মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?” তৃতীয় পর্ব :-
হে মুসলিম উম্মাহ ! নিশ্চিতভাবেই আমাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীনগণ আমাদের জন্যে উদাহরণ ও অনুসরণীয় নীতি রেখে গেছেন;
রেখে গেছেন কিভাবে শত্রুদের হাত থেকে মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করতে হয় তার দৃষ্টান্ত।
যখন মানসুর বিন আবি আমির উত্তর আন্দালুসিয়ার জিহাদ থেকে ফিরে আসলেন,
তিনি করডোভার একটি ফটকে একজন মুসলিম নারীর সাক্ষাত লাভ করলেন।
মহিলাটি তাকে বললেন, “হায় !
আমি নিশ্চিত আমার সন্তানকে খ্রিস্টানরা বন্দী হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে-
আর তুমি মুক্তিপণ দিয়ে তাকে মুক্ত করে আনো”।
মানসুর শহরের ফটক থেকেই ফিরে গেলেন, করডোভাতে প্রবেশ পর্যন্ত করলেন না। বরং, তিনি মুজাহিদিনদের সাথে করে ফিরে গেলেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে মুক্ত করে আনতে পারলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরে এলেন না,
আর এ সবই মাত্র একজন মুসলিম বন্দীকে মুক্ত করে আনার জন্যে।
আর স্মরণ করুন আন্দালুসিয়ার সেই শাসকের কথা,
তিনি আল হাকিম বিন হিশাম, যখন জানলেন একজন মুসলিম নারীকে বন্দী হিসেবে তুলে নেয়া হয়েছে তিনি শুনলেন, “ও আল হাকাম ! আমাকে উদ্ধার করো” !
ঘটনাটির গুরুত্ব তাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলল।
কাজেই তিনি লোকজন জড়ো করলেন, নিজে এবং তার সৈন্যদলকে প্রস্তুত করলেন এবং ১৯৬হিজরী (৮১২ সাল) এ শত্রুদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।
তিনি তাদের দেশে নিজের বাহিনী চালিয়ে দিলেন, একের পর এক দূর্গ জয় করলেন। তিনি সারা দেশ তছনছ করে দিলেন, সমস্ত সম্পদ আটক করলেন।
যুদ্ধে শত্রুপক্ষের পুরুষেরা নিহত হলো, নারীরা যুদ্ধবন্দী হলো…আর এসব কি জন্যে? একজন মুসলিম নারীর সম্মান রক্ষার্থে।
তার মুক্তি নিশ্চিত করার পরেই তিনি ফিরে এলেন করডোভাতে বিজয়ীর বেশে।
মুতাসিমের নিকট এই মর্মে আরো সংবাদ পৌঁছুল যে, উমুরিইয়াহ নামক স্থানে একজন খ্রিস্টান ব্রুট (brute) কর্তৃক একজন মুসলিমাহকে বন্দী করা হয়েছে। আরো সংবাদ এল,
তাকে বন্দী করে নির্যাতন করা হচ্ছিল এবং গালে থাপ্পড় মারা হচ্ছিল, একজন গুপ্তচর খলিফা মুতাসিমের নিকট জানাল যে নির্যাতনের সময় মহিলাটি “ওহে মুতাসিম !” বলে ডাকছিল, এবং কিভাবে একজন খলিফা বর্তমান অবস্থায় শত্রুদের হাতে মুসলমান নারী নির্যাতনের শিকার হয় তা নিয়ে চিৎকার করছিল।
এ ঘটনা শুনে খলিফা মুতাসিম যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হলেন, প্রমাণ করে দিলেন একজন মাত্র একজন মুসলমানের মর্যাদা কত বেশি,
যাকে মুক্ত করার জন্যে তিনি নিজে সেনাদলের প্রধান হিসেবে সত্তর হাজার সৈন্যের বাহিনী নিয়ে উমুরিয়াহ নামক স্থানে পৌঁছুলেন এবং তা জয় করলেন, এরপর সেই বিধর্মী অত্যাচারী খ্রিস্টানকে খুঁজে বের করলেন,
তার শিরচ্ছেদ করলেন এবং সেই সম্ভ্রান্ত মুসলিমাহ কে মুক্ত করে একজন যথাযথ শাসকের দায়িত্ব পালন করলেন।
আবু গালিব হাম্মাম বিন আল মুহাযিব আল মা’রি তার ইতিহাসগ্রন্থে উল্লেখ করছেন, সাইফ আল দৌলা তার সমস্ত কোষাগার খালি করে অর্থ খরচ করেছেন রোমানদের হাত থেকে মুসলিম বন্দীদের মুক্তিপণ হিসেবে,
আরো উল্লেখ করেছেন আবুল আব্বাস আল খুজাই, শ্যাম দেশের যিনি গভর্ণর ছিলেন তিনি তুর্কিদের থেকে মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করার জন্যে সেই আমলে এক মিলিয়ন দিরহাম পর্যন্ত ব্যয় করেছেন !
এই ছিল সেই সব মুসলিম দেশের শাসকেরা যারা গত হয়েছেন, যখনই তারা কোন সাহায্যের আর্তচিৎকার শুনেছেন,
তারা তীরের মত সেখানে সাড়া দিতে ছুটে গেছেন, সাহায্য করেছেন এবং মযলুমকে যালিমের হাত থেকে মুক্ত করেছেন।
আর হ্যাঁ, এজন্যেই খলিফা উমর বিন আবদুল আযীযে (রাহিমাহুল্লাহ) এর মত মহান ব্যক্তিরা তাঁর মন্ত্রীকে এই মর্মে পত্র লিখে পাঠিয়েছিলেন যে,
‘যদি একজন মাত্র মুসলিম কারাবন্দীকে মুক্ত করার জন্যে সমগ্র ইসলামিক রাষ্ট্রের কোষাগার খালি করে দিতে হয় তবে তাই কর’।
যদি অর্থের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্ত করা না যায়, তাহলে চূড়ান্ত সতর্কতা এবং মৌখিক হুমকির ব্যবহার করা আবশ্যক।
যখন কুতায়বা (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহমত নাযিল করুন) সুমানের শাসকের সাথে বন্দীদের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন,
তখন তিনি নাইজাক টারখানের নিকট মুসলিম বন্দীদের ব্যাপারে চরমপত্র প্রেরণ করেছিলেন এবং এর ভাষা ও হুমকির ধরণ দেখে শাসক নাইজাক ভীত হয়ে তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে গিয়েছিল এবং মুসলিম কারাবন্দীদের মুক্ত করে দিয়েছিল।
জনসাধারণের মাঝে মুসলিম যুদ্ধবন্দী ও কারাবন্দীদের মুক্ত করার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে আলেমগণ সর্বদাই সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন,
এটা তারা করেছেন নিজেদের দেশের মুসলিম শাসকের নিকট চরমপত্র প্রেরণ করে কিংবা শত্রুদেশের শাসকের সাথে সাক্ষাত করে কিংবা কমপক্ষে
তাঁরা আল্লাহ্র দরবারে দুয়া মোনাজাত করে হলেও চেষ্টা করেছেন যেন মুসলিম যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করে দেয়া হয়।
🎙️"শাইখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল হাবদান"🎤“মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?”
শীর্ষক জুম্মার খুতবার লিখিত রুপ
(১৬ আগস্ট ২০০২ সাল ১৪২৩ হিজরী)
Comment