আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স কর্তৃক পরিবেশিত
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১ম পর্ব
==================================================
=====
মুসলিমদের ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ “যদি মুসলিমদের ভূমির এক বিঘত পরিমাণের জায়গাও কুফ্ফাররা দখল করে নেয়, তখন প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর উপর জিহাদ করা ফারদ আ’ইন (সবার জন্য ফরয) হয়ে যায়। ঐ মুহূর্তে জিহাদে বের হওয়ার জন্য সন্তানের প্রয়োজন হয় না তার পিতা-মাতার কাছ থেকে অনুমতি নেয়া এবং স্ত্রীরও তার স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না।” শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)
উৎসর্গ
শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম এবং আফগান মুজাহিদীনদের প্রতি যারা বিংশ শতাব্দীতে জিহাদের শিখাকে প্রজ্বলিত করেছেন এবং এই বরকতময় পথে দ্বীনের তরীকে চালিত করেছেন, এই দ্বীনের পতাকাকে সম্মান এবং মর্যাদার সাথে উন্নীত করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই শহীদ হয়ে গিয়েছেন এবং অনেকেই প্রতীক্ষায় আছেন……
مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا
“মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহরসহিত তাহাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করিয়াছে, উহাদের কেহ কেহ শাহাদাতবরণকরিয়াছে এবং কেহ কেহ প্রতীক্ষায় রহিয়াছে। উহারা তাহাদের অঙ্গীকারে কোনপরিবর্তন করে নাই।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩)
প্রকাশকের কথা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য, যিনি সমস্ত জাহানের মালিক। আখিরাত হচ্ছে একমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য, যেখানে জালিমদের ছাড়া আর কারো সাথে কোন শত্রুতা থাকবে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের জন্য আর কেউ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর দাস ও রসূল। আল্লাহ তাঁর প্রতি, তাঁর আহলে বাইতের প্রতি, তাঁর সম্মানিত সাহাবাগণের প্রতি এবং কিয়ামাত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল অনুসারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।
‘মুসলিমদের ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা’ বইটি মূলতঃ শহীদ শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত ‘আদ্-দাফা আন-আরদিল মুসলিমীন’ কিতাব থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। তিনি এই কিতাবটি লিখেছিলেন আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আগ্রাসন চালানোর চার বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে। এই বইটিতে মূলতঃ
শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) এর পক্ষ থেকে একটি বিষয়ের উপরে ফাতাওয়া প্রদান করা হয়েছে। আর তা হল আফগানিস্তানের মুজাহিদীনদের সহযোগীতা করা এখন সমস্ত বিশ্বের মুসলিমদের উপর আবশ্যক একটি দায়িত্ব।
জিহাদ এখন শুধু মৌখিক চর্চার বিষয় হয়ে গিয়েছে,
যা শুধু চা অথবা কফি পান করার সাথে আলাপ করা হয়ে থাকে,
জিহাদের সম্বন্ধে এমন লোকদের কিতাব লিখতে অথবা বক্তৃতা দিতে শোনা যায়,
যারা কখনো এক মিনিটের জন্যেও জিহাদের ময়দানে সময় অতিবাহিত করেনি,
অথবা একটি গুলিও ছোড়েনি।
[শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম]
বর্তমান বিশ্বে বহু মুসলিম আলিম, বুদ্ধিজীবী, নেতা, শিক্ষার্থী, গবেষক এবং বক্তাদেরকে ইসলামের জিহাদ সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত পেশ করতে শোনা যায়। যাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, জিহাদ শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর যুগেই প্রচলিত ছিল এবং এখন তা রহিত হয়ে গিয়েছে। অন্যেরা বলে থাকে, জিহাদ হচ্ছে আত্মশুদ্ধির জন্য – যা শুধুমাত্র নফসের সাথে করা হয়ে থাকে। আবার অন্য কিছু মানুষ বলার চেষ্টা করে, ইসলাম শুধু আত্মরক্ষা মূলক জিহাদেরই অনুমতি দেয়, আক্রমণাত্মক জিহাদ ইসলামের মধ্যে নেই। আবার অনেকের মধ্যেই একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতিত জিহাদে অংশ গ্রহণ করা যায় না। অন্য কিছু মানুষ আছে যারা সব সময়ই কাফিরদের সামনে নিজেদের অনুতপ্ততার কথা স্বীকার করে থাকেঃ তাদের লেখনীর মাধ্যমে, সাক্ষাতকারে অথবা বক্তৃতায়। যারা এই সকল অভিমত পেশ করে থাকে তাদের অধিকাংশের মধ্যে একটি সাধারণ মিল রয়েছে আর তা হল তারা এক মিনিটের জন্যেও জিহাদের ময়দানে সময় অতিবাহিত করে নি, মুজাহিদীনদের সাথে যুদ্ধে সময় কাটায়নি, তাঁদের সাথে নালা খনন করেনি, ব্যারাকে একই সাথে ঘুমায়নি, তাঁদের খাবারের সাথে শরীক হয়নি, তাঁদের আহতদের সাথে আহত হয়নি অথবা শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করার স্বাদ পায়নি।
যদি কেউ কোন মুসলিম পপ-ষ্টারকে জিজ্ঞাসা করে যে গান শোনা কি ইসলামে অনুমোদিত নাকি নিষিদ্ধ, সে তার সাধ্যমত চেষ্টা করবে এবং এর জন্য প্রয়োজনে কোরআন ও সুন্নাহ্ থেকে দলিল দিয়ে হলেও বোঝানোর চেষ্টা করবে যে, ইসলামে এর অনুমোদন রয়েছে। এই পপ-ষ্টারের আমলের দিকে যদি কেউ লক্ষ্য করত তাহলেই সে বুঝতে পারত যে, অযৌক্তিক যুক্তি দিয়ে হলেও সে তার কাজের পক্ষে সাফাই দেয়ার চেষ্টা করছে। ঠিক একইভাবে, যদি এমন কোন আলিম, যিনি আল্লাহর রসূল ﷺ-এর, তাঁর সাহাবাগণের এবং পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠ আলিমগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে না, জিহাদের ময়দানে অংশ গ্রহণ করে না, তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, বর্তমান সময়ে জিহাদের বিধান কি? তাহলে এটি ধারণা করা খুব কঠিন কোন বিষয় নয় যে তিনি কোন্ ধরনের উত্তর দিতে পারেন।
এ কারণেই, মুজাহিদীন শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) কোরআনের আয়াত, সহীহ্ হাদীস এবং পূর্ববর্তী আলিমগণের মধ্য থেকে ৫০জন আলিমের কিতাব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অভিমত সম্বলিত এই কিতাবটি সংকলন করেছেন; যার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে জিহাদ সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে অপসারণ করা যায়। এই কিতাবটিতে যে সকল বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে তা হলঃ
- আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক জিহাদের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কিত আলোচনা, প্রথম দিকে এটি ফার্দুল কিফায়া থাকে এবং পরবর্তীতে তা ফার্দুল আ’ইন হয়ে যায়।
- জিহাদের ফারজিয়াতের প্রকৃতি সম্পর্কে চার মাযহাবের ইমামগণের রায়।
- বর্তমান সময়ে জিহাদ করার জন্য পিতা-মাতার অনুমতি কি পূর্বশর্ত?
- খলিফা অথবা ইসলামিক রাষ্ট্র না থাকলেও জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার হুকুম।
- একাই জিহাদে বেরিয়ে পরা উচিত যখন বাকি সবাই পিছনে বসে থাকে।
- কাফিরদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার এবং তাদের সাথে শান্তি চুক্তি করার বিধান।
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ
“আল্লাহ্ তা’আলা তাদের (বেশী) পছন্দ করেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, যেন তারা এক সীসাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীর।”
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ভালোবাসেন ঐ সকল মুজাহিদীনদেরকে যারা তাঁর পথে জিহাদ করে, তাই মুসলিমদের কর্তব্য হচ্ছে মুজাহিদীনদেরকে ভালোবাসা, যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন। এবং তাঁদের নামের উপর যে কোন ধরনের নিকৃষ্ট উপাধি (জঙ্গী, ধর্মান্ধ, চরমপন্থি, সন্ত্রাসী অথবা মৌলবাদী ইত্যাদি) দেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখা যেমনটি কাফিররা করে থাকে।
আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদের এই কিতাবের মাধ্যমে মুজাহিদ আলিমগণের লিখনির দ্বারা জিহাদ সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে দূর করে দেন, যাঁরা না পরোয়া করেন সমালোচকের সমালোচনা অথবা জালেম শাসকদের তরবারী।
আল্লাহ্ তা’আলা যেন আমাদের এই কিতাব থেকে উপকার নেয়ার এবং তাঁর পথে আহ্বানে সাহসিকতার সাথে সাড়া দেয়ার তৌফিক দান করেন।
আল্লাহ্ তা’আলা যেন আমাদেরকে তাদের মতো না করেন; যারা তাদের জ্ঞান থেকে কোন উপকার নিতে পারেনি, এবং বিচার দিবসে তা তাদের জন্য বোঝার কারণ হয়ে যাবে।
আল্লাহ্ তা’আলা যেন সারা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে যে সকল মুজাহিদীনরা আল্লাহর পথে জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে বিজয় এবং সফলতা দান করেন।
আল্লাহ্ তা’আলা যেন তাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে কবুল করে নেন এবং আহতদেরকে দ্রুত আরোগ্য দান করেন।
আমি ঐ সকল ভাইদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, যারা এই কিতাবটি অনুবাদ, টাইপিং এবং সম্পাদনার এর কাজে সহযোগীতা করেছেন। আল্লাহ্ তা’আলা যেন তাদেরকে এই কাজের উত্তম বিনিময় আখিরাতে দান করেন।
[আযযাম পাবলিকেশন্স]
আরও পড়ুন
Comment