আমরা অনেক সময় ভাবি যে,কেন আমার অন্তর সেরকম আচরণ করে না,যা আমার ব্রেইন বলছে,যা আমার বিবেক বলছে। মানে,আমরা জানি আমাদের কি করা উচিত। কিন্তু আমরা আমাদের নাফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। যাদের বিবেকবোধেই সমস্যা এখানে তাদের কথা বলছি না। যাদের বিবেকবোধ সাফ,কিন্তু অন্তর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়,এখানে এব্যাপারে বলতে চাচ্ছি। আমি জানি,বুঝি যে,খাওয়ার সময় ৩ ভাগের ১ ভাগের বেশি পেট খাবার দিয়ে পূর্ণ করা ঠিক না। এরপরেও তা পারি না। আমি জানি যে,আমার জন্য পরনারীর দিকে তাকানো ঠিক না,এরপরেও কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমি জানি যে,আমার পুরো সময় আল্লাহর ইবাদত আর সুন্নাতের মাঝে মশগুল রাখা উচিত। তাও আলসামি আর হেয়ালিপনা কেন করে থাকি... ? ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মানুষের অন্তর নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর সাথে জান্নাতে বিভিন্ন বিষয়ে মুজাকারা করার ব্যবস্থা করে দিন,আমিন। তিনি তাঁর একটি আলোচনায় এনেছেন যে,কিভাবে মানুষের অন্তর নিয়ন্ত্রিত হয়। তাঁর মতে,মানুষের ২ ধরণের ইন্দ্রিয় আছে। বাহ্যিক আর আভ্যন্তরীণ।
বাহ্যিক ইন্দ্রিয় ৫টিঃ
- দৃষ্টি
- শ্রবণ
- স্বাদ
- স্পর্শ
- ঘ্রাণ
আভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয় ৫ টিঃ
- কল্পনা
- পুন:স্মরণ
- ফিকির
- স্মৃতি
- কাণ্ডজ্ঞান
মানুষ তাঁর এই ১০ ইন্দ্রিয়কে যে কাজে ব্যস্ত রাখে,তাঁর অন্তর,তাঁর ক্বালব এভাবে গড়ে উঠে। অর্থাৎ,আমরা উল্টো দিক থেকে ভাবতে পারি । আমি আমার নাফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তো,মূলত এই ১০টি ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদি এদেরকে সুস্থ রাখতে পারি। এদেরকে যদি সব সময় আল্লাহর ইবাদতে মশগুল করতে পারি। তবে আমার অন্তর এর উপর গড়ে উঠবে। আমি যদি আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে ব্যস্ত রাখি দুনিয়াতে,আমার কল্পনাকে ব্যস্ত রাখি কোন নারীর চিন্তায় সম্পদের ফিকিরে,আমার জিহবাকে ব্যস্ত রাখি দুনিয়াবি আড্ডায়,আমার কানকে ব্যস্ত অপ্রয়োজনীয় কোন কাজে...। আমার বিবেক যতই বলুক যে,আমার সুন্নাহ পালন করা দরকার,কিন্তু আমার নাফস,আমার ক্বালব আমাকে তা করতে দিবে না। আমার বিবেক আমাকে সঠিক পথে চালাতে পারবে না,আমার ফিকির আমাকে ফিতনামুক্ত রাখতে পারবে না। আমি জেনেশুনেও গুনাহর মাঝে পড়ে যাবো,দুনিয়ার ফিতনায় জড়িয়ে যাবো,সুন্নাহ অনুসরণ করতে পারবো না। এটা সম্ভব নয়। অনেক ভাইকে দেখেছি,বার বার প্ল্যানিং করে তার উপরে আমল করতে না পেরে ছেড়ে দিতে । এজন্য নিজের নাফস নিয়ন্ত্রণের মূল হলো,নিজের এই ১০ ইন্দ্রিয়কে সর্বদা আল্লাহ তা'আলা আনুগত্যের মাঝে রাখা। আমার কান শুধু এমন কথা শুনবে যা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হবে,আমার জবান এমন কথা বলবে যা আল্লাহ পছন্দ করেন,নয়তো চুপ থাকবে,আমার ফিকির এমন বিষয়ে ফিকির করবে যা আল্লাহ তা'আলা চান । মানুষের ইন্দ্রিয় হচ্ছে এমন,এসবের মাধ্যমে মানুষ কোন কিছু গ্রহণ করে থাকে আমরা যদি এসবের মাধ্যমে এমন কিছু গ্রহণ করি যা আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয় হয়,তবে ক্বালবও এভাবে গড়ে উঠবে। আর,এমন কিছু যদি গ্রহণ করি যা আল্লাহ তা'আলার অপছন্দনীয়,তবে অন্তরও সেভাবে গড়ে উঠবে। এজন্য,আপনি যখন কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবেন,মনে করুন আপনি সিরাত নিয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন কথাবার্তায় দেখবেন সিরাত থেকে বিভিন্ন উদাহরণ দিচ্ছেন। আপনি না চাইলেও আপনার মন বিভিন্ন ঘটনা দেখলে সিরাতের সাথে মেলানোর চেষ্টা করবে। কেন হারাম খাবার খেলে সেসব মানুষের উপর এর প্রভাব পড়ে? এটি শুধু আধ্যাত্মিক বিষয় নয়। একদম দুনিয়াবি সুন্নাহ অনুযায়ী প্রভাব পড়বেই পড়বে । কেননা,সে হারামের স্বাদ নিচ্ছে,সে এর দ্বারা প্রভাবিত হবেই, এর আসর তাঁর অন্তরে পড়বেই। সে না চাইলেও পড়বেই পড়বে। কারণ,৫টি বাহ্যিক ইন্দ্রিয়ের একটি হচ্ছে স্বাদ । আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যেসব সীমারেখা দিয়েছেন,এর প্রতিটি বিষয় একটি অপরটির সাথে সামঞ্জস্যশীল। একটি অপরের পরিপূরক। একইভাবে,আমরা অনেক সময় কেবল বাহ্যিক ৫ ইন্দ্রিয়ের বিষয় খেয়ালে রাখলেও আভ্যন্তরীণ ৫টি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ে খেয়াল করি না যেমন,কল্পনা করা..। আমরা আমাদের মনের কল্পনাতে হয়তো সুন্দরী স্ত্রী,২/৩নাম্বার স্ত্রী,দুনিয়ার সম্পদ,সুন্দর গাড়ি বা আয়েশে থাকা বা মজার কোন খাবারের কথা ভাবি...। এসব অযাচিত কল্পনা আমাদের ক্বালবে নষ্ট করে দেয়। আমরা কল্পনা করলে তাও যথাসম্ভব আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্টির বিষয়ে করা... যেমনঃ কোন ইবাদতের ব্যাপারে,জিহাদি কোন ব্যাপারে ইত্যাদি। এজন্য দেখুন,মুমিনরা কোন ভালো কাজের কথা মনে মনে চিন্তা করলেও এর জন্য সওয়াব লেখা হয় আর,এই বিষয়টি আমাদের অন্তরকে প্রভাবিত করবে আমার নাফসকে প্রভাবিত করবে। আভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয়ের একটি হচ্ছে- পুন:স্মরণ অর্থাৎ আগের স্মৃতি থেকে কোন বিষয় স্মরণ করা। এক্ষেত্রে মানুষ যখন দুনিয়াবি কোন কিছু নিয়ে ভাবে,তখন তা তার অন্তরকে প্রভাবিত করে। তার ক্বালবকে শক্ত করে ফেলে,তার অন্যান্য কাজে প্রভাব ফেলে,অন্তরে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দুর্বল হতে থাকে। এজন্য,আমাদের সকল ইন্দ্রিয়,বিশেষ করে আভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয়ের ব্যাপারে যথাসম্ভব সতর্ক থাকতে হবে এবং এই ১০ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদেরকে যেভাব গড়ে তুলবো,আমি সেরকম ব্যক্তি হবো,আমার ক্বালব সেরকম হবে । তাই,আমরা কেমন ক্বালব গঠন করবো,তা আমাদের নিজেদের উপর,নিজেরদের মুজাহাদার উপর।
আল্লাহ তা'আলা সহজ করে দিন,তাওফিক দিন,আমিন । আল্লাহ আমাদের সকলকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণভাবে সমর্পিত হওয়ার তৌফিক দিন,আমিন । আল্লাহ আমাদের পূর্ণ দ্বীন পালনের তৌফিক দিন । আমিন । আমরা যা পড়েছি, আল্লাহ আমাদের সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দিন । আমিন ।
((সংগৃহীত এবং ঈষৎ পরিমার্জিত))
বাহ্যিক ইন্দ্রিয় ৫টিঃ
- দৃষ্টি
- শ্রবণ
- স্বাদ
- স্পর্শ
- ঘ্রাণ
আভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয় ৫ টিঃ
- কল্পনা
- পুন:স্মরণ
- ফিকির
- স্মৃতি
- কাণ্ডজ্ঞান
মানুষ তাঁর এই ১০ ইন্দ্রিয়কে যে কাজে ব্যস্ত রাখে,তাঁর অন্তর,তাঁর ক্বালব এভাবে গড়ে উঠে। অর্থাৎ,আমরা উল্টো দিক থেকে ভাবতে পারি । আমি আমার নাফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তো,মূলত এই ১০টি ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদি এদেরকে সুস্থ রাখতে পারি। এদেরকে যদি সব সময় আল্লাহর ইবাদতে মশগুল করতে পারি। তবে আমার অন্তর এর উপর গড়ে উঠবে। আমি যদি আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে ব্যস্ত রাখি দুনিয়াতে,আমার কল্পনাকে ব্যস্ত রাখি কোন নারীর চিন্তায় সম্পদের ফিকিরে,আমার জিহবাকে ব্যস্ত রাখি দুনিয়াবি আড্ডায়,আমার কানকে ব্যস্ত অপ্রয়োজনীয় কোন কাজে...। আমার বিবেক যতই বলুক যে,আমার সুন্নাহ পালন করা দরকার,কিন্তু আমার নাফস,আমার ক্বালব আমাকে তা করতে দিবে না। আমার বিবেক আমাকে সঠিক পথে চালাতে পারবে না,আমার ফিকির আমাকে ফিতনামুক্ত রাখতে পারবে না। আমি জেনেশুনেও গুনাহর মাঝে পড়ে যাবো,দুনিয়ার ফিতনায় জড়িয়ে যাবো,সুন্নাহ অনুসরণ করতে পারবো না। এটা সম্ভব নয়। অনেক ভাইকে দেখেছি,বার বার প্ল্যানিং করে তার উপরে আমল করতে না পেরে ছেড়ে দিতে । এজন্য নিজের নাফস নিয়ন্ত্রণের মূল হলো,নিজের এই ১০ ইন্দ্রিয়কে সর্বদা আল্লাহ তা'আলা আনুগত্যের মাঝে রাখা। আমার কান শুধু এমন কথা শুনবে যা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হবে,আমার জবান এমন কথা বলবে যা আল্লাহ পছন্দ করেন,নয়তো চুপ থাকবে,আমার ফিকির এমন বিষয়ে ফিকির করবে যা আল্লাহ তা'আলা চান । মানুষের ইন্দ্রিয় হচ্ছে এমন,এসবের মাধ্যমে মানুষ কোন কিছু গ্রহণ করে থাকে আমরা যদি এসবের মাধ্যমে এমন কিছু গ্রহণ করি যা আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয় হয়,তবে ক্বালবও এভাবে গড়ে উঠবে। আর,এমন কিছু যদি গ্রহণ করি যা আল্লাহ তা'আলার অপছন্দনীয়,তবে অন্তরও সেভাবে গড়ে উঠবে। এজন্য,আপনি যখন কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করবেন,মনে করুন আপনি সিরাত নিয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন কথাবার্তায় দেখবেন সিরাত থেকে বিভিন্ন উদাহরণ দিচ্ছেন। আপনি না চাইলেও আপনার মন বিভিন্ন ঘটনা দেখলে সিরাতের সাথে মেলানোর চেষ্টা করবে। কেন হারাম খাবার খেলে সেসব মানুষের উপর এর প্রভাব পড়ে? এটি শুধু আধ্যাত্মিক বিষয় নয়। একদম দুনিয়াবি সুন্নাহ অনুযায়ী প্রভাব পড়বেই পড়বে । কেননা,সে হারামের স্বাদ নিচ্ছে,সে এর দ্বারা প্রভাবিত হবেই, এর আসর তাঁর অন্তরে পড়বেই। সে না চাইলেও পড়বেই পড়বে। কারণ,৫টি বাহ্যিক ইন্দ্রিয়ের একটি হচ্ছে স্বাদ । আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যেসব সীমারেখা দিয়েছেন,এর প্রতিটি বিষয় একটি অপরটির সাথে সামঞ্জস্যশীল। একটি অপরের পরিপূরক। একইভাবে,আমরা অনেক সময় কেবল বাহ্যিক ৫ ইন্দ্রিয়ের বিষয় খেয়ালে রাখলেও আভ্যন্তরীণ ৫টি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ে খেয়াল করি না যেমন,কল্পনা করা..। আমরা আমাদের মনের কল্পনাতে হয়তো সুন্দরী স্ত্রী,২/৩নাম্বার স্ত্রী,দুনিয়ার সম্পদ,সুন্দর গাড়ি বা আয়েশে থাকা বা মজার কোন খাবারের কথা ভাবি...। এসব অযাচিত কল্পনা আমাদের ক্বালবে নষ্ট করে দেয়। আমরা কল্পনা করলে তাও যথাসম্ভব আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্টির বিষয়ে করা... যেমনঃ কোন ইবাদতের ব্যাপারে,জিহাদি কোন ব্যাপারে ইত্যাদি। এজন্য দেখুন,মুমিনরা কোন ভালো কাজের কথা মনে মনে চিন্তা করলেও এর জন্য সওয়াব লেখা হয় আর,এই বিষয়টি আমাদের অন্তরকে প্রভাবিত করবে আমার নাফসকে প্রভাবিত করবে। আভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয়ের একটি হচ্ছে- পুন:স্মরণ অর্থাৎ আগের স্মৃতি থেকে কোন বিষয় স্মরণ করা। এক্ষেত্রে মানুষ যখন দুনিয়াবি কোন কিছু নিয়ে ভাবে,তখন তা তার অন্তরকে প্রভাবিত করে। তার ক্বালবকে শক্ত করে ফেলে,তার অন্যান্য কাজে প্রভাব ফেলে,অন্তরে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দুর্বল হতে থাকে। এজন্য,আমাদের সকল ইন্দ্রিয়,বিশেষ করে আভ্যন্তরীণ ইন্দ্রিয়ের ব্যাপারে যথাসম্ভব সতর্ক থাকতে হবে এবং এই ১০ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদেরকে যেভাব গড়ে তুলবো,আমি সেরকম ব্যক্তি হবো,আমার ক্বালব সেরকম হবে । তাই,আমরা কেমন ক্বালব গঠন করবো,তা আমাদের নিজেদের উপর,নিজেরদের মুজাহাদার উপর।
আল্লাহ তা'আলা সহজ করে দিন,তাওফিক দিন,আমিন । আল্লাহ আমাদের সকলকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণভাবে সমর্পিত হওয়ার তৌফিক দিন,আমিন । আল্লাহ আমাদের পূর্ণ দ্বীন পালনের তৌফিক দিন । আমিন । আমরা যা পড়েছি, আল্লাহ আমাদের সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দিন । আমিন ।
((সংগৃহীত এবং ঈষৎ পরিমার্জিত))
Comment