Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৪৪ || ইসলাম ও গণতন্ত্র ।। মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।। সপ্তদশ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৪৪ || ইসলাম ও গণতন্ত্র ।। মাওলানা আসেম ওমর রহিমাহুল্লাহ।। সপ্তদশ পর্ব

    আবাবিল প্রকাশন মিডিয়া পরিবেশিত
    ইসলাম ও গণতন্ত্র
    ।।মাওলানা আসেম ওমররহিমাহুল্লাহ।।
    এর থেকে– সপ্তদশ পর্ব


    গায়রুল্লাহকে আল্লাহর সমান মর্যাদা প্রদান করা


    পবিত্র কুরআন এদের সম্পর্কে বলেছে-

    إِذْ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ الْعَالَمِينَ


    ‘যখন আমরা তোমাদেরকে সকল সৃষ্টির রবের সমকক্ষ বানাতাম' [সূরা আশ-শুআরা : ৯৮]

    এটা জাহান্নামীদের পরস্পরের ঝগড়ার বর্ণনাজাহান্নামে গিয়ে তারা তাদের নেতাদের সাথে এভাবে ঝগড়া করবে, তর্ক করবে।

    ইমাম ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার তাফসীরে এ কথা বলেন যে-

    জাহান্নামীরা তাদের নেতাদের সাথে ঝগড়া করবে এবং বলবে, আমরা তোমাদের নির্দেশ এমনভাবে পালন করেছি, যেভাবে রব্বুল আলামীনের হুকুম পালন করা হয়আমরা রব্বুল আলামীনের সাথে তোমাদের ইবাদত করেছি[তাফসীরে ইবনে কাসির]

    ইমাম বায়যাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

    এই জাহান্নামীরা ইবাদতে তাদের (নেতাদের) হক (অধিকার) সাব্যস্ত করত [তাফসীরে বায়যাবী]

    অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার সাথে তাদেরকে (মিথ্যা উপাসকদেরকে) উপাসক বিশ্বাস করে ইবাদতে তাদেরকে রব্বুল আলামীনের সমান সাব্যস্ত করত

    ইমাম ইবনে কাইয়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাদারিজুস সালিকীনের ২৬০ পৃষ্ঠায় বলেন-

    فصل: وأما الشرك فهو نوعان : أكبر ,أصغر . فالأكبر لايغفره الله الا بالتوبة منه. وهو أن يتخذ من دون الله أندادا يحبه كما يحب الله وهو الرك الذي بضمن بسية الهة المشركين برب العالمين... الي ان قال ... فذكر الهه ومعبوده من دون الله...


    শিরক দুই প্রকার, শিরকে আকবার ও শিরকে আসগার ।

    শিরকে আকবার, আল্লাহ তায়ালা যা তাওবা করা ছাড়া ক্ষমা করবেন না। যেমন কেউ আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কাউকে তার শরিক সাব্যস্ত করল । তাকে এমনভাবে ভালোবাসল, যেমন আল্লাহকে ভালোবাসা হয় । মুশরিকরা যে তাদের প্রতিমাগুলোকে আল্লাহর বরাবর সাব্যস্ত করত, এই শিরকের প্রসঙ্গে সেই শিরকও চলে আসে এ কারণেই জাহান্নামে তারা তাদের মা'বুদদেরকে বলবে-

    إِذْ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ الْعَالَمِينَ


    আল্লাহর কসম! আমরা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিলাম । যখন আমরা তোমাদেরকে রব্বুল আলামীনের সমান মর্যাদা দিতাম ।

    এটা (আল্লাহর সমান বানানো) তাদের এই সত্ত্বেও স্বীকারোক্তি ছিল যে, আল্লাহ তায়ালা একাই প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই প্রতিটি বস্তুর মালিক এবং প্রতিপালক তারা এই কথা স্বীকার করত যে তাদের উপাসকরা কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, কাউকে রিযিক দিতে পারে না, কাউকে মেরে ফেলতে পারে না এবং কাউকে জীবনও দিতে পারে না। তারা যে তাদের মাবুদ ও উপাসকদেরকে আল্লাহর সমান মর্যাদা দিত, তা শুধুই তাদের প্রতি ভালোবাসা এবং ভক্তি-শ্রদ্ধা থেকেমুশরিকরা তাদের উপাসকদেরকে আল্লাহর থেকেও অধিক ভালোবাসত তাদের উপাসকদেরকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করলে হিংস্র বাঘের মত ক্ষেপে উঠত কিন্তু আল্লাহ তায়ালাকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করলে সেভাবে ক্ষীপ্ত হত না । ইমাম ইবনে কাইয়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- দুনিয়ার অধিকাংশ মুশরিক এই কিসিমের শিরকে লিপ্ত রয়েছে।

    গণতন্ত্র বস্তুত এই শিরকেরই দাওয়াত দেয় । আপনি যদি কোনো সেনা অধিনায়ক বা বিচারপতিকে জিজ্ঞাসা করেন যে, বিশ্বজগতের স্রষ্টা কে? এর মালিক ও প্রতিপালক কে? কে সবাইকে রিযিক দেয়? নিঃসন্দেহে সে এই উত্তরই দিবে যে, আল্লাহ কিন্তু যখন তাকে বলা হবে, তাহলে গণতান্ত্রিক বিচার বিভাগ ও আইন পরিষদকে আল্লাহর বরাবর বরং আল্লাহর থেকেও বড় কেনো করেন? কুরআনের আইনকে গায়রুল্লাহ (সংসদ) কর্তৃক অনুমোদন না করা পর্যন্ত ফয়সালার উপযুক্ত মনে করেন না কেনো? এমনিভাবে পুলিশকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা আল্লাহর ‘হুদুদ'( প্রস্তরাঘাত করা, বেত্রাঘাত করা ইত্যাদি) নিয়ে উপহাস করলে ক্ষিপ্ত হও না। কিন্তু কেউ গণতান্ত্রিক আইনের রিটকে চ্যালেঞ্জ করলে তোমরা হিংস্র বাঘের মত গর্জন করতে থাক? পূর্ণ শক্তি দিয়ে তাদের উপর হামলে পড়স্বদেশী কালেমাওয়ালা মুসলমানদেরকে লাঠি চার্জ কর, কাঁদানো গ্যাস ছুড়ে নাজেহাল করএমনকি বিমান দিয়ে তাদের উপর বোমা পর্যন্ত বর্ষণ কর?

    হে হক্কানী ওলামায়ে কেরাম! এই আইন পরিষদ ও বিচার বিভাগ যদি এখনও শিরকে আকবারে লিপ্ত না হয়ে থাকে, তবে শিরকে আকবার কাকে বলে, তা কি একটু বলবেন?

    মনে রাখবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুনসিফ (ফয়সালাকারী) বানানো ছাড়া ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় । পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

    فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا



    অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয় [সূরা নিসা : ৬৫]

    ইমাম আবু বকর জাসসাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

    আয়াতটিতে এ কথার দলিল রয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানাবলী হতে একটা বিধানকেও প্রত্যাখ্যান করবে, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানাবলী হতে কোনো একটা বিধান প্রত্যাখ্যান করবে, সে ইসলাম থেকে খারেজ। ইসলাম থেকে সে বহিষ্কৃত । চাই সন্দেহ বশত প্রত্যাখ্যান করুক, অথবা কবুল না করুক অথবা কবুল করা থেকে বিরত থাকুকআর এটা সাহাবায়ে কেরামের এই মাসলাক সহীহ হওয়াকে প্রমাণ করেযার আলোকে সাহাবায়ে কেরাম যাকাত প্রদান করা হতে বিরত ব্যক্তিদেরকে মুরতাদ ঘোষণা করে হত্যা করেছেন এবং তাদের সন্তানদেরকে গোলাম বানিয়েছেন কেননা আল্লাহ তায়ালা ফয়সালা করে দিয়েছেন যে, যে কেউই তার ফয়সালা এবং আইনকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অর্পণ করবে না, সে ঈমানদার নয় । [আহকামূল কুরআন, আবুবকর জাসসাস : ৩/১৮১]

    ইমাম আবু বকর জাসসাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদেরকেও প্রত্যাখ্যানকারীদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যারা এ থেকে বিরত থাকে সুতরাং যারা ৭৫ বছর ধরে শরীয়ত প্রবর্তন হতে বিরত থেকেছে, তাদের হুকুম কি হবে?

    আল্লামা শাব্বির আহমাদ উসমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন যে-

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফয়সালাকারী বানানো ছাড়া ঈমান সম্ভব নয় । অর্থাৎ মোনাফেকরা কেমন বেহুদা বিলাসে রয়েছে এবং কেমন বেহুদা বাহানার দ্বারা কাজ নিতে চায়তাদের খুব ভালো করে বোঝা উচিত যে, আমি কসম করে বলছি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত এরা আপনাকে হে রাসূল! নিজেদের ছোট-বড় এবং জান-মাল বিষয়ক সব ধরনের বিবাদে আপনাকে বিচারক ও ফয়সালাকারী না মানবে, অর্থাৎ আপনার বিচার ও ফয়সালায় তাদের অন্তরে অসন্তষ্টি থাকবে এবং আপনার প্রতিটি নির্দেশ সন্তষ্টিচিত্তে গ্রহণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ঈমান নসীব হতে পারে না । যা করার ভেবে চিন্তে কর । [তাফসীরে উসমানী]

    রহমাতুল্লিল আলামীনকে শুধু রবিউল আওয়াল মাসে নবী মানেন? সীরাতুন্নবী বড় বড় আসর আর বিতর্ক অনুষ্ঠান...!!! কিন্তু আল্লাহর-রাসূলকে যখন নিজেদের বিষয়ে জজ ও বিচারপতি বানানোর সময় আসে, তখন রাসূলকে ছেড়ে রাসূলের দুশমনদের আইন দিয়ে ফয়সালা করাতে যান। রাসূলের দুশমনদের আইনের পবিত্রতা, আনুগত্য এবং তা রক্ষা করার শপথ করেন । নবীর উপর আপনার এ কেমন ঈমান? মানবতার উপকারী বন্ধুর উপকারের বদলা দেয়ার এ কেমন ধরন? খতমে নবুওয়াতের উপর এ কেমন ঈমান যে, খাতামুন নাবিয়্যিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরীয়তকে আদালত থেকে বের করে, জীবনব্যবস্থা থেকে দূর করে, কাদিয়ানী এবং তাদের প্রভুদের আদালতের উপর ঈমান এনেছেন? আল্লাহর দুশমনদের তৈরিকৃত জীবন পদ্ধতি দুনিয়াতে চলছে। নবীর হে গোলামেরা! ভাবো... একটু ভাবো... অন্তরে হাত রেখে একটু ভাবো... এ কেমন তোমাদের ভালোবাসা? এ কেমন তোমাদের আনুগত্য? মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বক্ষেত্রে নবী মানা ছাড়া এই উম্মতের কিশতি গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। দুইশ’ বছর ধরে এই উম্মতের উপর যেই লাঞ্ছনা চেপে বসে আছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তের জন্য জীবন উৎসর্গ না করা পর্যন্ত তা দূর হতে পারে না।

    তেমনিভাবে শরীয়তের যে কোনো হুকুম স্বীকার না করা, তা পালন করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা- শরীয়তের দৃষ্টিতে- দ্বীন ত্যাগকারী দলের অন্তর্ভুক্ত ।

    আল্লাহ তায়ালার ফরমান-

    أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا


    তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে । তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে । আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে । [সূরা নিসা : ৬০]

    এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনে জারীর তাবারী, ইমাম কুরতবী এবং ইমাম আবু লাইস সমরকন্দী রহিমাহুমূল্লাহ এই রেওয়ায়েত নকল করেছেন-

    'শা'বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, এক মোনাফেক ও এক ইহুদীর মাঝে ঝগড়া হয়। ফয়সালার জন্য ইহুদী ওই মোনাফেককে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হওয়ার জন্য বলে। কারণ ইহুদী জানত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষ নেন নাআর মোনাফেক ওই ইহুদীকে বলে, তোমাদের বিচারকদের (ইহুদীদের) নিকট গিয়ে করবকারণ সে জানত, ইহুদী বিচারকরা ঘুষ নেয়। এ বিষয়ে যখন তাদের উভয়ের মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়, তখন উভয় কবিলা জুহাইনার এক জ্যোতিষের দ্বারা ফয়সালা করানোর উপর এক মত হয়৷ তখন এই আয়াতটি নাযিল হয় ।'

    ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, বিশর নামের এক মোনাফেক ছিল এবং যুফার নামের এক ইহুদী ছিল কোনো বিষয় নিয়ে এদের মাঝে ঝগড়া হয়। ইহুদী বলে, আমার সাথে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে চলো । আর মোনাফেক বলে, না, কাআব বিন আশরাফের কাছে চলো, তাকে দিয়ে ফয়সালা করাব। আর এই কাআব বিন আশরাফকেই আল্লাহ তায়ালা তাগুত (অবাধ্য ও বিদ্রোহকারী) নাম দিয়েছেন । কিন্তু ইহুদী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছাড়া অন্য কোথাও যেতে রাজি ছিল না । মোনাফেক বাধ্য হয়ে ইহুদীর সাথে নবীজির নিকট আসে

    হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো বৃত্তান্ত শোনার পর ইহুদীর পক্ষে ফয়সালা দেন। কিন্তু সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর মোনাফেক নবীজির ফয়সালা অস্বীকার করে । মোনাফেক বলে, আমি এই ফয়সালা মানি না। তুমি আমার সাথে আবু বকরের নিকট চলো আবু বকরকে দিয়ে ফয়সালা করাব

    যাহোক উভয়ে হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নিকট যায়তিনি সব শুনে ইহুদীর পক্ষে ফয়সালা করেনএরপর উভয়ে যখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসে, মোনাফেক বলে, এ ফয়সালা আমি মানি না। চলো ওমরের কাছে যাই। ওমরকে দিয়ে ফয়সালা করাব

    তারা উভয়ে এবার হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নিকট যায় । ইহুদী বৃত্তান্ত বলতে গিয়ে হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলে, আমরা প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাই। তিনি আমার পক্ষে ফয়সালা করেন । কিন্তু নবীজির নিকট থেকে চলে আসার পর এ সেই ফয়সালা অস্বীকার করে। এরপর তার প্রস্তাবে আবু বকরের নিকট যাই তিনিও আমার পক্ষে ফয়সালা করেন । এবারও সে তার ফয়সালা অস্বীকার করেন । এখন আপনার নিকট নিয়ে এসেছে । আপনাকে দিয়ে ফয়সালা করাবে

    হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মোনাফেককে জিজ্ঞাসা করলেন, এ যা যা বলল তা কি সত্য? মোনাফেক উত্তর দেয়, হ্যাঁ, সব সত্য । হযরত ওমর রাযিয়ালাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমরা একটু অপেক্ষা কর, আমি আসছি।

    হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ভেতরে যান এবং তরবারি নিয়ে আসেন । এরপর তরবারির এক আঘাতে মোনাফেককে কতল করে দেন । আর বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের ফয়সালা মেনে নেয় না, তার ফয়সালা আমি এভাবেই করি । ইহুদী তো সেখান থেকে দৌড়ে পালায় । এ প্রেক্ষাপটেই পবিত্র কুরআনের এই আয়াত নাযিল হয়। হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে ওমর! তুমি ফারুক, সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী এরপর হযরত জিবরাইল আমিন এসে বলেন, নিঃসন্দেহে ওমর হক ও বাতিলকে পৃথক পৃথক করে দিয়েছে ।

    এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কালেমার দাবি করা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরআন এবং হাদীসের ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকে না, তার শাস্তি কতল।

    এমনকি কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী ফয়সালা করানোর জন্য যখন আহ্বান করা হয়, পবিত্র কুরআন তখন মুমিনদের শানে এ কথা বলেছে-

    إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ


    মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: “আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম” আর তারাই সফলকাম [সূরা নূর : ৫১]

    আর মোনাফেকদের নিদর্শন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন বলেছে-

    وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا


    আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “তোমরা আস যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে", তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে [সূরা নিসা : ৬১]


    حكم بغير ما أنزل الله একবার করা ও অভ্যাসে পরিণত করার মধ্যে পার্থক্য এবং ইহাকে আইন (শরীয়ত) হিসেবে প্রবর্তন করা



    নিম্নে বর্ণিত এই পার্থক্য বোঝারও প্রয়োজন রয়েছে

    ১. দেশে শরীয়ত প্রবর্তিত অবস্থায় একক কোনো বিষয়ে কুরআন ভিন্ন অন্য আইনে ফয়সালা করা ।
    ২. দেশে শরীয়ত প্রবর্তিত অবস্থায় কুরআন ভিন্ন অন্য আইনে ফয়সালা করাকে অভ্যাসে পরিণত করা
    ৩. দেশে শরীয়ত প্রবর্তনের পরিবর্তে অন্য কোনো ব্যবস্থা প্রচলন করা এবং এই ব্যবস্থার অধীনে আদলতের শপথ করা এবং বিচার করা ।

    কুফরে আকবার ও কুফরে আসগারের আলোচনা ও শ্রেণীবিন্যাস এমন রাষ্ট্র, বিচারক ও জজের ব্যাপারে, যে দেশে শরীয়ত প্রবর্তিত থাকা অবস্থায় শুধু একটা বিষয়ে কুরআনের আইন এড়িয়ে ফয়সালা করেঅর্থাৎ কুফরে আকবার ও কুফরে আসগারের এই শ্রেণীবিন্যাস কেবল প্রথম সুরতের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত সুতরাং এ বিষয়টি খুব ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, দ্বিতীয় সুরতটি কুফরি হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দরবারী বা সরকারী মৌলভীরও সন্দেহ নেইআর তৃতীয় সুরতটি কুফরে আকবারের নিকৃষ্ট রূপআল্লাহর সাথে এর থেকে বড় কুফরি তো বনী ইসরাইলের ইহুদীরাও করেনিতাদের ফয়সালার উৎসও (Authority) ছিল ওহী (তাদের তাওরাত) আর আধুনিক ইবলিসি গণতন্ত্রের উৎস আল্লাহর শরীয়তের মোকাবেলায় গায়রুল্লাহর (সংসদের) শরীয়ত

    সুতরাং এমন কুফরিকে ইসলাম প্রমাণিত করা, নিজের ঈমানকেই ধ্বংস করা । আর এমন কুফরিকে সাধারণ মানুষের সম্মুখ আলোচনা না করা নিকৃষ্টতম ‘কিতমানে হক’ (সত্য গোপন)।


    সতর্ক জ্ঞাপন


    মোটকথা এই আয়াতের তাফসীরে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মতكفر دون كفر(কুফরে আসগার) এর আশ্রয় নিয়ে বর্তমানের আদালতকে এর 'মিসদাক' প্রয়োগক্ষেত্র প্রমাণিত করা স্পষ্ট খেয়ানত এবং হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে জঘন্য অপবাদকারণ كفر دون كفر কে সরাসরি ব্যবহার করেননি বরং খারেজীদের কথা খণ্ডন করতে বলেছেন




    আরও পড়ুন
    ষষ্ঠদশ পর্ব ----------------------------------------------------------------------------------- অষ্টাদশ পর্ব
    Last edited by tahsin muhammad; 5 days ago.
Working...
X