Announcement

Collapse
No announcement yet.

‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৬ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৬ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত:
    পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি


    রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং মুসলমানদের ইতিহাসে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও ভাবনা

    (প্রথম খণ্ড)

    -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    মূল প্রকাশনায়:

    আস-সাহাব মিডিয়া (উপমহাদেশ)

    সফর ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০২১ ঈসায়ী

    প্রথম সন্দর্ভঃ

    মৌলিক কিছু প্রাককথন


    প্রথম পরিচ্ছেদঃ যে সমস্ত ইঞ্জিল গ্রন্থ সম্পর্কে আমি আলোচনা করবো
    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ 'ঐতিহ্য বা ঐতিহ্যের ধারা' খ্রিস্টানদের লোকমুখে চর্চিত একথার পরিচিতি
    তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ মূল ধারার গির্জা ও পলের গির্জার মাঝে সংঘাত
    *****

    প্রথম পরিচ্ছেদঃ

    যে সমস্ত ইঞ্জিল গ্রন্থ সম্পর্কে আমি আলোচনা করবো


    প্রথম বিষয়: এ সমস্ত ইঞ্জিল গ্রন্থের উপস্থাপন / সুসমাচারগুলোর উপস্থাপন
    দ্বিতীয় বিষয়: এসব গ্রন্থের মাঝে বিশেষ দুটো সংস্করণের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমির সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন। কপি দুটো হল: যীশুঈযম ও প্রোটেস্ট্যান্টিজম। অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে এলি স্মিথ এবং ভেন ডিক।
    *****

    প্রথম বিষয়ঃ

    এ সমস্ত ইঞ্জিল গ্রন্থের উপস্থাপন / সুসমাচারগুলোর উপস্থাপন

    ১- যীশুঈযম (জেসুইট) সংস্করণ:

    এটি আল কিতাবুল মুকাদ্দাসের আরবি সংস্করণ। জেসুইট পাদ্রীদল এটি প্রকাশ করেছে। বৈরুতের দারুল মাশরিক থেকে ১৯৯৪ সালে এটির তৃতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়।
    এই সংস্করণের চতুর্থ পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে
    তৃতীয় মুদ্রণ
    মুদ্রণে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই
    পল বাসিম
    লেবাননে ল্যাটিনদের অ্যাপোস্টলিক ভিকার
    বৈরুত ৯ ই নভেম্বর ১৯৮৮
    সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত
    তৃতীয় মুদ্রণ ১৯৯৪[1]
    অর্থাৎ এটিকে ধরা হয় ক্যাথলিক গির্জার পক্ষ থেকে নির্ভরযোগ্য আরবি সংস্করণ।
    ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এই তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকায় এসেছে
    ১৮৮১ সালে জেসুইট পাদ্রীরা আল-কিতাবুল মুকাদ্দাসের পুরোটুকু আরবি অনুবাদের কাজ সম্পন্ন করে। জেসুইট ফাদার অগাস্টিন রোড[2]-এর তত্ত্বাবধানে এ কাজ করা হয়। এই উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষকতায় আরও যেসব জেসুইট ফাদার শরিক ছিলেন, তারা হলেন: ফিলিপ কোচ[3], জোসেফ রোজ[4], জোসেফ ভ্যান হ্যাম[5]। আর শেখ ইব্রাহিম আল-ইয়াজজি[6] ওল্ড টেস্টামেন্টের সুসমাচারগুলোর খসড়া তৈরিতে অবদান রেখেছিলেন।
    ১৯৪৯ সালে পাদ্রীরা আরেকবার পাণ্ডুলিপি[7] দেখতে আরম্ভ করে। ১৯৬৯ সালে নিউ টেস্টামেন্টের অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ফাদার হামাউই আল-ইসাভি, ফাদার ইউসেফ কোশাকজি উভয়ে বুট্রস আল-বুস্তানির সঙ্গে[8] সহযোগিতায় একাজ সম্পন্ন করেন। বুট্রস আল-বুস্তানি সাহিত্যগত সম্পাদনায় অবদান রাখেন। ১৯৮০ সালে এই অনুবাদকর্ম ওল্ড টেস্টামেন্টের বইগুলোতে সংযোজিত করা হয়। এটি জেসুইট পিতা অ্যান্টোইন অডো এবং রেনে ল্যাভেন্ডেজের কাছে ন্যস্ত করা হয়। হামাউই আল-ইসাভির কাছেও পাঠানো হয়।
    বৈরুত ৩১ শে জুলাই ১৯৮৯
    জেসুইট পাদ্রী[9]
    কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি যে, ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত সংস্করণ নিয়ে যারা কাজ করেছে তারাই এই ব্যক্তিগণ নাকি অন্যরা? এ কারণে আমি সামনের আলোচনায় ১৯৯৪ সালের জেসুইট সংস্করণে যারা কাজ করেছে তাদেরকে বোঝাতে লিখবজেসুইট সংস্করণের ব্যাখ্যাকারকগণ বলেছেন।

    ২- ১৮৬৫ সালে এলি স্মিথ (Smith,Eli) এবং ভান ডিক (Van Dyke) অনূদিত আল কিতাবুল মুকাদ্দাসের সংস্করণ।

    ৩-যৌথ সংস্করণ। দারুল কিতাবুল মুকাদ্দাস ফিশশারকিল আওসাত কর্তৃক প্রকাশিত।
    ওল্ড টেস্টামেন্ট দ্বিতীয় প্রকাশনা ১৯৯৫, দ্বিতীয় মুদ্রণ
    নিউ টেস্টামেন্ট চতুর্থ প্রকাশনা ১৯৯৩, ত্রিশতম মুদ্রণ
    লেবাননের জমিয়তুল কিতাবুল মুকাদ্দাস কর্তৃক প্রকাশিত।
    এর ভূমিকায় এসেছে—“এটি প্রথম আরবি অনুবাদ। এটি ক্যাথলিক, অর্থোডক্স এবং ইভানজেলিকাল সহ বিভিন্ন খ্রিস্টান চার্চের অন্তর্গত বাইবেলের পণ্ডিত ও ধর্মতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি যৌথভাবে রচনা করেছে।

    ………………….
    এমনিভাবে কখনো যদি এই অনুবাদ হিব্রু ভাষা, গ্রীক ভাষা অথবা আর্মেনীয় ভাষা থেকে হয়, তাহলে পাঠকের জন্য অর্থ স্পষ্ট করার জন্য প্রয়োজনের সময় এ দল আক্ষরিক অনুবাদ এড়িয়ে চলেছে।[10]
    শেষের এই বাক্যটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বাক্যে উঠে এসেছে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ভয়াবহ ত্রুটি, খ্রিস্টানদের আস্থা ও বিশ্বাসের পবিত্র-মুকাদ্দাস গ্রন্থে যা আপতিত হয়েছে। আর তা হলো গ্রন্থের মূল টেক্সটে এমন সংযোজন-বিয়োজন অথবা পরিবর্তন, যা অনুবাদকের আকীদা-বিশ্বাসের অনুকূল হবে। আমাদের সামনের আলোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হবে, ইনশা আল্লাহ!

    ৪- আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড ভার্শন (American standard version), প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালে। প্রথম মুদ্রণ ১৯০১ সালে।

    ৫- ওয়ার্ল্ড ইংলিশ বাইবেল: (WORLD ENGLISH BIBLE: The HOLY BIBLE with Deuterocanon/ Apocrypha)
    এছাড়াও রয়েছে বৃটেন সংস্করণ।
    এই উভয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ সালে।

    ৬- দ্য জেরুসালেম বাইবেল, রিডার্স এডিশন, জেনারেল এডিটর: (আলেকজান্ডার জোন্স, Doubleday & company, Inc. gaden city, New York, 1968.
    এটি দ্য জেরুসালেম বাইবেল'-এর আধুনিক ইংলিশ অনুবাদ। প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬৬ সালে। এটাই প্রথম ইংরেজি সংস্করণ যা পোপ পিয়াসের আহ্বানে রোমান ক্যাথলিকরা প্রকাশের ব্যবস্থা করে।
    বাইবেলের ফরাসি সংস্করণ “La Bible de Jerusalem” যেটা ছিল সেটা থেকেই ইংরেজি অনূদিত হয়েছে উপরের ইংরেজি সংস্করণটি। ফরাসি সংস্করণটি প্রকাশ করেছিল জেরুজালেম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিতাবুল মুকাদ্দাস ফ্যাকাল্টির গবেষকেরা। যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হয় তার নাম হলো “Les Editions du Cerf, paris”
    ফরাসি সংস্করণের আলেমদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও মতামতের মাধ্যমে ইংরেজি সংস্করণের উত্তাপ বেশ ভালই টিকিয়ে রাখা হয়েছিল।

    ৭- দ্য নিউ জেরুসালেম বাইবেল (the New Jerusalem bible; NJB
    প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮৬ সালে। দ্য জেরুসালেম বাইবেল'-এর পরিমার্জিত ও সংশোধিত সংস্করণ হিসেবে এটি প্রকাশিত হয়।
    এখানে আমি বলে রাখা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি যে, রিডার্স এডিশনের প্রকাশিত দ্য জেরুজালেম বাইবেল'-এর সঙ্গে দ্য নিউ জেরুজালেম বাইবেলের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। কখনো কখনো সেসব পার্থক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
    উদাহরণতঃ লূকের গসপেলের প্রথম ইংরেজি সংস্করণে এসেছে: ৩:২২:
    "And a voice came from heaven, 'you are my son, the beloved; my favor rets on you' "
    এর অর্থ হলো: আকাশ থেকে এমন একটি আওয়াজ এলো: তুমি আমার প্রিয় পুত্র। তোমার ওপর আমার ভালোবাসা স্থির হয়েছে।[11]
    এদিকে দ্য নিউ জেরুসালেম বাইবেলে বলা হয়েছে:
    “and a voice came from heaven, 'you are my son; today have a feathered you' ”
    এর অর্থ হলো: আর আকাশ থেকে একটি আওয়াজ এল: 'তুমি আমার পুত্র। আজই আমি তোমাকে জন্মদান করলাম অথবা পুত্র হিসেবে গ্রহণ করলাম।'
    এখানে যে বক্তব্যটি এসেছে তা ফার্স্ট কাউন্সিল অব নাইসিয়ার গৃহীত আকীদার পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। তাদের বিশ্বাস মতে ঈসা আলাইহিস সালাম আবহমানকাল থেকেই একজন ইলাহ বা উপাস্য। আল্লাহর মূল ধাতু দ্বারা তিনি তৈরি এবং পুরোপুরি আল্লাহর সমকক্ষ।
    নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ তা'আলা এই সব থেকে পবিত্র!
    তবে নিউ জেরুসালেম বাইবেলের এই বক্তব্য পুত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী একটি খ্রিস্টান উপশাখার আকীদার অনুরূপ। তাদের বিশ্বাস হলো সাইয়েদেনা ঈসা আলাইহিস সালাম একজন মানব সন্তান ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা তাঁকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন এবং অনেক উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন এমনকি পুত্র বানিয়ে নিয়েছেন।
    ইনশা আল্লাহ, সামনে যখন আমরা ত্রিত্ববাদী পলিন চার্চের বিরোধী খ্রিস্টান ধর্মে তাওহীদের ধারণা ও দিকনির্দেশনা সম্পর্কে আলোচনা করব; যখন আমরা ইঞ্জিল সুসমাচার অথবা গসপেলগুলোতে বিকৃতির অনুপ্রবেশ সম্পর্কে কথা বলবো, তখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসবে, ইনশা আল্লাহ। সেখানে এ বিষয়ে আলোকপাত করব যে, এই সুসমাচারগুলো কিভাবে বিভিন্ন খ্রিস্টান উপশাখার আকীদা-বিশ্বাস সমর্থনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে অথবা খ্রিস্টানদের আল কিতাবুল মুকাদ্দাসের দলীল থেকে কোন উপশাখাকে বঞ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
    ***
    দ্বিতীয় বিষয়ঃ
    এসব গ্রন্থের মাঝে বিশেষ দুটো সংস্করণের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমির সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন। কপি দুটো হল: যীশুঈযম ও প্রোটেস্ট্যান্টিজম। অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে এলি স্মিথ এবং ভেন ডিক।


    যেহেতু আমার এই গ্রন্থ খ্রিস্টানদের নিজেদের মধ্যকার রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং ঐশী ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অপচেষ্টা বিষয়ে রচিত, সেহেতু আমি উপরোক্ত সংস্করণ দুটির পটভূমি সংক্ষেপে উপস্থাপন করাটা প্রাসঙ্গিক ও উপকারী মনে করছি।
    ***

    জেসুইট সংস্করণ-তৃতীয় প্রকাশনা ১৯৯৪এর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পটভূমির সারসংক্ষেপ

    এ পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে আমি চাই, লেবাননের জেসুইট পাদ্রীদল, তাদের খ্রিস্টীয় তৎপরতা এবং চিন্তা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা সংক্ষেপে উপস্থাপন করবো। কারণ রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং ঐশী ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের স্বার্থসিদ্ধি বিষয়ে আলোচনা করতে হলে এই আলোচনাটা আমাদের কাজে আসবে।
    এই আলোচনাকে আমি দু'ভাগে বিভক্ত করবো।

    প্রথম ভাগ: জেসুইট পাদ্রীদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
    দ্বিতীয় ভাগ: সিরিয়ার জেসুইট পাদ্রীদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
    ***
    প্রথম ভাগঃ

    জেসুইট পাদ্রীদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

    এই আলোচনাকে আমি দু'ভাগে বিভক্ত করবো।

    ১- জেসুইট পাদ্রীদের উৎপত্তি ও ইতিহাস
    ২- তাদের ব্যাপারে বিশ্ব দরবারের অবস্থান
    ***

    ১- জেসুইট পাদ্রীদের উৎপত্তি ও ইতিহাস

    জেসুইট অ্যাক্টিভিস্ট যারা, তারা একই নামের একটি সংস্থা থেকে নিজেদের জন্য এই নাম চয়ন করেছেন। সংস্থাটি ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইগনাশিয়াস লয়োলা ও ফ্রান্সিস জেভিয়ার প্রমুখের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল[12]
    আমরা যদি জেসুইট শব্দের অর্থ ইংরেজিতে (Jesuit) খোঁজ করি তাহলে দেখতে পাই, এ শব্দের দ্বারা ষড়যন্ত্রী অথবা চক্রান্তকারী ব্যক্তিকে বোঝায়[13]
    হয়তোবা গুণবাচক এই নামটি জেসুইট অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে এ কারণেই যে, বহু ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে তাদের সক্রিয়তা ছিল। রানী এলিজাবেথ সহ ইউরোপের বিভিন্ন রাজাকে হত্যা চেষ্টা তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে সামনে আলোচনা আসবে, ইনশা আল্লাহ!
    ইগনাশিয়াস লয়োলার উদ্যোগের ফলে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন একজন স্প্যানিশ সৈনিক। যুদ্ধে আহত হবার পর যখন সুস্থ হয়ে ওঠেন, তখন তিনি ধর্ম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি প্রার্থনা উপাসনা ও সালাত আদায়ের পর 'আররিয়াযাতুর রুহানিয়া' গ্রন্থখানা রচনা করেন। তার দাবি অনুযায়ী এই গ্রন্থখানা মন মস্তিষ্ককে যিশু খ্রিস্টের কাছাকাছি বানাবার দলিল। ১৫৩৪ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে প্যারিসে তার সঙ্গে তার আরো ছয় জন বন্ধু শপথ নেন, প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে যাদের পরিচয় ও সাক্ষাৎ ঘটেছিল। তার অনুসারীদের পর তারাই তার গ্রন্থখানা কবুল করে নিয়েছিলেন। তারা দুনিয়া বিমুখতা, নারীসঙ্গ পরিত্যাগ এবং বাইতুল মাকদিসের হজের ব্যাপারে শপথ গ্রহণ করেন। আর যদি তারা হজ করতে সক্ষম না হনবাস্তবে এমন হয়েছিল যে তারা হজ করতে সক্ষম হয়নিতবে তারা পোপের নির্দেশক্রমে খ্রিস্টীয় দাওয়াতি মিশনে কাজ করবেন। ১৫৩৯ সালে ইগনাশিয়াস লয়োলা তার দলের ব্যবস্থাপনাগত নীতিমালা প্রণয়ন করেন। সে নীতিমালা সহকারে সংস্থাকে ১৫৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে পোপ তৃতীয় পল স্বীকৃতি প্রদান করেন। ব্যবস্থাপনাগত সেই নীতিমালায় আনুগত্যের গুরুত্ব বিশেষ করে পোপের আনুগত্যের ব্যাপারে মৌলিকভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়।[14]
    ইগনাশিয়াস লয়োলা তার গ্রন্থে যেমনটা লিখেছেন সেখান থেকেই এ কথা বুঝে আসে। এ পর্যায়ে আমি সংক্ষেপে জেসুইট অনুসারীদের জন্য পালনীয় কিছু নিয়ম-নীতি তুলে ধরবো
    প্রথমতঃ আমাদের মন-মস্তিষ্ক আমাদের প্রভু যিশুখ্রিস্টের প্রকৃত স্ত্রী, যিনি আমাদের পুরোহিত গির্জার পবিত্র মাতা, তার পরম আনুগত্যের ব্যাপারে তৎপর ও সদা জাগ্রত থাকতে হবে।
    দ্বিতীয়তঃ পুরোহিতদের সামনে স্বীয় অবস্থার স্বীকারোক্তি করাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে।
    তৃতীয়তঃ লিটার্জি শ্রবণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
    চতুর্থতঃ ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে সম্মান জানাতে হবে।
    পঞ্চমতঃ ধর্মীয় মান্নত ও আনুগত্যের শপথগুলোর শ্রদ্ধা করতে হবে।
    ষষ্ঠতঃ খ্রিস্টীয় সাধুসন্তদের স্মৃতিচিহ্নগুলোকে সম্মান করতে হবে।
    সপ্তমতঃ গির্জার সকল বিধি-নিষেধ সম্মান করতে হবে, সেগুলোর যৌক্তিকতা ও সম্মান রক্ষার জন্য মেধা খাটাতে হবে।
    অষ্টমতঃ নেতাদের আনুগত্য করতে হবে এবং জনমানুষের সামনে তাদের সমালোচনা করা যাবে না।
    নবমঃ প্রতিটি বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমাদেরকে এমন হতে হবে যে, আমরা যেটাকে সাদা দেখছি, পুরহিত গির্জা সেটাকে কালো বললে আমাদের কালো বলেই মেনে নিতে হবে।[15]
    প্রতিষ্ঠার পর সংস্থার সদস্য সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। মিশনারি, সেবা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্থাটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে এই দলটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে; মনস্তাত্ত্বিক ও সামরিক উভয়ক্ষেত্রে। এমনিভাবে গির্জাকে আধুনিকায়নের ক্ষেত্রেও দলটি বিরাট ভূমিকা পালন করে।[16]
    সংস্কার প্রতিরোধ অভিযানের কার্যত সূচনা ছিল কাউন্সিল অব ট্রেন্টে (১৫৪৫-৬৩ খ্রিস্টাব্দ), যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন ডিয়েগো লাইনেজ; লয়োলার পরে সোসাইটি অফ দ্য জেসুইটসের যিনি ছিলেন দ্বিতীয় নেতা। তিনি পোপ চতুর্থ পল কর্তৃক প্রেরিত হয়েছিলেন। এই পোপকে উইল ডুরান্ট অভিহিত করেছিলেন পাগল রাব্বি বলে। কনফারেন্সে গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী অপরজন ছিলেন জেসুইট সালমেরন। তাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছিল যেন ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়ে এবং পোপের প্রতিরক্ষায় তারা কনফারেন্সের সদস্যদেরকে প্রভাবিত করে। ফলে তাদের উভয়ের প্রচেষ্টায় সমঝোতা ও ঐক্য সাধনের পরিবর্তে কনফারেন্সে প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারবাদী চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।[17]
    ওই কনফারেন্সে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর মাঝে রয়েছে: ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্টের বৈধতার ওপর জোর দেয়া; প্রশ্নহীন অনুসরণ ঈমানের উৎস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ। দ্বিতীয় বিষয়টির ব্যাখ্যা হল, তাদের কাছে তাদের কাছে থাকা পবিত্র বাইবেলের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ গির্জার মধ্যস্থতা (চার্জ ট্রেডিশন) ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। আর এমন ধারণা প্রোটেস্ট্যান্ট নীতির বিরোধী। তেমনি গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা সিদ্ধান্ত হলো, বাইবেলের ল্যাটিন অনুবাদ (ভালগেট) আকীদা ও তাত্ত্বিক দলিল প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, খ্রিস্টানদের কাছে থাকা আল-কিতাবুল মুকাদ্দাস সরাসরি আল্লাহর বাণী।[18]
    ইনশা আল্লাহ, পাঠকবৃন্দ অচিরেই দেখতে পাবেন, গির্জার এই দাবি যে, খ্রিস্টানদের কাছে থাকা বাইবেল সরাসরি আল্লাহর বাণীএমন নিশ্চয়তা থেকে সাম্প্রতিক শতাব্দিগুলোতে পিছিয়ে আসা হচ্ছে। উত্তরোত্তর সমালোচনা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন তাত্ত্বিক প্রমাণাদির চাপে গির্জার পিতারা এমন জোরারোপ ও নিশ্চয়তা প্রদানের অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন। যদিও আকর্ষণীয় স্ববিরোধী পন্থায় তারা এখনো পর্যন্ত বলে যাচ্ছে, তাদের আল কিতাবুল মুকাদ্দাস বরাবরই আল্লাহর বাণী ছিল। ইনশা আল্লাহ, এ বিষয়ে আমি সামনে ইঙ্গিত দেবো।
    তাদের এই সোসাইটি শিক্ষা বিস্তারের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর আরোপ করে। এর পাশাপাশি ধর্মপ্রচার ও ওয়াজ নসিহত মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমনিভাবে এর সদস্যরা একটি বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছিল। তারা ইউরোপের বেশ কয়েকটি রাজ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেছিল।
    এমনিভাবে সংস্থা সূচনাকাল থেকেই বিদেশি মিশন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। নিজের অসামান্য তৎপরতা এবং পোপের প্রতি উৎসাহী সমর্থনের ফলস্বরূপ সংস্থা বিভিন্ন জায়গা থেকে শত্রুতার শিকার হয়েছিল।[19]
    ফলে ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগাল তাদের বহিষ্কার করে, ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স তাদের বৈধতা বিলোপ করে এবং ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে স্পেন ও সিসিলি তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
    এর ফলে পোপ চতুর্দশ ক্লিমেন্ট ফ্রান্স, স্পেন এবং পর্তুগাল সরকারের চাপে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে সংগঠন বাতিল করার সিদ্ধান্ত জারি করেন।
    কিন্তু প্রোটেস্ট্যান্ট প্রুশিয়ার প্রোটেস্ট্যান্ট রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিক এবং পূর্ব রাশিয়ার অর্থোডক্স অধিপতি ক্যাথরিন দ্বিতীয়কেবল এই দুজনই সংস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
    সংস্থার কার্যক্রমের প্রতি চার্চের প্রয়োজনীয়তার কারণে নেপোলিয়নের কারাগার থেকে মুক্তির পর পোপ সপ্তম পিয়াসের মাধ্যমে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে সংস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত জারি করা হয়[20]
    সংগঠনের কার্যকলাপ পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্তের পর প্রধানত শিক্ষা ও বহির্বিশ্বে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে তাদের সক্রিয়তা প্রসারিত হয়। সেই সঙ্গে যোগাযোগ, সমাজকল্যাণ, গির্জা একীকরণ এবং রাজনীতির ক্ষেত্রেও কাজ করার মতো অনেক ক্রিয়াকলাপে সংস্থাটি অংশগ্রহণ করে।
    ২০১৩ সালে প্রথম ফ্রান্সিস ছিলেন প্রথম জেসুইট ব্যক্তিত্ব, যিনি পোপ হয়েছিলেন।[21]
    তিনি জন্মসূত্রে আর্জেন্টাইন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ইসাউইদের প্রতি আনুগত্যের চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় ইসাউইদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বকাল ঘটনাক্রমে ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত চলমান আর্জেন্টিনায় ডার্টি ওয়ারের সময়কালের সঙ্গে মিলে যায়। জেনারেল ভিদেলার শাসনামলের ঘটনা এটা। জেনারেল ভিদেলার প্রায় ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার বিরোধী আত্মগোপন করেছিল। ফ্রান্সিসের দাবি অনুযায়ী, তিনি অনেককেই ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
    কিন্তু ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে দুজন পাদ্রী আত্মগোপন করেন। একটি দরিদ্র এলাকায় তারা কাজ করতেন। অতঃপর পাঁচ বছর পর একটি মাঠে তাদেরকে মাদকাবিষ্ট অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। ডার্টি ওয়ারের বেশ কয়েক বছর পর ফ্রান্সিসের ভূমিকাপাদ্রীদেরকে গুম করা অতঃপর তাদেরকে মুক্ত করে দেয়ার ক্ষেত্রেতুঙ্গে উঠে গিয়েছিলো। তখন কেউ কেউ এই বলে তার সমালোচনা আরম্ভ করেছিল যে, তিনি পাদ্রীদেরকে রক্ষা করতে সমর্থ হননি। এমন কি কেউ কেউ এমন অভিযোগ পর্যন্ত তুলেছিল যে, তিনি পাদ্রীদেরকে সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন। অবশ্য কিছু লোক তার ওজর আপত্তি কবুল করে নিয়েছিল। তারা একথা মেনে নিয়েছিল, পাদ্রীদেরকে মুক্ত করার জন্য ফ্রান্সিস সরকারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ চালিয়ে গিয়েছেন। এদিকে রাব্বিদের অন্তর্ধানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর টেকেনি।
    আর আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দেজ তাকে ভিদেলার কর্তৃত্ববাদের সমর্থক বলে অভিযুক্ত করেন।[22]

    ***

    ২-তাদের ব্যাপারে বিশ্ব দরবারের অবস্থান

    কিছুক্ষণ আগে আমরা উল্লেখ করেছি, ইউরোপের কয়েকটি দেশ জেসুইটদেরকে বিতাড়িত করেছে। পোপ অষ্টাদশ ক্লিমেন্টকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেবার জন্য দেশগুলো চাপ প্রয়োগ করেছে। পোপ সপ্তম পিয়াস ১৮১৪ সালে সংস্থার কার্যক্রম পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত দেবার কিছু আগে এবং পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অবস্থান এমনই ছিল।
    উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সে জেসুইটদের অবশিষ্টাংশ সেক্রেড হার্টের পাদ্রী নামে রয়ে গিয়েছিল। ১৮০৪ সালে নেপোলিয়ন তাদেরকে বিতাড়িত করেছিলেন। তারপরে ফ্রান্স ১৮৮০ এবং ১৯০১ সালে তাদের বহিষ্কার করেছিল। স্পেন ১৮২০ সালে সাময়িকভাবে, তারপর ১৮৩৫ সালে স্থায়ীভাবে তাদেরকে বহিষ্কার করেছিল। পর্তুগাল ১৮৩৪ সালে তাদের বহিষ্কার করে। এদিকে তাদেরকে বিতাড়িত করার জন্য রাশিয়ার সাত বছর লাগে; ১৮১৩ সাল থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত। এ সময়ের ভেতর রাশিয়া তাদেরকে বহিস্কার করে। এমনিভাবে ১৮১৬ সালে হল্যান্ড, ১৮৪৮ সালে সুইজারল্যান্ড এবং ১৮৭২ সালে জার্মানি তাদেরকে বহিষ্কার করেছিল[23]
    সোসাইটি অফ দ্য জেসুইটসের ব্যাপারে ইউরোপ জুড়ে বিস্তৃত বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। তন্মধ্যে রয়েছে:
    - ১৫৭২ সালের ১৮ই আগস্ট সেন্ট বার্থোলোমিউ ডে গণহত্যা, যে ঘটনায় ফ্রান্সে বিভিন্ন অনুমান[24] অনুযায়ী ২,০০০ থেকে ১০০,০০০ প্রোটেস্ট্যান্ট নিহত হয়।
    - ১৫৮৯ সালের ১লা আগস্ট ডোমিনিকান সন্ন্যাসী গাল ক্লেমেন্টের দ্বারা ফরাসি রাজা তৃতীয় হেনরির হত্যাকাণ্ড। এই গাল ক্লেমেন্ট ওই ব্যক্তি যিনি (হলি লিগে) জেসুইটদের অংশীদার ছিলেন। উক্ত জেসুইট অ্যাকশনকে গৌরবান্বিত করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন গেনার্ড, পরবর্তীতে যাকে ফাঁসি দেয়া হয়[25]
    - ফরাসি রাজা হেনরি চতুর্থ ১৪ ই মে ১৬১০ তারিখে জেসুইট ফ্রাঁসোয়া র্যাভিয়াক কর্তৃক খুন হন[26]
    - ডাচ কমান্ডার প্রিন্স উইলিয়াম প্রথম, জেসুইট বালথাজার জেরার্ড কর্তৃক ১৫৮৪ সালে নিহত হন[27]
    - জেসুইটদের ইংল্যান্ড জয়ের প্রচেষ্টা:
    জেসুইটরা প্রথম এলিজাবেথের শাসনামলে ইংল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনকে নির্মূল করতে চেয়েছিল। প্রথম এলিজাবেথকে তারা আখ্যা দিয়েছিল জারজ কন্যা বলে। এরই মধ্যে তারা ক্যাথলিক রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের মাধ্যমে স্পেন নিয়ন্ত্রণ করছিল, যিনি হল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্ট নির্মূলের মিশন চালাচ্ছিলেন[28]
    কারণ এই মিশন দিয়ে তাকে পাঠিয়ে ছিলেন তার নেতা আলবা ডিউক, যিনি নেদারল্যান্ডসে ব্লাড কাউন্সিলনামে একটি আদালত গঠন করেছিলেন। সেই আদালতের মাধ্যমে তিনি প্রায় ১৮,০০০‌ ডাচকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন[29]। সেখানে জেসুইটরা ইংল্যান্ড থেকে প্রোটেস্ট্যান্টদেরকে তাদের রানী সহকারে উৎখাত করার ব্যাপারে স্প্যানিশ রাজার সাথে ষড়যন্ত্র করেছিল। আর রানী যখন পোপের কাছে নতি স্বীকার করেননি, তখন পোপ পিয়াস পঞ্চম ১৫৭০ সালে তার ঘোষণাপত্র (রেগনাস ইন এক্সেলসিস / সর্বোচ্চ স্তর প্রদত্ত রায়) প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়: "ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ একজন জাদুকর এবং অপরাধের হোতা"। সে ধর্মবিদ্বেষী। তার আনুগত্য থেকে সরে আসার অধিকার রয়েছে প্রজাদের। আর যারা তাকে মেনে চলবে, তারা সকলেই গির্জা প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ওই ঘোষণাপত্রে।
    গির্জার লক্ষ্য ছিল প্রোটেস্ট্যান্ট রানীর (এলিজাবেথ) স্থলাভিষিক্ত করবে ক্যাথলিক রানীকে (স্কটস রানী মেরি)। জেসুইটরা আরো ক্ষুদ্ধ হয়েছিল এ কারণে যে, ১৫৭১ সালে জেসুইট দল কর্তৃক এলিজাবেথকে হত্যা প্রচেষ্টা, যেটি রিডলফি ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত, সে ঘটনার পর এলিজাবেথ তাদের ব্যাপারে বহিষ্কারাদেশ জারি করেছিল। সে ঘটনার পর থেকেই রানী এলিজাবেথ তাকে এবং তার প্রোটেস্ট্যান্ট প্রজাদেরকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে ক্যাথলিকদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলেন, যার প্রেক্ষিতে তিনি বহিষ্কারাদেশ জারি করেছিলেন। রিডলফি ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য আসলে এটাইরানী এলিজাবেথকে হত্যা, স্কটল্যান্ডের রানী মেরিকে ক্ষমতায়ন এবং স্পেন কর্তৃক ইংল্যান্ডে আগ্রাসন পরিচালনা।
    ইউরোপ থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে এসে ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরে পালিয়ে যাওয়া ইংলিশ জেসুইটদের ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিলো।
    ফলে বারংবার এলিজাবেথকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ১৫৮৩ সালে তারা একবার চেষ্টা করে। ১৫৮৬ সালে পুনরায় চেষ্টা করে। অ্যান্টনি ব্যাবিংটনের নেতৃত্বে এ মিশন পরিচালিত হয়, যিনি একটি গোপন জেসুইট কমিউনিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু উভয় প্রচেষ্টায় তারা ব্যর্থ হয়। স্কোয়ারটস রানী মেরীকে জেসুইটদের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করা হয় এবং ১৫৮৭ সালে তার শিরশ্ছেদ করা হয়।
    ১৫৮৮ সালে চার্চের অর্থায়নে দ্বিতীয় ফিলিপ বিখ্যাত আর্মাদা (নৌ বহর) প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু এক প্রচণ্ড ঝঞ্ঝাবায়ু তাদের ওপর আঘাত হানে। তাদের ২০ হাজার লোক নিহত হয় এবং জাহাজগুলো ডুবে যায়[30]
    - গানপাউডার ষড়যন্ত্র:
    ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস জেসুইটদের প্রতি শত্রুতা পোষণের ক্ষেত্রে তার পূর্বসূরী এলিজাবেথের রাজনীতি অনুসরণ করেন। তিনিও তাদেরকে বহিষ্কার করেন এবং তার জল্লাদকে আদেশ দেন, ক্যাথলিক মতাদর্শের পক্ষে প্রতিরোধের লক্ষ্যে রচিত জেসুইট ফ্রান্সিস্কো সুয়ারেজের আকীদা সংকলনগুলো পুড়িয়ে ফেলতে। তাই জেসুইটরা পার্লামেন্টের অধিবেশন চলাকালে অধিবেশনকক্ষের ভূগর্ভস্থ কুঠুরিতে রাখা ছত্রিশ ব্যারেল গানপাউডারের বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সপরিবারে রাজাকে এবং তার সমস্ত প্রোটেস্ট্যান্ট নেতাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল, যা গানপাউডার ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত। কিন্তু চক্রান্তটি ১৬০৫ সালের[31] নভেম্বরের পঞ্চম তারিখে সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল।
    - প্রথম 'ত্রিশ বছরের যুদ্ধ':
    ১৬১৮ সালে এই যুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল, ইউরোপে; বিশেষ করে জার্মানিতে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের বিস্তার। তবে বোহেমিয়া রাজ্য কর্তৃক বহিস্কৃত হওয়ায় আরও বেশি সংক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিল তারা।
    তাই জেসুইটরা প্রোটেস্ট্যান্ট মতাদর্শ নির্মূলের লক্ষ্যে পরিকল্পিত একটি নতুন গণহত্যা পরিচালনার উদ্দেশ্যে বাভারিয়া ও অস্ট্রিয়াকে নিয়ে একটি জোট গঠন করেছিল। এদিকে তারা সম্রাট দ্বিতীয় ফার্দিনান্দকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জার্মানির প্রভু হয়ে বসেছিল। এই ফার্দিনান্দের ধর্মীয় স্বীকারোক্তি আদায়ের ধর্মগুরু ছিলেন খোদ জেসুইট মার্টিন পেকান এবং তারপর জেসুইট উইলিয়াম লা মরমেইন। সম্রাট তাদের উভয়ের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করতেন রাষ্ট্রীয়ভাবে।
    এই যুদ্ধ এবং ইনকুইজিশনের ফসল ছিল দশ মিলিয়ন প্রোটেস্ট্যান্ট। কিন্তু যুদ্ধটি ওয়েস্টফালিয়ার শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছিল। স্থাপিত সেই চুক্তিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল, যা ছিল প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলনের ফসল। ফলে জেসুইটদের হতাশ হতে হয়েছিল চরমভাবে। সেইসঙ্গে ক্যাথলিক স্পেনের[32] শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছিল হল্যান্ড।
    - জাপানে জেসুইট:
    সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সিস জেভিয়ারের সহায়তায় জেসুইটরা ১৫৪৯ সালে জাপানে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে। তারা জাপানের রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের মাঝে ক্যাথলিক মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে থাকে। হাজার হাজার বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করতে এবং বৌদ্ধদের অত্যাচার করতে নেতাদের প্ররোচিত করে। সে সময় জেসুইটরা পরিকল্পনা করেছিল, তারা কোনো বন্দর দখল করবে‌। তারপর একটি বিদেশী সেনাবাহিনীর সাহায্য চাইবে। এরপর সেনাবাহিনীর সাহায্যে তারা সরকার পরিবর্তন করে ক্যাথলিক মতাদর্শকে জাপানের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে চাপিয়ে দেবে।
    তাদের এমন পরিকল্পনার পাল্টা জবাব হিসেবে জাপান সরকার ১৫৮৭ সালে তাদের বহিষ্কার করতে শুরু করেছিল। তারপর জাপানের সামরিক কমান্ডার ইয়েসু খ্রিস্টান পোপের সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমুচিত জবাব দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। তাই তিনি ১৬১৪ সালে তাদের বহিষ্কারের জন্য একটি ডিক্রি জারি করেন। জেসুইটদের বহিষ্কার এবং খ্রিস্টীয় যেকোনো মতাদর্শ নিষিদ্ধ হবার মধ্য দিয়ে সেই ডিক্রির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছিল।
    কিন্তু জেসুইটরা ১৬৩৭ সালে ত্রিশ হাজার জাপানি ক্যাথলিকের একটি বাহিনী গঠন করে এবং সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা স্প্যানিশ নৌবহরের জন্য অপেক্ষা করে, কিন্তু জাপানিরা ডাচ প্রোটেস্ট্যান্ট নৌবহরের সাহায্যে তাদের পরাজিত করে। তাদের পরাজয়ের পর, জাপানের সামরিক কমান্ডার ইয়েমিৎসু ১৬৩৯ সালে একটি ডিক্রি জারি করে সমস্ত রোমান ক্যাথলিক এবং অন্যান্য সমস্ত বিদেশীকে জাপান থেকে বহিষ্কার করে[33]
    - আয়ারল্যান্ড গণহত্যা:
    ২৩ শে অক্টোবর ১৬৪১ সালে সেন্ট লয়োলা দিবসে প্রোটেস্ট্যান্টদের বিরুদ্ধে জেসুইটদের দ্বারা এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এটি আট বছর স্থায়ী ছিল, যেখানে প্রায় ১৫০০০ প্রোটেস্ট্যান্ট নিহত হয়েছিল[34]
    - প্রোটেস্ট্যান্টদের বিরুদ্ধে প্রথম চার্লসকে জেসুইটদের উস্কানি:
    রাজা প্রথম জেমস ১৬২৫ সালে মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র প্রথম চার্লস পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনিও পিতার পথ ধরে জেসুইটদের হাতের পুতুলে পরিণত হন। চার্লস প্রথম -এর ক্যাথলিক প্রবণতার কারণে, তিনি নিজের নৌবহর ফ্রান্সের রাজা লুই ত্রয়োদশকে ব্যবহার করতে দেন, যিনি ফরাসি প্রোটেস্ট্যান্টদেরকে নিপীড়ন করতেন এবং তাদের নৌবহর ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। এতে ইংরেজ পার্লামেন্ট ক্ষুব্ধ হয়ে রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যা অলিভার ক্রোমওয়েলের নেতৃত্বে পিউরিটান বিপ্লব নামে পরিচিত।
    এই বিপ্লব ইংল্যান্ডে জেসুইটদের পরাজয় ডেকে আনে। ক্রমওয়েল আয়ারল্যান্ডে আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করে, প্রথম চার্লসকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তা কার্যকর করা হয় এবং ফ্রান্সকে হুগুয়েনটস (ফরাসি প্রোটেস্ট্যান্টদের) অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে একটি সাধারণ ক্ষমা জারি করতে বাধ্য করা হয়। এভাবেই একজন স্বৈরশাসক হিসেবে প্রথম চার্লসের সহায়তায় জেসুইটদের প্রচেষ্টা এ যাত্রায় হিতে-বিপরীত প্রমাণিত হয়[35]
    - নান্টেসের আদেশ প্রত্যাহার এবং ফরাসী হুগুয়েনটদের গণহত্যা:
    ১৫৯৮ সালে, ফরাসি রাজা চতুর্থ হেনরি, ন্যান্টেসের আদেশ জারি করেছিলেন, যা ছিল ফ্রান্সে প্রোটেস্ট্যান্টদের অধিকার সংরক্ষণের ঘোষণাপত্র। এই অধ্যাদেশ জেসুইটদের তত্ত্বাবধানে থাকা ট্রেন্ট কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরোধী ছিল। উক্ত অধ্যাদেশ' জারি করার কারণেই রাজা হেনরি চতুর্থ, ফ্রাঁসোয়া র্যাভিয়াকের হাতে নিহত হয়েছিলেন। জেসুইটরা এই ডিক্রি বাতিল করার জন্য মুখিয়ে ছিল। অতঃপর রাজা লুই চতুর্দশের শাসনকালে তারা সে সুযোগ লাভ করে। কারণ তিনি ছিলেন একজন ধর্মান্ধ ক্যাথলিক। ধর্মীয় সংস্কার সম্পর্কে তার কিছুই জানা ছিল না। তিনি ফ্রান্সের প্রোটেস্ট্যান্টদেরকে বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে জোরপূর্বক তাদেরকে নিজেদের বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত করতে এবং তাদের গির্জা ভেঙ্গে দিতে চেষ্টা করেছিলেন। ১৬৮৫ সালে তিনি ন্যান্টেসের আদেশের একটি ভেটো জারি করেছিলেন, যার ফলে ফ্রান্স থেকে ২০০,০০০ প্রোটেস্ট্যান্ট পালিয়ে যায় এবং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মাঝে বিভিন্ন শিল্প দক্ষতার অধিকারী অনেকেই ছিল। বিরাট এই দলের ফ্রান্স ত্যাগের ফলে ফরাসি অর্থনীতি পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
    Per Lachaise the Jesuit - যিনি ফরাসি রাজা লুই চতুর্দশের ধর্মীয় স্বীকারোক্তি আদায়ের পুরোহিত ছিলেন, তিনি দ্বিতীয় জেমসের স্বীকারোক্তি আদায়কারী পাদ্রী পিটার্সের কাছে তার চিঠিতে ব্যাখ্যা করেছেন যে, কীভাবে তিনি ন্যান্টেসের ডিক্রি ভেটো করার সিদ্ধান্তটি বের করেছিলেন। সে চিঠিতে বলা হয়েছিল, চতুর্দশ লুই একবার কোন একটি অশ্লীল কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে তিনি সেটার সুযোগ নিয়েছিলেন। এরপর তাকে ক্ষমা করার জন্য এই শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, সমস্ত বিধর্মী তথা প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানকে এক দিনের ভেতর[36] হত্যা করার জন্য পাদ্রীর পক্ষে একটা বিল পাশ করতে হবে।
    আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, ফ্রান্সের মত একটি দেশ, যেখান হতে জেসুইটদের একাধিকবার বিতাড়িত করা হয়েছে, সেই তারাই জেসুইটদেরকে আমাদের দেশে পাঠাতে আগ্রহী। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শাইখ মুহম্মদ রশিদ রিদা - আল্লাহ তাঁর ওপর রহম করুন - বলেছেন; ফ্রান্স ও ব্রিটেন প্রসঙ্গে তিনি বলে যাচ্ছিলেন: "এ দু'টো দেশ বৈষয়িক মনোভাবাপন্ন ও বস্তুবাদী। ধর্ম হলো তাদের কাছে একপ্রকার পরোক্ষ বাণিজ্যিক পণ্য। কেবল উপনিবেশগুলোর বাজারে এই পণ্যের লাভ তারা ঘরে তুলতে পারে। তাই তো ফ্রান্স ফরাসি জেসুইটদেরকে নিজেদের উপনিবেশগুলোতে ঠিকই সহায়তা করে (তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ সিরিয়া লেবানন), কিন্তু নিজের ভূমিতে তাদেরকে জায়গা দিতে একেবারেই প্রস্তুত নয়"[37]
    পূর্বোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইয়াসূঈরা (জেসুইটরা) ছিল পোপের একান্ত আজ্ঞাবাহী। পোপের শত্রুদেরকে ধ্বংস করার কাজে তারা ছিল তার ডান হাত। পোপের প্রতি সৌহার্দ্য, ভালোবাসা ও নিরঙ্কুশ আনুগত্যের শপথ গ্রহণকারী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ছিল জেসুইটরা। সে কারণেই পোপরা প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলন প্রতিরোধ করতে তাদেরকে ব্যবহার করেছিলেন।
    উইল ডুরান্ট বলেছেন: "অবশেষে চার্চ যেদিন তার ধর্মতাত্ত্বিক সংগ্রামকে শান্ত করতে এবং ধর্মীয় ক্ষত সারাতে ইউরোপের সেই দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত সাধারণ দলটিকে[38] আমন্ত্রণ জানাতে সাহস করেছিল, তখন তারা ছিল মুষ্টিমেয় কিছু জেসুইট। তাদের সংস্কৃতি, কর্তৃত্ব, বিচক্ষণতা, বিত্ত বৈভব ও বাগ্মিতার মাধ্যমে সবকিছু ঢেলে সাজাতে চেয়েছিল গির্জা। পোপরা মুষ্টিমেয় সে দলটাকেই বিদ্বেষী কর্তৃত্ব রক্ষার এবং সনাতন বিশ্বাসকে সম্পূর্ণরূপে[39] সংরক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন"।
    জেসুইট প্রথম ফ্রান্সিস পোপের আসনে সমাসীন হবার পর জেসুইট-নেতৃত্ব ভ্যাটিকান-নেতৃত্বের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছিল। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই পোপ নিজের জন্য ফ্রান্সিস উপাধি গ্রহণ করেছিলেন ফ্রান্সিস জেভিয়ারের স্মরণে, যিনি ছিলেন লয়োলার মতই জেসুইট কমিউনিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
    ম্যাট স্টেফন তার সম্পর্কে বলেছেন: "তিনি একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে গির্জার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন যখন রোমান ক্যাথলিকরা ছিল বিশ্বের জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠাংশেরও বেশি। তাদের বেশিরভাগই ছিল ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায়। কিন্তু গির্জার খ্যাতি দুর্বল হয়েছে যৌন কেলেঙ্কারির কারণে যা প্রথমে আশির দশকে এবং তারপর নব্বইয়ের দশকে ফাঁস হয়েছিল; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকায়"[40]
    যেহেতু জেসুইটরা খ্রিস্টধর্মের প্রচারের জন্য এবং পোপের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য যুদ্ধ, হত্যা, ইনকুইজিশন এবং গণহত্যার পাশাপাশি শিক্ষা ও মিশনারি পন্থা ব্যবহার করেছিল, তাই এই পর্যায়ে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে, তাদের বিস্তৃত জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ছিল শাস্ত্রীয় অসততায় অভিযুক্ত। ইনশা আল্লাহ, এ বিষয়ে সামনে আলোচনা করবো।
    এমনিভাবে তারা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর ইউরোপীয়দের শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ছিল। ফ্রান্সিস জেভিয়ার যাকে লয়োলা এশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন, উইল ডুরান্ট তার সম্পর্কে বলেছেন; তিনি নিজের এই ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন যে, এমন কোন হিন্দুকে তিনি যাজক হবার অনুমতি দেবেন না, যার পূর্বপুরুষদের কয়েক প্রজন্ম খ্রিস্টান নয়। আর স্বদেশের কোন যাজকের জন্য পর্তুগিজ যাজকের মতো ধর্মীয় স্বীকারোক্তি আদায়ের অনুমতি তিনি দেবেন না।[41]
    প্রফেসর আহমেদ আবদেল ওয়াহাব তাঁর বইয়ে স্টিফেন নিলের 'এ হিস্টরি অফ ক্রিস্টিয়ান মিশনস' বই থেকে যে উদ্ধৃতি এনেছেন, তা দিয়েও উপরের বক্তব্য সমর্থিত হয়। উদ্ধৃতিটি ছিল ভারতীয় পুরোহিত মাত্তা ডি কাস্ত্রোর গল্প সম্পর্কিত, যিনি গোয়াতে একজন হিন্দু ছিলেন। গোয়া ছিল একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ, যা খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু গোয়ার পর্তুগিজ ক্যাথলিক বিশপ তাকে পাদ্রীর পদে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন। তখন অবিলম্বে তিনি রোমে পাড়ি দিতে সফল হন। সেখানে বহুবছর অধ্যয়ন করার পর ১৬৩০ সালে তিনি একজন যাজক হিসাবে নিযুক্তি পান এবং ভারতবর্ষের জনগণের মাঝে মিশনারি পরিচালনার জন্য এতদঞ্চলে ফিরে আসেন। কিন্তু শত্রুরা তাকে কোণঠাসা করে এমনকি তিনি পুনরায় স্থলপথে রোমে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
    সেখানে তাকে বিশপ হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং পুনরায় ভারতবর্ষে পাঠানো হয়। কিন্তু আসার মুহূর্ত থেকে তার প্রতিকূলতা বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ গোয়ার বিশপ তাকে বিশপ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে।
    অবশেষে, মাত্তা তার সঙ্গে কৃত অবিচারের কথা তুলে ধরতে নিজেই তৃতীয়বারের মতো রোমে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখলেন না। কিন্তু তাকে আবিসিনিয়ায় যেতে রাজি করার নিরর্থক প্রচেষ্টার পর তিনি তৃতীয়বারের মতো ভারতবর্ষে ফিরে আসেন ১৬৫১ সালে। সে সময় পর্তুগিজ এবং জেসুইটদের সকলের প্রতি তার যে ক্ষোভ ও ক্রোধ রয়েছে, তা তিনি লুকোতে পারেননি। এদিকে তার প্রেরিত গোয়ার চার্চের অবস্থাদি সম্পর্কিত অভিযোগগুলো যখন রোমে পৌঁছুলো, তখন দেখা গেল তার কিছু অংশ আসলেই সত্যি। তাই অভিযোগের উৎসমুখ বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা করা হলো। আর সেই উৎসমুখ হলো মাত্তা। অতএব, ১৬৫৮ সালে তার উপাধি কেড়ে নেয়া হলো, তার পদবী বাতিল করে তাকে পুরোপুরি বরখাস্ত করা হলো। ১৬৭৭ সালে এ অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
    পরবর্তী ভারতীয় ক্যাথলিক যাজক নিযুক্ত করা হয়েছে একেবারে ১৯২৩ সালে অর্থাৎ ম্যাথিউকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করার প্রায় ৩০০ বছর পর।[42]
    শাইখ মুহাম্মাদ রশিদ রিদা (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন) তাদের সম্পর্কে বলেছেন: জেসুইটরা অর্থের পূজায় ইহুদি এবং পুঁজিবাদী অন্যান্য শ্রেণীর চেয়েও বেশি কট্টর এবং অপচয়কারী। এ বিষয়ে তাদের গোপন আইন রয়েছে আমার সংগ্রহে। এক্ষেত্রে তাদের একটি মূলনীতি হলো—“লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাধুতা যেকোনো উপায়েকে বৈধতা দিতে পারে। অথচ তাদের এই মূলনীতি ইনজীলের উপদেশমালার পুরোপুরি বিরোধী[43]


    (চলবে, ইন শা আল্লাহ)
    [1] আল-কিতাবুল মুকাদ্দাস, জেসুইট প্রকাশনা, চতুর্থ পৃষ্ঠা।

    [2] ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে তার জন্ম। আলজেরিয়ায় আরবি শিক্ষা করেছেন। অতঃপর ১৮৬৮ সালে সিরিয়ায় পাঠানো হয় তাকে। তথায় তিনি বৈরুতে স্থানান্তরিত হবার আগে মাদরাসা গাযীরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৮৭০ সাল থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত।
    খ্রিস্টানদের আল কিতাবুল মুকাদ্দাস আরবিতে তার অনুবাদের পাশাপাশি نخب الملح নামক একটি সিরিজ পাঁচ খণ্ডে প্রকাশ করা হয়। ফাদার Jean Baptiste Belot এর সঙ্গে যৌথভাবে উক্ত সিরিজটি প্রকাশের কাজ করা হয়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা ও সাহিত্যপূর্ণ ছোটগল্প সংবলিত একটি সিরিজ এটি। যা তাদের বিদ্যালয়গুলোর জন্য রচনা করা হয়। সেই বইয়ে সালাহউদ্দিন আইয়ূবী (রহিমাহুল্লাহ) 'র দুটো টুকরো ঘটনা আনা হয়েছে দেখতে পাই। প্রথমটি বাহাউদ্দিন আশশদদাদী সূত্রে আক্রেতে ইউরোপের যে পরিণতি হয়েছিল সে সম্পর্কে। আশকালানের জন্য তারা আক্রে দখল করে নিয়েছিল। সে ঘটনায় বিবৃত হয়েছে কিভাবে সালাহউদ্দিন আশকালান শহর উজাড় করে দিয়েছিলেন আর এ সময় মুসলমানেরা কেমন বিপদ-আপদের মুখোমুখি হয়েছিল। (نخب الملح- খণ্ড নং:২, পৃষ্ঠা নং: ৯৬ থেকে সামনে)।
    দ্বিতীয় ঘটনাটি সালাহুদ্দিন কর্তৃক মিশর বিজয় সম্পর্কিত এবং নুরুদ্দিন জিনকি রহিমাহুল্লাহ’র পুত্র আল মালিকুস সালেহ ইসমাইল এবং সিরিয়ার অন্যান্য শাসকদের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের ঘটনা, যা আবুল ফিদার ইতিহাসের অংশবিশেষ। (نخب الملح- খণ্ড নং:২, পৃষ্ঠা নং: ১১৫ থেকে সামনে)।
    কিন্তু তাকে আমি সালাহউদ্দিন রহিমাহুল্লাহ’র অন্যান্য বিজয় সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করতে দেখিনি। ___উদাহরণতঃ বলতে হয়, তাঁর হিত্তিন বিজয়, অতঃপর রয়েছে আল-কুদসে তাঁর মহাবিজয়। এই হচ্ছে তাদের ইতিহাস চর্চার দৃষ্টান্ত।___ [তারিখুল আদাব আল-আরাবিয়া, খণ্ড নং: ০৩, পৃষ্ঠা নং: ৩৩৯, ৩৪০]

    [3] ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে তার জন্ম। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে জেসুইট পাদ্রী গ্রুপে যোগদান করেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে লেবাননে ইন্তেকাল করেন। তার প্রণীত ফরাসি থেকে আরবি এবং আরবি থেকে ফরাসি একটি ডিকশনারি রয়েছে। [তারিখুল আদাব আল-আরাবিয়া, খণ্ড নং: ০২, পৃষ্ঠা নং: ২৯৭,আলমুসতাশরিকূন, পৃষ্ঠা নং: ১০৬২]

    [4] ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। পৌরোহিত্য অবলম্বনের আগেই সিরিয়ায় আগমন করে খুব ভালোভাবে আরবি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পাদ্রী হয়ে যান। তার বিভিন্ন সংলাপ রয়েছে যেগুলো আরবিতে ও ফরাসিতে। সেগুলো সংকলিত হয়েছে যথাক্রমে দুই খণ্ডে, সাত খণ্ডে। রয়েছে তার বিভিন্ন উপদেশ বাণী সংকলন। আরবী থেকে ফরাসি একটি অভিধান রয়েছে তার প্রণীত। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। [তারিখুল আদাব আল-আরাবিয়া, খণ্ড নং: ০২, পৃষ্ঠা নং: ২৯৭, আলমুসতাশরিকূন, পৃষ্ঠা নং: ১০৬২]

    [5] ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে তার জন্ম। ফিলিস্তিনের পুরাতত্ত্ব বিষয়ে এবং খ্রিস্টানদের পবিত্র সুসমাচারগুলি নিয়ে তার বেশ কিছু প্রবন্ধ রয়েছে। রয়েছে তথাকথিত সংস্কারের ইতিহাস নিয়ে তাঁর লেখালেখি। প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের রবিবার করে সাপ্তাহিক উপাসনা বিষয়ক কিছু প্রকাশনার জবাব লিখেছেন তিনি। প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের বিভিন্ন দাবি খণ্ডন করেছেন নিজের রচনাবলীতে। তার কিছু রচনার শিরোনাম নিম্নরূপ: কাশফুল আওহাম আম্মান মাযাক্বাতহুস সিহাম, কাশফুত তালাউবি ওয়াত তাহরীফ ফী মাসসি বা'যি আইয়াতিল কিতাবিশ শারীফ। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। [তারিখুল আদাব আল-আরাবিয়া, খণ্ড নং: ০২, পৃষ্ঠা নং: ২৯৮, মুজামুল মুআললিফীন, খণ্ড নং: ১০, পৃষ্ঠা নং: ৩২১]

    [6] তার পিতা নাসীফ আলইয়াযজীর জীবনী সম্পর্কে যখন বলা হবে, তখনই তার জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হবে অচিরেই, ইনশা আল্লাহ। সামনে খ্রিস্টানদের আল কিতাবুল মুকাদ্দাসের প্রোটেস্ট্যান্ট অনুবাদ কোন পটভূমিতে হয়েছিল এ নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করব, তখনই তাদের জীবনী বর্ণনা করা হবে।

    [7] এ থেকেই পাঠকবর্গ খুব সহজে বুঝে যেতে পারবেন যে খ্রিস্টানদের কাছে যে কিতাবুল মুকাদ্দাস রয়েছে, সেগুলো বিভিন্নজনের দ্বারা অনূদিত হয়েছে। আর অনুবাদের এক একটি সংস্করণ অন্যগুলো থেকে ভিন্ন। শুধু তাই নয় বরং অনুবাদের মূল প্রতিপাদ্য প্রতিটা অন্যগুলো থেকে আলাদা। এসবের সঙ্গে যখন আপনি যুক্ত করবেনমূল টেক্সটগুলো ইঞ্জিল গ্রন্থ থেকে হারিয়ে যাওয়া, গসপেল লেখকদের মূল টেক্সট সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞতা, সেসব গসপেলের অধিকাংশগুলোর ব্যাপারেই গির্জাগুলোর অনাস্থা, কপি ও অনুবাদের ক্ষেত্রে যথেচ্ছা সংযোজন বিয়োজন ও পরিবর্তন, বক্তব্যগুলোর কোন সূত্র ও সনদ না থাকা; শুধু তাই নয় বরং এসব সুসমাচারগুলোর প্রকৃত সংখ্যা ও বিন্যাস নিয়ে গির্জাগুলোর মতবিরোধ; এ বিষয়গুলো সামনে রাখলে খ্রিস্টানদের আল কিতাবুল মুকাদ্দাস ও সুসমাচারগুলো যে একেবারেই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নয়, সে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়ে উঠবে। আল্লাহ তাআলার সাহায্য, তাওফীক ও ইচ্ছায় অতি সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও আমাদের এই পরিচ্ছেদাংশে আমরা এ বিষয়টিই স্পষ্ট করতে চেষ্টা করেছি।

    [8] স্যার ব্রুটস আলবুসতানী যিনি ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেছেন, আমেরিকান মিশনারি কর্তৃক প্রকাশিত প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্করণের অনুবাদে যিনি অংশগ্রহণ করেছেন, এই ব্যক্তি তিনি নন। সম্ভবত তিনি ব্রুটস ইবনে সুলাইমান ইবনে হাসান আফরাম আলবুসতানী। তিনি ইন্তেকাল করেছেন ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে। [আলআ'লাম, খণ্ড নং: ৩, পৃষ্ঠা নং: ৫৯]

    [9] আল কিতাবুল মুকাদ্দাস, জেসুইট সংস্করণ পৃষ্ঠা নং: ৭,

    [10] আল কিতাবুল মুকাদ্দাস-যৌথ সংস্করণ, অনুবাদের ভূমিকা, ষষ্ঠ পৃষ্ঠা

    [11] আর এলি স্মিথ ও ভান ডিকের অনুবাদে (সন ১৮৬৫) এভাবে এসেছে
    "وكان صوت من السماء قائلا: أنت ابني الحبيب بك سررت"
    এদিকে জেসুইট সংস্করণে এসেছে
    "وأتى صوت من السماء يقول: أنت ابني الحبيب عنك رضيت"

    [12] আত-তাবশীর ফী বিলাদিশ-শাম (সিরিয়ার ভূমিতে মিশনারি), পৃষ্ঠা নং: ২০

    [13] Microsoft Encarta 2009, Encarta dictionaries, Jesuit

    [14] Encyclopaedia Britannica, 2015, Jesuit

    [15] اليسوعية والفاتيكان النظام العالمي الجديد- পৃষ্ঠা নং১৩২,
    যে বই থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে তার নাম হলো— The Spiritual Experiences of St. Ignatius of Loyola (New York: Cosimo Classic. 2007), pp. 189—192.

    [16] Microsoft Encarta 2009, Counter Reformation.
    Encyclopædia Britannica, 2015:
    - Counter-Reformation,
    - Czechoslovak history.
    - Poland.

    [17] اليسوعية والفاتيكان النظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১২৪,

    [18] قصة الحضارة- - معارضة الإصلاح البروتستانتي- البابوات والمجمع- مجمع ترنت- খণ্ড: ২৭, পৃষ্ঠা: ২৪৬, ২৪৭
    Encyclopædia Britannica, 2015, Trent, Council of.
    Microsoft Encarta 2009, Council of Trent.

    [19] Encyclopædia Britannica, 2015, Jesuit

    [20] Encyclopædia Britannica, 2015:
    - Roman Catholicism, Suppression of the Jesuits.
    - Jesuit.
    - Pius VII.

    [21] Encyclopædia Britannica, 2015, Jesuit.

    [22] Encyclopædia Britannica, 2015, Francis I.

    [23] التبشير والاستعمار (মিশনারি ও উপনিবেশবাদ) পৃষ্ঠা নং১৬৬, ১৬৭

    [24] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد (জেসুইট, ভ্যাটিকান এবং নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার) পৃষ্ঠা নং১২৪, ১২৫.
    Encyclopædia Britannica, 2015, Saint Bartholomew's Day, Massacre of.
    Microsoft Encarta 2009, Massacre of Saint Bartholomew’s Day.

    [25] Encyclopædia Britannica, 2015, Henry III.
    Microsoft Encarta 2009, Henry III (of France).
    اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد
    - পৃষ্ঠা নং১২৬

    [26] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১২৬, ১২৭
    Encyclopædia Britannica, 2015, Henry IV.
    Microsoft Encarta 2009, Henry IV (of France).

    [27] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা১২৮ ও ১২৯

    [28] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১৩০

    [29] Microsoft Encarta 2009, Fernando Álvarez de Toledo, Duke of Alba.

    [30] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১৩০, ১৩১
    Encyclopædia Britannica, 2015:
    - Elizabeth I, Religious questions and the fate of Mary, Queen of Scots.
    - Babington, Anthony.

    [31] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১৩২
    Encyclopædia Britannica, 2015, Gunpowder Plot.

    [32] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১৩৩ থেকে ১৩৫
    Thirty Years' War এবং এই যুদ্ধে জেসুইটদের ভূমিকা সেইসঙ্গে প্রোটেস্ট্যান্ট নিপীড়ন সহ রাজনৈতিক অন্যান্য কারণ সম্পর্কে। আরও বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্য: التاريخ الأوروبي الحديث من عصر النهضة إلى الحرب العالمية الأولى- (আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস: রেনেসাঁস যুগ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত) পৃষ্ঠা নং- ১৪১ থেকে ১৫৯.

    [33] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد- পৃষ্ঠা নং১৩৫ থেকে ১৩৮.
    ENCYCLOPEDIA OF WORLD HISTORY, Jesuits in Asia, vol: III p: 192. (ভলিউম নং- ৩, পৃষ্ঠা নং- ১৯২)

    [34] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১৩৮, ১৩৯.

    [35] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১৩৯ থেকে ১৪১.
    Encyclopædia Britannica, 2015, Ireland, Charles I (1625–49) and the Commonwealth (1649–60).

    [36] اليسوعية والفاتيكان والنظام العالمي الجديد - পৃষ্ঠা নং১৪১, ১৪২.
    Encyclopædia Britannica, 2015, Louis XIV, Revocation of the Edict of Nantes.
    Microsoft Encarta 2009, Louis XIV, VII. THE BEGINNING OF DECLINE.

    [37] আল-মানার ম্যাগাজিন, খণ্ড নং- ৩২, পৃষ্ঠা নং- ৫৯৩

    [38] আমার ধারণা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন কাউন্সিল অব ট্রেন্ট (১৫৪৫৬৩ খ্রিস্টাব্দ)

    [39] قصة الحضارة- معارضة الإصلاح البروتستانتي- الكنيسة والإصلاح- اليسوعيون- (সভ্যতার ইতিহাস, প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলন প্রতিরোধ, গির্জা ও সংস্কার) খণ্ড - ২৭, পৃষ্ঠা - ২২৬

    [40] Encyclopædia Britannica, 2015, Francis I.

    [41] قصة الحضارة- معارضة الإصلاح البروتستانتي- الكنيسة والإصلاح- اليسوعيون - (সভ্যতার ইতিহাস, প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলন প্রতিরোধ, গির্জা ও সংস্কার) খণ্ড- ২৭, পৃষ্ঠা- ২২৪

    [42] حقيقة التبشير بين الماضي والحاضر - (মিশনারির স্বরূপ ও বাস্তবতা: অতীতে ও বর্তমানে) পৃষ্ঠা - ১৩৭, ১৩৮, معركة التبشير والإسلام(মিশনারি ও ইসলামের সংঘাত) পৃষ্ঠা- ৪৩

    [43] আল-মানার ম্যাগাজিন, সফর সংখ্যা ১৩৫৩ হিজরী মোতাবেক জুন ১৯৩৪ ঈসায়ী, খণ্ড - ৩৪, পৃষ্ঠা- ১৪৭.


    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

  • #2
    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। ভূমিকা পর্ব ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-১ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-২ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৩ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9


    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৪ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৫ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      যখন আল্লাহ তায়ালা সব কিছু সৃষ্টি করতে পারেন তখন তিনি সন্তান গ্রহনের কি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেন তিনি অপ্রয়োজনীয় কাজ করতে যাবেন এবং একজন ইলাহ অপর আরেকটি ইলাহ তৈরি করা অসম্ভব। ধরে নেওয়া যাক প্রথম ইলাহ যখন পরবর্তীতে আরেক জন ইলাহ তৈরি করলেন তখন প্রথম ইলাহ হবে স্রষ্টা আর দ্বিতীয় ইলাহ হবে সৃষ্ট। এবং স্রষ্টা এবং সৃষ্টি যেহেতু এক হতে পারে না । তেমনি ভাবে স্রষ্টা এবং সৃষ্টি কখনো ইলাহাতের ক্ষেত্রেও এক হতে পারে না। আর সৃষ্ট বস্তু কখনো ইলাহ হতে পারে না। এবং আল্লাহ বলেন ما كانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٍ ۖ سُبحٰنَهُ ۚ إِذا قَضىٰ أَمرًا فَإِنَّما يَقولُ لَهُ كُن فَيَكونُ
      [35] আল্লাহ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, তিনি যখন কোন কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই বলেনঃ হও এবং তা হয়ে যায়।

      [59] إِنَّ مَثَلَ عيسىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ ءادَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرابٍ ثُمَّ قالَ لَهُ كُن فَيَكونُ
      [59] নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।
      পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

      Comment


      • #4
        এবং যিনি সৃষ্টি করার মত উঁচু মানের কাজ করতে পারেন তিনিই আবার সন্তান গ্রহনের মত নিচু মানের কাজ করতে যাবেন কেন?
        পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

        Comment

        Working...
        X