আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
৯ম পর্ব
==================================================
===============================
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
৯ম পর্ব
==================================================
===============================
ইসলামে বিজয়ের ১১ টি অর্থ রয়েছেঃ
বিজয়ের প্রথম অর্থঃ ৮টি প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে বিজয়
বিজয়ের দ্বিতীয় অর্থঃ শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয়
যদি কোন মুসলিম জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে সে শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে। আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেনঃ “শয়তান তোমাকে ঈমানের পথে বিরত রাখতে চেষ্টা করে এবং তোমাকে বলে, ‘তুমি কি তোমার ধর্ম এবং তোমার পূর্ব পুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করতে যাচ্ছ?’ কিন্তু এই বান্দা তাকে অগ্রাহ্য করে। অতঃপর শয়তান তাকে হিজরতের পথে বিরত রাখতে চেষ্টা করে। শয়তান তাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি কি তোমার পরিবার ও সম্পদ ত্যাগ করতে যাচ্ছ?’ কিন্তু এই বান্দা তাকে অগ্রাহ্য করে। অতঃপর শয়তান তাকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্র পথ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে, শয়তান তাকে বলে, ‘তুমি কি যুদ্ধ করতে এবং নিহত হতে যাচ্ছ? তোমার স্ত্রী অন্য কাউকে বিবাহ করবে এবং তোমার সম্পদ বিভক্ত করা হবে?’ কিন্তু সে তাকে অগ্রাহ্য করে এবং জিহাদ করে।’ রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন, ‘এই বান্দার জন্য আল্লাহর ওয়াদা যে, তিনি তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন’।”
বিজয়ের তৃতীয় অর্থঃ মুজাহিদরা সুপথপ্রাপ্ত
আল্লাহর বাণী অনুযায়ী মুজাহিদগণ তাদের অন্তর্ভূক্ত যাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿ وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ ﴾
“যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ্ অবশ্যই সৎকর্ম পরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।”
এটা কি বিজয়ের একটি রূপ নয় যে তুমি পথপ্রাপ্ত হয়েছো? আমরা সবাই কি সঠিক পথের অনুসন্ধানে লিপ্ত নই? আল্লাহ্ আমাদের বলেন যে, যদি তোমরা মুজাহিদদের অন্তর্ভূক্ত হও, তবে তুমি আল্লাহ্ কর্তৃক পথপ্রাপ্ত হবে। যদি উম্মাহ জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্তে অংশগ্রহণ করে, তবে পুরো উম্মাহ পথ প্রাপ্ত হবে, যে কারণে আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছি তা হল এই যে, আমরা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ ত্যাগ করেছি। কিন্তু যে মূহুর্তে উম্মাহ আগ্রহী হবে, তার দায়িত্ব পালনে দন্ডায়মান হবে এবং জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহতে অংশগ্রহণ করবে, আল্লাহ্ উম্মাহকে পথ প্রদর্শন করবেন।
আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাযিঃ) বর্ণনা করেনঃ “আমি আল্লাহর রসূলকে ﷺ বলতে শুনেছি, “যখন তোমরা লেনদেনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, ষাড়ের লেজ ধরে থাকবে, কৃষিকাজ নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে পড়বে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ্ তোমাদের উপর অসম্মানকে প্রবল করে দিবেন এবং তোমরা তোমাদের দ্বীনে (সত্যিকার ইসলাম) ফিরে না আসা পর্যন্ত তা তুলে নিবেন না।”
একইভাবে, আমাদের পূর্ববর্তী আলিমগণ যখনই কোন ফাতোয়ার ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়তেন, তারা এটা কোন প্রথম সারির মুজাহিদীনের কাছে পাঠিয়ে দিতেন, কারণ তাঁরা জানতেন মুজাহিদীনরা আল্লাহ্ কর্তৃক পথপ্রাপ্ত।
বিজয়ের চতুর্থ অর্থঃ নিরুৎসাহিতকারীদের বিরুদ্ধে বিজয়
যখন তুমি ফী সাবিলিল্লাহর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়, তুমি তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী যারা তোমাকে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করত। তারা তোমার মতই কথা বলে এবং নিজেদের মুসলিম হিসেবে দাবী করে কিন্তু মুজাহিদ হওয়ার প্রমাণ সমূহ বিকৃত করে, আল্লাহ্ তাদের সম্পর্কে বলেনঃ
﴿ لَوْ خَرَجُوا فِيكُمْ مَا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ ﴾
“তারা তোমাদের সাথে (জিহাদে) বাহির হলে তোমাদের বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি করত এবং তোমাদের মধ্যে ফিত্না সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছুটাছুটি করত। তোমাদের মধ্যে তাদের জন্য কথা শুনবার লোক আছে। আল্লাহ্ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।”
এসব মানুষ তোমাদের সামনে শাইখের বেশে আসতে পারে এবং তোমাদের বলতে পারে যে, এখন জিহাদ ফী সাবিলিল্লিাহর সময় নয় এবং তারা আলিম হওয়ার কারণে তুমি তাদের কথা শুনতে পার। আল্লাহ্ বলেনঃ
“তোমাদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি থাকতে পারে যারা তাদের কথা শুনবে।”
কেন তারা এসব লোকের কথা শোনে? কারণ তাদের পদমর্যাদা। তারা তাদের গোষ্ঠীর নেতা, এমনকি আলিমও। তারা মুসলিমদের জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ পালনে নিরুৎসাহিত করে। আর যেই একজন মুসলিমকে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ পালনে নিরুৎসাহিত করে, সে একজন মুনাফিক, কারণ এই আয়াত মুনাফিকদের উদ্দেশ্যে। একজন মুসলিম যখন মুজাহিদ হয়, সে এসব লোকদের অগ্রাহ্য করে। সে এসব লোকদের রাজত্বকে পরোয়া করেনা। একজন মুজাহিদ তাই করে যা আল্লাহ্ তাকে করতে বলেন। এটা বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় ফিৎনা, যা আমরা দেখি বিশেষত আমাদের ছোট ভাইদের মধ্যে। আলিমরা তাদের উৎসাহিত করার বদলে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে তাদের নিরুৎসাহিত করে। তাদের ইসলামিক জামা’আত প্রস্তুতি গ্রহণ করার বদলে তাদেরকে পিছনে ধরে রাখে। এই আয়াত সাহাবীদের বলেছে যে তোমাদের কেউ কেউ হয়তো তাদের কথা শুনত, সাহাবাদের ঈমানের কোন কমতি ছিল না। কিন্তু তাঁরা এমন লোকের কথা শুধুমাত্র উচ্চ মর্যাদার কারণে শুনে থাকত। কিন্তু আল্লাহ্ মুসলিম সেনাদলের সাথে মুনাফিকদের যাওয়া বন্ধ করে, এসব সাহাবীদের রক্ষা করলেন। যদি তারা যেত, তারা বরং মতনৈক্য বা ফিৎনার বিস্তার করত। এই ফিৎনার ভয়াবহতা এতই বেশি যে, আল্লাহ্ এমন লোকদের ব্যাপারে সাহাবাদের সর্তক করেছেন। আল্লাহ্ মহামহিম বলেনঃ
﴿ فَرِحَ الْمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُولِ اللَّهِ وَكَرِهُوا أَنْ يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَالُوا لَا تَنْفِرُوا فِي الْحَرِّ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا لَوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ ﴾
“যারা পশ্চাতে রয়ে গেল তারা আল্লাহর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই আনন্দ বোধ করল এবং তাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপছন্দ করল এবং তারা বলল, গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বল, উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম, যদি তারা বুঝত!”
মুজাহিদগণ নিজেদের নফ্সকে, শয়তানকে এবং যারা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে তাদের পরাস্ত করে। এটা একটি বড় বিজয়। যখন তারা মানুষকে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে, মানুষ তখন যুদ্ধ হতে বিরত থাকে। আমাদের অধিকাংশ তরুণ আল্লাহ কে সঠিক উপায়ে সন্তুষ্ট করতে চায় কিন্তু এসব শাইখ এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বের কারণে পারেনা, তারা এসব তরুণদের জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ হতে পিছন থেকে ধরে রাখে। দেখ, এসব মর্যাদা সম্পন্ন লোকেরা কত গুণাহ জমা করেছে। তারা যা করছে তা কুফ্ফারদের সেবা করারই নামান্তর। তাদের দাওয়াহ কুফ্ফারদের সেবা দেয়, তারা এর জন্য অর্থ প্রাপ্ত হোক অথবা না হোক। তাদের সাথে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (গোয়েন্দা বিভাগ) যোগাযোগ থাক অথবা না থাক; এতে কোন পার্থক্য নেই। যদি তোমার কাজ কুফ্ফারদের সেবা দেয় বা উপকারে আসে, তখন তুমি তাদেরই একজন।
বিজয়ের পঞ্চম অর্থঃ জিহাদের পথে দৃঢ়পদ থাকা।
যখন কোন মুজাহিদ দৃঢ়পদ থাকে এবং জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর পথ অনুসরণ করে এবং সব বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে, সে বিজয় অর্জন করে। যদি সে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর উপর স্থির থাকতে সমর্থ হয়, সে সফলকাম। জিহাদ বর্তমান যুগে মুসলিমদের জন্য বিরল একটি বিষয়। কিন্তু রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর সময় এ চিত্র ছিল না। মানুষ তোমাকে বেড়িয়ে পড়তে উৎসাহ দিত। এমন অনেক কাহিনী আছে, যেখানে পিতারা পরিবারের প্রতি পুত্রদের ফী সাবিলিল্লাহ বেড়িয়ে পড়ার পক্ষে যুক্তি প্রদান করত। তুমি ভাবতে পার বর্তমান অবস্থা কত আলাদা? বর্তমানে অনেক লোক তোমার বিপক্ষে যাবে, তোমার পিতা-মাতা, তোমার বন্ধু-বান্ধব, তোমার সমাজ, তোমার এলাকার মসজিদ, তোমার সরকার এবং আরও অনেকে, যখন কেউ এই ‘ইবাদত’ বছরের পর বছর চালিয়ে যাবে এবং এ ব্যাপারে সবর করবে, সে বৃহৎ বিজয় অর্জন করবে। আমরা একদিন অথবা একমাসের কথা বলছিনা, যখন তোমার আবেগ বেশি থাকবে তখন করবে, আবার যখন আবেগ কমে যাবে তখন তা ছেড়ে দিবে, এমনটি নয়। আসল পরীক্ষা হল এই পথকে বেছে নেয়া এবং এর উপর দৃঢ়পদ থাকা।
এরকম অনেক মুসলিম আছে যারা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ হতে ফিরে আসে, তাদের চিন্তা, আদর্শ বদলে যায় এবং জিহাদের চিন্তা তাদের মাথা থেকে বেড়িয়ে যায়। তাদের অধিকাংশই তাদের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা নিয়ে বেঁচে থাকে। তারা দামী গাড়ি ও বড় অট্টালিকা আঁকড়ে ধরে থাকে। যেসব মুসলিম সরকার তাদের ভয় করে, তারা তাদেরকে একটি চাকরী, স্ত্রী, বাসস্থান ইত্যাদি উপহার দিতে চেষ্টা করে, যাতে করে এসব পুরোন মুজাহিদগণ জিহাদের ধারে কাছে আসতে না পারে।
যখন রসূল ﷺ প্রথম দাওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন তা ছিল গোপন, তখন কেউ সত্যিকার অর্থে এটাকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু যখন তিনি তাঁর দাওয়াহ প্রকাশ করলেন, তখনই শত্রুরা আত্মপ্রকাশ করল- ইসলাম তাদেরকে নিজ নিজ ইচ্ছার এবং মিথ্যা মাবুদের দাসত্ব করা পরিত্যাগ করতে বলল। এটা তাদের নির্ধারিত মর্যাদা বদলে দিল। একদল লোক ছিল যারা তাদের নির্ধারিত মর্যাদার মাধ্যমে সুবিধা ভোগ করত এবং এর ফলে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হল। এটিই বাস্তবতা যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তাদের নিজ নিজ নির্ধারিত মর্যাদার সুবিধা ভোগ করে থাকে। সুতরাং যখন তারা রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর বাণীকে হুমকিস্বরূপ দেখল, তারা তাঁর কাছে আসল এবং তাঁকে কিছু প্রস্তাব করল। তারা তাঁর কাছে ক্ষমতা, সম্পদ এবং নারীর প্রস্তাব করল। এসবই সেসব বিষয় যা বেশির ভাগ পুরুষ আকাঙ্খা করে। রসূলুল্লাহ্ ﷺ এই প্রস্তাবের উপর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেন। মূল বিষয় হল, যে কেউ রসূলুল্লাহ ﷺ-কে অনুসরণ করতে চায়, তাকে সে সবের অধিকাংশ বিষয়ের সম্মুখীন হতে হবে, যার সম্মুখীন রসূলুল্লাহ্ ﷺ নিজে হয়েছিলেন। তুমি যখন এই পথের উপর থাকবে, তখন তাদের সেসব প্রস্তাবও তোমার কাছে আসবে। তারা তোমাকে জেলে দিতে চাবে অথবা তোমার পথকে রূদ্ধ করতে চাবে। কিছু মানুষ ছিল যারা দুনিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছিল আবার কিছু মানুষ ছিল যারা যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত হয়েছিল কিন্তু মুজাহিদীনগণ কখনও তাঁদের আদর্শকে পরিত্যাগ করেনি।
আরও পড়ুন
Comment