Announcement

Collapse
No announcement yet.

কারাগার— জীবিতদের কবর, বিষাদের ঘর, সত্যবাদীদের জন্য অভিজ্ঞতা আর শত্রুদের আনন্দের উৎসস্থল

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কারাগার— জীবিতদের কবর, বিষাদের ঘর, সত্যবাদীদের জন্য অভিজ্ঞতা আর শত্রুদের আনন্দের উৎসস্থল


    কিছু জিনিস আগুনে পুড়ে যায়, কিছু জিনিস বিশুদ্ধ হয়।

    পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে একটা প্যাটার্ন দেখা যায়।

    যারা সত্যের পথে চলেন,
    যারা হকের সাথে আপস করেন না, যারা আর সবকিছুকে ভুলে, কোনোরকম ছাড় না দিয়ে এক আল্লাহর আনুগত্যকে আঁকড়ে ধরেন—

    তাঁদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়।

    এর কোনো ব্যতিক্রম নেই।

    এটা আল্লাহর
    সুন্নাহ।

    সিরাতুল মুস্তাক্বিমের ওপর থাকলে,

    তাওহিদের প্রশ্নে ছাড় না দিলে,

    এক সময় না এক সময় আমাদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবেই।
    এটাই নিয়ম।

    আল্লাহ বলেন :
    মানুষ কি মনে করে যে,
    ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে,
    আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?

    আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম;


    আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি
    জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।
    [সূরা আনকাবূত, ২৯ : ২-৩]

    আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-
    ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে।
    আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও
    যাদের ওপর কোনো বিপদ নিপতিত হলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং
    নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।


    তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের
    পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।
    [সূরা বাক্বারা, ০২ :১৫৫-১৫৭]

    সত্যকে স্বীকার করতে গেলে কমফোর্ট যোন থেকে সরতে হয়।

    নিজের কিছু পছন্দের
    জিনিস ছাড়তে হয়।
    ছাড়তে হয় সাজানো-গোছানো, অন্য সবার মতো করে বানানো
    খেলাঘরের মায়া।

    কিন্তু বিনিময়ও পাওয়া যায়।

    এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে আর-
    রাহমান তার বাছাইকৃত বান্দাদের মর্যাদা দান করেন, সম্মানিত করেন।

    বিশুদ্ধ করেন এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে আর-রাহমান তাঁদের বাছাই করে নেন যারা লাভ করবে তাঁর নৈকট্য।

    পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ এ হক ও বাতিলকে আলাদা করেন,
    মানুষের কাছে তা স্পষ্ট করে তোলেন

    পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ বিজয়ের
    উপলক্ষ প্রস্তুত করেন,
    আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করেন


    এই দ্বীন মহান,
    একমাত্র মহানেরাই
    একে বহনের ক্ষমতা রাখে।

    আর পরীক্ষার
    মাধ্যমেই সাধারণ আর অসাধারণের মধ্যেকার পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা মহান হয়ে ওঠেন।


    হক পথের বৈশিষ্ট্যই পরীক্ষা।
    এই পরীক্ষা বিভিন্ন
    মাত্রার হতে পারে। বিভিন্নভাবে আসতে পারে।

    কিন্তু পরীক্ষা আসবেই।
    নিশ্চয়ই যে পথে চলতে গেলে বাধা আসে না, যে পথ কণ্টকাকীর্ণ নয়,
    সে পথ দ্বীন ইসলামের
    পথ নয়।

    খুব চমৎকারভাবে এই পথের পরিচয় তুলে ধরেছেন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম


    কয়েকটি লাইনে ফুটিয়ে তুলেছেন চিন্তার একটি সমুদ্র :


    এ পথ তো সেই পথ!
    যে পথে চলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন আদম।

    ক্রন্দন
    করেছিলেন নূহ।

    আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ।

    যবেহ করার জন্য
    শোয়ানো হয়েছে ইসমাইলকে।

    খুব স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়েছিল ইউসুফকে
    কারাগারে কাটাতে হয়েছিল জীবনের দীর্ঘ কয়েকটি বছর।

    যবেহ করা হয়েছে নারী-
    সংশ্রব থেকে মুক্ত ইয়াহইয়াকে।

    রোগে ভুগেছেন আইয়ূব।

    দাউদের ক্রন্দন, সীমা
    অতিক্রম করেছে।

    নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেছেন ঈসা আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস
    সালাম।

    নানা দুঃখ-দুর্দশা, কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করেছেন শেষ নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

    আর তুমি এখনো খেল-তামাশায় মত্ত?!

    [ আল-ফাওয়ায়িদ, ইবনুল কাইয়্যিম]

    যুগে যুগে সত্য পথের পথিকেরা সবচেয়ে বেশি যে পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন
    তার অন্যতম বন্দীত্ব৷

    কারাগার— জীবিতদের কবর, বিষাদের ঘর, সত্যবাদীদের
    জন্য অভিজ্ঞতা আর শত্রুদের আনন্দের উৎসস্থল।

    কারাগার এমন এক পরীক্ষা
    যা কারও জন্য আনে সোনালি ফসল,

    আবার কারও জন্য আনে ধ্বংস কিংবা বিচ্যুতি।


    এ হলো এমন এক পরীক্ষা
    যা হয় মানুষকে পদাবনত করে, হৃদয়কে সংকুচিত করে
    অথবা মানুষ এ থেকে লাভবান হয়।

    বন্দীত্ব তার চিন্তা ও নফসকে
    পরিশুদ্ধ করে।


    অনেকের জন্য এ হলো
    সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া,

    দ্বীনকে তুচ্ছ মূল্যে বিকিয়ে এ হলো এমন এক পরীক্ষা

    যা হয় মানুষকে পদাবনত করে, হৃদয়কে সংকুচিত করে অথবা মানুষ এ থেকে লাভবান হয়।

    আবার অনেকের জন্য
    কারাগার হলো নবি ইউসুফের পাঠশালা।

    এমন এক জায়গা যেখানে বান্দা অনুভব করে যুহদ ও ইবাদতের স্বাদ, ঈমানের মিষ্টতা, সময়ের বারাকাহ আর আখিরাতের তীব্র কামনা।

    এমন এক পাঠশালা যেখানে স্বীয় প্রতিপালকের স্মরণে পাথরের মতো শক্ত হৃদয়ও কোমল হয়,
    প্রাণহীন আশাহত কলুষিত অবাধ্য চোখেও নামে অনুতাপ আর তাওবাহর বৃষ্টি।

    কারাগার এমন এক পাঠশালা যেখানে মস্তিষ্কে মজুদ করা ইলম হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত হয়,
    ইলম আমলে পরিণত হয়,
    সত্যের পথে চলার সংকল্প দৃঢ় হয় আর বান্দা অর্জন করে রবের নৈকট্য


    কারাগারে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন নবি ইউসুফ।
    কালক্রমে মহান এ নবির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বন্দীত্বের স্বাদ আস্বাদন করেছিলেন

    খুবাইব ইবনু আদি , ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, আহলুস সুন্নাহর ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলসহ সালাফ আস-সালেহিনের অনেকেই।

    এ পাঠশালার গর্বিত শিক্ষার্থী ছিলেন ইবনুল কাইয়্যিম, ইবনু কাসির, ইবনু হাজর আল-আসকালানী, ইবনু হাযম, ইবনুল আসির, শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহসহ উম্মাহর মহিরুহরা, আল্লাহ তাঁদের ওপর রাহমাহ বর্ষণ করুন। (আমীন)

    বন্দীত্ব আর কারাগার তাঁদের পরাজিত করতে পারেনি, পারেনি সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে।
    নির্যাতন পারেনি হকের প্রশ্নে আপসে তাঁদের বাধ্য করতে।

    বরং আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে আপসহীন অবস্থানের কারণে তাঁরা হয়েছিলেন পরিশুদ্ধ, সম্মানিত।

    তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহ পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্য স্থাপন করেছেন অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

    সাম্প্রতিক যুগেও যখন সোনালি এ পথের উত্তরাধিকারীরা তাওহিদের পতাকা উঁচিয়ে ধরলেন, হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করলেন, মানবরচিত সংঘ, তন্ত্রমন্ত্র ও শরীয়াহর বদলে কিতাবুল্লাহ ও নববী মানহাজের দিকে উম্মাহকে আহ্বান করলেন, পূর্ব ও পশ্চিমের তাওয়াগ্গীত তাদের বন্দী করল, কারাগারে ছুড়ে দিলো।

    কুরআনে বর্ণিত ,,
    সেই ফিরআউনের মতোই আধুনিক ফিরাউনরাও বলল : ‘যদি তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ইলাহরূপে গ্রহণ করো, তাহলে আমি তোমাকে অবশ্য অবশ্যই কারারুদ্ধ করব।' [সূরা আশ শুয়ারা, 26 : ২৯]

    সত্য পথের পথিকদের আবদ্ধ করা হলো। তাঁদের ওপর চালানো হলো অমানুষিক, অবিশ্বাস্য, অভূতপূর্ব সব নির্যাতন।

    পুনরাবৃত্তি হলো সেই একই গল্পের। বদলালো কেবল নামগুলো। পুরোনো কারাগার আর অন্ধকূপগুলো জায়গা দখল করে নিল তোরা, গুয়ান্তানামো, বাঘরাম, আবু গ্রাইব, আল হাইর, সাইদনায়া আর নানা ব্ল্যাক সাইট।

    খুবাইব , বিলাল আর সুমাইয়্যাদের জায়গা নিতে এল সাইদ,উমার, নাসির আর আফিয়াসহ নাম না জানা আরও অসংখ্য মুওয়াহহিদ।


    দোররা,চাবুক, মরুভূমির সূর্য, উত্তপ্ত কয়লা, আর বর্শার জায়গা নিল এনহ্যান্সড ইন্টারোগেইশান টেকনিক, ইলেকট্রিকিউশান, সেনসরি ডিপ্রাইভেইশান, ওয়াটার বোর্ডিং আর আবু গ্রাইবের মতো পৈশাচিকতা।

    কিন্তু বদলালো কেবল খুঁটিনাটিগুলোই। মূল চিত্রনাট্য আজও অপরিবর্তিত।

    অনেকে হার মানল, আপস কিংবা চুক্তি করল, বিকিয়ে দিলো নিজের বিশ্বাস ও আদর্শকে।

    কিন্তু ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল, ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহর মতোই তাঁদের উত্তরসূরিরা শক্ত হাতে আঁকড়ে রাখলেন তাওহিদের হাতলকে।


    নিজেদের স্বাধীনতা, সময় ও রক্তের বিনিময়ে, নবি ইউসুফের পাঠশালায় নিজেদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আঁধারের এ সুদীর্ঘ মওসুমে পথহারা উম্মাহর সামনে হক ও বাতিলের পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরলেন।

    দুঃখজনকভাবে সোনালি প্রজন্মের উত্তরাধিকারীরা আমাদের মাঝে থাকলেও আজ সার্বিকভাবে আমরা এ পথের মাহাত্ম্য এবং এ পথের পথিকদের ভুলতে বসেছি।

    📗 ইউসুফ (আঃ) পাঠশালা
    ✍️ প্রিয় মুহাতারাম শায়েখ
    আহমেদ মুসা জিবরীল (হাফিঃ)
    বন্দী ভাই ও তাদের পরিবারের জন্য আপনার সাহায্যের হাতকে প্রসারিত করুন
Working...
X