দারুল ইরফান কর্তৃক প্রকাশিত
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-১১
================================================== ===============================
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-১১
================================================== ===============================
জিহাদের আয়াত সমূহ নিয়ে একটু ভাবুন
আপনাদের প্রত্যেকেই যেন কুরআনে হাকিম, বিশেষত জিহাদ ও যুদ্ধের আয়াতের সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করে। তখন যেন লক্ষ্য করে, সে কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরিকার উপর আছে, নাকি তার তরিকা থেকে দূরে সরে জিহাদ ত্যাগকারীদের কাছে চলে গেছে এবং সর্বাবস্থায় নেক কাজের তাওফিক এবং মন্দ কাজ থেকে বাঁচার তাওফিক তো আল্লাহ তাআলারই পক্ষে হয়।
বিত্তবান মুনাফিকদের চিত্র
আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য থেকে সর্তক করে বলেন,
وَإِذَا أُنْزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ آَمِنُوا بِاللَّهِ وَجَاهِدُوا مَعَ رَسُولِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُولُو الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوا ذَرْنَا نَكُنْ مَعَ الْقَاعِدِينَ
‘এবং যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় এ মর্মে যে, আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করো এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে জিহাদ কর তখন তাদের বিত্তবান লোকেরা আপনার কাছে (জিহাদে না যাওয়ার) অনুমতি চায় এবং বলে, আমাদেরকে ওজরগ্রস্তদের সাথে থাকতে দিন।’ [1]
বিত্তবান ভাইয়েরা! যাদের আল্লাহ তাআলা সম্পদ, সুস্থতা, শক্তি, বিবেক, দৃষ্টিশক্তি তথা সকল নিয়ামত দ্বারা ভূষিত করেছেন, তাদের উচিৎ জিহাদ ত্যাগকারীদের দলভুক্ত না হওয়া।
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন,
رَضُوا بِأَنْ يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لا يَفْقَهُونَ
“তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে।“ [2]
এ সকল লোকেরা মহিলাদের সাথে বসে থাকতে পেরে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। অথচ মহিলাদের দায়িত্বে জিহাদ নাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোবারকবাণী অনুযায়ী তাদের দায়িত্বে এমন জিহাদ রয়েছে যাতে অস্ত্র ব্যবহার লাগেনা অর্থাৎ, হজ্জ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের থেকে শুধুমাত্র ইসলামের উপর বাইয়াত নিয়ে ছিলেন। মহিলা এবং গোলামদের থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র ইসলামের উপর বাইয়াত নিতেন। পক্ষান্তরে স্বাধীন পুরুষদের থেকে ইসলাম এবং জিহাদ উভয়ের উপর বাইয়াত নিতেন। সুতরাং আপনিও যদি নিজের ঘরে বসে থাকেন তাহলে আপনার আর মহিলাদের মাঝে পার্থক্য কোথায়?
কোথায় সা’দ ও মুসান্না রাযি. এর উত্তরসূরিরা?
আরব ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষার জন্য এবং সা’দ মুসান্নার উত্তরসূরিদের রক্ষার জন্য আমরা ইহুদী-খৃস্টানদের জাজিরাতুল আরবে নিয়ে এসেছি। এমনকি তাদের নারীদেরকেও নিয়ে এসেছি। তবে কি জাজিরাতুল আরবে কোন পুরুষ নেই? আল্লাহর শপথ! জাহিলিয়্যাতের যুগেও আমাদের পূর্বপুরুষরা এমন লাঞ্ছনা সহ্য করেনি। কিন্তু আজ আমরা সহ্য করে বসে আছি। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ মহান দ্বীন ও সিরাতে মুস্তাক্বীম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। উম্মাহর এ করুণ পরিণতি আল্লাহর কাছেই পেশ করছি। لا حولَ ولا قوَّةَ إلَّا باللهِ
মুমিন ও মুনাফিকদের অবস্থানের বৈপরীত্য!
মুনাফিকদের এ সকল বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য হলো, যেন আমরা তা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। কুরআন হাকিমের মাঝে তাদের এই অবস্থা ‘রিযা’ সন্তুষ্টি শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
رَضُوا بِأَنْ يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لا يَفْقَهُونَ
“তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে। এবং মোহর এতে দেওয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর বস্তুত: তারা বোঝে না।“ [3]
অতঃপর সত্যিকার ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,
لَكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَأُولَئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“কিন্তু রাসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে।“ [4]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জিহাদকারীদের সফলতা এবং তাদের পথ পদ্ধতিকে সঠিক হওয়ার সাক্ষী দিচ্ছেন। সুতরাং আপনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আসলাফদের অনুসারী হয়ে থাকলে আপনার পথও এটাই। যা উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট। এখানে মুমিনদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পশ্চাতে উপবিষ্টদের সাথে বসে থাকার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা সঠিক পথ বর্ণনা করে বলেন,
لَكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا
‘কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং যারা তাঁর সাথে ঈমান এনেছে।’ [5]
অর্থাৎ, যদি আপনি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আসলাফদের সত্যিকার অনুসরণকারী হন, তাহলে তাদের পথ জেনে নিন তারা নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ করেছেন।
‘তারা নিজেদের সম্পদ, জীবন সহ জিহাদ করেছেন।’ [6]
পক্ষান্তরে মুনাফিকরা পশ্চাতে বসে রয়েছে, তাদের নফস তাদেরকে প্রতারণায় ডুবিয়ে রেখেছে এবং তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সাথে মিথ্যা বলেছে।
[1] সূরা তাওবা: ৮৬
[2] সূরা তাওবা: ৮৭
[3] সূরা তাওবা: ৮৭
[4] সূরা তাওবা: ৮৮
[5] সূরা তাওবা: ৮৮
[6] সূরা তাওবা: ৮৮
আরও পড়ুন
Comment