Announcement

Collapse
No announcement yet.

দারসে রমাদান।। দারস-২২।। জীবন পরিবর্তন করবেন কীভাবে?।।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দারসে রমাদান।। দারস-২২।। জীবন পরিবর্তন করবেন কীভাবে?।।

    দারসে রমাদান।। দারস-২২।।
    জীবন পরিবর্তন করবেন কীভাবে?
    মূল: শায়খ খালিদ আল-হুসাইনান (আবু যায়েদ কুয়েতি) রহমাতুল্লাহি আলাইহি
    অনুবাদ: আল-ফিরদাউস টিম

    ==================================================
    =====





    প্রিয় ভাই, এমন একটি বিষয় আছে, যা ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, আলেম-জাহেল, ধনী-গরিব সকল মুসলিমের প্রয়োজন। অনেকের মনে একটি প্রশ্ন আছে, প্রশ্নটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে প্রশ্ন করে, কীভাবে জীবন পরিবর্তন করব? কীভাবে আখলাক পরিবর্তন করব? কীভাবে আমার চলার পথ পরিবর্তন করব?

    যেমন: এক ব্যক্তি গুনাহে বা ওয়াজিব তরকে কিংবা মিথ্যা কথায় অথবা কোনো মন্দ চরিত্রে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সে বলে, আমার জীবন কীভাবে পরিবর্তন করব? কীভাবে স্বভাব বদলাব? কেউ আপনাকে বলবে, পাহাড় নড়ে গেলেও অভ্যাস পরিবর্তন হয় না। কথাটি ভুল, এটি অক্ষম ও দুর্বল চিত্তের লোকদের কথা। শক্তিশালী মুমিন তো আল্লাহ তাআলার সাহায্য চাইবে এবং জীবন পরিবর্তনের চেষ্টায় রত হবে। অনেকে বলবে, আল্লাহর শপথ! আমি সিগারেটে অভ্যস্ত, আমি এটি ছাড়তে পারছি না। আমি বলব, কথাটি ভুল। কেউ বলে, আমি মুভি দেখতে অভ্যস্ত। মাফ করুন, আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, কীভাবে একজন মুসলিম নিজের বর্তমান অবস্থা, তার জীবন, পথ ও অভ্যাস পরিবর্তন করবে?

    প্রিয় ভাই, আল্লাহর উপর ভরসা করে এবিষয়ে সবার আগে অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাপ্ত দুটি বিষয় মেনে চলতে আপনাদের পরামর্শ দিচ্ছি। যদি তা মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনার জীবন, আখলাক ও পথ বদলাতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
    প্রথম বিষয়: পরিবেশ ও সঙ্গী পরিবর্তন করা। মানুষ নিজের সঙ্গী পরিবর্তন করে দ্বীনী পরিবেশে বসবাসের ব্যবস্থা করবে, এটা তার জন্য আবশ্যক। আপনারা জানেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করে এক আবেদের কাছে যায়। সেই আবেদ তাকে বলে, আপনার তাওবার কোনও রাস্তা খোলা নেই। এটা বলার পর সে সেই আবেদকে হত্যা করে একশজন পূর্ণ করে। অতঃপর এক আলেমের কাছে যায়। আলেম তাকে বলেন, তোমার তাওবার পথ খোলা আছে। তুমি অমুক গ্রামে চলে যাও। সেখানে দ্বীনদার লোকেরা বাস করে।
    সুবহানাল্লাহ! প্রিয় ভাই, বর্তমানে যুবক-যুবতীরা যেই মন্দকাজে পতিত হচ্ছে, চাই তা বিরোধিতা হোক বা হারাম কাজ বা মদ্যপান অথবা অন্যকোনো গুনাহ, এর অধিকাংশই তারা শিখছে তার সঙ্গীদের থেকে। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
    প্রবাদ আছে, “বন্ধু হচ্ছে নিজের দিকে আকর্ষণকারী”, “একই স্বভাবের লোক একসাথে থাকে”।
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
    ” المَرءُ على دِينِ خَلِيلِه فَلْيَنظُر أحَدُكم مَن يُخَالِل”
    অর্থ: মানুষ তার বন্ধুর দ্বীন ও আদর্শের উপর থাকে। সুতরাং, তোমাদের প্রত্যেকে কাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছে তা যেন লক্ষ রাখে। (তিরমিজি, হাদিস নং-২৩৭৮)



    সুবহানাল্লাহ! কেউ যদি তার বর্তমান অবস্থা, আখলাক, জীবন ইত্যাদি পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে তার জন্য প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বন্ধু পরিবর্তন করা। আপনি বন্ধু পরিবর্তন করুন। বীরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিন ও বন্ধু পরিবর্তন করুন। কেউ বলে, আমি ধূমপানে অভ্যস্ত, তা ছাড়তে পারছি না। আমি বলব, “পারছি না” কথাটি ভুল; আপনি বন্ধু পরিবর্তন করুন। আপনি যদি এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন যারা ধূমপান করে না, তাহলে কিছুদিন পর দেখবেন আপনিও ধূমপান না করে থাকতে পারছেন। একটু একটু করে আপনার বর্তমান অবস্থা, স্বভাব, জীবন, পথ ইত্যাদি পরিবর্তনের অনুভূতি টের পাবেন। আপনার আখলাক বা কর্মপন্থায় যত ত্রুটিই থাকুক, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মেনে চলুন। অর্থাৎ বন্ধু ও পরিবেশ পরিবর্তন করুন। দ্বীনদার বন্ধু তালাশ করুন, যে আপনাকে আল্লাহর আনুগত্যের পথে সাহায্য করবে এবং আল্লাহর অবাধ্যতার কাজে বাধা দান করবে।

    উদাহরণস্বরূপ, কেউ বলল যে, আমি নামায পড়তে চাই। কিন্তু, এক ওয়াক্ত পড়ি তো আরেক ওয়াক্ত পড়তে পারি না। আমি মসজিদে নামায পড়তে যেতে চাই, কিন্তু এটি আমার কাছে বোঝা মনে হয়। আমি অলসতাবোধ করি। আমি বলব, আপনি একজন নামাযীকে বন্ধু বানান। ইনশাআল্লাহ, কিছুদিনের মধ্যে আপনিও নামাযী হয়ে যাবেন। তখন আপনার কাছে নামায পড়া সহজ লাগবে। নিজেকে পরিবর্তনের প্রথম উপায় হচ্ছে, পরিবেশ ও বন্ধু পরিবর্তন করা। মানুষের আখলাক, স্বভাব, জীবন পরিবর্তনে এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। যদি কোনো মদ্যপায়ীকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কীভাবে মদ্যপায়ী হলেন? বলবে, বন্ধুর মাধ্যমে। যিনাকারীকে জিজ্ঞাসা করলে বলবে, এমন কাজে লিপ্ত বন্ধু থেকে শিখেছে, নাউযুবিল্লাহ! মানুষ তার বন্ধুর আখলাক, আচরণ, স্বভাব ইত্যাদির অনুসরণ করে।

    মানুষের জীবন ও বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনের দ্বিতীয় বিষয়: এই বিষয়টি আত্মশুদ্ধির পথের রাহবার উলামাগণ বর্ণনা করেছেন। তারা বলেছেন, বর্তমান অবস্থা, জীবন, পথ ও স্বভাব পরিবর্তন করতে হলে একুশ দিন পর্যন্ত পরিবর্তনের পথে অটল থাকা আবশ্যক। এটি সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত একটি বিষয়, কুরআন সুন্নাহতে এর কোনো দলীল নেই। প্রথম দিন বিরত থাকা একজন মানুষের জন্য খুবই কঠিন। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে একুশ দিন পর্যন্ত এভাবে বিরত থাকলে সেই গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা বা ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়া সহজ হয়ে যাবে। রমাদানের প্রথম দিন মসজিদে আসা অনেকের জন্য কঠিন মনে হয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাব আসতে আসতে এটি তার কাছে সহজ হয়ে যায়। বরং ধীরে ধীরে তার অন্তর মসজিদের সাথে লেগে যায়। তখন সে নামায ত্যাগ করার কল্পনাও করতে পারে না।

    যেমন ধরুন, এক ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের স্বভাব হচ্ছে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো তার শিরায়-শিরায় মিশে গেছে। কিন্তু এই ব্যক্তিকে যদি বলি— আমাদের সাথে একুশ দিনের কোর্সে ভর্তি হয়ে যান যে, “আপনি দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাবেন না”। একুশ দিন পর দেখা যাবে তার কাছে ধীরে গাড়ি চালানো সহজ বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। মানুষের জীবনে এমন অনেক বিষয় থাকে, যে বিষয়ে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যদি একুশ দিনের জন্য তারা সেই অভ্যাস পরিবর্তনের তরবিয়ত গ্রহণ করে তাহলে তা থেকে মুক্ত হতে পারবে।

    অনেকের অভ্যাস হচ্ছে চিনি দিয়ে চা পান করা। যদি প্রশ্ন করেন, তোমাদের মাঝে কেউ কি চিনি ছাড়া চা পান করতে পারবে? দেখা যাবে কেউ পারবে না, কেননা তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যদি বলেন, তাহলে কফি চিনি ছাড়া পান করেন কেন? তাহলে বলবে, আমরা কফি চিনি ছাড়া পান করে অভ্যস্ত। আপনি আমাদের সাথে একুশ দিনের কোর্সে আসুন। আমার মনে পড়ছে, আমি নিজেও এই কোর্সে থেকেছি এবং সুবহানাল্লাহ, এই অভিজ্ঞতা আমাকে যথেষ্ট ফায়েদা দিয়েছে। একুশ দিনের এই কোর্স দ্বারা আমি আমার জীবনে অনেক অনেক উপকৃত হয়েছি। প্রথম সপ্তাহ আপনাকে জিভের সাথে অনেক বেশি যুদ্ধ করতে হবে। প্রথম সপ্তাহ আপনি নিজেকে শক্ত করে চিনি ছাড়া চা পান করুন। দ্বিতীয় সপ্তাহে অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। তৃতীয় সপ্তাহে বিষয়টি আপনার কাছে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তখন চিনি দিয়ে চা পান করার রুচি শিথিল হয়ে যাবে।

    প্রিয় ভাই, তাই বলছি, আমাদের জীবনের অনেক স্বভাব, অবস্থা, আখলাক, পথ পরিবর্তন করতে পারব মাত্র একুশ দিনের তরবিয়ত গ্রহণ করে। উপমাস্বরূপ, অনেকে তাড়াহুড়া করে নামায আদায় করে। আল্লাহ তাআলা তাদের হেদায়াত দান করুন। তারা তাড়াহুড়া করে নামায আদায় করে। অনেক বেশি নড়াচড়া করে। যদি সে ইমামের পিছনে নামায আদায় করে আর ইমাম নামায দীর্ঘ করে তাহলে সে অধৈর্য হয়ে যায়। এমনিভাবে সে নামাযে অনেক নড়াচড়া করে। আমি বলব, আপনি আমাদের সাথে একুশ দিনের কোর্সে আসুন, ইনশাআল্লাহ, আপনি নিজেই এর ফলাফল দেখতে পাবেন।

    নামাযে সিজদা লম্বা না করাও অনেকের অভ্যাস। অনেকেই লম্বা সিজদা করতে পারে না। কেননা সে সিজদা লম্বা না করে অভ্যস্ত। সে নামাযে মোরগের মত ঠোকর দেয়। এমনিভাবে অনেকের অভ্যাস ভালো না। অনেকে হালাল-হারাম বেছে চলে না। অনেকে দাঁত দিয়ে নখ কাটে। এটি তার অভ্যাস হয়ে গেছে। আমরা এটা হারাম বলছি না, কিন্তু এই অভ্যাস ভালো না। সে কোনও মজলিসে বসলে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকে। তাকে বলব, আপনি আমাদের কোর্সে আসুন। প্রথম দিন নিজেকে আটকে রাখা অনেক কষ্ট হবে। আপনি একথা বলবেন না যে, আমি পারব না, এটা কঠিন, অসম্ভব। না ভাই, আপনি আপনার অভিধান থেকে “পারব না” শব্দটি বাদ দিন। আমাদের সাথে একুশ দিনের কোর্সে আসুন। আল্লাহর ইচ্ছায় এই কোর্সে আপনার জীবনের অনেক স্বভাব, আখলাক, পথ পরিবর্তন করতে পারবেন।
    প্রথম বিষয় হচ্ছে, পরিবেশ ও বন্ধু পরিবর্তন করা। দ্বিতীয় বিষয় একুশ দিনের তরবিয়ত গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি এই দুটি কাজ করতে পারবে, তার জীবন, অভ্যাস, পথ পরিবর্তনের ব্যাপারে আমরা জিম্মাদারি গ্রহণ করছি। যদি তার নিয়ত বিশুদ্ধ ও দৃঢ় হয়, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় সে তার জীবনের অভ্যাস, পথ পরিবর্তন করতে পারবে।

    প্রিয় ভাই, কথাগুলো প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই কথাগুলো অনেক ক্ষেত্রে কাজে আসবে। অনেক মানুষের আত্মিক, চারিত্রিক, কর্মপন্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নানা ত্রুটি আছে। যেমন, কারও মাঝে অলসতা আছে। আমরা বলব, এই সকল সমস্যার সমাধান করতে উল্লিখিত দুটি বিষয় মেনে চলুন। ধৈর্যের সাথে একুশ দিনের তরবিয়ত সম্পন্ন করুন। পরিবেশ ও বন্ধু পরিবর্তন করুন। আল্লাহর আনুগত্যের পথে সাহায্যকারী ও অবাধ্যতার কাজে বাধাদানকারী দ্বীনদার বন্ধু তালাশ করুন।
    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জীবনের সকল মন্দত্ব দূরীকরণে উল্লিখিত দুটি বিষয় মেনে চলার তাওফীক দান করুন, আমীন।


    আরও পড়ুন



    ২১ তম দারস-------------------------------------------------------------------------------------২৩ তম দারস
    নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org

  • #2
    প্রথম বিষয় হচ্ছে, পরিবেশ ও বন্ধু পরিবর্তন করা।
    দ্বিতীয় বিষয় একুশ দিনের তরবিয়ত গ্রহণ করা।

    যে ব্যক্তি এই দুটি কাজ করতে পারবে, তার জীবন, অভ্যাস, পথ পরিবর্তনের ব্যাপারে আমরা জিম্মাদারি গ্রহণ করছি। যদি তার নিয়ত বিশুদ্ধ ও দৃঢ় হয়, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় সে তার জীবনের অভ্যাস, পথ পরিবর্তন করতে পারবে।
    আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের রামাদানের পরও যথারীতি আমল চালিয়ে যাওয়ার তাওফিক দিন, আমীন

    Comment

    Working...
    X