আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ২৮তম পর্ব
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ২৮তম পর্ব
আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত থেকে বঞ্চিতকরণের কিছু চিত্র
আসমান ও জমিনের রব যখন কোনো জাতির উপর রুষ্ট হোন, তখন তিনি যতটুকু ইচ্ছা তাদের থেকে তাঁর নেয়ামত ছিনিয়ে নেন। কখনো শরয়ীভাবে অর্থাৎ, দ্বীনি ক্ষেত্রে তাদের উপর ঐ নেয়ামত হারাম করে দেন। কখনো সৃষ্টিগতভাবে যার বিভিন্ন কারণ হতে পারে। কখনো ঐ সকল লোকই সে সকল নেয়ামত নিজেদের উপর হারাম করে নেয়। কেননা, তখন তাদের জ্ঞানশূন্য করে দেওয়া হয় এবং ঐ ব্যাপারে তাদের চোখে কোনো ধরনের জৈবিক ও প্রাকৃতিক ক্ষতি পরিলক্ষিত হয় না। আর এমনটি তাদের অপরাধের কারণেই করা হয়, যা তারা মহান রবের সাথে করেছে।
তাফসীরে ‘আনওয়ারুল বয়ানে’ আল্লামা আশেকে ইলাহী বুলন্দশহরী রহ. লিখেছেন-
ذَٰلِكَ جَزَيْنَاهُم بِبَغْيِهِمْ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ ﴿الأنعام: ١٤٦﴾
“তাদের অবাধ্যতার কারণে আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম। আর আমি অবশ্যই সত্যবাদী।” (সূরা আন‘আম: ১৪৬)
এ ধরনের আয়াত সূরা নিসায়ও অতিবাহিত হয়েছে যে,
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيرًا ﴿النساء: ١٦٠﴾
“বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল-তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন।” (সূরা নিসা: ১৬০)
এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা’র সাথে অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়া এবং গুনাহ করে নিজেদের উপর জুলুম করা পাক-পবিত্র জিনিসগুলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ। ইয়াহুদীদের উপর শরয়ীভাবে পবিত্র জিনিসগুলো হারাম করা হয়েছিল; কিন্তু সর্বশেষ নবী ﷺ এর উপর নবুওয়াত সমাপ্ত হওয়ার কারণে কোনো জিনিস এখন শরয়ীভাবে হালাল থেকে হারাম হবে না। নছসমূহ রহিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার কারণে। তবে সৃষ্টিগতভাবে ভালো জিনিসগুলো থেকে বঞ্চিতকরণ হতে পারে। যেটা বিভিন্ন সময় দৃশ্যমান হয় এবং এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
অনুরূপভাবে ইমাম আবূ মানসূর মা’তুরিদী রহ. সূরায়ে নিসার আয়াতের অধীনে লিখেছেন-
ثم المنع لهم يكون من جهتين
احدهما: منع من جهة منع الإنزال: لقلة الامطار والقحط، كسني يوسف ـ عليه السلام ـ وسني مكة علي ما كان لهم من القحط
والثاني: منع من جهة الخلق: الا يعطوا شيئا، لا بيعا ولا شراء ولا معروفا
অর্থাৎ ‘নেয়ামত থেকে বঞ্চিতকরণ দু’ভাবে হতে পারে। যথা-
প্রথম প্রকার: অবতরণের দিক দিয়ে। আর তা হচ্ছে, অল্প অল্প বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া এবং মহামারী প্রেরণ করা। যেমন, ইউসুফ আ. এর যুগের দুর্ভিক্ষের বছরগুলো এবং রাসূল ﷺ এর যুগে মক্কাবাসীর উপর দুর্ভিক্ষের বছরগুলো প্রণিধানযোগ্য।
দ্বিতীয় প্রকার: সৃষ্টির পক্ষ থেকেও এটা হতে পারে। এভাবে যে তারা বঞ্চিতদের কিছুই দেয় না। তাদের কাছে ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে দেয় এবং অনুগ্রহস্বরূপও কিছু দেয় না।’
অনুরূপ ইমাম আবূ কাতাদাহ রহ. বলেন-
عوقب القوم بظلم ظلموه وبغي بغوه، حرمت عليهم أشياء ببغيهم وبظلمهم
‘কোনো জাতিকে তাদের জুলুম আর অবাধ্যতার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। তাদের ঔদ্ধত্য এবং অবাধ্যতার কারণে বিভিন্ন পবিত্র জিনিসসমূহ তাদের উপর হারাম করা হয়েছে।’
ইমাম ইবনে কাসির রহ. বলেন-
عَنِ ابْنِ خِيرَةَ -وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ عَلِيٍّ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-قَالَ: جَزَاءُ الْمَعْصِيَةِ الْوَهْنُ فِي الْعِبَادَةِ، وَالضِّيقُ فِي الْمَعِيشَةِ، وَالتَّعَسُّرُ فِي اللَّذَّةِ. قِيلَ: وَمَا التَّعَسُّرُ فِي اللَّذَّةِ؟ قَالَ: لَا يُصَادِفُ لَذَّةً حَلَالًا (5) إِلَّا جَاءَهُ مَنْ يُنَغِّصه إِيَّاهَا
ইবনুল খিয়ারহ, যিনি হযরত আলী রাযি. এর সাথীদের মধ্য হতে একজন। তিনি বলেন, ‘অবাধ্যতা ও নাফরমানির শাস্তি হলো, ইবাদতে অলসতা এসে যাওয়া, জীবিকার মধ্যে সংকীর্ণতা এবং স্বাদে তিক্ততা আসা। অর্থাৎ কোথাও যদি স্বাদ অনুভব করে, তখন সাথে সাথে এমন এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যে, সে স্বাদ তার জন্য আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।’
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْعَبْدَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلَّا الْبِرُّ.
হযরত ছাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, “মানুষকে তার গুনাহর কারণেই রিযিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। একমাত্র দু‘আই তাকদীরকে পরিবর্তন করতে পারে। আর ভালো ও সৎকাজ মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে।”(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৩৭, হাদীস নং-২২৪৩৮, শামেলা)
আর বিশ্বের অধিপতি ঘোষণা করেছেন-
ذَٰلِكَ جَزَيْنَاهُم بِبَغْيِهِمْ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ ﴿الأنعام: ١٤٦﴾
“তাদের অবাধ্যতার কারণে আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম। আর আমি অবশ্যই সত্যবাদী। (সূরা আন‘আম: ১৪৬)
Comment