তালিবুল ইলমদের উপর কি জিহাদের হুকুম বর্তায় না?
অনেক ছাত্রভাই এ কথা স্বীকার করে যে, বর্তমান সময়ে জিহাদ ফরযে আইন। কিন্তু তার বুঝ কম থাকায় সে মনে করে, এই ফরয পালনের দায়িত্ব যারা তালিবুল ইলম নয়, তাদের। তালিবুল ইলমদের দায়িত্ব হল, মনোযোগসহ ইলম অর্জন করা। জিহাদ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা তার দায়িত্ব নয়।
হে প্রিয় ভাই! তোমার চিন্তা-ভাবনাকে একটু শানিত কর। গতানুগতিক ভাবনাগুলো পরিহার কর। ইসলাম ও ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে একটু ফিকির করে দেখ। তুমি যদি নিজেকে মুসলিম ও মুমিন মনে কর, তাহলে এটা জেনে রেখ যে, তুমি বালেগ হওয়ার সাথে সাথে তোমার উপর ইসলামের অন্যান্য ইবাদাতের মত জিহাদও ফরয হয়ে গিয়েছে। চান্দ্র মাস হিসাবে তোমার বয়স যদি ১৫ বছর হয়ে থাকে, আর তুমি যদি শরয়ী ওযর মুক্ত হয়ে থাক, তাহলে পৃথিবীর কোন কিছুর অজুহাত দেখিয়েই বর্তমান ফরজুল আইন জিহাদ থেকে বাঁচার তোমার কোনো পথ নেই। একজন মুসলিম বালেগ হওয়ার পর যেমন, নামায, রোযা ফরয হয় এবং স্বামর্থ্য থাকলে হজ্জ-যাকাতও ফরয হয়, ঠিক তেমনি ভাবে জিহাদও ফরয হয়। জিহাদ কোন রাজনীতি নয়; জিহাদ হল, আল্লাহর ফরয হুকুম, ফরয ইবাদাত। গণতন্ত্রের পঁচাগান্ধা রাজনীতি ছাত্রদের জন্য অবশ্যই নিষিদ্ধ হওয়া চাই এবং আমাদের নিকট-অতীতের আকাবিরগণ এসব রাজনীতি থেকে তলাবাদেরকে বাঁচতেও বলেছেন।
কিন্তু জিহাদ আর রাজনীতি এক বিষয় নয়। জিহাদ তো হল, ইসলামের শীর্ষচূড়া, মহাপুণ্যময় এক ফরয আমল। অতএব, আল্লাহর অন্যান্য হুকুম থেকে জিহাদকে আলাদাভাবে নেওয়ার এবং দেখার সুযোগ কোথায়? একজন সাধারণ মুসিলম কিংবা আলেম যিনি তালিবুল ইলম নন, তার উপর যেমন জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার সূলতে ফরযে আইন হয়, ঠিক তেমনিভাবে তালিবুল ইলমদের উপরও ফরযে আইন হয়। কুরআন ও হাদীসের কোথাও জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার সুরতে তালিবুল ইলমদেরকে জিহাদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। আল্লাহর বাণী:
۞ وَمَا كَانَ ٱلْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُوا۟ كَآفَّةًۭ ۚ فَلَوْلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍۢ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌۭ لِّيَتَفَقَّهُوا۟ فِى ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُوا۟ قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوٓا۟ إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
সূরা তাওবার ১২২ নং এই আয়াতটি জিহাদ ফরযুল কিফায়াহ থাকাবস্থার সাথে খাস এবং আয়াতটি নাযিলও হয়েছে জিহাদ ফরযুল কিফায়ার অবস্থায়। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. জিহাদ ও শাহাদাতের ফযিলত হাসিল করার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। যখনই কোনো অভিযানের ঘোষণা করা হত, তখন সকলেই অভিযানে বের হওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যেতেন। কেউই ঘরে বসে থাকতে চাইতেন না। এই যখন ছিল তখনকার সকল মুসলিমের অবস্থা তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, সকল মুমিনের অভিযানে বের হওয়া উচিত নয়, বরং কিছু লোককে দ্বীনের গভীর ইলম অর্জনের জন্য বের হওয়া উচিত। এটা ছিল এমন এক সময়ের কথা যখনঃ
১. প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি জিহাদ ও শাহাদাতের ফযীলত হাসিলের জন্য ব্যাকুল ছিলেন।
২. মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে দ্বীনের বিজয় সুচিত হয়েছিল। জাযীরাতুল আরবের বিশাল ভূখণ্ড ইসলামের অধীনে চলে এসেছিল।
৩. আল্লাহর কালিমা বুলান্দ হয়েছিল।
৪. পৃথিবীর কোথাও একজন মুসলিমও কাফের কর্তৃক নির্যাতন-নিগ্রহের শিকার ছিল না।
৫. মুসলিমগণ জিহাদে ইকদামী তথা আক্রমণাত্বক জিহাদ পরিচালনা করছিলেন। কুফর শাসিত ভূখগুগুলো ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসার অভিযানে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ।
৬. ফরযে কেফায়ার দায়িত্ব আদায়ের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ মুজাহিদ প্রস্তুত ছিল।
৭. আরব ভূখণ্ডে ইসলাম এক অপ্রতিরোধ্য শক্তিরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।
৮. ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের জান-মাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলার শক্তি ও হিম্মত হারিয়ে ফেলেছিল।
আর অপর দিকে নবীজী সা. এর হায়াতও শেষ হয়ে এসেছিল। ওহীর ধারাবাহিকতা চিরতরে বন্ধ হওয়ার সময়ে ঘনিয়ে আসতেছিল। কিন্তু তখনও ইলমে ওহী পূর্ণমাত্রায় সংরক্ষিত হয়নি। তাই আল্লাহ তাআলা ইসলামের বিজয় সূচিত হওয়ার পর কিছু মুসলিমকে ইলমে ওহীর ক্ষেত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে বললেন, যেন নবীজী সা. এর ইন্তেকালের পরও ইলমে ওহী পূর্ণমাত্রায় সংরক্ষিত থাকে। ইলমের চাহিদা পূর্ণ হয়, সব জটিলতার শরয়ী সমাধান সম্ভব হয়।
১৪৩৯ হিজরীতে এসে বর্তমান আমরা দশম হিজরীর (যে সময় উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে) সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছি। দশম হিজরীতে ইসলাম ও মুসলিমদের যে জয়জয়কার অবস্থা ছিল, বর্তমানে ইসলাম ও মুসলিমদের অবস্থা সম্পূর্ণ তার উল্টো। আজ মুসলিমগণ তাদের ধর্ম, জান- মাল, ইজ্জত-আব্রু কোনো ক্ষেত্রেই নিরাপদ নয়। পৃথিবীর প্রত্যেক ভূখণ্ডে মুসলিমগণ নির্যাতন, হত্যা ও গুমের শিকার। আল্লাহর শত্রুরা একজোট হয়ে, পৃথিবীকে মুসলিম শূণ্য করার পায়তারা করছে। অভিভাবকশূণ্য মুসলিমদের ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে।
অপর দিকে ইসলামের শুরু যুগের উলামাগণ ইলমে ওহীকে যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণ করেছেন। ইলমে ওহী আজ পূর্ণমাত্রায় সংরক্ষিত। ইসলাম ও মুসলিমদের এই অধপতনের যুগেও পৃথিবী লাখ লাখ উলামায়ে কেরামের পদচারণায় মুখরিত। এমতাবস্থায় ফরযুল আইন জিহাদের ফরযিয়্যাত আদায়ের ক্ষেত্রে “ইলম অন্বেষণ” ও তথাকথিত “সনদধারী” আলেম হওয়ার খাহেশকে বাঁধারূপে পেশ করা কোন যুক্তি এবং শরীয়তের কোন দলীলের আলোকে বৈধ? না বন্ধু, কোনো দলীল ও যুক্তির আলোকেই বৈধ নয়। অন্য দশজন মুসলিমের মত তোমার উপরও জিহাদ একই রকম ফরযে আইন হয়েছে। তাই ইলম অন্বেষণের বাহানায় এই ফরযকে অবহেলা করার সামান্যতম অবকাশও নেই।
নেদায়ে তাওহীদ বইয়ের একটি আলোচনার চুম্বক অংশ থেকে নেওয়া
Comment