আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
৬ষ্ঠ পর্ব
==================================================
===============================
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
৬ষ্ঠ পর্ব
==================================================
===============================
অধ্যায়ঃ ৩
তৃতীয় বৈশিষ্ট্যঃ জিহাদের নির্দিষ্ট কোন স্থানের উপর নির্ভর করে না
“মুনাফা রক্ষার চেয়ে মূলধন রক্ষা করা বেশি জরুরী।”
-শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ رحمه الله
তৃতীয় বৈশিষ্ট্যঃ জিহাদ নির্দিষ্ট কোন স্থানের উপর নির্ভর করে না
জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে- এর পক্ষে সমস্ত প্রমাণ দেয়ার পর, এখন আমরা এ প্রমাণ দিব যে, জিহাদ কোন নির্দিষ্ট স্থানের উপর নির্ভরশীল নয়।
লোকে বলে, জিহাদ করতে চাইলে অমুক (নির্দিষ্ট) স্থানে যেতে হবে। এখন সমস্যা হচ্ছে, যদি ঐসব স্থানে জিহাদ বন্ধ হয়ে যায়, তবে মানুষ কোথায় জিহাদ করবে? অতএব আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে; জিহাদ বিশ্বজনীন, এটা কেবল স্থানীয় ঘটনা নয়। জিহাদ কোন সীমানা বা অন্তরায় দ্বারা বাধা পড়ে না; এগুলো জিহাদের পথে বাধা হতে পারে না। জিহাদ এ সমস্ত ঔপনিবেশিক সীমান্ত স্বীকার করে না, যেগুলো মানচিত্রে কোন এক কালের শাসক একেছিল। জিহাদ এ সমস্ত সীমানা মানে না।
জিহাদ অবশ্যই আপনার জীবনের একটি অংশ হতে হবে
যদি কোন মুসলিম আল্লাহর বার্তা ছড়াতে চায়, তবে তার জিহাদের অনুশীলন করা উচিত। সাহাবাগণ এভাবেই ব্যাপারটা বুঝতেন। তাঁদের এই বুঝের একটি সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায় রিবঈ বিন আমের (রাযিঃ) নামে একজন সাহাবার চিঠিতে যিনি পারস্য সেনাপতি রুস্তমের নিকট দূত হিসেবে চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন। সেনাপতি তাকে জিজ্ঞাসা করল কেন সে এসেছে। রিবঈ বিন আমের (রাযিঃ) তার আক্রমণাত্মক জিহাদের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত যা বলেছিলনে তা হচ্ছেঃ “আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষকে মানুষের গোলামী থেকে উদ্ধার করে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর বন্দেগীতে নিয়োগ করার জন্য আল্লাহ্ আমাদের পাঠিয়েছেন। যারা দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে নিজেদের মুক্ত করে আখেরাতের সীমাহীন কল্যাণ পেতে ইচ্ছুক, তাদের সে প্রশস্ত ময়দানে পৌঁছাতে এবং মানব রচিত ধর্মের অত্যাচার থেকে রেহাই দিয়ে মানুষকে ইসলাম প্রদত্ত ন্যায় নীতির অধীনে আনয়ন করা আমাদের লক্ষ্য। তিনি আমাদের এই দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন, মানুষকে এর দিকে আহবান করার জন্য। যদি তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, তবে আমরা তোমাদের এই স্থানের দায়িত্বে ছেড়ে দিব আর যে কেউ আমাদের দাওয়াহ বা আহবান প্রত্যাখ্যান করে তাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ করব, যতক্ষণ না আল্লাহর দেয়া প্রতিশ্রুতিতে পৌছতে পারি।” রিবঈ বিন আমের (রাযিঃ) বলেন যে, আল্লাহর সাথে অন্য মূর্তি এবং তাগুতের পূজা করা ঠিক নয়। তিনি বলেন যে, “আমরা তোমাদের বাঁচাতে এসেছি, যদিও হিদায়াত মানুষের হাতে নয় বরং আল্লাহর হাতে”, তথাপি সে বলেছে, “এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর বন্দেগীতে নিয়োগ করার জন্য আল্লাহ্ আমাদের পাঠিয়েছেন।” কুরআন-ই মানুষকে সত্য পথ দেখায় এবং মানুষের পরিণাম সম্পর্কে বলে দেয়। এটা এমন গ্রন্থ যা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। কুরআন সবকিছুর সঠিক রূপ সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং প্রকৃতপক্ষ দুনিয়া কি তা মানুষকে বুঝিয়ে দেয়। একজন সত্যিকারের মুসলিম অনুভব করে যে, সে নবীদের প্রকৃত অনুসারী। রুস্তম জিজ্ঞাসা করেছিল, “আর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কি?” তিনি বলেন, “নিহতদের জন্য জান্নাত আর যারা বেঁচে থাকবে তাদের জন্য বিজয়।” আক্রমণাত্মক জিহাদের আগে দাওয়াহ দিতে হবে। এক্ষেত্রে এটাই জিহাদের উদ্দেশ্য। কারণ এখানে খিলাফতের প্রসার হচ্ছে। তবে জিহাদ আদ-দিফা বা আত্মরক্ষামূলক জিহাদে দাওয়া দেয়ার কোন সুযোগ নেই, কারণ এখানে শত্রুদের সেই স্থান থেকে প্রতিহত করাই উদ্দেশ্য। মানুষ বলে, “কেন দখলকারীদের সাথে এমন বর্বরোচিত আচরণ করা হয়? ওদের কি দাওয়া দেয়া উচিত নয়?” না। ওরা আমাদের জায়গায় এসেছে, ওদের সাথে এমন আচরণই করা উচিত। তাদেরকে তাদের জায়গায় দাওয়াহ দিব। যদি তারা সেনাবাহিনী নিয়ে আসে, তবে ওদের সাথে সমান শক্তি নিয়েই মিলিত হওয়া উচিত, যদি কোন স্থানে আত্মরক্ষামূলক জিহাদ করা হয়। যেমন ইবনু তাইমিয়্যাহ رحمه الله বলেছেন, “মুনাফা রক্ষার চেয়ে মূলধন রক্ষা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” এখানে মুসলিমরা হচ্ছে মূলধন আর মুনাফা হচ্ছে যা দাওয়া দেয়ার মাধ্যমে লাভ করা যায়। অতএব, মুনাফা রক্ষার চেয়ে মূলধন রক্ষা করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যদি কোন মুসলিম ইসলামে বিশ্বাস স্থাপন করে আর ইসলাম প্রচার করতে চায়, তবে তাকে বিশ্বাস করতেই হবে যে, জিহাদ যেকোন সময় ও কালের জন্য উপযুক্ত। ব্যাপারটা এমন নয় যে, মুসলিমরা সমগ্র বিশ্বে অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, বরং জিহাদ যেকোন সময়-কালের জন্য উপযুক্ত, যখন এর শর্ত ও পূর্বশর্তগুলো থাকে। সমগ্র মুসলিমের এই ঈমান থাকা উচিত যে, জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে এবং আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, আজ কোথাও না কোথাও জিহাদ চলছে।
জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর দু’ধরনের শর্ত রয়েছে-
১) শরীয়াগত শর্ত
২) কৌশলগত শর্ত
এ ধরনের বিবেচনা থাকলে যে কেউ মুক্তভাবে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর ইবাদত করতে পারবে, কেননা এক্ষেত্রে একে কোন নির্দিষ্ট স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হচ্ছে না। অন্যভাবে বলা যায়, মানুষ বলে যে, যদি তোমরা ফিলিস্তিন দখলদারী ইসরাঈলীদের সাথে যুদ্ধ করতে চাও, তবে কেবল ফিলিস্তিনেই করতে পারবে এবং পৃথিবীর অন্য কোন স্থানে নয়। এটা একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন ধারণা। কে বলেছে যে, তারা মুসলিমদের সাথে যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তা কেবল তাদের দখল করা এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে? যদি কোন নির্দিষ্ট গোত্র ও জাতি শরীয়াহ অনুযায়ী আহলুল হারব হিসেবে আখ্যায়িত হয়, তবে এটা সমগ্র পৃথিবীর বুকেই তাদের এই নাম প্রযোজ্য। এটা কোন নির্দিষ্ট এলাকার জন্য সীমাবদ্ধ নয়। মুসলিমরা মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে গিয়েছিল, কেউ বলে নি যে, কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ করতে হলে তা কেবল মক্কায়ই করতে হবে, অন্য কোথাও না। রসূল ﷺ মদীনায় তার ভিত্তি গড়ে তোলেন এবং সেখান থেকে সব যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
মদীনা রসূল ﷺ এর খুব একটা পছন্দের কোন স্থান ছিল না, অথচ ইসলাম সেখানেই ছড়িয়ে ছিল। রসূল ﷺ কোন স্থান অনুযায়ী ইসলামকে পরিবর্তন করেন নি, বরং ইসলাম অনুযায়ী সেই স্থানকে সাজিয়ে ছিলেন। এটা পাশ্চাত্যের মুসলিমদের কথার ঠিক উল্টো। তারা বলে যে, যেহেতু আমরা পাশ্চাত্যে থাকি অতএব আমাদের পশ্চিমা ইসলাম বা আমেরিকান ইসলাম দরকার। যার অর্থ মুসলিমরা অন্য যেকোন আমেরিকানদের মতই তাদের সংস্কৃতি, শিক্ষা ও আকাঙ্খা অনুযায়ী চলতে পারবে। যদি অনুভব করেন যে, ঐ স্থানে থাকতে হলে আপনার ইসলামকে পরিবর্তন করতে হবে, তবে বুঝতে হবে যে, আপনার ঐ স্থান থেকে হিজরত করা অত্যন্ত জরুরী। যদি আপনি ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করতে না পারেন, তবে ঐ স্থান থেকে আপনার হিজরত করতে হবে। রসূল ﷺ কখনও বলেননি যে, আমার মক্কায় থাকা উচিত, ভাল নাগরিক হওয়া উচিত, কিছু দাওয়ার কাজ করা উচিত, চরমপন্থী প্রচার করা থেকে বিরত হয়ে তাদের সমাজ ব্যবস্থা ও ইলাহ সম্বন্ধে খারাপ কথা বলা ত্যাগ করা উচিত, যাতে করে তারা ইসলামকে ভালবাসে। না, বরং রসূলুল্লাহ ﷺ ইসলামকে এর পূর্ণরূপে তুলে ধরেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এর উপর তার কোন হাত নেই এবং তিনি একে পরিবর্তনও করতে পারবেন না। আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেনঃ
﴿ يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ﴾
“হে রসূল! তোমার রবের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর; যদি না কর, তবে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না। আল্লাহ্ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। ”
একটি গোত্র ইসলাম কবুল করতে রাজী হল কিন্তু এক শর্তে যে, রসূলের ﷺ মৃত্যুর পর তাদের ক্ষমতা দিতে হবে। রসূল ﷺ রাজী হলেন না, কারণ এই পৃথিবী আল্লাহর এবং কে এই পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করবে, তা নবীদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আরেকটি গোত্র ইসলামী রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দিতে রাজী হল কিন্তু তারা বলল যে, পারস্য সাম্রাজ্য থেকে একে সুরক্ষা দিতে তারা অপারগ। অন্য আরব গোত্র থেকে একে সুরক্ষা দিতে তারা রাজী আছে। রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন যে, এই দ্বীন কেবল তারাই বহন করতে পারবে, যারা একে সবদিক থেকে ঘিরে রাখবে অর্থাৎ সর্বদিক থেকে সুরক্ষা দিবে। হয় তোমরা এই দ্বীনকে সবদিক থেকে সব আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে নতুবা তোমরা তোমাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে পারলে না। অতঃপর রসূল ﷺ এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। পরে রসূল ﷺ মদীনাবাসীদের তাঁর সমস্ত প্রস্তাব গ্রহণে আগ্রহী দেখলেন। তারা রসূলকে ﷺ জিজ্ঞাসা করলোঃ “এর প্রতিদানে আমরা কি পাবো, ইয়া রসূলুল্লাহ্?” তিনি বললেন, “জান্নাত” আনসাররা তাঁর এই উত্তরে ভীষণ খুশী হল এবং বললঃ “কতইনা লাভজনক বানিজ্য! আমরা কখনই এর থেকে পিছু হঠব না।”
অনেক পাশ্চাত্য মুসলিমই উসূল আল ফিকহ্ কে পরিবর্তন করে নতুন ফিকহ্ তৈরী করতে চায়, যাতে করে ইসলাম পাশ্চাত্য আদর্শকে গ্রহণ করে নেয়। এমনকি তারা কিছু আক্বীদা বাদও দিয়ে দেয়, কারণ তা পাশ্চাত্যের জন্য খুবই চরমপন্থী। এমনকি কিছু ইবাদত বাদ দিয়ে দেয়া হয়। মূলতঃ তারা পাশ্চাত্যের জন্য ইসলামকে পরিবর্তন করে ফেলছে এবং নিঃসন্দেহে এ রকম ইসলামকেই পাশ্চাত্যরা প্রচার করবে এবং এর প্রতি সন্তুষ্ট হবে।
সাহাবাগণ পূর্ব থেকে পশ্চিমে ইসলামের প্রসার ও প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রসূল ﷺ এর পথ অনুসরণ করেছিল। সাহাবাগণ যে কারণে মদীনা ত্যাগ করেছিল আর যে কারণে মক্কা ত্যাগ করেছিল তা এক ছিল না। বরং তারা মদীনা ত্যাগ করেছিল জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর জন্য। ইমাম মালিক رحمه الله তার মুয়াত্তায় উল্লেখ করেছেন সালমান আল ফারসীর (রাযিঃ)কাছে তার প্রিয় বন্ধু আবু দারদার (রাযিঃ)লেখা চিঠি “এই পবিত্র ভূমিতে এসো” সালমান আল ফারসী (রাযিঃ) জবাব দিয়েছিলেন, “কোন পবিত্র ভূমি মানুষকে পবিত্র করে না বরং তার আমল-ই তাকে পবিত্র করে তুলে।”
তাঁরা জিহাদকে কেবল মক্কা বা মদীনার সাথে সংশ্লিষ্ট করে রাখেননি, বরং বিশ্বের যেকোন স্থানে যখনই এর পূর্বশর্তগুলো পূরণ হবে, তখনই জিহাদ হবে।
ইমাম শাফেয়ী رحمه الله বলেনঃ “বছরে নূন্যতম অন্তত একবার জিহাদে অংশগ্রহণ করা উচিত আর এর বেশি তো অবশ্যই উত্তম। একটি বছর চলে যাবে অথচ কেউ জিহাদ করবে না- এটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়, কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা ছাড়া যেমন- মুসলিমদের দূর্বলতা ও শত্রু পক্ষের সংখ্যাধিক্য, অথবা প্রথমে আক্রমণ করলে বিলীন হয়ে যাবার সম্ভাবনা অথবা সংস্থানের অভাব (যেমন-অর্থ, সরঞ্জাম, জনশক্তি ইত্যাদি) অথবা অনুরূপ ওজর। তা না হলে কোন প্রয়োজন ছাড়া কাফিরদেরকে এক বছরের বেশী সময় ধরে আক্রমণ না করে থাকাটা মেনে নেয়া যায় না।”
আল হারামাইনের ইমাম বলেছেন, “আমি উসূলের আলিমদের মতামত গ্রহণ করি। তারা বিবৃতি দিয়েছেন যে, জিহাদ অবশ্য পালনীয় এবং এটি জারী রাখতে হবে সামর্থ্য অনুযায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিশ্বে শুধু মুসলিম বা যারা মুসলিমদের কাছে আত্মসমর্পন করে ফেলেছে এমন ব্যক্তিরা থাকে। অতএব, জিহাদ কেবল বছরে একবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা সম্ভব হলে আরও ঘন ঘন করতে হবে। ফিকহ্’র আলিমগণ এমন উক্তি করেছেন, কারণ কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে যে সময় লাগে তা-ই জিহাদকে বছরে একবারে নামিয়ে আনে।”
ইমাম হাম্বলী رحمه الله মতালম্বী একজন তার আল-মুগনী গ্রন্থে বলেনঃ “নূন্যতম জিহাদ হচ্ছে বছরে একবার। অতএব প্রতি বছরই জিহাদ করা আবশ্যক। যদি কখনও বছরে এর চেয়ে বেশি জিহাদ করবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তবে মুসলিমদের উপর তা অবশ্য পালনীয় হয়ে দাড়ায়।”
আল কুরতুবী رحمه الله তার তাফসীরে বলেছেনঃ “এটা ইমামের উপর আবশ্যক যে, সে প্রতি বছরই শত্রুর জায়গায় একটি হলেও বাহিনী প্রেরণ করবেন এবং ইমামকে স্বয়ং এসব যাত্রায় অংশগ্রহণ করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে অন্ততপক্ষে এমন একজনকে পাঠাতে হবে, যাকে তিনি বিশ্বাস করেন বা যে তার আস্থাভাজন। যে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান জানাবে, (তাদের) ক্ষতি থেকে (মুসলিমদের) দূরে রাখবে, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয় দিবে, যতক্ষণ না তারা (পরিপূর্ণরূপে) ইসলামে প্রবেশ করে বা জিজিয়া দেয়।”
লক্ষ্য করুন, আল কুরতুবীর رحمه الله বলেছেন যে, সৈন্যবাহিনী পাঠানোর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে (নিজেদের) থেকে শত্রুর ক্ষতি দূরে রাখা। এটি ইঙ্গিত করে যে, মুসলিমরা কখনই নিজেদের জীবনে শান্তির স্বাদ পাবে না, যদি না তারা আল্লাহর শত্রুদের তাদের এলাকায় আক্রমণ করে। আজকে আমরা এই দায়িত্ব পালন না করার পরিণতি দেখছি, এর চরম মূল্য আমাদের দিতে হচ্ছে প্রতি পদে পদে। আপনি যদি শয়তানকে বাধা না দেন বা না থামান, তবে সেও আপনাকে ছেড়ে দেবে না।
আরও পড়ুন