আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
ভারতের মুসলিমদের প্রতি পয়গাম
“ইসলাম তোমার দেশ, তুমি মুহাম্মাদের সৈনিক!”
।।উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এর থেকে || শেষ পর্ব
==================================================
=====
প্রিয় ভাইয়েরা!
ইসলাম ‘লা ইলাহা’ বলে সকল উপাস্য এবং সকল মতবাদকে প্রত্যাখান করে। এরপর ‘ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বলে শুধু ইসলামকেই হক বলে সত্যায়ন করে। জমিনে একমাত্র ইসলামই বিজয়ী থাকার অধিকারের স্বীকারোক্তি ও ঘোষণা দিয়ে থাকে। বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলাম আল্লাহর বান্দাদের সকল মতবাদ থেকে স্বাধীন করে আল্লাহর দাসত্বে নিয়ে আসার পয়গাম। আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদের উপর এ দায়িত্বই ন্যস্ত করেছেন যে, তারা মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তার দাসত্বে নিয়ে আসবে। সকল ধর্ম মতের জুলুম থেকে বের করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সমবেত করবে। এটাই মুসলমানদের জিম্মাদারী ছিল। তাদের কর্তব্য ছিল, তারা কুফুর শিরকের বিরুদ্ধে বিপ্লব সাধন করবে। মানবতা আর মানবতার রবের মাঝে বাধার প্রাচীর গুড়িয়ে দিয়ে জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী ও শাসক বানাবে। যদি মুসলমান এই দায়িত্ব পালনে বেরিয়ে পড়ে এবং তা আদায়ে নিজের জান মাল কুরবান করে, তবে তার জীবনের উদ্দেশ্য সফল হবে। আল্লাহ তাকে দুনিয়াতেও সম্মান দান করবেন এবং পরকালেও সর্বদা সফলতার উচ্চ শিখরে রাখবেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿التوبة: ٤١﴾
“তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।” (সূরা তাওবা: ৪১)
কিন্তু যদি অবস্থা এমন হয়, মুসলমানদের আশেপাশে জুলুম ও কুফরের জয় জয়কার। জীবনের সকল অঙ্গনে বাতিলের শাসন ও কর্তৃত্ব চলে, এতো কিছুর পরও মুসলমান নিশ্চিন্তে আরামে বসে থাকে। আল্লাহর আহ্বানে সাড়া না দেয়। এতো কিছুর পরও সে আল্লাহর আলো নিয়ে অন্ধকার দূর না করে বরং দুনিয়ার চার দিনের জীবনের জন্য বন্দী হয়ে যায়। নিরাপত্তা, শান্তি আর দুনিয়ার যশ-খ্যাতির উন্নতি ও সুখকেই প্রাধান্য দেয়। তো মহান আল্লাহ তাকে সতর্ক করে জানিয়ে দিচ্ছেন-
إِلَّا تَنفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿التوبة: ٣٩﴾
“যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।” (সূরা তাওবা: ৩৯)
প্রিয় ভাইয়েরা!
আজ আমাদের যে করুণ অবস্থা, তা নিজেদের দায়িত্ব পালন না করার ফল। যে দ্বীন বিজয়ী হওয়ার জন্য এসেছিল, সে দ্বীন আজ উপমহাদেশে পরাজিত। যারা অন্যকে মুক্তি দিতে এসেছিল, আজ তারাই অন্যের গোলাম হয়ে হুকুম তামিল করছে। যদি এ দ্বীন বিজয়ী থাকত, তবে আল্লাহর শরীয়াই এখানে শাসক হত। উপমহাদেশের এই পুরা জমিনে যদি কোথাও ইসলামের দূর্গ থাকত, তাহলে শুধু ভারত কেন; পুরা উপমহাদেশে মুসলমানদের এ দুরবস্থা হত না। মুসলমান কেন, কোন বিধর্মীকেও জুলুমের শিকার হতে হত না। এ ভূমিতে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হত, আর আসমান রহমতের বারি বর্ষণ করত। ইসলামের সকল কল্যাণ ভরপুরভাবে লাভ করা যেত এবং এখানকার সকল ইনসাফ-প্রিয় মানুষ ইসলামের আঙ্গিনায় নিজের মুক্তি পেয়ে ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিত। কিন্তু আফসোস! এ দায়িত্ব পালন করা হয়নি। সাতচল্লিশে ভারত ভাগ হয়েছে, ইসলামের নামে একটি রাষ্ট্রও গঠন হয়েছে। কিন্তু ইসলামকে সেখানেই সবচেয়ে বেশী ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আজ ইসলাম ও ইসলাম প্রিয় লোকদের উপর জঘন্য জুলুম চালানো হচ্ছে। সেখানের শাসক ও সেনাবাহিনী ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিটি যুদ্ধের প্রথম সারির সৈনিক। এরপর যারা এখানে কুফর ও নাস্তিকতার সামনে নতজানু হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়েছিল, আফসোস! তারাই আজ গণতন্ত্রের বলির কাষ্ঠে নিজেদের ইসলামকেই বলি দিয়েছে। ফল এই দাঁড়িয়েছে যে, পাকিস্তানে ক্ষমতাসীনদের মতলব ইসলামের সেবা নয়, ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের ফায়দা হাসিল করা। এভাবেই ইসলামের বিজয় আর মাজলুমকে সাহায্য করার স্বপ্ন দোরগোড়ায় থেকে গেছে। শহীদ শাইখ আহসান আজীজ রহ. যে পঙক্তিগুলো ভারতের মুসলিম ভাইদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন। সে পঙক্তিগুলো আজ পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা কত স্পষ্টভাবেই না বর্ণনা করছে-
আমাদের থেকে পৃথক হলে যারা
সেই তোমরাই ‘সংখ্যালঘু’ থেকে গেলে!
এতটাই একাকি হয়ে গেলে যে,
সর্বস্ব হারিয়ে গেল!
আর আমরা!!!
যারা গতকাল এখানে এসেছিল
বুকে স্বপ্ন নিয়ে!
কুফর আর নাস্তিকতার স্রোতে
তারা কত আগে... ভেসে গেল!
কোন আয় উন্নতি ছাড়াই,
যেখান থেকে চলা শুরু করেছিলাম
আজও থেকে গেলাম সেখানে!
সেই তোমরাই ‘সংখ্যালঘু’ থেকে গেলে!
এতটাই একাকি হয়ে গেলে যে,
সর্বস্ব হারিয়ে গেল!
আর আমরা!!!
যারা গতকাল এখানে এসেছিল
বুকে স্বপ্ন নিয়ে!
কুফর আর নাস্তিকতার স্রোতে
তারা কত আগে... ভেসে গেল!
কোন আয় উন্নতি ছাড়াই,
যেখান থেকে চলা শুরু করেছিলাম
আজও থেকে গেলাম সেখানে!
ভারত বিভক্তির পর আমরা যেখান থেকে চলা শুরু করেছিলাম, আজও সেখানে পড়ে আছি। সেখানে পড়ে না থাকলে, আজ পুরো ভারতবর্ষের ভাগ্য অন্যরকম হত। অপরদিকে ভারতেও দ্বীনের বিজয় ও দাওয়াতের আন্দোলন ভিন্নধর্মী হত। আফসোস হয়, সামনে এক কদমও বাড়তে পারিনি। অথচ এখানে এমন আন্দোলন ছিল, যা এখানকার মুসলিমদের হেফাযত করতে পারত। এখানে এমন আন্দোলন ছিল, যা শুধু নিজের নয় বরং অন্যের ভাগ্যেও প্রসন্নতা আনতে পারত। হ্যাঁ, মানি, এখানে সমস্যা কম ছিল না। যারা এ অবস্থায়ও দ্বীনের যতটুকু খেদমত করেছে, আল্লাহ তাদের বিরাট প্রতিদান দিবেন। কিন্তু সামষ্টিকভাবে যা হওয়া উচিৎ ছিল, তার কিছুই হয়নি। দরকার ছিল, মুসলিমদের আদর্শিক মুসলিম হওয়ার এবং নিজ পায়ে দাঁড়াবার দাওয়াত দেওয়া। নিজের হেফাযত ও আত্মরক্ষার জন্য তাদেরকে প্রস্তুত করা। সে দাওয়াতে ‘দেশ পূজা’র স্থানে আল্লাহর ইবাদত এবং নাস্তিকতার পরিবর্তে তাওহীদ ও এত্তেবায়ে শরীয়তের এমন প্রাণ সঞ্চার করা, যা দাওয়াত ও কর্মের মশাল নিয়ে অন্যদের সামনেও ইসলামের মহত্বের জ্বলন্ত নমুনা হয়ে থাকত। কিন্তু আফসোস, আমরা এখানে গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার মিছিলে সঙ্গ তো দিয়েছি, কিন্তু ইসলাম এবং আমাদের অবস্থার নাজুকতা বলে দিচ্ছে, আমরা আমাদের উদ্দেশ্য পানে এক কদমও সামনে বাড়তে পারব না।
ভারতে অবস্থানরত আমার প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শুধু ভারত নয় বরং পুরা ভারতবর্ষে ইসলাম বিজয়ী বেশে থাকবে। শাহ আব্দুল আযীয দেহলবী রহ., সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহ. ও ইসমাইল শহীদ রহ. প্রমুখরা চোখের তারায় যে স্বপ্ন লালন করতেন, সেই স্বপ্ন পূরণের সময় খুব বেশি দূরে নয়। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র হাদীস আমাদের বিশ্বাসকে আরো সুদৃঢ় করছে যে, এখানে জুলুম ও কুফরের এ অন্ধকার স্থায়ী হবে না। সেই দিন অতিসত্ত্বর ঘনিয়ে আসছে, যেদিন কুফর ও শিরকের এ ঘোর অন্ধকার কেটে যাবে।
সুতরাং হে মুহাম্মাদ বিন কাসিম ও মাহমুদ গজনবীর আত্মিক সন্তানেরা! আপনারা চিন্তিত হবেন না, মনঃক্ষুণ্ন হবেন না এবং নিরাশ হবেন না...
এটা এক সুদৃঢ় বাস্তবতা যে, বিজয় ও সাহায্য কেবল আল্লাহ, শুধুমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে-
وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ﴿الأنفال: ١٠﴾
“আর সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হতে পারে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তির অধিকারী হেকমত ওয়ালা।” (সূরা আনফাল: ১০)
আমাদের পরীক্ষার বিষয় হচ্ছে, আমরা সে অন্ধকারের সাথে সন্ধি করি নাকি ইসলামের আলোর মশাল হাতে বাতিলের বিরুদ্ধে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। যদি আমরা হিম্মত ও প্রতিজ্ঞার সাথে দ্বীনের সাহায্যের শরয়ী পন্থা গ্রহণ করি এবং দ্বীনের সাহায্যকে সবার সামনে এবং সবার উপরে রেখে কাজের ময়দানে নেমে পড়ি, তবে নির্ঘাত বিজয় আমাদের পদচুম্বন করবে। মহান আল্লাহর বাণী-
وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ﴿الحج: ٤٠﴾
“আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।” (সূরা হাজ্জ: ৪০)
অতএব, জযবা যেন থেমে না যায়, প্রতিজ্ঞার মাঝে যেন দুর্বলতা না আসে। এখন কাজ করার এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। আমরা মু’মিন, ধৈর্য ও অবিচলতার রশি আমাদের থেকে কখনো আলাদা হয়নি... ফলে আমরা সব সময় সফলকাম। সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরুর বিতর্ক অনর্থক হয়ে যাবে। মিথ্যার শোরগোল ও চেচামেচি বাতাসে মিলিয়ে যাবে।
كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿البقرة: ٢٤٩﴾
সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। আর যারা ধৈর্য্যশীল আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা: ২৪৯)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে এসব আয়াতের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং যে বরকতময় কাফেলা ভারতবাসীকে অন্ধকার থেকে মুক্ত করবে, আল্লাহ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত অন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
সম্মানিত ও প্রিয় ভাইয়েরা!
সে সব বিষয় কী, যা বিশেষ করে ভারতের মুসলমানদের সামনে থাকা আবশ্যক এবং সে কর্মকান্ডগুলো কী, যা করলে আমরা নির্দয় তুফান থেকে নিজেদেরকে হেফাযত করতে পারব? (আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করুন, তাওফিক ও সাহায্য দান করুন।) সে বিষয়ে পয়েন্ট আকারে কিছু কথা আপনাদের খেদমতে পেশ করছি-
এক. সামগ্রিকভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তিনি আমাদের মালিক। তিনিই আমাদের উপাস্য এবং শাসক। এ কারণে আল্লাহর মহত্বের মোকাবেলায় অন্য কোন মাখলুকের মহত্বকে মেনে নেবো না। মহান রবের মোকাবেলায় কোন আদালত, কোন রাজত্ব, সাধারণ বা বিশেষ কোন ব্যক্তির হুকুম ও ফায়সালাকে পবিত্র মনে করব না। জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র হচ্ছে এ যুগের কর্তিত মূর্তি। আর এগুলিকে তখনই প্রত্যাখান করা হবে, যখন আমরা শুধুমাত্র ইসলাম ও একাত্ববাদের ঘোষণা করব।
এই কর্তিত মূর্তিটি এক নতুন সভ্যতা
যা নবী মুহাম্মাদের ধর্মের লুটেরা।
বাহু তোমার তাওহীদের বলে বলিয়ান
ইসলাম তোমার দেশ, তুমি মুহাম্মাদের সৈনিক!
যা নবী মুহাম্মাদের ধর্মের লুটেরা।
বাহু তোমার তাওহীদের বলে বলিয়ান
ইসলাম তোমার দেশ, তুমি মুহাম্মাদের সৈনিক!
আমরা শুধু আল্লাহর সামনে নত হব। আল্লাহর হুকুম-আহকামের আনুগত্য করব। তাঁর বিধানের সামনে অন্য কারো নিয়ম-নীতি ও আইন-কানুনের তোয়াক্কা করব না। এটাই হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র দাবি।
দুই. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর এই দাওয়াতকে ব্যাপক করব। এ কালিমার অর্থ ও মর্ম, দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো আমরা নিজেরাও বুঝব এবং অন্যদেরও বুঝাব। এ কালিমা তখনই সব মিথ্যা উপাস্য আর ক্ষমতাধরদের প্রত্যাখান করবে, যখন শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের ঘোষণা করা হবে। এ দাওয়াত আমরা নিজেরা গ্রহণ করব এবং অন্যদের সামনেও পেশ করব। সকলকে এ কথা বুঝাবো, আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক কল্যাণ ও শান্তি শুধুমাত্র এই কালিমা অনুসরণ এবং তার দাবি পূরন করার মাঝেই নিহিত। আমাদের আচার-ব্যবহার, উঠাবসা, লেনদেন, দাওয়াত, সৃষ্টির সেবা এবং বন্ধুত্ব ও শত্রুতা- এ সবকিছুই হবে শরীয়াহ মোতাবেক এবং কালিমায়ে তাওহীদের কার্যত সত্যায়নকারী ।
ইসলাম ও শরীয়ার উপর আমল এবং তার দাওয়াতের কারণে যদি ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়, তবে আমরা ঝুঁকির মুখে পড়ব। এর কারণে যদি আমাদের সর্বস্ব বিলিন করে দিতে হয়, তবে এতেও কোন কুন্ঠাবোধ করব না।
আমাদের দাওয়াত ও আন্দোলন, চিন্তা-চেতনা ও চেষ্টা শরীয়ার মূলনীতির অনুকূলে হবে, জাতিগত বা ব্যক্তিগত কোন ফায়দার অনুকূলে হবে না। আমাদের বিশ্বাস, এ পদ্ধতির চিন্তা ও কর্ম ইসলামের উপকারে আসবে এবং জাতি হিসেবে আমাদের মুসলিমদেরও উপকারে আসবে। কিন্তু জাতির উপকারের নাম করে যদি আল্লাহর বিধানের বিপরীত পথে চলা হয়, তবে আমাদের বুঝতে হবে, এটা আমাদের জাতির জন্যও কখনো কাজে আসবে না।
তিন. ভারতে যে আমাদের কিছু বলবে না, অর্থাৎ যে আমাদের উপর হাত উঠাবে না, আমরাও তাকে কিছু বলব না। আমরা তাকে পরিপূর্ণরূপে নিরাপদে ছেড়ে দেব। কিন্তু যে আমাদেরকে, আমাদের মা-বোনদেরকে, আমাদের সন্তানদেরকে মারতে আসবে, তাকেও কি আমরা নিরাপদে ছেড়ে দেব? না, কখনই না... সকল ওলামা-ফুকাহার সর্বসম্মতিক্রমে আক্রমণকারী শত্রুকে প্রতিহত করা এবং নিজের দ্বীন ও দুনিয়া তার ক্ষতি থেকে হেফাযত করা নামাজের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
হিন্দুদের খাছলত হল, এরা দুর্বলদের মারে। বিপদগ্রস্তদের আরো বিপদে ফেলে দেয়। পক্ষান্তরে ক্ষমতাবানদের এরা দেবতা মেনে পূজা করে। মিয়ানমারে শুধু সেখানেই গণহত্যা হয়েছে, যেখানে কোন মোকাবেলা হয়নি। কিন্তু যেখানে মোকাবেলা করা হয়েছেঅথবাশুধু লাঠি ও পাথর দ্বারাও যেখানে মোকাবেলা করা হয়েছে, সেখান থেকে দুশমন পালাতে বাধ্য হয়েছে।
প্রিয় ভাইয়েরা!
যুদ্ধের প্রস্তুতি যেহেতু একটি স্বতন্ত্র ফরজ, তাই ওলামায়ে কেরাম ও দ্বীনের দা‘য়ীদের প্রতি নিবেদন করছি, আপনারা এর জন্য পরিপূর্ণ উৎসাহ দান করুন। তার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হোন। হৃদয়ে শাহাদতের তামান্না জাগ্রত করুন। এটা তো জানা কথা, শাহাদাতের চেয়ে বড় কোন সৌভাগ্য নেই। আর নিজের দ্বীন ও ঈমান, নিজের পরিবার-পরিজন এবং মুসলিমদের রক্ষায় নিজের জীবন দিয়ে দেওয়া সবচেয়ে উত্তম শাহাদাত।
চার. আলহামদুলিল্লাহ, সারা বিশ্ব জুড়ে এখন জায়গায় জায়গায় জিহাদের ময়দান সরব হয়ে উঠেছে। এখানে দ্বীনের বিজয় আর মাজলুমদের সাহায্যের জন্য মুজাহিদীন এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। উম্মাহকে রক্ষার এই অগ্রবাহিনীর সাহায্য এবং ইসলামের এই বীরসেনানীদের থেকে সম্পর্কহীন হবেন না। দরকার হলো- এই ময়দানে আপনিও শরিক হবেন এবং জিহাদী আন্দোলনের সাহায্য ও সমর্থনে আপনারও যেন পরিপূর্ণ অংশ থাকে। আপনার সবচেয়ে নিকটবর্তী ময়দান হচ্ছে- কাশ্মীর জিহাদ। এই জিহাদে আপনার জান-মাল দুটোই ব্যবহার করুন। জিহাদের আন্দোলনে আপনার এ অংশগ্রহণ এবং যে কোন সেক্টরে আপনার অংশীদারিত্ব পুরা ভারত জুড়ে ইসলাম ও মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, ইনশা আল্লাহ।
পাঁচ. এটি শেষ পয়েন্ট। উল্লিখিত আলোচনাগুলোর উপর যত বেশি সম্ভব একতা ও সংহতি সৃষ্টি করুন এবং এর সকল বিষয়াবলীকে পূর্ণাঙ্গ নিয়ম ও শৃঙ্খলার সাথে আঞ্জাম দেওয়ার চেষ্টা করুন।
আল্লাহর কাছে দু‘আ করছি, তিনি যেন ভারতের মুসলমানদের সম্মান, শক্তি ও দাপট দান করেন। ভারতে আমাদের ভাইদের দ্বীন ও সম্মান, জান-মাল ও পরিবার-পরিজনের হেফাযত করেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুন, যেন উপমহাদেশে ইসলামের বিজয়ের জন্য আমাদের সবকিছু কাজে লাগাতে পারি। আল্লাহ আমাদের মাঝে ঐ দিন নিয়ে আসুন, যখন ভারত, পাকিস্তান এবং পুরা উপমহাদেশে আল্লাহ তা‘আলার বরকতময় শরীয়ার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। জুলুম ও কুফরের ঝান্ডা ধূলায় ধূসরিত হবে। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
وَمَا ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ ﴿فاطر: ١٧﴾
“এটা আল্লাহর পক্ষে কঠিন নয়।”(সূরা ফাতির: ১৭)
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
*********************
আরও পড়ুন
Comment