Announcement

Collapse
No announcement yet.

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি বইটি: একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কোরআন-সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি বইটি: একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন

    কোরআন-সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি বইটি: একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন

    কয়েকদিন হলো ‘মুআসসাসা ইলমিয়্যাহ’ থেকে মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ (দা.বা.)- এর ‘কোরআন-সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য বইটি হুজুরের একার কোশেশ না, হুজুরের ছেলে মাসরুর- এর যথেষ্ট অবদান আছে। বরং বলা যায়, তার চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছে যথেষ্ট। অবশ্য যেহেতু বইটি হুজুরের নামে ছেপেছে, স্বাভাবিক এটিই যে: বইয়ের চিন্তাধারাগুলো সরাসরি হুজুরের, কিংবা অন্তত হুজুর তাতে সহমত পোষণ করেন।

    বইটি নিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা হচ্ছে। কিছু লেখালেখিও হচ্ছে। বইটি যেহেতু সবার হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে, তখন তার খণ্ডনও সবার হাতে হাতে পৌঁছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা অন্যায় নয় আশাকরি।

    ইতোমধ্যে যারা এ ব্যাপারে লিখতে শুরু করেছেন আমি মাঝখানে তাদের পথে বিঘ্ন ঘটাবো না। তাই তাফসিলে না গিয়ে একটি ইজমালি ও সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন দিয়েই আপাতত ক্ষান্ত করবো। যারা লিখছেন ইনশাআল্লাহ তারা তাদের মতো করে রাজি রাখুন।
    ***

    প্রথমে স্বীকার করে নিচ্ছি যে, কিতাবটি মূলত ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা ও নেফাযে শরীয়তের মুবারাক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লিখা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা এ প্রচেষ্ঠার প্রতিদান গ্রন্থকারকে অবশ্যই দান করবেন।

    আরও শুকরিয়া আদায় করছি যে, কিতাবটিতে বেশ ভালো ভালো এবং উম্মাহর জন্য দরকারী অনেক কথা এসেছে। যেমন:
    . ধর্মনিরপেক্ষতা ইসলাম নয়।
    . হাকিমিয়াত শুধু আল্লাহর।
    . মুসলিমদের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা লাভের কোনো বিকল্প নেই।
    . নসবুল ইমাম ফরয এবং এজন্য মেহনত করাও ফরয।
    . আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকার সামর্থ্যানুসারে ফরয।
    . ইকদামি ও দিফায়ি উভয় জিহাদ ফরয।
    . সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এক খলিফার অধীনে এক সুতায় গাঁথা কাম্য।
    . কাফেরদের সাথে আন্তরিক ঘনিষ্ঠতা হতে পারে না।
    . ইসলামী শাসন আঁকড়ে থাকার সময় মুসলিমরা সুপার পাওয়ার ছিল, ইসলাম থেকে দূরে সরার ফলে কাফেরদের অধীন হতে হলো।
    ১০. অন্য সকল জাতির নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন মুসলিম রাষ্ট্রের উপর ফরয।

    বর্তমানে আল্লাহর আইন ও শরীয়তের বিরুদ্ধে দুশমনদের যে প্রচেষ্টা চলছে, এ ধরনের আকিদা-বিশ্বাসগুলো উম্মাহর মাঝে নতুন করে ছাড়নোর খুব বেশি দরকার।

    তবে সত্য হচ্ছে জিহাদ-কিতাল-ইমারাত-খেলাফত-ইসলামী শাসন-আহলে যিম্মার হুকুক-জিযিয়া ইত্যাদি বিষয়াশয়ের ব্যাখ্যায় এমন এমন শব্দ-বাক্য প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এমনসব শর্ত-শারায়েত লাগানো হয়েছে, ফলত দুধে পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এমনকি এসব শর্ত-শারায়েতের কাঠগড়ায় সায়্যিদ আহমাদ শহীদ রহ., শামেলী, আফগান এবং মোল্লা ওমরের জিহাদ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মতো; আহলে যিম্মার ক্ষেত্রে ওমর রাদি.র শর্তসমূহ এবং ফিকহ-ফাতাওয়ার ভাষ্য বর্বরতার কাতারে শামিল হওয়ার নামান্তর।তাই কিছু কথা আরজ করা আমানতদারির দাবি মনে করছি।
    ***
    সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন
    .কোরআন-সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি - নামটি থেকে মনে হচ্ছিল, গ্রন্থে ইসলামী ইমারাত ও খেলাফতের যে স্বাভাবিক ধারা ১৩শো বছর চলে আসছিল এবং যে ধারা আইম্মায়ে কেরাম কিতাবাদিতে বয়ান করে গেছেন- তার রূপরেখা কি এবং বর্তমান যামানায় তা কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা যাবে তার বিবরণ দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে কিতাবে তার পরিবর্তে প্রচলিত পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে কিভাবে ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যশীল করে তোলা যায়, যার ফলে তার সাথে ইসলামের তেমন কোনো সংঘর্ষ থাকবে না- কিতাবে এ চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও এটি কেবলই নজরি এবং মরীচিকার পেছনে দৌঁড়ানোর মতো। বাস্তবে এমন প্রচেষ্ঠা সফলতার মুখ কখনও দেখেনি আর দেখার সম্ভাবনাও আছে বলে মনে হয় না। তাই কিতাবের আলোচনার সাথে খাপ খায় মতো কোনো নাম দেয়া দরকার ছিল। যেমন ‘প্রচলিত গণতন্ত্রকে আমরা কিভাবে ইসলামী গণতন্ত্র করবো’ বা ‘গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে কিভাবে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবো’- এ ধরনের কোনো নাম।

    . কিতাবটিতে তরফদারির প্রতিফলন ঘটেছে। অর্থাৎ এক তরফা শুধু তাদের মতামত আনা হয়েছে যারা মানবরচিত কুফরি-আইন-শাসিত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে নেফাযে ইসলামের জন্য গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনীতিরি প্রবক্তা এবং সশস্ত্র যুদ্ধের বিপক্ষে। ভালো ছিল উভয় মতামত সামনে আনা এবং দলীলের আলোকে যেটি রাজেহ মনে হয় গ্রহণ করা। কিন্তু তা না করে সশস্ত্র পন্থাটাকে সম্পূর্ণ নাজায়েয ও সন্ত্রাস বানিয়ে দেয়া হয়েছে।

    পাশাপাশি শরয়ী নুসুস এবং আইম্মায়ে কেরামের আকওয়ালগুলোকে এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে এবং সশস্ত্র পন্থার বিপক্ষে দাঁড় করানো হয়েছে। একজন সাধারণ পাঠক মনে করবেন এই গণতান্ত্রিক রাজনীতিটিই ইসলামের তরিকা আর সশস্ত্র পন্থাটি উগ্রবাদী মূর্খ কিছু লোকের নব আবিষ্কৃত। কিতাবের এই তরয-তরিকাকে পূর্ণ ইনসাফ বলতে পারি না।


    . আর এটি করতে গিয়ে কুরআন সুন্নাহর নুসুস এবং আইম্মায়ে কেরামের বক্তব্যের যে গোঁজামিল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা তো আরও মারাত্মক। এমনটি না করে যদি কুরআন সুন্নাহ এবং আইম্মাদের আকওয়াল-মতামতকে আপন জায়গায় বহাল রাখতেন এবং বলতেন যে, বর্তমান এই অক্ষমতার সময়ে গণতান্ত্রিক পন্থার রাজনীতিটিকে আমরা শুধু অক্ষমতার কারণে বেছে নিচ্ছি: তাহলে তা হতো শতভাগ ইনসাফ। এতে নুসুসের বিকৃতি ঘটতো না। আইম্মাদের উপর তোহমত আসার মতো কিছু হতো না।

    আরও একটু খোলাসা করে বললে: সালাফ খালাফের যামানায় কুফরি আইন দিয়ে শাসিত তাগুতি রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল না। এটি তোরোশো বছর পরের নতুন একটি পরিস্থিতি। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির হুকুম কুরআন সুন্নাহর নুসুসে এবং আইম্মাদের বক্তব্যে হুবহু পাওয়া যাবে না নিশ্চয়ই। বলা যায় এখন চিন্তা গবেষণা করে এর হুকুম বের করতে হবে। বিশেষত তাফসিলি হুকুম। আর এতে উলামাদের মাঝে দ্বিমত হওয়া স্বাভাবিক। তখন যার কাছে যেটি কুরআন সুন্নাহর আকরাব মনে হয়, তিনি সেটি গ্রহণ করবেন। এতে কোনো পক্ষকে গোমরাহ বা উগ্র আখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু কিতাবের ভাবটা এমন হয়ে গেছে যে, কিতাবে যে মত ইখতিয়ার করা হয়েছে সেটিই সরাসরি কুরআন ‍সুন্নাহ এবং আইম্মাদের অভিপ্রায় আর এর বিপরীত সশস্ত্র পন্থাটা সরাসরি কুরআন ‍সুন্নাহ এবং সালাফে সালিহিনের তরিকার বিরোধী। স্পষ্ট যে, নবউদ্ভূত পরিস্থিতির হুকুম বয়ানের বেলায় কুরআন সুন্নাহকে এভাবে বয়ান করা এবং এভাবে হুকুম লাগানো ফিকহ-ফাতাওয়া এবং ইলম-ইনসাফের স্বাভাবিক উসূলের খেলাফ।


    . সার্বিক বিচারে কিতাবটি মহল্লে মাকসুদ, মহল্লে নেযা এবং মহল্লে ইসতিশহাদে দলীলশূন্য। আপনি বলতে পারেন, কিতাবে তো অসংখ্য শরয়ী নুসুস এবং আইম্মাদের আকওয়াল আনা হয়েছে? হাঁ, তা ঠিক। কিন্তু কিতাবে সশস্ত্র পন্থাবলম্বী যাদের মাওকিফকে রদ করা হয়েছে, তাদের পক্ষে তো শত শত বরং হাজারো হাজার কিতাব রিসালা বিদ্যমান এবং সেগুলোতে অসংখ্য নুসুস ও অসংখ্য আকওয়ালের সমাহার। হুজুর অবশ্যই সেগুলোকে দলীল গণ্য করেন না? বরং দলীলের নামে কতগুলো শুবুহাত মনে করে থাকবেন- এটাই স্বাভাবিক। তাহলে বুঝা গেল, কোনো রায়ের পক্ষে কিছু আয়াত হাদিস বা আকওয়াল তুলে ধরাকে হুজুর নিজেও দলীল মনে করেন না।

    অন্য ভাষায় বললে, আমরা যারা দুর্বল ইলমের মানুষ, আমাদের জন্য নিরাপদ বরং আবশ্যক পন্থা হচ্ছে: কুরআন সুন্নাহর যে ব্যাখ্যা সালাফ খালাফ দিয়ে গেছেন তা গ্রহণ করা। সেগুলোর বিপরীতে গিয়ে নতুন করে চিন্তা করলে সেটাই হবে ভ্রান্তি। এমনিভাবে সালাফ খালাফের ব্যাখ্যা তালাশ না করে নিজে যা বুঝি সেটিই অবলম্বন করলে তাও ভ্রান্তি।

    যেমন হাদিসে এসেছে: أفطر الحاجم والمحجوم ‘যে শিঙা লাগায় আর যার গায়ে লাগানো হয় ‍উভয়ের রোযা ভেঙে যাবে’। হাদিসের জাহিরি ভাষ্য তো একেবারেই সুস্পষ্ট যে, রোযা ভেঙে যাবে। এই হাদিস সামনে আসার পর আমাদের করণীয় কি? রোযা ভেঙে যাবে- এমন মত অবলম্বন করা নয় অবশ্যই। দেখতে হবে সালাফ খালাফ উলামায়ে কেরাম এই হাদিসের কি ব্যাখ্যা করেছেন। যে শিঙা লাগায় মুখ দিয়ে রক্ত গলায় গিয়ে তার রোযা ভেঙে যেতে পারে। আর যার গায়ে লাগানো হয় সেও দুর্বল হয়ে রোযা ভেঙে ফেলতে পারে। তাই এভাবে বলা হয়েছে, যেন রোযা রেখে দিনের বেলায় যথাসম্ভব শিঙা লাগানো থেকে বিরত থাকে। এ ধরনের ব্যবহার কুরআন সুন্নাহ এবং উরফ-আদতে বহুল প্রচলিত। এখন যদি কেউ আইম্মাদের ব্যাখ্যা তালাশ না করে নিজের মতো করে এই হাদিস বুঝে নেয় তাহলে তা হবে বিভ্রান্তি। এই কথাটি এই হাদিসের ব্যাপারে যেমন প্রযোজ্য বাকি সকল নুসুসের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কেউ যদি এ হাদিস দিয়ে শিঙা লাগালে রোযা ভেঙে যাবে বলে আর বলে এটি হাদিসের বাণী- তাহলে আমরা একে দলীল বলবো না, বলবো শুবহা তথা দলীল নয় এমন জিনিসকে দলীল গণ্য করছে। আর এই কথাটি সশস্ত্র পন্থার প্রবক্তাদের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, গণতন্ত্রপন্থীদের বেলায়ও প্রযোজ্য।

    মোটাদাগে বলা যায়
    : কিতাবে ঠিক এ পন্থাই অবলম্বন করা হয়েছে। নুসুসককে নিজের মতো করে বুঝা হয়েছে। নুসুসের ব্যাখ্যায় সালাফে সালিহিন ও উলামায়ে মুজতাহিদিনের মাওকিফ তুলে ধরা হয়নি। আর যেখানে ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই সেটা দাবির পক্ষে যায় না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে কিতাবের বক্তব্য আনা হয়েছে, ঐ কিতাবে ঠিক কয়েক লাইন পরেই বা আরেক আলোচনায় এর বিপরীতটা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।


    বরং শুনতে একটু বেয়াদবি মনে হলেও, একটু বাতুলতা এবং অতিরঞ্জন মনে হলেও একেবারে মিথ্যা হবে না যদি বলি: গ্রন্থকার আগে থেকেই একটা চিন্তাধারায় প্রভাবিত। কুরআন সুন্নাহ ও আইম্মায়ে উম্মাহর সঠিক মতামত তালাশ করে তার সামনে আত্মসমর্পণের পথে হাঁটার পরিবর্তে বরং নিজের পোষণ করে আসা সেই মানসিকতাটির পেছনে যা পেয়েছেন, কোনো রকম জমা করে জোড়াতালি দিয়ে একটা রূপ দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। এ কারণে দেখা যায় মিলে না তবুও মিলানো হয়েছে, বুঝা যায় না তবুও বুঝানো হয়েছে, দালালত করে না তবুও করানো হয়েছে। আর এ কারণে কোনো কোনো মাবহাসে আগে পরের কথার মাঝে এবং এক জায়গার আলোচনার সাথে আরেক জায়গার আলোচনার যথেষ্ট তাআরুজ এবং বৈপরীত্ব দেখা যাচ্ছে।


    কিতাবটিতে কোন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে?

    . খেলাফতের পতন ঘটানোর পর ইসলাম যেন আর কখনও ঘুরে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য পশ্চিমারা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে নামে। সে মিশনের অংশ হিসেবে তারা ইসলামের উসূলী বিধানগুলো টার্গেট করে প্রোপাগাণ্ডা চালায়। জিহাদ, কিতাল, খেলাফত, ইমারাত, উম্মাহ, ভ্রাতৃত্ব, হুদুদ, কিসাস, কতল ইত্যদি বিষয়ের মাফহুম-মর্ম বিকৃত করে ইসলামের রুহকে নষ্ট করে ইসলামকে কেবল রুসুম-রেওয়াজ সর্বস্ব একটা বৈরাগ্যবাদী ধর্ম হিসেবে চিত্রায়িত করার পরিকল্পনা আঁটে। পাশাপাশি ইসলামকে একটি বর্বর, সেকেলে, উগ্র ও পশ্চাৎপদ ধর্ম হিসেবে তুলে ধরার এবং তাদের নিজেদেরকে মানবতাবাদী, উদার, উন্নত ও সভ্য জাতী হিসেবে প্রমাণ করার পায়তারা করে। এ লক্ষ্যে তারা মুসতাশরিকদের কাজে লাগায়। মুসলিমদের মধ্য থেকেও দাঁড় করায় এক শ্রেণীর উলামায়ে সূ।

    এহেন পরিস্থিতিতে ইসলামের দিফার জন্য যারা কলম ধরেছেন তারা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন:

    এক শ্রেণী: ইসলাম যেভাবে নাযিল হয়েছে এবং সালাফে সালিহিন ইসলামকে যেভাবে বুঝেছেন ঠিক সেভাবেই তুলে ধরেন। ইসলামের সত্যতা প্রমাণে এবং পশ্চিমা দর্শনের অসাড়তা তুলে ধরার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে তারা এক আপোষহীন দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হন। স্বাভাবিক; পশ্চিমারা তাদেরকে উগ্রবাদী আখ্যা দিয়ে আসছে।

    আরেক শ্রেণী: ইসলামের দিফা করতে গিয়ে তারা এমন এক পন্থা গ্রহণ করেন, যেন ইসলাম একটি আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো। ইসলামকে বাঁচানোর জন্য তারা যেন হাতজোড় করে উজরখাহির পন্থা বেছে নেন। এমন নিদেন বন্ধুরা ইসলামকে পশ্চিমা দর্শনের সাথে সামঞ্জস্যশীল প্রমাণ করার চেষ্টায় অবতীর্ণ হন।

    পশ্চিমারা বলে ইসলাম উগ্রবাদী; তারা বুঝান ইসলামে উগ্রতার কোনো স্থান নেই।
    পশ্চিমারা বলে ইসলাম বর্বর সাম্প্রদায়িক; তারা বুঝান ইসলাম মানবতা, সহনশীলতা, সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক ধর্ম।
    পশ্চিমারা বলে ইসলাম গণতান্ত্রিক নয়, জনমতের কোনো স্থান নেই; তারা বুঝান গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের কোনো সংঘর্ষ নেই। অধিকাংশের মতামত গ্রহণে ইসলামের কোনো আপত্তি নেই।
    পশ্চিমারা বলে ইসলামে ভিন্নধর্মীদের অধিকার নেই; তারা বুঝান ইসলাম ভিন্নধর্মী নাগরিকদের সমান অধিকার দিয়েছে।
    পশ্চিমারা বলে ইসলাম নারীর প্রতি জুলুম করে; তারা বুঝান ইসলাম নারী স্বাধীনতার কথা বলে। মজলিসে শূরাতে নারী সদস্য রাখতেও সমস্যা নেই।
    ইত্যাদি …. ইত্যাদি।

    সার্বিক বিবেনায় কিতাবটিতে এই দ্বিতীয় মানসিকতাটি ফুঁটে উঠেছে।


    . উম্মাহর এই ক্রান্তিলগ্নে যখন মুসলিমদের অন্তরে ব্যাপকভাবে ‘হুব্বুদদুনইয়া ওয়া কারাহিয়াতুল মাওত’ ঝেঁকে বসেছে, তখন জিহাদ-খেলাফত-ইমারাত-সালতানাত ইত্যাদি বিষয়ে যারা কলম ধরছেন তাদের দু’টি ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে:

    একটি ধারা: জীবনের পরোয়া না করে যারা শত্রুর মুখোমুখী অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়েছেন বা দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন: তাদের উদ্বুদ্ধ করা, উৎসাহ দেয়া, তাদের দলভারী করার চেষ্টা করছেন। তাদের শুধু ভুল-ভ্রান্তিগুলোকে ফোকাস না করে বরং শত ভুল-ভ্রান্তি ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উম্মাহকে তাদের সাথে জোড়ানোর চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি নাসেহানা দরদি দিল নিয়ে তাদের ভুলগুলো সংশোধনের চেষ্টা করছেন, সীমাবদ্ধতাগুলোকে দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

    অপর ধারাটি: ভুল-ভ্রান্তিগুলোর কারণে বিরক্তি প্রকাশ করছেন। এসব ভুল-ভ্রান্তি ও সীমাবদ্ধতাকে তাদের গোমরাহির বরং ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরকে কাফেরদের দালাল ও এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী সাব্যস্ত করার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করছেন। তাদের আকীদা ও কর্মপদ্ধতিকে ভ্রান্ত আখ্যা দিচ্ছেন এবং তাদেরকে মূর্খ ও উগ্র ট্যাগ লাগাচ্ছেন। পাশাপাশি উম্মাহকে বারংবার সতর্ক করে উম্মাহর অন্তরে তাদের ব্যাপারে ভীতি সৃষ্টি করছেন এবং উম্মাহকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সর্বাত্মক কোশেশ করাকে ঈমানী দায়িত্ব জ্ঞান করছেন।

    সামগ্রিক বিচারে কিতাবটিতে দ্বিতীয় মাওকিফটি গ্রহণ করা হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না ইনশাআল্লাহ।

    শুনতে খারাপ লাগলেও না বলে উপায় নেই যে, এক্ষেত্রে শুধু এসব (মূর্খ-উগ্র!!) লোকের ভুল-ভ্রান্তি এবং সীমাবদ্ধতাগুলোই দায়ী নয়; বিচারকদের নিজেদের দুর্বলতা-সীমাবদ্ধতা, দুনিয়ার হাল হাকিকত সম্পর্কে বেখবরী, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডায় প্রভাবিত হওয়া এবং মুসতাশরিকদের কিংবা তাদের ছাত্রদের -যেমন ওহবাহ্ যুহাইলিদের- লিখনী দ্বারা মুতাআসসির হওয়াও বহুলাংশে দায়ী। স্পষ্টত এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রভাবিত মানসিকতা নিয়ে কলম ধরলে যা হওয়ার তাই হয়ে থাকছে।


    . ইউসুফ কারজাবি ও ওয়াহবা যুহাইলিদের মতো মডারেট মানসিকতায় আক্রান্ত এবং মুসতাশরিকদের চিন্তাধারায় প্রভাবিত স্কলারগণ যেসব যাল্লাত ও বিচ্যুতির শিকার হয়েছেন, মোটাদাগে বলা যায়: কিতাবটি এসমস্ত যাল্লাত ও বিচ্যুতির একটি বাংলা সংকলন।
    ***




  • #2
    জাজাকাল্লাহ খাইরান।
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 11-08-2023, 03:53 PM.

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ খাইরান ভাই, আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের হিফাজত করুন, আমীন
      Last edited by Rakibul Hassan; 11-08-2023, 02:57 PM.

      Comment


      • #4
        এখানেতো দেখা যাচ্ছে পশ্চিমারা ইসলামের বিভিন্ন ভুল ধরছে। আর কিছু মুসলমানরা সেই ভুলের আলোকে ইসলামকে সংস্কারের কাজ করছে।নাউজুবিল্লাহ।
        পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

        Comment


        • #5
          জাজাকাল্লাহ খাইরান

          Comment


          • #6
            জাযাকাল্লাহু খায়রান
            Last edited by Munshi Abdur Rahman; 11-09-2023, 04:58 PM.

            Comment


            • #7
              আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ও মুসলিম উম্মাহকে এ সমস্ত যাল্লাত ও বিচ্যুতি থেকে হেফাযত করুন। আমীন
              ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

              Comment

              Working...
              X