আন-নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান”||
তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও!|| চতুর্থপর্ব।।
গণতন্ত্রের নর্দমা থেকে উত্তরণের “কাঙ্খিত সহজ কর্মপন্থা…!”।।
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এর থেকে || ৮ম পর্ব
==================================================
=====
অতএব প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
এই দ্বীন খুবই সহজ-সরল, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন। রহমতে ভরপুর এই দ্বীন কখনো আমাদের উপর এমন কোন বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে না, যা বহন করার সাধ্য/সক্ষমতা আমাদের নেই। মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুধু ঐ সমস্ত বিষয়ের ব্যাপারেই আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, যা আমাদের সাধ্যের ভিতরে ছিল। এই কারণেই আল্লাহ তা‘আলার এই দ্বীন ‘দাওয়াত ও জিহাদ’কে ইসলাম হেফাযত করা ও তাকে বিজয়ী করার পন্থা বলে আখ্যায়িত করেছে। দাওয়াত ও জিহাদের এই রাস্তা একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ ও একটি সম্পূর্ণ মানহাযের নাম। এমনিভাবে জুলুম-ফ্যাসাদ দূর করা এবং আল্লাহ তা‘আলার হাকিমিয়্যাত তথা আইনের ক্ষেত্রে আল্লাহর একচ্ছত্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মান-সুখ্যাতি লাভ করাই এই দ্বীনের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দাওয়াত, ই‘দাদ তথা প্রস্তুতি গ্রহন করা, হিজরত ও কিতাল করার নির্দেশ দিয়েছে। দ্বীন বিজয়ের সফরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলার পূর্ণাঙ্গ নকশা হলো উল্লিখিত বিষয়গুলো। আর এটি পুরোপুরিভাবে শরীয়তের আলোকে প্রণিত নকশা।
এমনিভাবে এই দাওয়াত ও জিহাদ হলো: আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সকল কিছু থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করে শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার দিকে মনোনিবেশ করার এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহবান করার পথ। পাশাপাশি তা সকল ত্বাগুতদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ইয়াকীন-বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল স্থাপন করার এবং শরীয়তের আনুগত্য করার পথ। তদ্রুপ দাওয়াত ও জিহাদ হলো: সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করার পথ, আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন এবং আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদের মাঝে যালিমরা যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে ও যে সমস্ত আবরণ তৈরী করেছে, তরবারীর শক্তি দ্বারা সেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে সরানো ও সে সমস্ত আবরণকে ছিন্ন করার পথ... পাশাপাশি তা হচ্ছে ঐ পথ; যে পথ থেকে মুসলিম উম্মাহ যখনই সরে গেছে, তখনই তাদের ঐক্যের মাঝে ফাটল ধরেছে, নিরাপত্তা ও স্বকীয়তা হারিয়ে গেছে এবং মান-সম্মান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তদুপরি এটাই হচ্ছে সেই পথ: মুসলিম উম্মাহ যখনই এই পথে ফিরে আসবে, তখনই আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন বিজয়ী হবে, উম্মাহর অসম্মান-অপদস্থতা দূর হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সেই সময় আবার নবুওয়্যাতের আদলে খেলাফতব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে; যার সুসংবাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন।
দাওয়াত ও জিহাদের এই মানহায একটি পূর্ণাঙ্গ মানহায। তাতে প্রত্যেক দুর্বল ও সবলের জন্য কাজ করার সমান সুযোগ ও ময়দান বিদ্যমান রয়েছে। আর এসব কিছু ঈমানদারদেরকে একই বিন্যাস ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে অভিন্ন এক মানযিলের-/গন্তব্যের দিকে যাত্রার পথে সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। এই দাওয়াত ও সশস্ত্র জিহাদ একটি অপরটির বিরোধী নয়। তা‘লীম ও তাআ‘ল্লুম তথা জ্ঞান বিতরন ও জ্ঞানার্জন বা তাযকিয়ায়ে নফস তথা আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সশস্ত্র জিহাদের পথে কখনো বাঁধা নয়, বরং একটি অপরটির মুখাপেক্ষী, এমনিভাবে একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে।
তবে হ্যাঁ, যদি কারো সশস্ত্র জিহাদ করার সামর্থ্য না থাকে অথবা সশস্ত্র জিহাদের ময়দানে যাওয়ার সুযোগ ও প্রেক্ষাপট তৈরী না থাকে, তাহলে সে দাওয়াতের সাথে সাথে সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতি (ই‘দাদ) নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করবে...কেননা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার এই দ্বীন উপস্থিত/বিদ্যমান শক্তিকে কাজে লাগানো ও অতিরিক্ত শক্তি অর্জনের রাস্তা দেখায়, কিন্তু দুর্বল মানুষকে বাতিলের বড়ত্ব মেনে নেওয়ার ও তার গুণগান গাওয়ার এবং তার থেকে সব ধরনের ফায়েদা (সুবিধা) ভোগ করার অনুমতি কখনোই প্রদান করে না। এখানেও সে জিহাদের ইচ্ছা পোষণ করবে। আর যদি জিহাদ করার মত সক্ষমতা না থাকে, তাহলেও হাতের উপর হাত রেখে বসে থাকবে না, বরং জিহাদের প্রস্তুতি নিতে থাকবে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-
} وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً{
“আর যদি তারা (জিহাদে) বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো।” (সূরা আত-তাওবা: ৪৬)
ফুকাহায়ে কেরাম (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেছেন: যদি জিহাদ ফরযে আইন হয় এবং তার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তার জিম্মায় জিহাদের প্রস্তুতি নেওয়া ফরয, যাতে করে সে কাংখিত শক্তি-সামর্থ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। বিষয়টি যেন এমন যে, যদি যালিমকে প্রতিহত করার শক্তি-সামর্থ না থাকে, তথাপি সেই যালিমের সমর্থক ও সহযোগী হওয়া এই দ্বীন সমর্থন করে না। এমনিভাবে এই দ্বীন বর্তমান যামানার আবু জাহেলের সাথে তার দারুন নাদওয়ায় (পার্লামেন্টে) অংশগ্রহন করা, তার আইনি শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেওয়া এবং তার থেকে ফায়েদা (সুবিধা) গ্রহন করার অনুমতি কখনো প্রদান করে না। বরং এই দ্বীন তার সঙ্গ পরিত্যাগ করে তার বিরুদ্ধে মুকাবিলা করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করার পথ দেখায়। তদুপরি এই দ্বীন, যারা হেদায়েত থেকে বঞ্চিত; তাদেরকে অত্যন্ত আন্তরিকতা, সহানুভূতি ও প্রজ্ঞার সাথে দাওয়াত দেওয়ার পথ দেখায়। কিন্তু যে দুর্ভাগা দ্বীনের দুশমনি করার ক্ষেত্রে অনঢ়, আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার এবং আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদেরকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এই জাতীয় লোকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে শক্রতা পোষণ করার শিক্ষা দেয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সীরাতকে আমাদের আমলের জন্য একটি মডেল/নমুনা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-
}قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ{
“তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের (আল্লাহদ্রোহী) সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।” (সূরা মুমতাহিনা: ৪)
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!
এই কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর জন্যই ভালবাসা ও আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা, এই দ্বীনের খাতিরেই কারো সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা এবং এই দ্বীনের কারণেই কারো সঙ্গ পরিত্যাগ করাকে ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মজবুত কড়া বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রকাশ থাকে যে, যদি এই কড়া দুর্বল হয়ে যায় অথবা ভেঙ্গে যায়, তাহলে পুরো দ্বীনই শংকার/আশংকার মধ্যে পড়ে যায়।
আরও পড়ুন
Comment