দারসে রমাদান।। দারস-৩।।
দোয়ার ক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করা
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম
==================================================
=====
দোয়ার ক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করা
মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম
==================================================
=====
আজকের দরসে আমাদের আলোচ্য বিষয়; “দোয়ার ক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করার শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়ার ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন:
“فإذا سَأَلتُم اللهَ فاسأَلوه الفِردَوسَ”
“আল্লাহর কাছে চাইবে-ই যখন; তখন জান্নাতুল ফিরদাউস চাও”।
অপর বর্ণনায় الفردوس এর সাথে আরও এসেছে, “الأعلى فإنّها سَقْف الجَنّة” “সর্বোচ্চ জান্নাত চাইবে, কেননা ফিরদাউস হচ্ছে জান্নাতের ছাদ”। অর্থাৎ জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান হচ্ছে আল-ফিরদাউস। সুতারাং আরশে আজীমের রব আল্লাহর কাছে তাঁর মহা অনুগ্রহ প্রার্থনা করি।
অপর এক হাদিস এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
” ولْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ، فإنَّ اللَّهَ لا يَتَعاظَمُهُ شيءٌ أعْطاهُ.”
“আশা বড় করো। কেননা আল্লাহ যা দান করেন তা তাঁর কাছে বড় কিছু নয়”। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং, ২৬৭৯)
অনেক মানুষ আছে, যাদেরকে আপনি জিজ্ঞেস করবেন যে, আপনি আল্লাহর কাছে কেন সর্বোচ্চ ফিরদাউস চাচ্ছেন না? আপনি নিজের আমল ও আনুগত্যের বিনিময়ে الفردوس الأعلى চাইবেন না; বরং আল্লাহর রহম, করম ও ফজলে চাইবেন।
এজন্য উলামায়ে কেরাম إذا سَأَلتُم اللهَ فاسأَلوه الفِردَوسَ এই হাদিসর ব্যাখ্যায় বলেন, অনেকে নিজের দোয়ার বদৌলতে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন বস্তু লাভের দোয়া করেননি, যা পাওয়া অসম্ভব।
যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إذا سَأَلتُم اللهَ فاسأَلوه الفِردَوسَ
সুতরাং তাঁর এই হাদিসই দলীল যে, অনেকে দোয়ার বদৌলতে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে।
আমাদের বিশ্বাস সীমাবদ্ধ। আমরা মনে করি যে, জান্নাতুল ফিরদাউস শুধুমাত্র উলামা, ফুকাহা আর মুহাদ্দিসীনের জন্য-ই নির্ধারিত। যিনি দশ কেরাতে কুরআন হিফজ করেছেন, হাদিসর ছয় কিতাব যিনি সনদসহ মুখস্থ করেছেন, মাযহাবী ফিকহী কিতাব, আকীদার কিতাব কণ্ঠস্থ করেছেন, জান্নাতুল ফিরদাউস শুধু তাদের জন্য। যদি বলা হয়, অমুক মেষপালক জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করেছে, তাহলে আমাদের চোখ কপালে উঠে যাবে— মেষপালক জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করেছে! ভাই এমন কেন হয়? কেন প্রশস্ত বিষয়কে সংকীর্ণভাবে চিন্তা করছেন? বলবে, মেষপালক ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য কী এমন করেছে? সে কী কী মুখস্থ করেছে? এমন কী ইলম শিখেছে? ভাই! আল্লাহর রহমত খুবই প্রশস্ত, তাঁর দয়া অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা যদি আকাশ-যমীনের সকল অধিবাসীকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন তাহলে কি তাঁর রাজত্ব কিঞ্চিৎও কমবে? না; কিছুই কমবে না। আল্লাহ তায়ালা অমুখাপেক্ষী, মহানুভব, অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়। আপনি আল্লাহর রহমতের দোহাই দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করবেন। এভাবে বলবেন:
يا واسع الرحمة يا واسع الكرم يا واسع الفضل يا واسع الجود يا واسع الرأفة يا واسع الإحسان يا واسع اللطف والهبات أسألك برحمتك وفضلك وكرمك يا من يدك سحّاء الليل والنهار يا من بيدك خزائن كل شيء
“হে প্রশস্ত রহম-করমের অধিকারী, সম্মানদাতা, উদার, দয়াপরবশ, অনুগ্রহকারী, কোমল, দানশীল, আপনার রহম, ফজল ও করম প্রার্থনা করছি। হে দিবারাত্রির সকল বস্তুর মালিক, যার হাতে সকল সম্পদের ভাণ্ডার… এভাবে আল্লাহর স্তুতি ও গুণকীর্তন করবেন, তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করবেন। আল্লাহর বড়ত্ব ও পবিত্রতা বর্ণনার পর বলবেন, হে সারা জাহানের প্রতিপালক, আপনার কাছে আপনার রহমত, দয়া, অনুগ্রহ, করুণা ও দানশীলতার দোহাই দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করছি। এমনও হবে যে, কোনো ব্যক্তির তাহাজ্জুদ, রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের বিশাল ভাণ্ডার না থাকা সত্ত্বেও জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে। আমাদের বিশ্বাস ও মানসিকতা এমন সংকীর্ণ করব না যে, জান্নাতুল ফিরদাউস পাওয়া থেকে নিরাশ হয়ে যাই এবং এমন ধারনায় আক্রান্ত হয়ে যাই যে, জান্নাতুল ফিরদাউস কেবল বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ। এমন চিন্তা সঠিক নয়। অপ্রসিদ্ধ অনেক ব্যক্তিও জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে আর প্রসিদ্ধ অনেক ব্যক্তি তা লাভ করবে না। এটি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ। তিনি যাকে চান দান করেন। কোনো বৃদ্ধা আছে যিনি কেবল সুরা ফাতিহা মুখস্থ করেছেন। কিন্তু অন্তরের স্বচ্ছতা, দোয়া, রাতে নির্জনে আল্লাহর দরবারে গোপনে রোনাজারি, অনুনয়-বিনয়ের ফলে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে। আল্লাহ তায়ালা সবই করতে সক্ষম। আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন, আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততাকে মনের সংকীর্ণতায় আবদ্ধ করবেন না। আল্লাহর ফজল-করম সুমহান।
প্রিয় ভাই! অনেক কাকতি মিনতি করে আল্লাহর কাছে দিনরাত দোয়া করুন।
চিন্তা করুন, এক ব্যক্তি দিনরাত সিজদায় পড়ে প্রত্যেক সিজদায় বারবার প্রার্থনা করে যে,
اللهم إنّي أسألك الفردوس الأعلى برحمتك وكرمك يا كريم يا رحمن يا رحيم يا بديع السموات والأرض يا ذا الجلال والإكرام أسألك برحمتك وفضلك أن ترزقني الفردوس الأعلى
ইয়া আল্লাহ! আপনার রহম-করমের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করছি। ইয়া কারীম! ইয়া রহমান! ইয়া রহীম! হে আসমান-যমীনের স্রষ্টা! হে সম্মান ও মর্যাদার অধিপতি! আপনার রহম-ফজলের দোহাই, আমাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।
এভাবে দিনরাতে ১০০ বার, ২০০বার দোয়া করে। আল্লাহ তায়ালা এই বান্দাকে ফিরিয়ে দিবেন না। আল্লাহর দয়া অফুরন্ত। তাঁর অনুগ্রহ সুবিশাল।
আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন। আপনি আল্লাহর কাছে জান্নাতুল ফিরদাউসের প্রার্থনার প্রতি আকৃষ্ট হোন। কেবল আপনার আনুগত্য-আমল, ঈমান-ইলমের মাধ্যমে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবেন এমন ধারণা পরিহার করুন। কখনো আপনি পরীক্ষায় ফেল হতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে বলেছেন, “وليُعظم الرغبة”, “আশা বড় করো”। সুতরাং বিষয়টি আপনি অসম্ভব মনে করবেন না। কিছু লোক আছে যদি তাকে বলেন যে, হে ভাই, আপনি আল্লাহর কাছে জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করুন। তাহলে সে বলবে, এটা আমার জন্য পাওয়া অসম্ভব। আল্লাহর পানাহ! এটা কি আল্লাহর জন্যও অসম্ভব? তিনি তো সবকিছু করতে সক্ষম। এই বান্দার মাঝে আল্লাহর প্রতি বদ ধারণা বিদ্যমান। আল্লাহ তায়ালা এক হাদিস কুদসীতে বলেন,
“وأنا عند ظنّ عبدي بي فليظن عبدي بي ما شاء”
“বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা রাখে, আমি তার সাথে তেমন আচরণ করি। সুতরাং সে আমার প্রতি যেমন ইচ্ছা ধারনা রাখুক”।
অপর বর্ণনায় আছে:
“إن ظنّ بي خيرًا فله, وإن ظنّ بي شرًّا فله”
“সে আমার প্রতি সুধারণা রাখলে তাই পাবে, আর কুধারণা রাখলে তার জন্য এমনই”।
আপনি যখন আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন যে, তিনি আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করবেন। আপনিও আল্লাহর দরবারে অনেক পার্থনা করুন। সবসময় পীড়াপীড়ি করতে থাকুন, দোয়ায় বারবার চাইতে থাকুন, আর সবর করুন। হে আমার প্রিয় ভাই! দোয়া করতে সবর ও সাহস লাগে। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন! কাকতি মিনতি করুন। আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে আপনাকে জান্নাতুল ফিউরদাউস দান করবেন। যদিও আপনার অনেক আমল নেই, আনুগত্য নেই, আপনি আলেম নন, মুহাদ্দিস বা ফকীহ নন; তবুও তিনি দান করবেন। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম। তিনি রহমান, রহীম, তিনি কারীম।
রব্বে আরশে আজীমের কাছে দোয়া করি, তিনি আপনাদের প্রত্যেককে জান্নাতুল ফিরদাউসে বসবাসের স্থান দান করে দেন। আপনারাও সকল মুজাহিদ ভাইদের জন্য দোয়া করুন। খুব কম ভাই-ই অন্য ভাইদের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসের দোয়া করেন। যেন জান্নাতুল ফিরদাউস আমাদের হাতে, যাকে খুশি তাতে প্রবেশ করাব। যে আমাকে খুশি করতে পারবে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখেল করাব, আর যে পারবে না তাকে করাব না। হে ভাই, জান্নাতুল ফিরদাউস সকল দয়ালুর ওপর দয়াবান, সকল অনুগ্রহকারীর ওপর অনুগ্রহশীল আল্লাহর হাতে। ভাইদের জন্য দোয়া করুন। এভাবে দোয়া করুন,
اَللّهمّ ارْزقْ فُلَان الفرْدَوسَ الأَعْلى
“হে আল্লাহ, অমুক ভাইকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন”।
আল্লাহ আপনার জবাবে কী বলবেন? তিনি বলবেন, তুমি তোমার ভাইয়ের জন্য যা প্রার্থনা করেছ, তোমাকেও তা দান করলাম। আল্লাহ আপনাদের ওপর রহম করুন। আপনারা সর্বদা জান্নাতুল ফিরদাউস চাইতে থাকুন। আল্লাহর কাছে আমার জন্য, আমার সাথী ভাইদের জন্য, সকল মুজাহিদ ভাইদের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করছি। পরিচিত, বন্ধু, পরিবার, আত্মীয় কিংবা ভাইদের মাঝে যাকে আপনি ভালোবাসেন, তাদের সকলের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসের দোয়া করুন।
نسأل الله -سبحانه وتعالى- أن يوفّقنا لما يحب ويرضى. وجزاكم الله خير.
আরও পড়ুন
২য় দারস -------------------------------------------------------------------------------------- ৪র্থ দারস
“فإذا سَأَلتُم اللهَ فاسأَلوه الفِردَوسَ”
“আল্লাহর কাছে চাইবে-ই যখন; তখন জান্নাতুল ফিরদাউস চাও”।
অপর বর্ণনায় الفردوس এর সাথে আরও এসেছে, “الأعلى فإنّها سَقْف الجَنّة” “সর্বোচ্চ জান্নাত চাইবে, কেননা ফিরদাউস হচ্ছে জান্নাতের ছাদ”। অর্থাৎ জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান হচ্ছে আল-ফিরদাউস। সুতারাং আরশে আজীমের রব আল্লাহর কাছে তাঁর মহা অনুগ্রহ প্রার্থনা করি।
অপর এক হাদিস এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
” ولْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ، فإنَّ اللَّهَ لا يَتَعاظَمُهُ شيءٌ أعْطاهُ.”
“আশা বড় করো। কেননা আল্লাহ যা দান করেন তা তাঁর কাছে বড় কিছু নয়”। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং, ২৬৭৯)
অনেক মানুষ আছে, যাদেরকে আপনি জিজ্ঞেস করবেন যে, আপনি আল্লাহর কাছে কেন সর্বোচ্চ ফিরদাউস চাচ্ছেন না? আপনি নিজের আমল ও আনুগত্যের বিনিময়ে الفردوس الأعلى চাইবেন না; বরং আল্লাহর রহম, করম ও ফজলে চাইবেন।
এজন্য উলামায়ে কেরাম إذا سَأَلتُم اللهَ فاسأَلوه الفِردَوسَ এই হাদিসর ব্যাখ্যায় বলেন, অনেকে নিজের দোয়ার বদৌলতে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন বস্তু লাভের দোয়া করেননি, যা পাওয়া অসম্ভব।
যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إذا سَأَلتُم اللهَ فاسأَلوه الفِردَوسَ
সুতরাং তাঁর এই হাদিসই দলীল যে, অনেকে দোয়ার বদৌলতে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে।
আমাদের বিশ্বাস সীমাবদ্ধ। আমরা মনে করি যে, জান্নাতুল ফিরদাউস শুধুমাত্র উলামা, ফুকাহা আর মুহাদ্দিসীনের জন্য-ই নির্ধারিত। যিনি দশ কেরাতে কুরআন হিফজ করেছেন, হাদিসর ছয় কিতাব যিনি সনদসহ মুখস্থ করেছেন, মাযহাবী ফিকহী কিতাব, আকীদার কিতাব কণ্ঠস্থ করেছেন, জান্নাতুল ফিরদাউস শুধু তাদের জন্য। যদি বলা হয়, অমুক মেষপালক জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করেছে, তাহলে আমাদের চোখ কপালে উঠে যাবে— মেষপালক জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করেছে! ভাই এমন কেন হয়? কেন প্রশস্ত বিষয়কে সংকীর্ণভাবে চিন্তা করছেন? বলবে, মেষপালক ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য কী এমন করেছে? সে কী কী মুখস্থ করেছে? এমন কী ইলম শিখেছে? ভাই! আল্লাহর রহমত খুবই প্রশস্ত, তাঁর দয়া অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা যদি আকাশ-যমীনের সকল অধিবাসীকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন তাহলে কি তাঁর রাজত্ব কিঞ্চিৎও কমবে? না; কিছুই কমবে না। আল্লাহ তায়ালা অমুখাপেক্ষী, মহানুভব, অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়। আপনি আল্লাহর রহমতের দোহাই দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করবেন। এভাবে বলবেন:
يا واسع الرحمة يا واسع الكرم يا واسع الفضل يا واسع الجود يا واسع الرأفة يا واسع الإحسان يا واسع اللطف والهبات أسألك برحمتك وفضلك وكرمك يا من يدك سحّاء الليل والنهار يا من بيدك خزائن كل شيء
“হে প্রশস্ত রহম-করমের অধিকারী, সম্মানদাতা, উদার, দয়াপরবশ, অনুগ্রহকারী, কোমল, দানশীল, আপনার রহম, ফজল ও করম প্রার্থনা করছি। হে দিবারাত্রির সকল বস্তুর মালিক, যার হাতে সকল সম্পদের ভাণ্ডার… এভাবে আল্লাহর স্তুতি ও গুণকীর্তন করবেন, তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করবেন। আল্লাহর বড়ত্ব ও পবিত্রতা বর্ণনার পর বলবেন, হে সারা জাহানের প্রতিপালক, আপনার কাছে আপনার রহমত, দয়া, অনুগ্রহ, করুণা ও দানশীলতার দোহাই দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করছি। এমনও হবে যে, কোনো ব্যক্তির তাহাজ্জুদ, রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের বিশাল ভাণ্ডার না থাকা সত্ত্বেও জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে। আমাদের বিশ্বাস ও মানসিকতা এমন সংকীর্ণ করব না যে, জান্নাতুল ফিরদাউস পাওয়া থেকে নিরাশ হয়ে যাই এবং এমন ধারনায় আক্রান্ত হয়ে যাই যে, জান্নাতুল ফিরদাউস কেবল বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ। এমন চিন্তা সঠিক নয়। অপ্রসিদ্ধ অনেক ব্যক্তিও জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে আর প্রসিদ্ধ অনেক ব্যক্তি তা লাভ করবে না। এটি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ। তিনি যাকে চান দান করেন। কোনো বৃদ্ধা আছে যিনি কেবল সুরা ফাতিহা মুখস্থ করেছেন। কিন্তু অন্তরের স্বচ্ছতা, দোয়া, রাতে নির্জনে আল্লাহর দরবারে গোপনে রোনাজারি, অনুনয়-বিনয়ের ফলে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে। আল্লাহ তায়ালা সবই করতে সক্ষম। আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন, আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততাকে মনের সংকীর্ণতায় আবদ্ধ করবেন না। আল্লাহর ফজল-করম সুমহান।
প্রিয় ভাই! অনেক কাকতি মিনতি করে আল্লাহর কাছে দিনরাত দোয়া করুন।
চিন্তা করুন, এক ব্যক্তি দিনরাত সিজদায় পড়ে প্রত্যেক সিজদায় বারবার প্রার্থনা করে যে,
اللهم إنّي أسألك الفردوس الأعلى برحمتك وكرمك يا كريم يا رحمن يا رحيم يا بديع السموات والأرض يا ذا الجلال والإكرام أسألك برحمتك وفضلك أن ترزقني الفردوس الأعلى
ইয়া আল্লাহ! আপনার রহম-করমের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করছি। ইয়া কারীম! ইয়া রহমান! ইয়া রহীম! হে আসমান-যমীনের স্রষ্টা! হে সম্মান ও মর্যাদার অধিপতি! আপনার রহম-ফজলের দোহাই, আমাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।
এভাবে দিনরাতে ১০০ বার, ২০০বার দোয়া করে। আল্লাহ তায়ালা এই বান্দাকে ফিরিয়ে দিবেন না। আল্লাহর দয়া অফুরন্ত। তাঁর অনুগ্রহ সুবিশাল।
আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন। আপনি আল্লাহর কাছে জান্নাতুল ফিরদাউসের প্রার্থনার প্রতি আকৃষ্ট হোন। কেবল আপনার আনুগত্য-আমল, ঈমান-ইলমের মাধ্যমে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবেন এমন ধারণা পরিহার করুন। কখনো আপনি পরীক্ষায় ফেল হতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে বলেছেন, “وليُعظم الرغبة”, “আশা বড় করো”। সুতরাং বিষয়টি আপনি অসম্ভব মনে করবেন না। কিছু লোক আছে যদি তাকে বলেন যে, হে ভাই, আপনি আল্লাহর কাছে জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করুন। তাহলে সে বলবে, এটা আমার জন্য পাওয়া অসম্ভব। আল্লাহর পানাহ! এটা কি আল্লাহর জন্যও অসম্ভব? তিনি তো সবকিছু করতে সক্ষম। এই বান্দার মাঝে আল্লাহর প্রতি বদ ধারণা বিদ্যমান। আল্লাহ তায়ালা এক হাদিস কুদসীতে বলেন,
“وأنا عند ظنّ عبدي بي فليظن عبدي بي ما شاء”
“বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা রাখে, আমি তার সাথে তেমন আচরণ করি। সুতরাং সে আমার প্রতি যেমন ইচ্ছা ধারনা রাখুক”।
অপর বর্ণনায় আছে:
“إن ظنّ بي خيرًا فله, وإن ظنّ بي شرًّا فله”
“সে আমার প্রতি সুধারণা রাখলে তাই পাবে, আর কুধারণা রাখলে তার জন্য এমনই”।
আপনি যখন আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন যে, তিনি আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করবেন। আপনিও আল্লাহর দরবারে অনেক পার্থনা করুন। সবসময় পীড়াপীড়ি করতে থাকুন, দোয়ায় বারবার চাইতে থাকুন, আর সবর করুন। হে আমার প্রিয় ভাই! দোয়া করতে সবর ও সাহস লাগে। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন! কাকতি মিনতি করুন। আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে আপনাকে জান্নাতুল ফিউরদাউস দান করবেন। যদিও আপনার অনেক আমল নেই, আনুগত্য নেই, আপনি আলেম নন, মুহাদ্দিস বা ফকীহ নন; তবুও তিনি দান করবেন। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম। তিনি রহমান, রহীম, তিনি কারীম।
রব্বে আরশে আজীমের কাছে দোয়া করি, তিনি আপনাদের প্রত্যেককে জান্নাতুল ফিরদাউসে বসবাসের স্থান দান করে দেন। আপনারাও সকল মুজাহিদ ভাইদের জন্য দোয়া করুন। খুব কম ভাই-ই অন্য ভাইদের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসের দোয়া করেন। যেন জান্নাতুল ফিরদাউস আমাদের হাতে, যাকে খুশি তাতে প্রবেশ করাব। যে আমাকে খুশি করতে পারবে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখেল করাব, আর যে পারবে না তাকে করাব না। হে ভাই, জান্নাতুল ফিরদাউস সকল দয়ালুর ওপর দয়াবান, সকল অনুগ্রহকারীর ওপর অনুগ্রহশীল আল্লাহর হাতে। ভাইদের জন্য দোয়া করুন। এভাবে দোয়া করুন,
اَللّهمّ ارْزقْ فُلَان الفرْدَوسَ الأَعْلى
“হে আল্লাহ, অমুক ভাইকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন”।
আল্লাহ আপনার জবাবে কী বলবেন? তিনি বলবেন, তুমি তোমার ভাইয়ের জন্য যা প্রার্থনা করেছ, তোমাকেও তা দান করলাম। আল্লাহ আপনাদের ওপর রহম করুন। আপনারা সর্বদা জান্নাতুল ফিরদাউস চাইতে থাকুন। আল্লাহর কাছে আমার জন্য, আমার সাথী ভাইদের জন্য, সকল মুজাহিদ ভাইদের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করছি। পরিচিত, বন্ধু, পরিবার, আত্মীয় কিংবা ভাইদের মাঝে যাকে আপনি ভালোবাসেন, তাদের সকলের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসের দোয়া করুন।
نسأل الله -سبحانه وتعالى- أن يوفّقنا لما يحب ويرضى. وجزاكم الله خير.
আরও পড়ুন
২য় দারস -------------------------------------------------------------------------------------- ৪র্থ দারস
Comment