Announcement

Collapse
No announcement yet.

মহামারী

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মহামারী

    [১]


    নয়া ইসলামি দুনিয়া উমার রা. এঁর খিলাফতকালে ১৮ হিজরিতে প্রথমবারের মত কোনও সংক্রামক ব্যধির শিকার হয়। খ্রিস্টীয় পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে তা ছিল ৬৩৯ সালে। জেরুজালেম বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনী সেখানে নতুন করে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে।

    তখন আধুনিক ফিলিস্তিনের রামলা থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে এবং জেরুজালেম থেকে তেল আবিবের দিকে ২৬ কিলোমিটার দূরবর্তী ইমওয়াস নামে এক গ্রামে সামরিক সদর দফতর স্থাপন করা হয়।

    আর সেখানেই প্লেগ দেখা দেয়। এই প্লেগে ৩০ হাজারের মত লোক মারা যান। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহাবা ছিলেন। যেমন আবু উবায়দা রা., মু’আজ ইবনে জাবাল রা., ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান রা., সুহাইল বিন আমর রা. এঁদের মত অত্যন্ত প্রসিদ্ধ সাহাবা।

    যখন মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করলো, তখন সেখানকার সদ্য বিজিত অঞ্চলের চিফ মিলিটারি এডমিনিস্ট্রেটর এবং গভর্নর আবু উবায়দা রা. নগরবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। জনগণকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান এবং এই মহামারীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহম বলে অভিহিত করেন।

    শুধু তাই না, বরং একজন আদর্শ শাসক হিসেবে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেন তাঁকেও এতে শরিক করা হয়। এই দোয়া কবুল হয়। তিনিও প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর মু’আজ ইবনু জাবাল রা. এই পদে আসীন হন।

    পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে থাকে। মানুষ ধৈর্য্যচ্যুত হতে পারে এই আশঙ্কায় তিনিও জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন। পূর্ববর্তী শাসকের তিনিও এটাকে খোদায়ী রহম হিসেবে বর্ণনা করেন। আর ভাষণকালে দোয়া করেন, যেন এই রহমের ভাগ তাঁর পরিবারেও দেওয়া হয়।

    এই দোয়াও কবুল হয়, তাঁর ছেলে আব্দুর রহমান বিন মু’আজ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর আবারও ভাষণ দানকালে এই রহমে নিজের ভাগ চেয়ে দোয়া করেন। তাঁর হাতের আঙুলে সংক্রমণ দেখা দেয়। আর তিনিও রব্বের ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তেকাল করেন।

    এবার আমর ইবনুল আস সেখানে দায়িত্ব লাভ করেন। ততদিনে অবশ্য সংক্রমণ প্রশমিত হয়ে আসে। এই ইতিহাস শাহর বিন হাওশাব আল আশারি সেই প্লেগের সময় বেঁচে যাওয়া একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে বর্ণনা করেন।

    যা হোক, সম্ভবত ইসলামই পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যেটা সংক্রমণ ব্যবস্থাপনায় ঐশী নির্দেশনা (Divine Rule) প্রদান করেছে।

    অন্য সমস্ত ধর্ম যখন সংক্রমিত ব্যক্তিকে অভিশাপগ্রস্ত বলে বিবেচনা করেছে। তখন স্বাভাবিকভাবেই জনপরিসরে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার তাবৎ পরিবার বিচ্ছিন্ন এবং প্রত্যাখ্যাত বলে চিহ্নিত হয়েছে।

    সেই জায়গায় ইসলাম মহামারীতে মৃত ব্যক্তিকে শহীদ হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সংক্রমিত ব্যক্তি ও তার পরিবার যেমন সামাজিক মর্যাদাহীনতার শিকার হওয়া থেকে সুরক্ষা লাভ করেছে তেমনি এটা নিশ্চিত হচ্ছে যে সংক্রমিত অঞ্চলে থাকা নিয়ে সেখানকার মানুষ অনীহাগ্রস্থ হয়ে পড়বে না।

    কারণ ইসলাম সংক্রমিত অঞ্চল থেকে পলায়নকে নিষিদ্ধ করেছে যেন সংক্রমণ দ্রুত অন্য অঞ্চলেও না ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ইসলাম এর মধ্য দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা ও মৃত্যুর পর সম্মানজনক শেষকৃত্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে একটা মানবিক কোয়ারেন্টাইনেরব্যবস্থা দাঁড় করিয়েছে।

    শুধু তাই নয়, বরং দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছে যে, একজন শাসক কখনোই জনদূর্ভোগ থেকে নিজেকে দূরে আর নিরাপদে রাখতে পারে না। তাকেও জন দূর্ভোগে শামিল হতে হবে সমানভাবেই। এটাই ইসলাম ও ইসলামের রাষ্ট্রচিন্তা।

    ইসলাম মহামারী থেকে আল্লাহ্*র কাছে আশ্রয় চাইতে শেখায়। সাবধান ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে। আর সংক্রমণ এসে গেলে ধৈর্য্যের সাথে সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে বলে।

    শাসনযন্ত্রের উপর সর্বাপেক্ষা অধিক দায়িত্ব দেয়। সে দায় তারা কোনওভাবেই এড়াতে পারব না। তবে যা কিছুই ঘটুক, প্যানিকড হওয়া যাবে না। মুসলমান প্যানিকড হবে এটা ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মোকাবিলা করবে প্রতিপালকের প্রতি বিনম্র চিত্তে।


    [২]



    সাহাবীদের সময়ে একবার মহামারি প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শাহাদাতবরণ করেন অনেক সাহাবী। তার মধ্যে একজন ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী।

    ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ। তখন খলিফা ছিলেন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। প্লেগ দেখা দিয়েছিলো সিরিয়ায়-প্যালেস্টাইনে। ইতিহাসে যা ‘আম্মাউস প্লেগ’ নামে পরিচিত। উমর (রাঃ) সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। ‘সারগ’ নামক জায়গায় পৌছার পর সেনাপতি আবু উবাইদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খলিফাকে জানালেন, সিরিয়ায় তো প্লেগ দেখা দিয়েছে।

    উমর (রাঃ) প্রবীণ সাহাবীদেরকে পরামর্শের জন্য ডাকলেন। এখন কী করবো? সিরিয়ায় যাবো নাকি যাবো না? সাহাবীদের মধ্য থেকে দুটো মত আসলো। একদল বললেন, “আপনি যে উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, সে উদ্দেশ্যে যান”। আরেকদল বললেন, “আপনার না যাওয়া উচিত”।

    তারপর আনসার এবং মুহাজিরদের ডাকলেন পরামর্শ দেবার জন্য। তারাও মতপার্থক্য করলেন। সবশেষে বয়স্ক কুরাইশদের ডাকলেন। তারা এবার মতানৈক্য করলেন না। সবাই মত দিলেন- “আপনার প্রত্যাবর্তন করা উচিত। আপনার সঙ্গীদের প্লেগের দিকে ঠেলে দিবেন না।”

    উমর (রাঃ) তাঁদের মত গ্রহণ করলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, মদীনায় ফিরে যাবেন। খলিফাকে মদীনায় ফিরে যেতে দেখে সেনাপতি আবু উবাইদাহ (রাঃ) বললেন, “আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর থেকে পালানোর জন্য ফিরে যাচ্ছেন?”

    আবু উবাইদাহর (রাঃ) কথা শুনে উমর (রাঃ) কষ্ট পেলেন। আবু উবাইদাহ (রাঃ) ছিলেন তাঁর এতো পছন্দের যে, আবু উবাইদাহ (রাঃ) এমন কথা বলতে পারেন উমর (রাঃ) সেটা ভাবেননি।

    উমর (রাঃ) বললেন, “ও আবু উবাইদাহ! যদি তুমি ব্যতীত অন্য কেউ কথাটি বলতো! আর হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর এক তাকদীর থেকে আরেক তাকদীরের দিকে ফিরে যাচ্ছি।”

    আল্লাহর এক তাকদীর থেকে আরেক তাকদীরের দিকে ফিরে যাওয়ার মানে কী? উমর (রাঃ) সেটা আবু উবাইদাহকে (রাঃ) বুঝিয়ে বলেন, “তুমি বলতো, তোমার কিছু উটকে তুমি এমন কোনো উপত্যকায় নিয়ে গেলে যেখানে দুটো মাঠ আছে। মাঠ দুটোর মধ্যে একটি মাঠ সবুজ শ্যামল, আরেক মাঠ শুষ্ক ও ধূসর। এবার বলো, ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, তুমি সবুজ মাঠে উট চরাও তাহলে তা আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ী চরিয়েছো। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তা-ও আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ী চরিয়েছো।”

    অর্থাৎ, উমর (রাঃ) বলতে চাচ্ছেন, হাতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভালোটা গ্রহণ করা মানে এই না যে আল্লাহর তাকদীর থেকে পালিয়ে যাওয়া।

    কিছুক্ষণ পর আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আসলেন। তিনি এতক্ষণ অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি এসে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদীস শুনালেন।

    “তোমরা যখন কোনো এলাকায় প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেও না।” [সহীহ বুখারীঃ ৫৭২৯]

    রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসটি সমস্যার সমাধান করে দিলো। উমর (রাঃ) হাদীসটি শুনে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।

    মদীনায় ফিরে উমর (রাঃ) আবু উবাইদাহকে (রাঃ) চিঠি লিখলেন। “আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন। আমার এই চিঠিটি যদি রাতের বেলা আপনার কাছে পৌঁছে, তাহলে সকাল হবার পূর্বেই আপনি রওয়ানা দিবেন। আর চিঠিটি যদি সকাল বেলা পৌঁছে, তাহলে সন্ধ্যা হবার পূর্বের আপনি রওয়ানা দিবেন।”

    চিঠিটা পড়ে আবু উবাইদাহ (রাঃ) বুঝতে পারলেন। খলিফা চাচ্ছেন তিনি যেন প্লেগে আক্রান্ত না হন। অথচ একই অভিযোগ তো তিনি উমরকে (রাঃ) করেছিলেন।

    প্রতিউত্তরে আবু উবাইদাহ (রাঃ) লিখেন- “আমিরুল মুমিনিন! আমি তো আপনার প্রয়োজনটা বুঝতে পেরেছি। আমি তো মুসলিম মুজাহিদদের মধ্যে অবস্থান করছি। তাদের মধ্যে যে মুসিবত আপতিত হয়েছে, তা থেকে আমি নিজেকে বাঁচানোর প্রত্যাশী নই। আমি তাদেরকে ছেড়ে যেতে চাইনা, যতোক্ষণ না আল্লাহ আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেন। আমার চিঠিটি পাওয়ামাত্র আপনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন এবং আমাকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দিন।”

    চিঠিটি পড়ে উমর (রাঃ) ব্যাকুলভাবে কান্না করেন। তাঁর কান্না দেখে মুসলিমরা জিজ্ঞেস করলো, “আমিরুল মুমিনিন! আবু উবাইদাহ কি ইন্তেকাল করেছেন?” উমর (রাঃ) বললেন, “না, তবে তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।” [আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, আব্দুল মা’বুদ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৩-৯৪]

    কিছুদিন পর আবু উবাইদাহ (রাঃ) প্লেগে আক্রান্ত হন। আক্রান্ত হবার অল্পদিনের মধ্যেই শাহাদাতবরণ করেন।

    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “(প্লেগ) মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য শাহাদাত।” [সহীহ বুখারীঃ ২৮৩০]

    আবু উবাইদাহ (রাঃ) ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী। আশারায়ে মুবাশশারার একজন। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকালের পর খলিফা নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলে আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আবু উবাইদাহকে (রাঃ) প্রস্তাব করেন। উমর (রাঃ) ইন্তেকালের আগে কে পরবর্তী খলিফা হবেন এই প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, “যদি আবু উবাইদাহ বেঁচে থাকতেন, তাহলে কোনো কিছু না ভেবে তাঁকেই খলিফা বানাতাম।”

    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্লেগ সম্পর্কে বলেন, “এটা হচ্ছে একটা আজাব। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের উপর ইচ্ছা তাদের উপর তা প্রেরণ করেন। তবে, আল্লাহ মুমিনদের জন্য তা রহমতস্বরূপ করে দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তি যদি প্লেগে আক্রান্ত জায়গায় সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করে এবং তার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে, তাহলে সে একজন শহীদের সওয়াব পাবে।” [সহীহ বুখারীঃ ৩৪৭৪]

    আবু উবাইদাহর (রাঃ) ইন্তেকালের পর সেনাপতি হন রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরেক প্রিয় সাহাবী মু’আজ ইবনে জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। সবাই তখন প্লেগের আতঙ্কে ভীত-সন্ত্রস্ত। নতুন সেনাপতি হবার পর মু’আজ (রাঃ) একটা ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেনঃ

    “এই প্লেগ আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো মুসিবত নয় বরং তাঁর রহমত এবং নবীর দু’আ। হে আল্লাহ! এই রহমত আমার ঘরেও পাঠাও এবং আমাকেও এর যথেষ্ট অংশ দান করুন।” [হায়াতুস সাহাবাঃ ২/৫৮২]

    দু’আ শেষে এসে দেখলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয়পুত্র আব্দুর রহমান প্লেগাক্রান্ত হয়ে গেছেন। ছেলে বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে কুর’আনের ভাষায় বলেনঃ
    “আল-হাক্কু মির রাব্বিকা ফালা তাকুনান্না মিনাল মুমতারিন-
    সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং, তুমি কখনো সন্দেহ পোষণকারীর অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।”
    [সূরা বাকারাঃ ২:১৪৭]

    পুত্রের সান্ত্বনার জবাব পিতাও দেন কুর’আনের ভাষায়ঃ
    “সাতাজিদুনী ইন শা আল্লাহু মিনাস সাবিরীন-
    ইন শা আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবে।”
    [সূরা আস-সাফফাতঃ ৩৭:১০২]

    কিছুদিনের মধ্যে তাঁর প্রিয়পুত্র প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শহীদ হন, তাঁর দুই স্ত্রী শহীদ হন। অবশেষে তাঁর হাতের একটা আঙ্গুলে ফোঁড়া বের হয়। এটা দেখে মু’আজ (রাঃ) প্রচন্দ খুশি হন। আনন্দে বলেন, “দুনিয়ার সকল সম্পদ এর তুলনায় মূল্যহীন।” অল্পদিনের মধ্যে তিনিও প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শহীদ হন। [আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, ৩/১৫১-১৫২]

    দুই.


    করোনা ভাইরাস অনেক জায়গায় মহামারি আকার ধারণ করেছে। সারাবিশ্বে এখন আলোচিত টপিক হলো করোনা ভাইরাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে ব্যস্ত। বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর, স্টেশনগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কা’বা ঘরের তাওয়াফ সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে (এখন খুলে দেওয়া হয়েছে)। সবমিলিয়ে পুরো বিশ্ব একটা আতঙ্কের মধ্যে আছে।

    ঠিক এই মুহূর্তে প্রশ্ন উঠছে- করোনা ভাইরাস কি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো আজাব?

    বিগত কয়েক মাসের চীন সরকারের মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব এবং মুসলিমদের উপর নির্যাতনের ফলে অনেকেই মনে করছেন, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব। চীন সরকার উইঘুরের মুসলিমদের যেমনভাবে নির্যাতন করেছে, মুসলিম আইডেন্টিটির জন্য তাদেরকে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, চীন সরকারের এই ‘অ্যাকশন’ এর জন্য একটা ‘রিঅ্যাকশনারি’ অবস্থান থেকে মুসলিমরা কেউ কেউ করোনা ভাইরাসকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব বলে অভিহিত করছেন।

    রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস থেকে দেখতে পাই, প্লেগকে তিনি বলেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব, আবার বলেছেন এটা মুমিনদের জন্য শর্তসাপেক্ষে রহমত। একই মহামারি ভাইরাস কারো জন্য হতে পারে আজাব, আবার কারো জন্য হতে পারে রহমত। তাই বলে, একে ঢালাওভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব কিংবা ঢালাওভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত বলার সুযোগ নেই।

    মহামারি ভাইরাস যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব হয়ে থাকে, তাহলে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী আল্লাহর আজাবে ইন্তেকাল করেছেন? সাহাবীদের বেলায় আল্লাহ সাধারণভাবে ঘোষণা করেছেন- আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি। তাহলে সুহাইল ইবনে আমর, মু’আজ ইবনে জাবাল, ফদল ইবনে আব্বাস, ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান, আবু মালিক আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) সাহাবীগণ আল্লাহর আজাবে নিপতিত হয়েছেন?

    উত্তর হচ্ছে- না। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস অনুযায়ী ঐ মহামারিকে তারা রহমত হিশেবে নিয়েছিলেন। মহামারিতে মৃত্যুবরণ করাকে তারা শাহাদাত হিশেবে দেখেছেন। যার ফলে মু’আজ ইননে জাবাল (রাঃ) সেই রহমত পাবার জন্য দু’আ পর্যন্ত করেন।
    তিন.

    মহামারি থেকে বাঁচার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করবো, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী চলবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্লেগের ব্যাপারে প্রথমে সতর্ক করেন- যেসব জায়গায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, সেসব জায়গায় যাবে না। তারপর বলেছেন, যেখানে আছো সেখানে প্লেগ দেখা দিলে অন্যত্র যাবে না।

    রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস, উমরের (রাঃ) আমল থেকে দেখতে পাই- মহামারির বেলায় প্রতিরক্ষার দিকে সতর্ক হবার শিক্ষা।

    আবার অন্যন্য সাহাবীরা যখন প্লেগে আক্রান্ত হয়েছেন, তখন ধৈর্যধারণ করে, রহমত মনে করে আল্লাহর ফয়সালাকে মেনে নিয়েছেন। যার প্রতিদানস্বরূপ রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস অনুযায়ী তাঁদের মৃত্যু হলো- শাহাদাতবরণ।

    আমরাও করোনার ব্যাপারে যথাযথ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো, আল্লাহর কাছে দু’আ করবো। তারপরও যদি করোনা-আক্রান্ত হই তাহলে ধৈর্য ধরবো, আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট হবো এবং শাহাদাতের পেয়ালাপানে উন্মুখ থাকবো। ‘ভালো মন্দ যা কিছু ঘটুক, মেনে নেবো এ আমার ঈদ’।


    সংগৃহিত
    আমার নিদ্রা এক রক্তাক্ত প্রান্তরে,
    জাগরণ এক সবুজ পাখি'র অন্তরে।
    বিইযনিল্লাহ!

  • #2
    মাশাআল্লাহ,,,জাযাকাল্লাহ,,,।
    অনেক উপকৃত হলাম।
    আল্লাহ কবুল করুন,আমীন।
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর পোস্ট।
      আল্লাহ তা‘আলা আপনার মেহনতকে কবুল করুন। আমীন
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        মাশা আল্লাহ, উপকারী পোস্ট।
        আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শরীয়াহর আলোকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন
        “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
        -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment

        Working...
        X