আন নাসর মিডিয়া
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৫
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৫
==================================================
===============================
নিরাপত্তা সম্পর্কিত কিছু নির্দেশনা
ভাইয়েরা আমার! এরপর দেখুন! কথা হচ্ছে নিরাপত্তা সম্পর্কে। নিরাপত্তা অবলম্বন করা ওয়াজিব। কেন ওয়াজিব? কারণ ফিকহী একটি কায়েদা (নিয়ম) আছে-
مالايتم الواجب إلابه فهو واجب
“যা ছাড়া ওয়াজিব পূর্ণ হয়না, তাও ওয়াজিব।”
একটি কাজ ওয়াজিব বা ফরজে আইন। (যেমন) জিহাদ ফরজে আইন। জিহাদ নামক এ ফরজে আইন যেহেতু নিরাপত্তা অবলম্বন ব্যতীত সম্ভব নয়। তাই নিরাপত্তা অবলম্বন করাও ফরজ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন- خُذُوا حِذْرَكُم “তোমরা (নিরাপত্তার জন্য) সব ধরণের উপায়-উপকরণ অবলম্বন কর।” আর আমরা বলি, এটা কোন বিষয়ই নয়! তাহলে আমাদের এ জিহাদ কত দিন চলবে? দেখা যাবে কয়েকদিনের ভিতরেই এটি খতম হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে তাওফীক দিয়েছেন, যারা দীর্ঘ সময় ধরে আমেরিকানদের শায়েস্তা করছেন, আর সারা দুনিয়াব্যাপী আমেরিকানরা তাদের পিছনে ঘুরছে এবং নিজেদের যত উপায়-উপকরণ আছে, সব তাদের বিরুদ্ধে খরচ করছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা (এত বছর পর্যন্ত আমেরিকানদের) তাদের বিরুদ্ধে বিজয় দেননি। কেন দেননি? কি কারণে দেননি?
কারণ, আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তারা আল্লাহ তা‘আলার এই হুকুম- خُذُوا حِذْرَكُم এর উপর আমল করে। সে অনুযায়ী তারা সতর্কতা অবলম্বন করেছে, সতর্কতার জন্য যাবতীয় উপায়-উপকরণ অবলম্বন করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে দারে আরকামের মত ঘর খোঁজেছে, তারাও সেভাবে খুঁজেছে এবং সেখানে গিয়ে থেকেছে। আলহামদুলিল্লাহ্! দীর্ঘকাল পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এ সব উপকরণ অবলম্বনের তাওফীক তাদের দিয়েছেন। যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাওফীক দিয়েছেন, তারা দ্বীনের সাহায্য করেছে এবং জিহাদের কাজ করেছে। যদি তারা যে দিন নাইন ইলেভেন হয়েছে, সে দিন থেকেই বসে থাকতো, তাহলে বিষয়টি কেমন হতো? অনেকে বলে- নিরাপত্তা অবলম্বনের প্রয়োজন নেই! নিরাপত্তা কি জন্যে? জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে যাব। একথা ঠিক নয়। নিরাপত্তা ও সতর্কতা অবলম্বন করা ওয়াজিব বা ফরজ।আর এ ফরজের মধ্যে কোন ধরণের শিথিলতা, আল্লাহ তা‘আলার কিতাব خُذُوا حِذْرَكُمএর হুকুমের সাথে সাংঘর্ষিক। এ শিথিলতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত এবং তাঁর হাদিস إستعينوا على قضاء الحوائج بالكتمانএর উপর আমলের পরিপন্থী।
আমার ভাইয়েরা! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে এমনভাবে তারবিয়ত করেছেন ও শিক্ষা দিয়েছেন যে, তারা সবাই মনে-প্রাণে নিরাপত্তামনষ্ক হয়ে গিয়ে ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রাযি.কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ জন সাহাবী দিয়ে বললেন, এই চিঠিটি নাও। তুমি এবং তোমার সাথীগণ দু’দিন সফর করার পর যেখানে পৌঁছাবে, সেখানে গিয়ে চিঠিটি খুলবে। দু’দিন পর্যন্ত চিঠিটি না খুললেও তাতে কি লেখা আছে? তা জানার ইচ্ছা তাদের সবার ছিল, তারপরও তারা খুলে দেখেননি।
কোন সাথীকে যদি বলা হয় যে, জিনিসটি রাখুন, এতদিনের পূর্বে খুলবেন না। তিনি কি না খুলে রেখে দিবেন? তাছাড়া যদি কোন সাথীকে কারো হাওয়ালা করা হয় এবং এর সাথে আমীর সাহেবকে বলা হয়, সাথীদের বলা যাবে না তারা কোথায় যাচ্ছে? তখন কি হয়? তখন বলা হয় আপনার কি আমার উপর আস্থা নেই? আমাকে কি আপনি গোয়েন্দা মনে করেন? আপনার কি মনে হয় আমি খেয়ানত করব? এত বছর হয়েছে, আমি হিজরত করেছি। এতদিন যাবৎ আমি জিহাদ করছি, অথচ আপনি আমার উপর আস্থাই রাখতে পারছেন না..!
এগুলো কত বড় আফসোসের বিষয়! আল্লাহর নবী চিঠিসহ সাহাবীদের পাঠিয়েছেন। অথচ আমীর-মামুর কারোরই জানা নেই, তারা কোথায় যাচ্ছে? মাশাআল্লাহ, তা সত্ত্বেও তারা রওয়ানা হয়ে গেছেন। দু’দিন পর্যন্ত সফর করার পর যখন তারা লক্ষ্যস্থলে পৌঁছালেন। তখন চিঠি খুলে দেখলেন, চিঠিতে লেখা আছে, কুরাইশের কাফেলা ঐদিক দিয়ে যাচ্ছে, তাদের পিছু ধাওয়া কর।
বস্তুত: কোন বিষয় যত গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ আমরা তাকে বানিয়ে নেই। এখানে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কারণ পাওয়া যাচ্ছে, যার কারণে সবাইকে বলতে হবে। আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের জিহাদের ক্ষতি করছি? এতে আমাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুশমনের ফায়েদা হচ্ছে।
মক্কা বিজয়ের ঘটনাটি হয়তো সবাই জানি। সবাই কোন দিকে যাচ্ছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাউকে বলেননি। এমনকি এক দু’জন সাহাবা ব্যতীত অন্য সকল সাহাবার বক্তব্য হলো: তারা কোন দিকে যাচ্ছেন, তারা নিজেরাও জানতেন না। কি আশ্চর্য! রাসূলের সাহাবীগন মক্কা বিজয় করতে যাচ্ছেন, অথচ তাদের নিজেদেরও জানা নেই তারা কোথায় যাচ্ছেন? সীরাতের কিতাবে এসেছে- অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণের উক্তি ছিল, মক্কার নমুনা বা চিহ্ন যখন আমাদের নজরে এসেছে, তখন আমরা বলে উঠেছি, ও আচ্ছা! আমরা তাহলে মক্কা যাচ্ছি। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত এবং সাহাবাদের সীরাতের মাঝে আমাদের জন্য অনেক বড় বড় শিক্ষা রয়েছে।
আরও পড়ুন
Comment