আন-নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান”|| তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও!||
তৃতীয়পর্ব।।‘গনতান্ত্রিক রাজনীতি দ্বীনি ভাইদের ক্ষমতায়নের কারণ নাকি দুর্বলতার কারণ?!!’
।।উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এর থেকে || ৫ম পর্ব
==================================================
=====
“ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান”|| তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও!||
তৃতীয়পর্ব।।‘গনতান্ত্রিক রাজনীতি দ্বীনি ভাইদের ক্ষমতায়নের কারণ নাকি দুর্বলতার কারণ?!!’
।।উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এর থেকে || ৫ম পর্ব
==================================================
=====
بِسْمِ اللّہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
الحمد لله رب العالمين. والصلوة والسلام على رسوله الكريم. أما بعد...
الحمد لله رب العالمين. والصلوة والسلام على رسوله الكريم. أما بعد...
হামদ ও সালাতের পর-
পাকিস্তানে বসবাসরত আমার দ্বীন প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!
গণতন্ত্রে আমাদের দ্বীনি ভাইদের অংশগ্রহন তাদের শক্তি বৃদ্ধির কারণ হয়েছে নাকি তাদের দুর্বলতার কারণ হয়েছে? দ্বিতীয়ত: কোন সিস্টেম কি গণতন্ত্রের মাধ্যমে পরিবর্তিত হওয়া সম্ভব? এ দুটি বিষয়ের উপর এই পর্বে আলোচনা করা হবে, ইনশা আল্লাহ। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে ও নেক আমলের দিকে পথপ্রদর্শন করুন।...আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
আমাদের দ্বীনি রাজনৈতিক দলগুলোর একটি দৃষ্টিভঙ্গি হলো: নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতি তাদেরকে শক্তিশালী করেছে। এক্ষেত্রে তারা যুক্তি দিয়ে থাকে যে, এখানে যদি প্রস্তাবনামূলক দাবী গৃহীত হয়ে থাকে, কাদিয়ানীদেরকে কাফির ঘোষণা করা হয়ে থাকে এবং ১৯৭৩ সালের সংবিধান অস্তিত্বে এসে থাকে; যার কারণে আল্লাহ তা‘আলার হাকিমিয়্যাতের/ আইন প্রণয়নের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের স্বীকারোক্তি দেয়া হয়েছে এবং নিশ্চিত বিশ্বাস প্রদান করা হয়েছে যে, এখানে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না, তাহলে এই সব কীর্তিকলাপ নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতির-ই ফলাফল বা সারাংশ।
আমরা (মুজাহিদীন) মনে করি- প্রথমত: এগুলো কোন কীর্তিমূলক কর্মকান্ড-ই না। বরং তা এই প্রতারণাপূর্ণ সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে একটি প্রদর্শনীমূলক পদক্ষেপ মাত্র। কারণ, এই সকল পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও আমরা শরীয়ত প্রতিষ্ঠার দিকে এক কদমও সামনে বাড়তে পারেনি বরং বাস্তবিকপক্ষে আমরা যেখান থেকে সফর শুরু করেছিলাম সেখান থেকে আরো অনেক অনেক দূরে অবস্থান করছি। তার কারণ কি...? তার কারণ হলো: পাকিস্তানের ইতিহাস এবং তার বর্তমান পরিস্থিতি এ কথার উপর সাক্ষী যে, এই সকল পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে দ্বীনদারদের শক্তিমত্তায় পৃথকীকরল করা হয়েছে। তাদেরকে গণতান্ত্রিক শ্লোগানের মাঝে ফাঁসানো হয়েছে। যার কারণে তারা বর্তমানে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করণের ময়দানে সম্পূর্ণরূপে প্রতিক্রিয়াবিহীন অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে বাতিলদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব আগের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!
আমরা প্রথমে এই সকল পদক্ষেপসমূহের প্রদর্শনীর ব্যাপারে আলোকপাত করতে চাই। আপনি যদি প্রস্তাবনামূলক দাবি গৃহীত হওয়ার কপি সামনে রাখেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে, তাতে বলা হয়েছে: হাকিমিয়্যাত তথা আইন প্রণয়নের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কেবল আল্লাহ তা‘আলার জন্য এবং কুরআর ও সুন্নাহর বিপরীতে কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না। কিন্তু ১৯৫২, ১৯৬২ ও ১৯৭৩ সালে সংবিধান প্রণয়ন করার সময় এবং পরবর্তীতে তাতে সংশোধনী করার সময়কালেও কুরআন ও সুন্নাহর আইনের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি। বরং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারা সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আবার কোথাও কোথাও কিছু ধারা গোপনীয়ভাবে এমনভাবে প্রদান করা হয়েছে, যার কারণে এখানে (পাকিস্তানে) এমন জীবনব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে; যা ধর্মনিরপেক্ষতাকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং ইসলামী ধারাগুলোকে বাস্তবে অকার্যকর করে রাখে। যখন এই দ্বন্দ্বের কারণ জিজ্ঞাসা করা হল, তখন উত্তর পাওয়া গেলো যে...এই প্রস্তাবনামূলক দাবি গৃহীত হওয়া ও ইসলাম বিরোধী ধারাগুলি সব সমান মর্যাদার দাবি রাখে। একটি অপরটিকে নিঃশেষ করতে পারবে না। কোন একটি ধারাও অপর ধারার উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখে না। উভয়টিই পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশ লোকের অধিক্য দ্বারা পাশ হয়েছে। আর পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশ লোকের আধিক্যপ্রাপ্তদেরই সংবিধান সংশোধনী করার অধিকার সংরক্ষণ করেন। যেন কোনটি জায়েজ আর কোনটি নাজায়েজ, কোনটি হালাল আর কোনটি হারাম? এর ফায়সালা পার্লামেন্ট করবে![1] তাছাড়া এখানে আর কোন অর্থ হতে পারে না যে, এখানে আল্লাহ তা‘আলার হাকিমিয়্যাত তথা আল্লাহ তা‘আলার আইনের কোন কর্তৃত্ব নেই, শরীয়তের কোন কর্তৃত্ব নেই বরং এখানে পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশ লোকের কর্তৃত্ব রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার বিধানাবলিকে মানা ও তা প্রয়োগ করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট নয় যে, বলা হবে এগুলো আল্লাহ তা‘আলার বিধানাবলি। বরং তার জন্য এসেম্বলী সদস্যদের সন্তুষ্টি আবশ্যক। যদি তাদের স্বীয় কামনা-বাসনার সাথে পুরোপুরিভাবে মিলে যায় এবং তাদের পক্ষ থেকে এই সকল বিধানাবলির সত্যায়নপত্র গৃহিত হয়, তাহলে তো ঠিক আছে। তখন এগুলো আইন হিসাবে পরিগণিত হবে। নতুবা শরীয়তের মুকাবেলায় তথাকথিত পাবলিক প্রতিনিধিদের কামনা-বাসনা এখানে শাসক হবে। কাদিয়ানীদের বিষয়টি লক্ষ্য করুন- কাদিয়ানীরা জিন্দিক। তারা ইসলামের নামে নিজেদের কুফর বিস্তার করে, অথচ শরয়ীভাবে ইসলামী রাষ্ট্রে থাকার কোন অধিকার তাদের নেই। কিন্তু এখানে (পাকিস্তানে) তাদেরকে কাফের আখ্যায়িত করা হয়েছে, পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের অধিকার ঘোষণা করে তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষাও প্রদান করা হয়েছে। যার কারণে বর্তমানে তারা নিজেদেরকে ছাড়া সবাইকে কাফির বলে থাকে। সরকারী গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা অধিষ্ঠিত এবং প্রকাশ্যভাবে নিজেদের এই কুফরকে ইসলামের নামে বিস্তার করে চলেছে। মোটকথা: এই সকল পদক্ষেপগুলো মূলত: ইসলামের সাথে হাসি-ঠাট্রা এবং দ্বীনদারদের সাথে ধোঁকাবাজি করার নামান্তর। আর এই ধোঁকাবজির উদ্দেশ্য এছাড়া আর কিছুই নয় যে, তার মাধ্যমে দ্বীনদার ভাইদেরকে বাতিল জীবনব্যবস্থার প্রতি বিশ্বস্ত ও তাকে সুরক্ষা দানকারী হিসাবে তৈরী করা এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও মন্দকাজ প্রতিরোধকল্পে যে কোন ধরনের গুরুতর আন্দোলন তাদের মাধ্যমে প্রতিহত করা।[2]
[1] সাবেক রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা ফয়সাল রেজা আবিদীকে একটি টিভি সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, যদি পার্লামেন্টে আইন পাশ হয় যে, মদ হালাল বা হত্যা করা বৈধ, তাহলে কি মদ ও হত্যা বৈধ হয়ে যাবে? তখন আবেদী উত্তর দিল: “অবশ্যই বৈধ হয়ে যাবে। কারণ, পার্লামেন্ট হলো সুপ্রিম ইনস্টিটিউশন(সংসদ)। তারাই আইন তৈরী করে এবং দেশের সকল আদালত সুপ্রিম কোর্টের অধীনে চলে।”... এটা বলা যদিও চূড়ান্ত পর্যায়ের অদ্ভুত মনে হবে, কিন্তু আমাদের “ইসলামী গণতান্ত্রিক পাকিস্তান”-এর ভিতরে এই নীতিই কার্যকর। প্রকাশ থাকে যে, এটার নামই হলো গণতন্ত্র। ইসলামিক গবেষণা কাউন্সিলের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়, তা মূলত: ফতোয়া এবং তার উপর আমল করা নি:সন্দেহে ওয়াজিব হওয়ার দাবি রাখে। কিন্তু তা পার্লামেন্টের কাছে কেবল পরামর্শ প্রদানের যোগ্যতা রাখে। তাই পার্লামেন্ট ইচ্ছে করলে তা গ্রহন করতে পারে বা তা আবর্জনার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। (আরো বিস্তারিত দেখুন: শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহর “سپیدہ سحر اور ٹمٹماتے چراغ তথা প্রভাতের সূর্যালোক এবং নিস্প্রভ বাতি” নামক কিতাব অথবা মুফতি মুহাম্মাদ ত্বকী উসমানী সাহেবের “نفاذ شریعت ور اس کے مسائل তথা শরয়ী আইন প্রতিষ্ঠা ও তার মাসআলা-মাসায়েল” নামক কিতাব।)
[2] র্যান্ড কর্পোরেশনঃ একটি আমেরিকান থিংক ট্যাঙ্ক। আমেরিকান প্রশাসনের অধিকাংশ পলিসি এই প্রতিষ্ঠানের পরামর্শের অধীনে বাস্তবায়িত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ছিল মুসলিম বিশ্বের স্বাধীনতা লাভের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো এবং সেখানে নিজেদের প্রভু দ্বীনের দুশমন শ্রেণীর লোকদেরকে ক্ষমতায় রাখা। এই প্রতিষ্ঠান প্রতি বৎসর বিশটি বই ও রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। তার মধ্যে একটি হলো: Civil Democratic Islam , যা ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, সনাতন ইসলাম আমাদের নিকট গ্রহনযোগ্য নয়, বরং সনাতন ইসলামকে আমাদের অভিলাষ অনুযায়ী “গণতান্ত্রিক ইসলামে” পরিবর্তন করে দেয়া জরুরী। এই বইয়ের ইয়াহুদী লেখক মুসলিম বিশ্বে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার দাবির ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপিত করে বলেন যে, তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করা হবে? তারপর উত্তর প্রদানের নিমিত্তে পাকিস্তানের উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন: কিভাবে সেখানে দ্বীনি দলগুলো এবং জনগণের চোখে ধুলো দেওয়া হয়েছে? আরো বলেন যে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে “মূলভিত্তি” বিদ্যমান রয়েছে এবং এখানকার জনগণও ইসলামকে মহব্বত করেন। এমতাবস্থায় যদি শরয়ী আইন-কানুনকে পূর্ণাঙ্গরূপে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে দ্বীনি দলগুলো আমাদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি এখানে শরয়ী সকল আইন-কানুন বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় (আমেরিকা ও পশ্চিমারা) এটা কখনোই গ্রহন করে নিবে না। লেখক বলেন: তাই এখানে এর সহজ সমাধান হলো-শরীয়তের কতক আইন-কানুনকে দেশীয় আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, কিন্তু বাস্তবে তার উপর আমল কখনো হবে না।(বিস্তারিত দেখুন এই বইয়ের ৮১ নং পৃষ্ঠায়) বিষয়টি যেন এমন হলো যে, এর দ্বারা দ্বীনদারদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে, অন্যদিকে দ্বীনের দুশমনরাও অসন্তুষ্ট হবে না।
আরও পড়ুন