের যিনি গভর্ণর ছিলেন তিনি তুর্কিদের থেকে মুসলিম বন্দিদের মুক্ত করার জন্য সেই আমলে এক মিলিয়ন দিরহাম পর্যন্ত ব্যয় করেছেন। আর হ্যাঁ, এজন্যেই খলিফা উমার বিন আবদুল আযীয (রহ.) এর মতো আল্লাহ ভীরু ব্যক্তি তার মন্ত্রীকে এই মর্মে পত্র লিখে পাঠিয়েছিলেন “যদি একজন মাত্র মুসলিম কারাবন্দিকে মুক্ত করার জন্যে সমগ্র ইসলামি রাষ্ট্রের কোষাগার খালি করে দিতে হয় তবে তাই করো”।
সুবহানাল্লাহ! চিন্তা করুন এর উপর তাঁরা কিভাবে আমল করেছেন, এই ছিল সেই সব মুসলিম ও মুসলিম দেশের শাসকেরা যারা গত হয়েছেন, যখনই তারা কোন সাহায্যের আর্তচিৎকার শুনেছেন, তারা তীরের মত সেখানে সাড়া দিতে ছুটে গেছেন, সাহায্য করেছেন এবং মাযলুমকে যালিমের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। তাহলে আমরা কি করে বসে থাকতে পারি!!
বর্তমান সময়ে ত্বাগুতের হাতে বন্দি মুজাহিদ ভাই-বোনদের মুক্ত করতে সর্বাত্মক চেষ্টার অংশ হিসেবে সাধ্যমতো আমাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করা একান্ত কর্তব্য। আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, চাহিদার তুলনায় সামান্যই পূরণ করতে পারছি। এজন্য আমাদের সম্মানিত ভাই ও বোনদের বিশেষভাবে আহবান করছি এককালীন বেশী করে দান করতে, সাথে সাথে বাৎসরিক যাকাত বন্দি মুক্তি খাতে প্রদান করতে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
অর্থঃ তোমরা কখনই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে ব্যয় কর। আর তোমরা যা ব্যয় কর আল্লাহ তা সম্যক জানেন। (সূরা আল-ইমরান ৩ : ৯২)
বন্দিদের মুক্ত করতে সামর্থ্যানুযায়ী সম্পদ ব্যয় করুন । আর অংশীদার হোন বন্দি মুক্তির বরকতময় সওয়াবের কাজে।
সম্পদে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে এমন প্রত্যেকের উপর যাকাত প্রদান ফরজ ঠিক যেমনিভাবে সলাত ফরজ। যাকাতের ৮ টি খাতের (সূরা তাওবাহ্ ৯ : ৬০) গুরুত্বপূর্ণ ২ টি খাত হল ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ এবং ‘বন্দি মুক্ত করণ (ফির রিক্বাব)’। এই ২ টি খাতে যাকাত প্রদান করলে বাকী প্রায় সব খাতে যাকাত প্রদানের হক্ব আদায় হয়ে যায়। কারণ এখানেই রয়েছে ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী, ঋণগ্রস্থ, মুসাফির এবং কিছু ক্ষেত্রে এমন মানুষ যাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হয়।
তাই শরীয়াহর হুকুম ও বাস্তবতার আলোকে এ ২টি খাতে যাকাতের অর্থ প্রদান করা বেশী জরুরী। সম্পদ থেকে যাকাত প্রদান কারও প্রতি অনুগ্রহ করা নয় বরং যাকাত প্রদানকারী তার সম্পদকে পবিত্র করেন প্রাপকদের প্রাপ্য প্রদান করেন। সুতরাং কোন মুসলিমের এমন চিন্তা করা কখনই যথার্থ হবে না যে, নামে মাত্র যাকাত প্রদান করে নিজেদেরকে তার দায় থেকে মুক্ত করবে। তাই আমরা যাকাত প্রদানে সামর্থ্যবান আমাদের দ্বীনি ভাই ও বোনদের নাসীহা দিচ্ছি আপনারা যাকাত, উশর, ফিতরা সঠিকভাবে হিসাব করে বের করুন এবং সঠিক খাতে প্রদান করুন।
মনে রাখবেন, এটা আল্লাহর ফরজ বিধান। শরীয়াহ মোতাবেক আদায় না হলে অবশ্যই আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। নিজে সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করুন এবং অন্য ভাইদেরকেও প্রদানে নাসীহা দিন। মনে রাখবেন, আল্লাহ আপনাকে সম্পদশালী করেছেন, আপনি কী আমল করেন সেটা তিনি দেখবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে এবং নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আল-বাকারাহ্ ২ : ১৯৫)
পরিশেষে একটি হাদিস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এর উপর আমল করতে সর্বদা চেষ্টা করুন,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেনঃ “যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের পার্থিব কষ্ট সমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেয়, মহান আল্লাহ্ কিয়ামাতের দিন তার একটি (বড়) কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে দেয়, মহান আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাবের কষ্ট লাঘব করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, মহান আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, আল্লাহ্ও ততক্ষণ তার সাহায্য সহায়তা করতে থাকেন। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
আমরা আল্লাহরই কাছে নেক আমল করার তাওফীক্ব কামনা করছি এবং তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ اَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
PDF DOWNLOAD (17.6 MB)
------------------------------
WORDPRESS
https://alehsar1.wordpress.com
YOUTUBE
https://www.youtube.com/channel/UC4F...0o_0zIB0RsAWTA
Comment