গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ:
সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা
মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ
সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা
মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ

প্রথম অংশ
আবু হুরায়রাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ
আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক একটি হাদীস রয়েছে। উক্ত হাদীসটি তাঁর থেকে পৃথক তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ ধারাবাহিকভাবে সবিস্তারে বর্ণনা করা হচ্ছে,
প্রথম হাদীস
হাদীসটি হিজরী তৃতীয় শতকের অন্যতম মুহাদ্দিস সাঈদ ইবনে মানসুর রহিমাহুল্লাহ (২২৭ হি) তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: أنا سَيَّارٌ، عن جَبْرِ بْنِ عَبِيْدَةَ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ: وَعَدَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ فَإِنْ اُدْرِكْهَا اُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي، فَإِنْ اُقْتَلْ كُنْتُ مِنْ أَفْضَلِ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ أرْجِعْ فَأنَا أبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ.
قَالَ الشَّيْخُ أحْمَد شَاكِر فِيْ "تَعْلِيْقِه عَلى الْمُسْنَدْ" 532:6 (7128): إِسْنَادُهُ صَحِيْحٌ.
قُلْتُ: إسْنَادُهُ مُتَّصِلٌ وَرِجَالُهُ كُلّهُمْ ثِقَاتٌ، سَيَأتِي تَفْصِيْلُه.
অর্থ:“সাঈদ ইবনে মানসুর রহিমাহুল্লাহ হুশাইম থেকে, তিনি সাইয়ার থেকে, তিনি জাবর ইবনে আবীদাহ থেকে, তিনি আবু হুরায়রাহ রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন; আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদ সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি আমি সে জিহাদ পেয়ে যাই তাহলে আমি আমার জান-মাল সব কিছু তাতে ব্যয় করব। এতে যদি আমি শাহাদাত বরণ করি, তাহলে আমি হব সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ। আর যদি (জীবিত) ফিরে আসি, তাহলে হব (জাহান্নামের আগুন থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত।”
-শায়খ আহমাদ শাকের তাঁর তাহকীককৃত ‘মুসনাদে আহমাদ’ এর টীকায় বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। ইমাম হাকেম রহিমাহুল্লাহ তার ‘মুসতাদরাকে’ ৩/৫৮৮ (৬১৭৭) হাদীসটি এনেছেন। কিন্তু তিনি এবং হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
-মুসনাদে আহমাদ ৬/৫৩২, হাদীস ৭১২৮; সুনানে সাঈদ ইবনে মানসুর ২/১৭৮ (বাবু মান কলা আল জিহাদু মা-দিন) হাদীস ২৩৭৪, তাহকীক- হাবীবুর রহমান আযমী; সুনানে নাসাঈ ২/৫২, হাদীস ৩১৭৩, ৩১৭৪; আত-তারীখুল কাবীর, ইমাম বুখারী ২/২৪৩, রাবি ২৩৩৩; আস-সুনানুল কুবরা, ইমাম নাসাঈ ৯/২৯৭, হাদীস ১৮৫৯৯; দালাইলুন নুবুওয়াহ, ইমাম বায়হাকী ৬/২৯০, হাদীস ২৬৩০; হিলয়াতুল আওলিয়া, আবু নুআইম আসফাহানী ৭/৫৯; মুসনাদে বাযযার ২/৪৬৬, হাদীস ৮৮১৯; আলফিতান, নুআইম ইবনে হাম্মাদ ১/৪০৯, (বাবু গযওয়াতিল হিন্দ) হাদীস ১২৩৭
উল্লিখিত ইমামগণ এ হাদীসটি নিজ নিজ সূত্রে হুশাইম থেকে, তিনি সাইয়ার থেকে, তিনি জাবর ইবনে আবীদাহ থেকে, তিনি আবু হুরায়রাহ থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটির মান: হাদীসটির সনদ মুত্তাসিল এবং উল্লিখিত সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।
নিম্নে রাবি বা বর্ণনাকারীগণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করা হলো-
এক. হুশাইম বিন বশীর বিন কাসেম (জন্ম ১০৪ হি., মৃত্যু ১৮৩ হি.)। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হুশাইম থেকে ‘সহীহ বুখারী’ ও ‘সহীহ মুসলিমে’ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু যুরআ, মুহাম্মাদ ইবনে সাদ ও ইজলী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ তাকে ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। মুহাম্মদ বিন সা’দ বলেন,
كَانَ ثِقَةً، كَثِيْرَ الْحَدِيْثِ، ثَبْتًا، يُدَلِّسُ كَثِيْرًا، فَمَا قَالَ فِيْ حَدِيْثِهِ أَخْبَرَنَا فَهُوَ حُجَّةٌ، وَمَا لَمْ يَقُلْ فِيْهِ أَخْبَرَنَا فَلَيْسَ بِشَيْءٍ.
“তিনি ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য), বহু হাদীস বর্ণনাকারী, তবে তিনি অনেক তাদলীস করতেন। সুতরাং যে হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি ‘আখবারানা’ শব্দ ব্যবহার করেন, সে হাদীস হুজ্জত বা দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে হাদীসের ক্ষেত্রে ‘আখবারানা’ শব্দ ব্যবহার করবেন না, সে হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে না।” -তাহযীবুল কামাল ৭/৪২১, রাবি ৭১৯০
জ্ঞাতব্য, উল্লিখিত এ হাদীসটি তিনি ‘আখবারানা’ শব্দে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এ হাদীসে তাদলীসের কোনো প্রভাব পড়েনি।
দুই. সাইয়ার আবুল হাকাম আলআনাযী আলওয়াসিতী (মৃত্যু ১২২ হি.)। ইমাম আহমাদ, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, নাসাঈ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ তাকে ‘ছিকাহ ও ছাবত তথা হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য ও সুদৃঢ়’ বলেছেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম সাইয়ার থেকে ‘সহীহ বুখারী’ ও ‘সহীহ মুসলিমে’ হাদীস বর্ণনা করেছেন। -তাহযীবুল কামাল, রাবি ২৬৫৫
তিন. জাবর ইবনে আবীদাহ। তাবেঈ, কবি; তিনি আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে নির্ভরযোগ্য রাবিদের মধ্যে গণ্য করেছেন। ইমাম বুখারী তাঁর সংকলিত ‘আততারীখুল কাবীরে’ এবং ইমাম ইবনে আবি হাতেম তাঁর সংকলিত ‘আলজারহু ওয়াততা’দীলে’ জাবর ইবনে আবীদাহ’-এর জীবনী এনেছেন এবং সেখানে এই হাদীসটিও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাঁরা উভয়ে এ হাদীস বা জাবর ইবনে আবীদাহ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। ইমাম নাসাঈ তাঁর থেকে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন; কোনো মন্তব্য করেননি। ইবনে হাজার তাঁকে ‘মাকবুল’ বা গ্রহণযোগ্য বলেছেন। আল্লামা মারযুবানী তাঁর সংকলিত কবিদের পরিচিতিমূলক “মুজামুশ শুআরা” নামক সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থে তার জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
-আততারীখুল কাবীর ২/২৪৩, রাবি ২৩৩৩; আলজারহু ওয়াততা’দীল ২/৫৩৩; কিতাবুছ ছিকাত ৪/১১৭; তাহযীবুল কামাল ১/৪৩৭, রাবি ৮৭৭; ইকমালু তাহযীবিল কামাল ২/৭০, রাবি ৯৪১; তাহযীবুত তাহযীব ২/৫৪, রাবি ৯৪৬; তাকরীবুত তাহযীব, রাবি ৮৯২
একটি আপত্তি ও তার জবাব
কেউ কেউ এ হাদীসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আপত্তি করেছেন। তাদের আপত্তি মূলত জাবর ইবনে আবীদাহ-কে কেন্দ্র করে, যাকে ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ মাজহুল বা অপরিচিত আখ্যায়িত করেছেন এবং আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনার কারণে এ তাবিঈর উপর ‘মুনকার হাদীস’ বা পরিত্যাজ্য হাদীস বর্ণনা করার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। উল্লিখিত জাবর ইবনে আবীদাহ’-এর বিস্তারিত তথ্য থেকে প্রতিভাত হয় যে, ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ এর এ আপত্তি সঠিক নয়। এ বিষয়ে ইমাম যাহাবি রহিমাহুল্লাহ এর এ আপত্তির শক্তিশালী জবাব দিয়েছেন শায়খ আহমাদ শাকের রহিমাহুল্লাহ ‘মুসনাদে আহমাদের’ টীকায়। তিনি বলেন,
إِسْنَادُهُ صَحِيْحٌ. جَبْرُ بْنُ عَبِيْدَةَ: هُوَ الشَّاعِرُ، وَهُوَ تَابِعِيٌّ ثِقَةٌ، تَرْجَمَهُ الْبُخَارِيُّ فِيْ "الْكَبِيْرِ" فَلَمْ يَذْكُرْ فِيْهِ جَرْحًا، وَابْنُ أَبِيْ حَاتِمٍ فَلَمْ يُجَرِّحْهُ أَيْضًا، وَذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّان فِيْ "الثِّقَاتِ". وَزَعَمَ الذَّهَبِيُّ فِيْ "الْمِيْزَانِ" أَنَّهُ أَتى "بِخَبَرٍ مُنْكَرٍ، لَا يُعْرَفُ مَنْ ذَا!، وَحَدِيْثُهُ: وَعَدَنَا بِغَزْوَةِ الْهِنْدِ!!، وَكَذَلِكَ نَقَلَ الْحَافِظُ في "التهذيب" عَمَّا قَرَأَ بِخَطِّ الذَّهَبِيِّ وَلَسْتُ أَدْرِيْ مِمَّ جَاءَ لِلذَّهَبِىِّ نُكْرُ الْخَبَرِ؟، وَلَمْ يُنْكِرْهُ الْبُخَارِيُّ وَلَا غَيْرُهُ مَنْ قَبْلَهُ، وَلَمْ يُجَرِّحُوْا هَذَا التَّابِعِيَّ بِشَيْءٍ!، مَا هُوَ إِلَّا التَّحَكُّمُ. انتهى.
অর্থ:“হাদীসটির সনদ সহীহ। জাবর ইবনে আবীদাহ তাবেঈ, ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য)। ইমাম বুখারী ‘আততারীখুল কাবীরে’ তাঁর জীবনী এনেছেন, তাতে কোনো জারহ উল্লেখ করেননি। ইমাম ইবনে আবি হাতেম তাঁর সংকলিত ‘আলজারহু ওয়াততা’দীলে’ জাবর ইবনে আবীদাহ সম্পর্কে জারহমূলক কোনো মন্তব্যই করেননি। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন। অথচ যাহাবী ‘মীযানুল ই’তিদালে’ উল্লিখিত হাদীস বর্ণনার কারণে তার বিরুদ্ধে ‘মুনকার বর্ণনার’ অভিযোগ করেছেন এবং তাকে মাজহুল আখ্যায়িত করেছেন!! হাফেয ইবনে হাজার ‘তাহযীবুত তাহযীবে’ অনুরূপ কথা যাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন।
আহমাদ শাকের রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমার বুঝে আসে না, হাফেয যাহাবী কিসের ভিত্তিতে হাদীসটিকে মুনকার বলেছেন? যেখানে ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ বা তাঁর পূর্বের কোনো ইমাম এ হাদীসটিকে মুনকার বলেননি এবং এই তাবেঈকে কোনো ধরনের জারহ করেননি, সেখানে (যাহাবী কিংবা) পরবর্তী কারোর এমন অভিযোগ স্বেচ্ছাচারিতা বৈ কিছুই নয়।” -মুসনাদে আহমাদ ৬/৫৩২, হাদীস ৭১২৮, তাহকীক- শায়খ আহমাদ শাকের।
মুহাদ্দিসগণের নিকট ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য একটা মূলনীতির ব্যাখ্যা
এখানে শায়খ আহমাদ শাকের রহিমাহুল্লাহ মুহাদ্দিসগণের নিকট ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য একটা মূলনীতির দিকে ইশারা করে তার ভিত্তিতে হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ এর বক্তব্য খণ্ডন করেছেন। সে মূলনীতি হলো-
হাদীসের যে সকল ইমাম রিজালশাস্ত্রে কিতাব লিখেছেন; যেখানে তারা বিভিন্ন রাবির উপরে জারহ অথবা তা’দীল করে থাকেন, সেখানে তারা যদি এমন কোনো রাবির বিষয়ে চুপ থাকেন, যার ব্যাপারে কোনো জারহ পাওয়া যায় না এবং সে রাবি কোনো মুনকার হাদীসও বর্ণনা করেন না। তাহলে তার বিষয়ে উক্ত ইমামের চুপ থাকাকে সে রাবির ক্ষেত্রে তাওছীক ধরা হবে অর্থাৎ হাদীসবিশারদ সে ইমামের নিকট উক্ত রাবি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। বিশেষত, কোনো হাদীসের সনদে উল্লিখিত ব্যক্তি; যার বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায় না, তিনি যদি খাইরুল কুরুন তথা সাহাবী, তাবিঈ ও তাবে তাবিঈ-যুগের লোক হয়ে থাকেন অর্থাৎ যাদের উত্তম হওয়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষ্য রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে জারহ-তা’দীলের ইমামগণ (যারা রিজাল শাস্ত্রে মন্তব্য করে থাকেন) যদি তাদের কিতাবে সে রাবির জীবনী এনে তার ব্যাপারে কোনো জারহ উল্লেখ না করেন এবং উক্ত রাবির কোনো মুনকার মতনও পাওয়া না যায়, তাহলে এটিকে তার স্বপক্ষে তাওছীক ধরা হবে।
ইমাম আবু হাতেম রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২৭৭ হি.) ‘আলজারহু ওয়াত তা’দীল’ কিতাবের ২/৩৬ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ে নিম্নোক্ত অধ্যায়ে বলেন,
بَابٌ فِيْ رِوَايَةِ الثِّقَةِ عَنْ غَيْرِ الْمَطْعُوْنِ عَلَيْهِ أنَّهَا تٌقَوِّيْهِ، وَعَنِ الْمَطْعُوْنِ عَلَيْهِ أنَّهَا لَا تٌقَوِّيْهِ.
“অধ্যায়: ‘গায়রে মাতউন’ বা অনভিযুক্ত রাবি থেকে নির্ভরযোগ্য রাবির বর্ণনা করা তাকে (অনভিযুক্ত রাবিকে) শক্তিশালী করবে। তবে অভিযুক্তকে শক্তিশালী করবে না।”
سَأَلْتُ اَبِيْ عَنْ رِوَايَةِ الثِّقَاتِ عَنْ رَجُلٍ غَيْرِ ثِقَةٍ مِمَّا يُقَوِّيْهِ ؟ قَالَ: "إِذَا كَانَ مَعْرُوْفًا بِالضُّعْفِ لَمْ تُقَوِّهِ رِوَايَتُهُ عَنْهُ وَإِذَا كَانَ مَجْهُوْلًا نَفَعَهُ رِوَايَةُ الثِّقَةِ عَنْهُ.
অর্থ: “ইবনে আবি হাতেম বলেন, ‘আমি আমার আব্বা আবু হাতেমকে জিজ্ঞাসা করলাম, ছিকাহ রাবি যদি ‘গায়রে ছিকাহ’ থেকে বর্ণনা করে তাহলে তা ‘গায়রে ছিকাহ’ রাবিকে শক্তিশালী করবে কিনা? তিনি বললেন, রাবি যদি যঈফ হিসাবে পরিচিত হয়, তাহলে ছিকাহ রাবি তার থেকে বর্ণনা করাটা তাকে (যঈফ হিসাবে পরিচিত রাবিকে) শক্তিশালী করবে না। আর যদি তার অবস্থা অজ্ঞাত থাকে (তার বিষয়ে ভালো-মন্দ কিছুই জানা না যায়), তাহলে শক্তিশালী করবে।”
অনুরূপভাবে ইমাম ইবনে কাছীর রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭৭৪ হি.) ‘ইখতিসারু উলূমিল হাদীস’ গ্রন্থের ৯৭ পৃষ্ঠায় বলেন,
فَأَمَّا الْمُبْهَمُ الَّذِيْ لَمْ يُسَمَّ، أَوْ مَنْ سُمِّيَ وَلَا تُعْرَفُ عَيْنُهُ فَهَذَا مِمَّنْ لَا يَقْبَلُ رِوَايَتَهُ اَحَدٌ عَلِمْنَاهُ. وَلَكِنَّهُ إِذَا كَانَ فِيْ عَصْرِ التَّابِعِيْنَ وَالْقُرُوْنِ الْمَشْهُوْدِ لَهُمْ بِالْخَيْرِ، فَإِنَّهُ يُسْتَأْنَسُ بِرِوَايَتِهِ، وَيُسْتَضَاءُ بِهَا فِيْ مَوَاطِنَ. وَقَدْ وَقَعَ فِيْ مُسْنَدِ الْإِمَامِ أَحْمَدَ وَغَيْرِهِ مِنْ هَذَا الْقَبِيْلِ كَثِيْرٌ وَاللهُ أَعْلَمُ.
অর্থ:“হাদীসের সনদে যদি এমন মুবহাম (অজ্ঞাত) ব্যক্তি থাকে, যার নাম উল্লেখ করা হয়নি অথবা নাম উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সে রাবিকে চেনা যায় না, তাহলে তার বর্ণনা উলামায়ে কেরামের কেউ গ্রহণ করেন না। তবে যদি তিনি (সনদে উল্লিখিত ব্যক্তি; যার বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায় না) খাইরুল কুরুন তথা সাহাবী, তাবিঈ ও তাবে তাবিঈ-যুগের লোক হন অর্থাৎ যাদের উত্তম হওয়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষ্য রয়েছে, তাহলে তার রেওয়ায়াত গ্রহণ করা হবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার বর্ণনা দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে। আর ‘মুসনাদে আহমাদ’সহ অন্যান্য কিতাবে এ ধরনের রাবি থেকে বহু বর্ণনা রয়েছে।”
আল্লামা মোল্লা আলী কারীও (মৃত্যু ১০১৪ হি.) ‘শারহু শারহি নুখবাতিল ফিকার’ গ্রন্থের ১৫৪ পৃষ্ঠায় এ ধরনের মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন,
"...أَنَّ الْمَسْتُوْرَ مِنَ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِيْنَ وَأَتْبَاعِهِمْ: يُقْبَلُ، بِشَهَادَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (خَيْرُ الْقُرُوْنِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ)، وَغَيْرُهُمْ لَا يُقْبَلُ إِلَّا بِتَوْثِيْقٍ، وَهُوَ تَفْصِيْلٌ حَسَنٌ"
“... হাদীসের সনদে যদি সাহাবা তাবেঈ ও তাবে তাবেঈদের মধ্য থেকে কোনো মাসতুর ব্যক্তি (সনদে উল্লিখিত এমন ব্যক্তি; যার বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য জানা যায় না, যাতে তাকে চেনা যায়) থাকে, তাহলে তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের সম্পর্কে বলেছেন, خَيْرُ الْقُرُوْنِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ (সর্বোত্তম যুগ হলো আমার যুগ, এরপর আমার পরবর্তী যুগ অতঃপর তার পরবর্তী যুগ)। আর তাঁরা ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে ইমামদের তাওছীক ব্যতীত তাঁদের বর্ণনা গ্রহণ করা হবে না। এটি একটি উত্তম বিশ্লেষণ।”
সুতরাং এ সমস্ত বক্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম বুখারী, আবু যুরআ, আবু হাতেম, ইবনে আবি হাতেম, ইবনে হিব্বান, ইবনে আদি, হাকেম কাবীর আবু আহমাদ, ইবনে নাজ্জার বাগদাদী এবং তাঁদের মতো অন্যান্য ইমামগণ যারা রাবিদের ক্ষেত্রে মন্তব্য করে থাকেন অথবা যাদের রিজাল শাস্ত্রে কিতাবাদি রয়েছে তাঁরা যদি এমন কোনো রাবির ব্যাপারে চুপ থাকেন, যার বিষয়ে কোনো জারহ পাওয়া যায় না এবং যিনি কোনো মুনকার বর্ণনাও করেন না, তাহলে এমন রাবির ব্যাপারে ইমামদের এ চুপ থাকাটা তার ছিকাহ হওয়ার প্রমাণ বহন করবে এবং তাকে ‘গায়রে ছিকাহ’ বা অগ্রহণযোগ্য হিসাবে গণ্য করা হবে না। আর তার বর্ণিত হাদীস ‘সহীহ’ অথবা ‘হাসান’ পর্যায়ের হবে কিংবা কমপক্ষে হাসানের স্তর থেকে নিচে নামবে না, যেহেতু তিনি যে কোনো ধরনের আপত্তি থেকে মুক্ত।
শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৪১৭ হি.) ‘আর রাফউ ওয়াত তাকমীল’ কিতাবের পাদটীকায় ২৩০-২৪৮ পৃষ্ঠায় উক্ত মূলনীতির বিষয়ে হাদীসের ইমামগণের বক্তব্য ও কর্ম সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।
অতএব, ইমাম বুখারী বা তাঁর পূর্বের কোনো ইমাম স্বীয় গ্রন্থসমূহে এ হাদীসকে মুনকার বলেননি এবং এই হাদীসের তাবেঈ-স্তরের রাবি জাবর ইবনে আবীদাহ-কে কোনো ধরনের জারহ করেননি, তাই জাবর ইবনে আবীদাহ ছিকাহ ও গ্রহণযোগ্য রাবি এবং তার বর্ণিত এ হাদীস ‘সহীহ হাদীস’ হিসেবে গণ্য হবে।
Collected
(চলবে, ইনশা আল্লাহ)
Comment