আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
“‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব ।।
ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী||
এর থেকে– তৃতীয় পর্ব
“‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব ।।
ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী||
এর থেকে– তৃতীয় পর্ব
৩) আল-কায়েদা কি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে?
আল-কায়েদা শুরার নীতিতে বিশ্বাসী[1]। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকে তারা শরিয়ত-বিরোধী[2] মনে করে।
খেলাফত ঘোষণার পূর্বে যে কাজগুলো করা আবশ্যক ছিল তা হলো, উম্মাহর ঘাড়ে চেপে বসা শত্রুদের আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো এবং উম্মাহকে শত্রুদের প্রভাব-বলয় থেকে বের করে আনা। যাতে তারা শত্রুভীতি ও তাদের প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের শাসক নির্বাচন করতে পারে।
সন্দেহ নেই, ইসলামের শত্রুরা বিশেষত আমেরিকা পারতপক্ষে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা হতে দিবে না, সম্ভাব্য সব উপায়ে তারা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। যেমনটি করেছে is এর ক্ষেত্রে এবং মুহাম্মদ মুরসির নেতৃত্বাধীন ইখওয়ানের ক্ষেত্রে। কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, আপনি দাবি করছেন চলমান ধাপে আল-কায়েদা ইসলামি ইমারাহ প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে না, তাহলে আবিয়ান ও মুকাল্লা (ইয়েমেনী শহর) দখল করেছিল কেন?
আল-কায়েদা এসকল অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল, তা ঠিক। তবে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চেপে বসার এবং তাদের অনিচ্ছায় তাদের শাসক বনে যাওয়ার ইচ্ছা আল-কায়েদার আদৌ ছিল না। আল-কায়েদা কেবল শূন্যতার সুযোগ নিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, সঠিক দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া, সাধারণের স্বার্থ রক্ষার প্রতি ইসলামের অবস্থান জানতে মানুষকে সুযোগ দেওয়া, শরিয়তের আদল ও ইনসাফের নমুনা মানুষের সামনে পেশ করা। আল-কায়েদার এই উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে। ফলে, তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলসমূহে নাগরিক সুবিধা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার মান ইয়েমেনের অন্য যেকোনো অঞ্চল থেকে ভালো।
৪) বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আল-কায়েদার হাতেগোনা জিহাদি দলসমূহ শত্রুদের চতুর্মুখী আক্রমণ প্রতিহত করে টিকে থাকতে পারবে কি?
গেরিলাযুদ্ধ সম্পর্কে কিছুটা জানা থাকলে এই প্রশ্নের উত্তর বুঝা সহজ। সম্মুখসমরে গতানুগতিক পন্থায় শক্তিশালী শত্রুকে পরাজিত করা কঠিন হলে, দুর্বল পক্ষ এই যুদ্ধের পথ বেছে নেয়। একের পর এক আকস্মিক হামলা চালিয়ে শত্রুকে ক্রমান্বয়ে দুর্বল করতে থাকে। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাধীনতাকামীরা গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করছে এবং এটি ভালো কাজ দিচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা কাঙ্ক্ষিত ফল পেয়েছেন। চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা ইত্যাদি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
তাই বলা চলে, সুপরিকল্পিত গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে শক্তিশালী বড় কোনও সেনাবাহিনীকেও চরম ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি করা এমনকি পরাজিত করাও সম্ভব। আল-কায়েদা আমেরিকার বিরুদ্ধে এটিই করছে। তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের সেনাবাহিনীর চরম ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তাদের অর্থব্যবস্থা পঙ্গু হয়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে তারা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। এভাবে আল-কায়েদা যদি তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে তাহলে একসময় আমেরিকাকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
৫) তানজিম আল-কায়েদার মানহাজ কি?
আকিদাগতভাবে তানজিম আল-কায়েদা ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’-এর অনুসারী। তাওহীদ, গায়েব, তাকদির, ঈমান ও কুফরসহ মৌলিক সকল ক্ষেত্রে তারা আহলুস সুন্নাহর আকিদায় বিশ্বাসী। যারা একদিকে নিজেদেরকে আহলুস সুন্নাহর অনুসারী দাবী করে কিন্তু ঈমান ও কুফরের হাকিকত নিয়ে আহলুস সুন্নাহর বিরোধিতা করে, আল-কায়েদা তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তথাকথিত আহলুস সুন্নাহর অনুসারীদের মতো মানুষের মতামতকে কোরআন-হাদিসের উপর প্রাধান্য দেয় না, বরং বিরোধপূর্ণ বিষয়ের নিষ্পত্তিতে কোরআন ও হাদিসের ফয়সালাকে চূড়ান্ত মনে করে।
আল-কায়েদার কর্মপন্থা : আল-কায়েদা দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। একে মোটেও তারা অবজ্ঞার চোখে দেখে না। বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে তারা জিহাদ ও কিতালের পথ অবলম্বন করছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থ: “আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোনও বিষয়ের জিম্মাদার নন, আর আপনি মুসলিমদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি-সামর্থ্য খর্ব করবেন। আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থ্যের দিক থেকে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা”। (সূরা নিসা ৪:৮৪)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাফেরদের শক্তি ও প্রতাপ খর্ব করার পদ্ধতি স্বরূপ জিহাদ ও জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণের ফর্মুলা বাতলে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - يَقُولُ:
«إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالعِينَةِ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ البَقَرِ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ، وَتَرَكْتُمُ الجِهَادَ،سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَايَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ»
ইবনু ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা ‘ঈনা (নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পুনরায় মূল্য কম দিয়ে ক্রেতার নিকট হতে ঐ বস্তু ফেরত নিয়ে) কেনা-বেচা করবে আর গরুর লেজ ধরে নেবে এবং চাষবাসেই তৃপ্ত থাকবে আর আল্লাহর পথে জিহাদ করা বর্জন করবে তখন আল্লাহ তোমাদেরকে অবমাননার কবলে ফেলবেন আর তোমাদের দ্বীনে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে এটা অপসারিত করবেন না। (আবু দাঊদ ৩৪৬২, আহমাদ ৮৪১০, ৪৯৮৭, ২৭৫৭৩)
সুতরাং কর্মপদ্ধতির দিক থেকে আল-কায়েদা সেইসব ইসলামি দলের বিপরীত, যারা বর্তমানের নিপীড়নমূলক পরিস্থিতি থেকে উম্মাহকে উদ্ধার করতে জিহাদের পরিবর্তে দাওয়াতের পথ বেছে নিয়েছে। জিহাদ মানব প্রকৃতিতে প্রোথিত। মানুষ স্বভাবগতভাবে আত্মরক্ষা করে। প্রতিরোধের আসমানি নীতিও তাই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَوْلَادَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
“অর্থ: আল্লাহ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল”। (সূরা বাকারা ২:২৫১)
আরও ইরশাদ হচ্ছে,
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًاۗ وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
“অর্থ: আল্লাহ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হতো খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনালয়, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ -যেখানে আল্লাহর নাম অধিক পরিমাণে স্মরণ করা হয়”। (সূরা হজ্জ ২২:৪০)
অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত - নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ(?) ভাবে যারা তাগুতদের থেকে মুক্তির চেষ্টা করে তারা কারাবরণ, টর্চারিং এমনকি হত্যার শিকার হয়েছে।
আরও প্রমাণিত যে, উত্তাপহীন দাওয়াহ কেবল নিষ্ক্রিয়তা, স্থবিরতা ও বশ্যতার মাত্রাই বৃদ্ধি করে।
[1] আই.এস খেলাফত ঘোষণা করেছিল ‘আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ’র পরামর্শ ছাড়া। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই আল-কায়েদা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে।
[2] আমার উদ্দেশ্য মোটেও এই নয় যে, মানবরচিত আইনে রাষ্ট্র পরিচালনাকারী স্বৈরশাসকদের পতনের জন্য বলপ্রয়োগ করা যাবে না। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ শ্রেণীর রাষ্ট্রপ্রধানদের পতনের পর শাসক নির্বাচিত হতে হবে আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদের পরামর্শ মাফিক।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------ চতুর্থ পর্ব
Comment