আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“এই তো গাযা…
উম্মাহর অগ্রবাহিনী আজ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত
[যুদ্ধের পঞ্চম সপ্তাহ]
”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ১ম পর্ব
بسم الله الرحمن الرحيم
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
এই তো গাজা... উম্মাহর অগ্রবাহিনী আজ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত
ইহুদী গোষ্ঠী, আমেরিকা এবং ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্ব ০৭ই অক্টোবরের হামলা নিয়ে অনেক মায়া কান্না দেখিয়েছে। তারা এই হামলা সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলেছে। অনেক গালমন্দ করেছে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ০৭ তারিখেই যেন ইহুদীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই শুরু হল (!); সবেমাত্র এই তারিখেই যেন মানব সভ্যতার ইতিহাস এক অন্ধকার অধ্যায়ে প্রবেশ করলো।
না.. কখনোই নয়..
আমরা অতীত কিছুতেই ভুলতে পারি না। যদি তোমরা নির্লজ্জের মতো অতীত ভুলে থাকার ভান করো, ১৯৪৮ সালে যে অন্যায় তোমরা করেছো, সেই ইতিহাস থেকে যদি তোমরা চোখ ফিরিয়ে রাখো, তবে সেটা তোমাদের বিষয়। কিন্তু তোমাদের ওই অপরাধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু তোমরা করে এসেছো, কোনো কিছুই আমরা ভুলতে পারি না। এমনকি প্রথম যখন মুসলিম দেশের উপর ক্রুসেডারদের হামলা আরম্ভ হয়, সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অভিশপ্ত পশ্চিমা আগ্রাসনের কোনো কিছুই আমরা ভুলিনি।
এই পুরো সময়ে বহুবার তোমরা বিতাড়িত হয়েছ। অচিরেই আবারো তোমরা এমনভাবে বিতাড়িত হবে যে, আর কখনো ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না, ইনশাআল্লাহ। কারণ আমাদের এই বিষয়টা রক্তমাখা। উম্মাহর সন্তানেরা বিপ্লবের উত্তরাধিকার বহন করছে। উম্মাহর লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবার আগ পর্যন্ত বিপ্লবের এই নেশা কাটবে না। তোমরা তা কামনা করো, কিংবা প্রত্যাখ্যান করো, তাতে কিছু যায় আসে না।
প্রত্যক্ষকারীদের জন্য আগামী দিন খুবই নিকটে। কলমের ভেতর দোয়াত ভর্তি, কলম লিখতে প্রস্তুত। লেখকেরা লিখে যাচ্ছেন, ইতিহাসের পাতাগুলো প্রতিনিয়ত কালো অক্ষরে ভরে যাচ্ছে। ঐতিহাসিকদের সততা যেন আমরা না হারাই— এটাই কামনা।
১০৯৬ খ্রিস্টাব্দ। অর্থাৎ ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রায় ১০০০ বছর আগের কথা। সেই সময় ক্রুসেডারদের শুধু একটাই লক্ষ্য ছিল; আর তা হচ্ছে- ফিলিস্তিনে আগ্রাসন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ক্রুসেডারদের যুদ্ধের ফলাফল ছিল জেগে ওঠা এক ইহুদী বিষফোঁড়া। ক্রুসেডাররা চেয়েছে ইসলাম ও মুসলিম মুজাহিদীনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে এই ইহুদী সত্তা যেন প্রধান সেতু হিসেবে খ্রিস্টানদের পক্ষে কাজ করে। আর বাইডেন (বর্তমান সময়ে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান) তার যুবক বয়সে ১৯৮৬ সালে নির্লজ্জের মতো স্পষ্ট ভাষায় বলেছে,
“ইসরাইল তথা ফিলিস্তিনে ইহুদীবাদী রাষ্ট্র আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সর্বোত্তম বিনিয়োগ। যদি ইসরাঈল না থাকতো তাহলে আমেরিকার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে একটা ইসরাইল তৈরি করা জরুরি ছিল।”
সেই ক্রুসেড এখনো শেষ হয়নি। বরং আগের চেয়ে ক্রুসেডের তীব্রতা বেড়েছে। হ্যাঁ, বরাবরের মতোই এই ক্রুসেড একটা অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় যুদ্ধ; ইতিহাস জুড়ে ক্রুসেডের পরিচয় এমনই ছিল।
বাইডেন-নেতানিয়াহুর স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে- ভীতি তৈরি করা। তাদের এই কৌশল তাদের বিরুদ্ধেই চলে যাবে। কারণ এই ভীতি আমাদের ভিতরে থাকা নিষ্পৃহ ভাবকে হত্যা করবে। আমাদের এই নিষ্পৃহভাব এক দফাতেই দূর হবে না। এটা দূর করার জন্য বেশ কয়েকবারের প্রয়োজন হবে। প্রতিদিন প্রতিবার আঘাত করে তাগুত গোষ্ঠী মনে করবে, তারা সফল হয়েছে। কিন্তু এদিকে আমাদের ভেতর তাদের প্রতি সুপ্ত ঘৃণা এবং প্রতিশোধ স্পৃহা ক্রমশ বাড়তে থাকবে। দিন গড়াতে থাকবে, এরপর হঠাৎ একদিন নিষ্পৃহভাব কেটে গিয়ে আমরা বিপ্লবে ফেটে পড়বো। ওই দিনের পর আর কখনো আমাদেরকে নিষ্পৃহ থাকতে দেখা যাবে না।
তাই আমাদের এই অবস্থায় তোমাদের আঘাতগুলো আমাদের জন্য বিপ্লবের বীজ। তোমরাই সযত্নে এগুলোকে পানি সিঞ্চন করে বড় করে তুলছো। তোমাদের অনাচার আমাদের মধ্যে এই বীজকে বৃক্ষে পরিণত করছে। প্রতিশ্রুত দিন অত্যাসন্ন। তাই নিজ হাতে তোমরা যা রোপন করেছ, তার ফসল গ্রহণের জন্য তোমরা প্রস্তুত থেকো।
*গাজা উপত্যকায় মুসলিম গণহত্যার ব্যাপারে কিছু বাস্তবতা:
- অধিকৃত ফিলিস্তিন এবং ইউক্রেনে যেই দেশটা লড়াই ও সংঘাত উস্কে দিয়েছে সে হচ্ছে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’। এখন ইউক্রেনে আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে আমেরিকা থেমে গিয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনে আমেরিকা আগ্রাসীদেরকে খুব আপন করে নিয়েছে।
- যে দেশটা সর্বপ্রকার অর্থ-সম্পদ, অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা দিয়ে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে, সে দেশটা হচ্ছে আমেরিকা। তারাই বিমানবাহী রণতরি পাঠাচ্ছে ইহুদীদের সাহায্যের জন্য। তারাই যুদ্ধের নেতৃত্ব দানের জন্য নিজের সামরিক কর্মকর্তা ও জেনারেলদেরকে প্রেরণ করছে।
- যারা অধিকৃত ফিলিস্তিনের শাসক হিসেবে ইহুদীদেরকে বৈধতা দিয়েছে এবং তাদের আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকার করেছে, সে দেশটি হচ্ছে আমেরিকা। তারাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ভেটো দিয়েছে। তারাই একথা প্রচার করে বেরিয়েছে যে, ইহুদীরাই নির্যাতিত, নিপীড়িত ও নিষ্পেষিত। তারা নির্যাতক তথা নিপীড়ক নয়। এ কাজগুলো সবই আমেরিকা ও ক্রুসেডার পশ্চিমা বিশ্বের অবদান।
- আঞ্চলিক শাসকবর্গের (ফিলিস্তিনের আশপাশের দেশগুলোর শাসক) পৃষ্ঠপোষকতা, তাদেরকে বৈধতা দান এবং জনসাধারণের বিরুদ্ধে যেয়ে তাদেরকে সমর্থনে যে দেশটা অটল-অবিচল সে হচ্ছে আমেরিকা। আমেরিকাই আঞ্চলিক শাসকদের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়, সর্বপ্রকার অস্ত্রশস্ত্র ও গোয়েন্দা সুবিধা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করে। আমেরিকাই নিরাপত্তা উপদেষ্টা, রাজনৈতিক ও সামরিক উপদেষ্টাদেরকে দিয়ে তাদেরকে দিক-নির্দেশনা দেয়। আমেরিকাই জনসাধারণের বিপ্লব ও উত্থান প্রতিরোধের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালনকারী।
- আমেরিকাই গাজা উপত্যকায় প্রতিরোধ মুজাহিদীনের সাহায্যের জন্য আঞ্চলিক বাহিনীগুলোর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দিচ্ছে। আঞ্চলিক তাবেদার সরকারগুলোকে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। সেই সাথে জর্ডানের বাদশা’র প্যারাসুট ল্যান্ডিং-এর (ভিডিও ভাইরাল করার) মাধ্যমে সকলের সামনে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছে।
- অক্টোবরের ০৭ তারিখে মুজাহিদীন দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক বিভাগকে টার্গেট করেছেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। এরপর ইহুদীরা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে টার্গেট করে হত্যা করতে আরম্ভ করে। আজকের দিন পর্যন্ত ১৫ হাজার (বর্তমানে ১৮ হাজার) এর অধিক প্রাণ তারা ঝরিয়েছে। তারা গাজার জনগণের আড়াই লাখেরও বেশি বাড়িঘর ও সম্পত্তি ধ্বংস করেছে।
- মুজাহিদ যুবকেরা দখলদার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ট্যাংক ও সামরিক যান টার্গেট করে হামলা করছে। জায়নবাদী আগ্রাসী সামরিক লোকদেরকেও আক্রমণ করছে। এদিকে শত্রু বাহিনী ক্রোধে অন্ধ হয়ে চিকিৎসা কেন্দ্র, হাসপাতাল ও বেসামরিক বিভিন্ন স্থাপনায় বোমা হামলা জারি রেখেছে। কারণ গোয়েন্দা সূত্রে সামরিক টার্গেট খুঁজে পেতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। চোখের আড়ালে থাকা ইসলামের বীর বাহাদুরদের মুখোমুখি লড়াই করতে তারা অক্ষম। ইসলামের এই বীর বাহাদুরেরা তাদের কাছে ভূতের মতো, যারা তাদের সেনাবাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করার জন্য হঠাৎ উদিত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
- দখলদার শত্রুবাহিনীর প্রচারিত তথ্য ও বিবৃতিগুলো ভিত্তিহীন। এগুলোর পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। আসলে সামরিক কার্যক্রমের নামে তারা যেভাবে শহরের পর শহর ধ্বংস করছে, বেসামরিক নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে বর্বরোচিত বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করছে, সেগুলোই তাদের তথাকথিত সামরিক কার্যক্রমের মূল পরিচয় ও বিভৎস চেহারা।
অপরদিকে ইসলামের সিংহ পুরুষ বীর মুজাহিদ বাহিনী; তারা তাদের প্রচারিত প্রমাণ-নির্ভর বিবৃতিগুলোর মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সামরিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তারা কেবল শত্রুপক্ষের সামরিক লোক ও স্থাপনাই টার্গেট করছেন।
এমনই আরো অনেক বাস্তবতা আছে। ক্রুসেডার জায়নবাদী যৌথ শক্তি সেগুলো কিছুতেই গোপন করতে পারবে না। শত্রুপক্ষ কি মনে করছে, নিজেদের বর্বরোচিত কাজ-কর্মের মাধ্যমে তারা সফল হয়ে যাবে? নেতানিয়াহু নিজের ধ্বংসাত্মক ভবিষ্যতের জন্য ফিলিস্তিনে এবং গোটা বিশ্বে ইহুদীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জুয়া খেলছে। তাইতো ইহুদীদের অভিশপ্ত ইতিহাস তাকে এভাবেই স্মরণ রাখবে যে, সে ছিল গাজার ঐতিহাসিক খুনি।
এটা এমন এক যুদ্ধ, যা শুধু তিক্ত ফল উৎপাদন করবে। গোটা বিশ্ববাসীকে তাদের লজ্জাজনক নীরবতার জন্য সমানভাবে সেই ফল ভোগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহল যদি এই যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বস্ত হয়, তাহলে কেন তারা ইহুদী গোষ্ঠী ও আমেরিকাকে অন্ততপক্ষে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বয়কট করছে না? রাজনৈতিকভাবে কেন তাদেরকে কোণঠাসা করছে না? কি কারণে তাদের রাষ্ট্রদূতদেরকে বহিষ্কৃত করছে না, অথচ ব্যাপারটা তাদের জন্য খুবই সহজ?
তাই এখন জাতিসংঘের শরণাপন্ন হবার কোনোই অর্থ নেই। কারণ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্যতা দেখাতে পারেনি। ফলে আগেই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখন জাতিসংঘ থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সময় হয়েছে।
আগ্রাসন, নিপীড়ন ও গণহত্যা বন্ধ করতে এবং মুসলিমদের বিজয়ের পাল্লা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে আমাদেরকে যে কাজটা করতে হবে তা হচ্ছে, শত্রুপক্ষ এবং তার দালালরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের সামনে যে বিকল্পগুলি উপস্থাপন করে যাচ্ছে, সেগুলো দৃঢ়তার সাথে উপেক্ষা করা। (অর্থাৎ তাদের দেয়া কোনো অপশন গ্রহণ করা যাবে না। বরং আমরা নিজেরাই আমাদের লক্ষ্য ও পছন্দ-অপছন্দ নির্ধারণ করবো)
শত্রু আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনার যে মাপকাঠি দিয়েছে; যেই সীমানা তারা এঁকে দিয়েছে, তা থেকে আমাদের বের হতে হবে। আমাদের মন ও দৃষ্টি থেকে সমস্ত পর্দা সরিয়ে ফেলতে হবে। আমাদের এবং আগামী প্রজন্মের সুন্দর মনোরম ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য, অনেকগুলো কঠিন ও নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা একমত হই কিংবা না হই; বাস্তবতা এটাই যে, আমাদের সামনে শুধু দুটো অপশন রয়েছে: হয় আমরা ইসলাম ও স্বাধীনতা গ্রহণ করবো অথবা কুফরী ও দাসত্ব। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজের জন্য উপযুক্ত অপশন বেছে নেয়।
জায়নবাদী-ক্রুসেডার পশ্চিমাদের ভঙ্গুর বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে নির্মূল করতে এবং সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িতদের জুলুম দূর করার লক্ষ্যে; আমাদেরকে প্রথমে সেই শাসকগোষ্ঠীকে পরাস্ত করতে হবে, যারা তাদের দুর্বলতা ও লজ্জা দিয়ে আমাদের বেঁধে রেখেছে। সেই সাথে পশ্চিমা ইহুদীবাদী ক্রুসেডারদের দিকে অগ্রসর হতে হবে। সর্বত্রই তাদের লজ্জাজনক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নিশ্চয়ই পশ্চিমা ও জায়নবাদী গোষ্ঠী মানবজাতির ইতিহাসের পাতায় এক অন্ধকার অধ্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়।
আরব ও ইসলামী অঞ্চলের সেনাবাহিনীর সর্বোত্তম অবশিষ্টাংশ অনন্তকালের লজ্জা থেকে যেন পরিত্রাণ পায়; সেজন্য তাদের শাসকবর্গ, রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাবাহিনীর নেতৃবৃন্দের কবল থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে। ফিলিস্তিন, জাযীরাতুল আরব, মিশর, শাম, ইরাক এবং তুরস্কের দখলকৃত ভূমি মুক্ত করার জন্য সংগ্রামের প্রথম পর্যায় হিসেবে উপর্যুক্ত কাজ তাদের করতেই হবে।
গাজা থেকে...
পশ্চিমা ও ইহুদীবাদীদের দাসত্ব থেকে মানবজাতির মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ এখান থেকেই যাত্রা শুরু করেছে। অপরাধীর কাছে অপরাধ বন্ধের আর্জি জানাবার কোনো মানে নেই। জালিম শুধু বলপ্রয়োগের ভাষা বোঝে এবং কেবল শক্তিশালীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
বিক্ষোভ হল দুর্বলের ভাষা। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে কিছুই অর্জন করা যায় না। তাই প্রকৃত পরিবর্তন সাধনের জন্য আসল দায়িত্ব ও করণীয় পালনে মনোযোগী হতে হবে। শুধু বিক্ষোভ প্রদর্শনে মনোযোগ দেয়া যাবে না। নচেৎ কোনো পরিবর্তনই আসবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ …﴿١١﴾
অর্থঃ “আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।...” [সূরা রাদ ১৩: ১১]
পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না বিক্ষোভগুলো শ্লোগান দিয়ে গলা ফাটানো থেকে পরিবর্তিত হয়ে নিপীড়িতদের উপর চাপিয়ে দেওয়া শাসনব্যবস্থাকে উৎখাতের বাস্তব পদক্ষেপে পরিণত না হবে। এটা উম্মাহর জনসাধারণ এবং সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িতদের জন্য একটা কঠিন দাসত্বের জীবন। এই জীবন বিভিন্ন আকারে গর্বিত গাজায় সংঘটিত অন্যায়-অনাচারের প্রতিফলন।
আসলে মিশর, রিয়াদ, রাবাত, ইসলামাবাদ, ঢাকা এবং অন্যান্য দেশের জীবন এবং গাজার জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সকলেই দখলদারদের অধীনে; সবাই চাবুকের নিচে পিঠ পেতে আছে। অত্যাচারীরা জাতির সম্পদ লুট করছে, উম্মাহর সন্তানগণ অবরুদ্ধ, তাদের ভবিষ্যৎ শৃঙ্খলে আবদ্ধ, তাদের ভাগ্য অজানা— কয়েক প্রজন্ম ধরে এমনটাই চলে আসছে।
এটা কি ধরনের জীবন, যেখানে একজন মানুষ তার ভাগ্য এবং আগামী দিনের পথ নির্ধারণ করতে পারে না? এটা কেমন জীবন; যেখানে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয়? মানুষের কিছুই করার থাকে না? তাদের উপর সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তাদেরকে ব্যবহার করা হয়? অবশেষে মানুষ নিজের নাম ও চেহারা ছাড়া আর কিছুই চেনে না। সে সময় দুর্দশার গভীরে বেঁচে থেকে ট্র্যাজেডি বহন করে বেড়ানো এবং পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
আরও পড়ুন