Announcement

Collapse
No announcement yet.

হেকমতের নামে বাতিল মতবাদ গ্রহণ এবং দ্বীনকে বিকৃতকরণ!!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হেকমতের নামে বাতিল মতবাদ গ্রহণ এবং দ্বীনকে বিকৃতকরণ!!

    আজকাল দ্বীন কায়েমের জন্য যারা বিভিন্ন পদ্ধতির কথা বলেন তারা এর স্বপক্ষে যুক্তি দেখান যে, আমরা হেকমত অবলম্বন করেছি। আল্লাহ তো আমাদের হেকমতের সাথে দাওয়াত দিতে বলেছেন (সূরা নাহল : ১২৫)। আবার আল্লাহর রসূলের (সাঃ) ওফাতের পর সাহাবীরা নাকি ভোটের মাধ্যমে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে খলিফা নির্বাচন করেছিলেন, অতএব গণতন্ত্র জায়েজ। তাদের এই যুক্তি কতখানি গ্রহণযোগ্য?!
    আসুন একটু পর্যালোচনা করা যাক–

    এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগে আমাদের জানা দরকার হিকমত কি? কীভাবে হিকমত অবলম্বন করলে তা কুরআন-হাদীস সম্মত হবে। গনতন্ত্রপন্থীরা যে আয়াতটি উল্লেখ করে তা হলো- ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ হে নবী! তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও হিকমত ও উত্তম নসিহতের সাহায্যে। (সূরা নাহল : ১২৫)

    এখানে মানুষদেরকে ইসলামের আহ্বান করার জন্য হিকমত অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। হিকমত শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসীরকারকগণ কুরআন ও হাদীসকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ কুরআন হাদীস অনুযায়ী মানুষকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিলেই তা হিকমতের সঠিক আমল হিসেবে বিবেচিত হবে।

    হিকমত শব্দের অর্থ হলো কৌশল। কুরআন মাজীদের একটি নাম হলো "আল-কুরআনুল হাকিম"। অর্থাৎ কলাকৌশলে পরিপূর্ণ এক মহাগ্রন্থ। কুরআনে সেসব কলা কৌশল বর্ণিত হয়েছে যেগুলো প্রয়োগ করে মানুষ সঠিক-সরল রাস্তায় চলতে পারে এবং পৌছতে পারে মঞ্জিলে মাকসুদে।

    কুরআন হলো মানব জাতির এক গাইড বই। এ গাইড অনুযায়ী মানুষ যদি তাদের জীবনের সঠিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে তবেই সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনে সফল হবে, শান্তি লাভ করবে। এই গাইড বাইয়ের বর্ণিত কৌশল অনুযায়ী চললে দুনিয়া ও আখিরাতের কোথাও মানুষ সমস্যায় পড়বে না। সকল সমস্যার সুষ্ঠ সামাধান করতে পারবে। মানুষ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ গাইড বই কুরআনে কী পদ্ধতি, কী কৌশল বর্ণিত হয়েছে তা দেখবে আর আমল করবে। আল্লাহ এই জন্য সকল সমস্যার সমাধান দিয়ে এ কুরআন প্রেরণ করেছেন। এ কুরআনে বর্ণিত কৌশল অনুসরণ করলেই কেবল হেকমতের আমল করা হবে।

    কিন্তু আমরা যদি কুরআনে সমাধান থাকার পরও কুরআনের বাইরে কোন পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করি আর যদি বলি হেকমতের আমল করলাম তবে তা হেকমত হবে না। যেমন ধরা যাক, কোন শত্রু এলাকায় প্রকাশ্যে নামাজ পড়া যায় না , সাওম রাখা যায় না, জীবনের উপর হামলা হয়, বাধা সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা কি করব? এ ক্ষেত্রে আমরা ইসলামে যে, হেকমত অবলম্বন বিধান আছে তাই করব। যেমন প্রকাশ্যে সলাত পড়া না গেলে গোপনে হলেও সলাত পড়তে হবে, সাওম রাখতে হবে। ইসলাম গ্রহণ করার পর সলাত পড়া ও সাওম রাখা ফরজ হয়ে গেছে, কোন অবস্থাতে এ বিধান ত্যাগ করার কোন সুযোগ নেই। মানুষ অসুস্থ হলে মসজিদে যেতে না পারলে বাড়িতে বসে একাকী হলেও এ ফরজ আদায় করতে হয়। রুকু সিজদা ঠিকমত করতে না পারলেও তাকে ইশারায় হলেও সলাত পরতে হয়। কিছু সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণে সলাত-সাওম বাদ দেওয়ার কোন সুযোগ ইসলামে নেই।

    ইসলামের হেকমত হলো প্রকাশ্যে না পারলে গোপনে, যথাযথ ভাবে না পারলে ইশারায় হলেও ফরজ আদায় করা, ফরজ আদায় থেকে বিরত থাকা নয়। বিরত থেকে যদি আমরা বলি হেকমত অবলম্বন করছি তা কোনক্রমেই হেকমত হবে না। আল্লাহর বিধান অমান্য করার সামিল হবে।

    তদ্রুপ দ্বীন কায়েম করা আল্লাহ ফরজ করেছেন। দ্বীন কায়েম করার পদ্ধতিও আল্লাহ বলে দিয়েছেন। সে পদ্ধতি হলো ক্বিতাল (সূরা আনফাল : ৩৯)। ক্বিতালের মাধ্যমেই যে দ্বীন কায়ম করতে হবে তার বাধ্যবধকতা ও আল্লাহ ঘোষণা করেছেন সূরা বাকারার ২১৬ নং আয়াতে। আল্লাহ বলেন- كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ ❝তোমাদের জন্য ক্বিতাল ফরজ করে দিলাম❞।

    আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও কুরআনে বর্ণিত এ পদ্ধতিতে দ্বীন কায়েম করেছেন। দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে তিনিও বলেছেন, "কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের একটি ছোট্ট জামায়াত দ্বীন কায়েমের জন্য ক্বিতাল চালিয়ে যাবে"। (সহীহ মুসলিম )

    দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর দেয়া পদ্ধতি থাকার পরও এই দেশে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা চলছে। হেকমতের নাম দিয়েই এ সব পদ্ধতিতে দ্বীন কায়েম করার স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। আল্লাহর দেয়া কুরআনের বর্ণিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে কুরআনের বহির্ভূত পদ্ধতির অবরম্বন কখনো হেকমত হতে পারে না। এর নাম হলো আল্লাহর দেয়া পদ্ধতি উপেক্ষা করা, অপছন্দ করা, এর নাম হলো স্পর্ধা, দুঃসাহস।

    আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি মানুষের চরিত্রকে ভালভাবে জানেন। কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে দ্বীন কায়েম হবে, মানুষের কল্যাণ হবে, সকল ফিতনা ফাসাদ (অশান্তি) নির্মূল হয়ে যাবে তাও আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহ মানুষকে সে পদ্ধতিই দিয়েছেন। এখন আল্লাহর দেয়া এ পদ্ধতি বাদ দিয়ে কেউ যদি বিকল্প কোন পদ্ধতি গ্রহণ করে তবে তা’হবে আল্লাহর চেয়ে নিজেদের বেশী বিজ্ঞ মনে করা, মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা।

    মানুষের সকল ক্ষেত্রেই বিধানদাতা হলেন একমাত্র আল্লাহ। তাঁর দেয়া কোন একটি বিধানকে বাদ দিয়ে নতুন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করার অর্থ মানুষের জন্য নতুন একটি বিধান বেছে নেয়া। যে ক্ষমতা আল্লাহ কোন মানুষকে প্রদান করেননি এমনকি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কেও না।

    আল্লাহর দেয়া বিধানকে অকল্যাণকর মনে করে নিজেরাই কোন একটি বিধান মানুষের জন্য কল্যাণকর ধারণা করে তা’গ্রহণ করা হেকমত হতে পারে না, এমন কর্মকান্ড শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা আল্লাহ বলেন, “তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।” (সূরা কাহাফ ২৫)

    এমন কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন- كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئاً وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئاً وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ "তোমাদের জন্য ক্বিতাল (সশস্ত্র লড়াইকে) ফরজ করে দিলাম, যদিও তোমাদের কাছে তা অপছন্দনীয় হবে। তোমরা হয়তো কোন একটি বিষয়কে নিজেদের জন্য অকল্যাণকর মনে কর, কিন্তু তোমাদের জন্য তা কল্যাণকর। আর হয়তো তোমরা যে বিষয় নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে কর তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহই ভাল জানেন, তোমরা জান না"। (সূরা বাকারাহ : ২১৬)

    অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের জন্য ক্বিতালকে ফরজ করে দেওয়ার পরও তোমরা হয়তো তাকে অপছন্দ করে অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা ভাল মনে করবে, কল্যাণকর মনে করবে, কিন্তু তা মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়, আল্লাহর দেয়া পদ্ধতিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আর মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের ব্যাপারে মানুষের চেয়ে আল্লাহই ভাল জানেন।

    কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয়! আল্লাহর দেয়া বিধান বাদ দিয়ে আজ গণতন্ত্র (যা ইহুদী খৃস্টানদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি) সমাজ সংস্কার, বক্তৃতা দেয়া, কিতাব লেখা প্রভৃতিকে দ্বীন কায়েমের কল্যাণকর পদ্ধতি মনে করে গ্রহণ করে নেয়া হয়েছে আর একে হেকমত নামে অভিহিত করা হচ্ছে। ক্বিতালের পথে না নেমে, কোন চেষ্টা না করে, বিপদ-আপদের আশংকা করে, সমস্যা হতে পারে এ ধারণা করেই নিরাপদ পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে।

    অথচ এ কথা চিন্তাও করা হচ্ছে না যে, নামাজ-রোজা যেমন প্রকাশ্যে আদায় করায় বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি হলে তা বাদ দেয়া যাবেনা বরং গোপনে বা একাকী হলেও এ ফরজ আদায় করতে হয়। তদ্রুপ ক্বিতালের আমলেও বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি হলে তা প্রকাশ্যে না পারলেও গোপনে হলেও এ ফরজ আদায় করতে হবে। সমস্যা, বিপদ-আপদের কারণে নামাজ পড়া বাদ দেয়াকে যেমন হেকমত বলা যাবে না, তদ্রুপ ক্বিতাল বাদ দেয়াকেও হেকমত বলা যাবে না।

    সলাত (নামাজ) অর্থ হলো দোয়া করা, কেমড় দুলানো। এখন কেউ যদি বাধা বিঘ্ন সৃষ্টির কারণে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে নামাজ পড়ছেন সে পদ্ধতি বাদ দিয়ে ঘরে বসে সকাল সন্ধা কয়েক ঘন্টা হাত তোলে দোয়া করেন আর বলেন আমি হেকমত অবলম্বন করে নামাজ পড়েছি এ নতুন পদ্ধতিতে নামাজ আদায় হবে না, আর একে হেকমত আদায় ও বলা যাবে না। বরং একে পাগলামি বলে মানুষ হাসবে। পক্ষান্তরে, নামাজ নিয়ে এমন খেয়াল খুশি, পাগলামির জন্য আল্লাহর কাছে চরম কৈফিয়তের সম্মুখীন হতে হবে, হতে হবে চরম শাস্তির সম্মুখীন।

    অনূরুপ কোন প্রকার প্রচেষ্টা না চালিয়ে শুধু বিপদ-আপদ, সমস্যা হতে পারে কেবল এ ধারণা করেই যদি দ্বীন কায়েমের জন্য ক্বিতালের পদ্ধতি বাদ দিয়ে বিকল্প পন্থা গ্রহণ করা হয় তাতে কি ক্বিতালের ফরজ আদায় হয়ে যাবে? এর জন্য আল্লাহর কাছে কোন কৈফিয়ত দিতে হবে না তা কিভাবে ভাবতে পারি?

    মানুষ ক্বিতালের পথকে অপছন্দ করবে, কঠিন মনে করবে, বিপদ-আপদের ভয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করে নিবে, এটা আল্লাহ ভাল জানেন। তাই তো আমরা দেখি, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাতের ব্যাখ্যা কোরআনে নেই, অথচ মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, ক্বিতালকে সঠিকভাবে আমল করতে পারে এ জন্য আল্লাহ তা’য়ালা বিস্তারিত ব্যাখ্যা কোরআনে বর্ণনা করেছেন।

    সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতি বিধানে আল্লাহ ফরজ করেছেন, এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। এর পদ্ধতির ব্যাখ্যা পাওয়া যায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল তথা হাদীস থেকে। যেমন কোন ওয়াক্তে কত রাকাত নামাজ পড়তে হবে, কিভাবে রোজা রাখলে ঠিক ভাবে রোজা রাখা হবে, হজ্জ পালন করতে কি কি আহকাম পালন করতে হবে তার বিস্তারিত আলোচনা কোরআনে নেই।

    কিন্তু ক্বিতাল কখন করতে হবে, কতক্ষণ করতে হবে (সূরা- আনফাল : ৩৯, সূরা- মুহাম্মদ : ৪) কিভাবে করতে হবে (সূরা সফ ৬১:৪) শত্রুর জন্য কোথায় ওৎ পেতে থাকতে হবে (তাওবা : ৫) শত্রুর কোথায় কোথায় আঘাত করতে হবে, (মুহাম্মদ: ১৩, আনফাল : ৪১) এমনকি শত্রুর সাথে লড়াইয়ের সময় মানসিক অবস্থা কেমন রাখতে হবে (আনফাল : ৪৫) তাও আল্লাহ বর্ণনা করেছেন।

    অন্যান্য আমলের মত আল্লাহর রসূলের জীবনী থেকে ব্যাখ্যা জানা যাওয়ার পরও আল্লাহ কেন শুধুমাত্র ক্বিতালের এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দিলেন। অন্যান্য আমলে তেমন কোন কষ্ট করতে হয় না, তাই মানুষ এসব নিয়ে তেমন কোন সমস্যা বোধ করবে না, সহজে গ্রহণ করে নিবে। কিন্তু ক্বিতাল করতে গেলে এত বিপদ-আপদ, পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, কষ্ট করতে হয় তাই মানুষ একে সহজে গ্রহণ করে নেবে না, অপছন্দ করবে। তারা মনগড়া ব্যাখ্যা ফতোয়া দিয়ে বিকল্প নিরাপদ পথ খুজবে, বিভ্রান্ত পথকে কল্যাণকর মনে করবে। এ জন্যই আল্লাহ নিজেই কোরআনে ক্বিতালের এমন পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন, যাতে মানুষ ক্বিতালের পদ্ধতি সহজেই বুঝতে পারে।

    কোরআনে আল্লাহ ক্বিতালের মাধ্যমে দ্বীন কায়েমের যেসব হিকমত (কৌশল) বর্ণনা করেছেন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেসব হেকমতই আমল করেছেন।

    ১ম হেকমত হলো- কোরআনের বহির্ভূত কোন পদ্ধতি গ্রহণ করে তাকে হেকমত নামে আখ্যায়িত করেননি। দ্বীন কায়েমে আল্লাহর দেয়া প্রথম হেকমত হল মুমিনদের ক্বিতালের পথে উদ্বুদ্ধ করা। يَـأَيُّهَا النَّبِىُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ হে নবী ! আপনি মুমিনদেরকে ক্বিতালের পথে উদ্বুদ্ধ করুন। (সূরা আনফাল ৮:৬৫)

    ২য় হিকমত হলো- ةٍوَأَعِدُّواْ لَهُمْ مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّ আর প্রস্তুতি নাও এবং যথা সম্বব শক্তি অর্জন কর। (সূরা আনফাল ৮:৬০)

    ৩য় হিকমত হলো- وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلّه ক্বিতাল চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না সমস্ত ফিতনা ফাসাদ নির্মূল হয়। এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। (সূরা আনফাল ৮:৩৯) কেবল ক্বিতালের পদ্ধতি অবলম্বন করলেই মুসলমানরা বিজয়ী হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন- قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, তাদের লাঞ্চিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন। (সূরা তাওবাহ ৯:১৪)

    আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবীরা আল্লাহর দেয়া এসব হিকমত আমল করেই বিশাল শত্রু বাহিনীর ওপরে বিজয় অর্জন করেছিলেন, তারা অর্ধ বিশ্বে ইসলামী হুকুমাত কায়েম করেছিলেন।

    হিকমতের নামে, যুগের দোহাই দিয়ে আজকের যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই দ্বীন কায়েম করার চেষ্টা চলছে। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি সে পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারতেন না? ১৪ শত বছর পরে মসির যুগ কাগজ-কলম, কালির যুগ আসবে, গণতন্ত্রের যুগ আসবে, তখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই দ্বীন কায়েম করা সহজতর হবে। এই সম্পর্কে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি কোন ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন?

    বরং আমরা দেখি আল্লাহর রসূলের ভবিষ্যত বাণী হলো ক্বিতালের সম্পর্কে, শুধু চৌদ্দশত বছর নয়, কেয়ামত পর্যন্ত একমাত্র এই পদ্ধতিতেই দ্বীন কায়েম হবে সেই ভবিষ্যত বাণী করে গেছেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- لَنْ يَبْرَحَ هَذَا الدِّينُ قَائِمًا يُقَاتِلُ عَلَيْهِ عِصَابَةٌ مِنْ الْمُسْلِمِينَ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ এই দ্বীন চিরদিন কায়েম থাকবে, মুসলমানদের একটি ছোট্ট জামা’য়াত কিয়ামত পর্যন্ত এ দ্বীন কায়েম করার জন্য ক্বিতাল চালিয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম ২য় খন্ড)

    আপনারা গণতন্ত্র জায়েজ করতে গিয়ে যে দলীল তুলে ধরেছেন তা চরম মূর্খতার শামিল। আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর খলিফা নির্বাচন হয়েছিল সাহাবীদের শূরা বা পরামর্শের ভিত্তিতে। পরামর্শ ছিল নেতা নির্বাচনের, কোন নীতি নির্বাচনের নয়। সাহাবীরা এটা পরামর্শ করেননি যে, এখন কুরআনের শাসন চলবে, না গণতন্ত্র, না ধর্মনিরপেক্ষ শাসন চলবে। তারা পরবর্তী খলীফাদেরও একইভাবে নির্বাচন করেন, কিন্তু কখনো শাসননীতি কি হবে সে সম্পর্কে কোন পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। কেননা, এ অধিকার আল্লাহ মানুষকে দেননি।

    আল্লাহ মানুষের জন্য ইসালাম প্রতিষ্ঠা করা এবং কুরআন অনুযায়ী মানুষকে শাসন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী যারা শাসন করবে না, আল্লাহ তাদের কাফের ঘোষণা করেছেন। (সূরা মায়েদা ৫:৪৪)

    আল্লাহ কোন একটি বিধান মানুষকে দিলে মানুষ তার পরিবর্তন করার অধিকার রাখে কি? সাড়া দুনিয়ার মানুষ ভোট দিয়ে তা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিলেও একজন মুমিন তা কি গ্রহণ করতে পারে? ধরা যাক, সলাত পড়ার বিধান আল্লাহ দিয়েছেন। এখন কোন এক এলাকার মুসল্লিরা মসজিদে একত্রিত হয়ে পরামর্শ করল, আমরা এতদিন যে পদ্ধতিতে সলাত পড়েছি এখন একটু ভিন্নতর পদ্ধতিতে পড়ব। এই সিদ্ধান্ত কি গ্রহণ যোগ্য হবে? তাতে কি সলাতের ফরজ আদায় হবে? কিন্তু এই মুসল্লীরা যদি, যিনি সলাত পড়াবেন অর্থাৎ ইমাম (যার অর্থ নেতা) নির্বাচন করেন পরামর্শের ভিত্তিতে তবে তা ইসালামে গ্রহণযোগ্য হবে। মুসল্লীরা সলাত পড়ানোর নেতা নির্বাচন করতে পারেন, কিন্তু তারা সলাত বিকল্প পদ্ধতিতে পড়ার কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এমন দুঃসাহস করলে আল্লাহর কাছে কঠোর শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে, ফরজ আদায় তো দূরের কথা।

    সাহাবীরা ঠিক এ কাজই করেছেন। তারা নেতা নির্বাচন করেছেন, শাসন পদ্ধতি কি হবে তা নির্বাচন করেননি। কিন্তু বর্তমান ভোটের পদ্ধতিতে কি নেতা নির্বাচন হয় না কোন দল ক্ষমতায় যাবে তা নির্বাচন হয়? সাহাবীদের শুরা আর আজকের ভোটের পদ্ধতি কি করে এক হতে পারে? কাফের মুশরিকদের পদ্ধতি আমাদের এতটাই ভাল লেগেছে যে, ইমাম নির্বাচন করা, আর ইমামের কার্যক্রম পরিবর্রতন করার মধ্যে যে আকাশ পাতাল পার্থক্য তার কোন হুশ নেই।

    গণতান্ত্রিত পদ্ধতিতে কোনদিনই দ্বীন কায়েম হবে না, করা যাবে না, এ ব্যাপারে আল্লাহই তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাবধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন- وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِي الأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللّهِ যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশের মতামত গ্রহণ কর, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপদগামী করে দেবে। (সূরা আনয়াম ৬:১১৬) অর্থাৎ অধিকাংশের মতামত অকল্যাণকর, অধিকাংশ মানুষ অকল্যাণ বিভ্রান্তিকে বেছে নেয়।

    হেকমতের নামে এমন ভ্রান্তিকর পথ থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন, আমীন ইয়া রাব্বাল 'আলামীন।
    .
    .
    – নু'য়াইম বিন মুকাররিম

  • #2
    ............
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহু খাইরান
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        হেকমতের নামে এমন ভ্রান্তিকর পথ থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
        আমীন ইয়া রাব্বাল 'আলামীন

        Comment


        • #5
          আহ
          কীভাবে মানুষ গোমরাহির দিকে ধাবিত হচ্ছে...

          Comment

          Working...
          X