আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স কর্তৃক পরিবেশিত
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১৫ তম পর্ব
==================================================
=====
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১৫ তম পর্ব
==================================================
=====
কাফিরদের সাথে শান্তি চুক্তি করার শর্তসমূহঃ
ফুক্বাহাগণের মধ্যে এই ব্যাপারে ইখতিলাফ আছে যে, কাফিরদের সাথে শান্তি চুক্তি করা যাবে কি না। কেউ হুদাইবিয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন শান্তি চুক্তি অনুমোদিত। আবার কেউ বলেন এটি অনুমোদিত যদি মুসলিমরা চরম দূর্বল অবস্থায় থাকে। আবার কেউ বলেন তরবারির আয়াত নাযিল হওয়ার পর এখন এটি অবৈধ। আমরা বলি, শান্তি চুক্তি বৈধ যদি এর ফলে মুসলিমদের কল্যাণ হয় কিন্তু শর্ত হচ্ছে যে, চুক্তিতে এমন কোন ধারা থাকবেনা যাতে দ্বীনের কোন ক্ষতি হয়।
যেমনঃ
(১) চুক্তিতে এমন কোন ধারা থাকতে পারবেনা যাতে মুসলিমদের এক বিঘত ভূমিও বেদখল হয়ে যায়। কারণ ইসলামের ভূমি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এই ধরনের ধারা চুক্তিকে অবৈধ করে দেয় কারণ ভূমি হচ্ছে ইসলাম ও আল্লাহর। মুসলিমদের অঞ্চলের কোন কিছু অপব্যবহার জায়েজ নয়। অথবা বনী আদমকে বিনিময় হিসাবে ব্যবহার করা যার মালিক একমাত্র আল্লাহ। রাশিয়ানদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি করা জায়েজ নয় যতক্ষণ না তারা আফগানিস্তানের কোন অংশ দখল করে রাখে। তদ্রূপ ইহুদীদের সাথে চুক্তি করা জায়েজ নয় ফিলিস্তিনে।
(২) যদি জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয় তবে তা শান্তি চুক্তি বাতিল করে দেয়। যেমনঃ শত্রুরা যদি মুসলিম ভূমি আক্রমণ করে অথবা আক্রমণের ইচ্ছা করে। “খলীফা যদি খ্রিষ্টানদের সাথে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে কিন্তু মুসলিমরা যদি অনুভব করে জিহাদই একমাত্র সমাধান তখন শান্তি চুক্তি বাতিল হবে এবং খলীফার কাজটি বর্জনীয় (চুক্তির ব্যাপারে শুধুমাত্র)।”
যখন জিহাদ ফার্দুল-আ’ইন তখন শান্তি চুক্তি করা জায়েজ নয়। যেমনঃ শত্রুরা যখন মুসলিম দেশ দখল করে। আমরা যা কিছু বর্ণনা করেছি তার মধ্যে যে বিষয়গুলোর কারণে জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয় সেগুলোর কারণে শান্তি চুক্তিও বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এই চুক্তির কারণে ফার্দুল আ’ইন পালন করা যাবেনা এবং যেখানে সমস্যার সমাধান হচ্ছে জিহাদ। কাদী (কাজী/বিচারক) ইবন-রুশদ বলেছেন, “আলিমগণ একমত পোষণ করেছেন যে, যখন জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয় তখন এটি ফার্দ হাজ্জ এর চাইতে অগ্রাধিকার পায়। কারণ যদি জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয় তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে পালন করতে হবে কিন্তু ফার্দ হজ্জ কিছু দেরীতে পালন করা যেতে পারে। সুতরাং এই চুক্তি বর্জন করতে হবে কারণ ইহা শরীয়াহ সম্মত নয়। এটি গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর শর্তাবলী মানা বাধ্যতামূলক নয়। যাদেরই শরীয়ার মূলনীতি সম্পর্কে সঠিক বুঝ আছে তারা এই মতই পোষণ করেছেন। আরও, উক্ত চুক্তির কারণে ফার্দ জিহাদ বন্ধ হয়ে যায়। ইহা বন্ধ করা অবৈধ এবং প্রত্যেক অবৈধ মানা বাধ্যতামূলক নয়।
(৩) যেকোন শর্ত আল্লাহর শরীয়াকে বর্জন করলে অথবা ইসলামের কোন অংশকে উপেক্ষা করলে উক্ত শর্ত চুক্তিকে বাতিল করে। রাশিয়ার জন্য এই চুক্তি করা (আফগানিস্তানের সাথে) ঠিক নয় কারণ এটি জিহাদ এবং এর লক্ষ্যকে বাতিল করে দেয়।
(৪) যদি চুক্তিতে এমন কোন শর্ত থাকে যার কারণে মুসলিমরা অপমানিত হয় অথবা এই রকম পরিবেশ তৈরি হয় তবে এই রকম চুক্তি করা যাবেনা।
যুহরী (রহিমাহুল্লাহ) যেমনটি একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ “যখন মুসলিমদের উপর চাপ বড় আকার ধারণ করল, তখন রসূল ﷺ একজনকে উয়াইনা ইবন হুসন বিন হানিফা বিন বাদর এবং হারিছ বিন আবী আউফ আল মুযনী (তারা বনী গাতফান এর প্রধান ছিল) এর কাছে পাঠালেন। তিনি ﷺ তাদেরকে এর তৃতীয়াংশ ফসলের ভাগ (মদিনার) প্রস্তাব দিলেন এই শর্তে যে, তাঁর ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণের কাছ থেকে তারা এবং তাদের সমস্ত বাহিনী চলে যাবে। তারা এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছিল কিন্তু তখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। যখন তিনি ﷺ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে যাবেন, তখন তিনি সাদ বিন মুয়ায ও সাদ বিন উবাদা (রদিআল্লাহু আনহু)-কে পাঠানোর চিন্তা করলেন। তিনি ﷺ তাদেরকে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, ‘তোমরা ভাল করে জানো, আরবরা আমাদের উপর একই তীর দিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে (সম্মিলিতভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে)। তোমাদের কি অভিমত, যদি আমরা তাদেরকে মদিনার কিছু ফসল দেই?’ তাঁরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল ﷺ, যদি আপনি বলেন এটি আপনার মত, তাহলে আমরা আপনার মত অনুসরণ করবো। নতুবা আমরা ইতিপূর্বে তাদেরকে একটি খেজুরও দেইনি, তাদের কাছে বিক্রয় করা ছাড়া অথবা যখন তারা আমাদের মেহমান হত এবং এটি ছিল আমাদের মুশরিক থাকা অবস্থায়। কিন্তু এখন আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন।’ রসূল ﷺ তাঁদের কথা শুনে খুশি হলেন।”
আনসাররা অনুভব করছিল যে, তারা এতে অপমানিত হবে। অন্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আনসাররা উত্তর দিল, “আমরা তোমাদেরকে তরবারি ছাড়া আর কিছুই দিব না।”
(৫) শরীয়াহ বিরোধী কোন চুক্তি করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপঃ
ক) এমন চুক্তি যার কারণে কাফিরদেরকে দুটি পবিত্র মসজিদের (সমগ্র আরব ভূমি) ভূমিতে বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়। কারণ সহীহ হাদিসে এসেছে, রসূল ﷺ বলেছেনঃ “সমস্ত ইহুদী এবং নাসারাদেরকে জাযিরাতুল আরব (সমগ্র আরব ভূমি) থেকে বের করে দাও।”
খ) মুসলিম মহিলাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠানোঃ “…যদি তারা সত্যিকার ঈমানদার হয় তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবেনা, তারা কাফিরদের জন্য হালাল নয় (স্ত্রী হিসেবে) এবং কাফিররাও তাদের জন্য হালাল নয় (স্বামী হিসেবে)…।”
মুসলিম পুরুষদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ফুক্বাহাগণের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। কিছু আলিম হুদায়বিয়ার সন্ধির উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন যে উহা জায়েয কিন্তু বাকী অধিকাংশ আলিমগণ বলেন যে হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনায় মুসলিমদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠানোর অনুমতি ছিল রসূল ﷺ-এর জন্য ‘খাস’, কারণ তিনি ﷺ জানতেন যে, আল্লাহ্ ঐ মুসলিমদের জন্য একটি পথ বের করে দিবেন। ইহাই অধিকাংশের মত। বারা ইবনু আজিব বলেছেনঃ “রসূল ﷺ হুদায়বিয়ার দিন কাফিরদের সাথে নিম্নের চুক্তিতে আবদ্ধ হলেনঃ
১. রসূল ﷺ-এর নিকট থেকে যে ব্যক্তি কাফিরদের নিকট চলে যাবে তাকে ফেরত দেয়া হবে না।
২. যে ব্যক্তি তাদের (কাফিরদের) নিকট থেকে চলে আসবে তাকে ফেরত দিতে হবে। রসূল ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের নিকট থেকে তাদের নিকট চলে যাবে আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন।”
সহীহ মুসলিমের রিওয়ায়েতে অতিরিক্ত এসেছেঃ “…যে ব্যক্তি ওদেরকে (কাফিরদের) পরিত্যাগ করবে আল্লাহ্ তার জন্য পথ বের করে দেবেন।”
(৬) একইভাবে, এমন কোন চুক্তি করা জায়েয নয় যাতে মুসলিম ভূমিতে কাফিররা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রকাশ্যভাবে করতে পারে। উদাহরণস্বরূপঃ চার্চ নির্মাণ করা, মিশনারিদের প্রকাশ্যে ঘোরা-ফেরা। এই সবকিছুই মুসলিম এবং তাদের ঈমানের উপর ফিতনা তৈরি করবে, বিশেষ করে জাযিরাতুল আরবের মধ্যে।
সুতরাং ফিলিস্তিনে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যে চুক্তি করা হয়েছে তা শুরু থেকে বাতিল। যে কোন প্রকার সংশোধন জায়েয নয়। কিন্তু আফগানিস্তানে কিছু শর্তের অধীনে জায়েযঃ
১. সমগ্র মুসলিম ভূমি থেকে রাশিয়ান সৈন্যদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।
২. প্রত্যাহারের পর যদি আফগানিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তবে পরবর্তীতে কোন হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যেমনঃ রাজাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা অথবা এমন সংস্কৃতি চালু করা যাতে আফগানদের ঈমানকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়।
৩. অবশ্যই শর্তহীন ভাবে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ানদের অবশ্যই মুজাহিদীনদের ব্যাপারে আস্থা থাকতে হবে যে, তারা চুক্তির শর্ত সমূহ মেনে চলবেঃ
وَإِنْ جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
“তাহারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে তবে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকিবে এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভর করিবে; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
আস-সুদ্দী (রহিমাহুল্লাহ্) এবং ইবনু জায়িদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “তারা (কাফিররা) যদি চুক্তির আহবান করে তবে সাড়া দিবে।” ইবনু হাজার আল-হাইসামী (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেনঃ “মাত্র একটি হারাম শর্তের কারণে সমগ্র চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। যেমনঃ এমন কোন শর্ত যাতে বন্দীদের মুক্ত করতে বাধা দেয়, দখলকৃত মুসলিম ভূমি থেকে শত্রু সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধা দেয়, কোন মুসলিম বন্দী মুক্ত হয়ে চলে আসলে তাকে ফেরত পাঠানো, কাফিরদেরকে হিজাযে (সমগ্র আরব ভূমি) বসবাস করতে দেয়া, আমাদের ভূমিতে মদকে প্রতিষ্ঠিত করা, তাদের নিকট থেকে যে মুসলিম আমাদের নিকট চলে আসে তাকে ফেরত দেয়া।”
মুজাহিদীনদেরকেও অবশ্যই রাশিয়ানদের ব্যাপারে আস্থা থাকতে হবে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে চুক্তির জন্য আহবান জানাবে এবং ধোঁকা দেবে না। যারা শুধু শান্তির মধ্যে থাকতে চায় অথবা মাঝামাঝি অবস্থায় থাকতে চায় তারা জিহাদের লক্ষ্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, যা হচ্ছে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব কখনও এই চুক্তি মেনে নেবে না উপরন্তু তারা বাধা দিবে এবং বিরোধিতা করবে। এই লোকেরা জিহাদের মূল লক্ষ্য বুঝতে ব্যর্থ হয় এবং তাদের পরিষ্কার ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। অধিকন্তু এ সমস্ত লোকদের জিহাদে অংশ গ্রহণ করা অথবা নেতৃত্ব দেয়া জায়েয নয়।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন,
فَإِنْ رَجَعَكَ اللَّهُ إِلَى طَائِفَةٍ مِنْهُمْ فَاسْتَأْذَنُوكَ لِلْخُرُوجِ فَقُلْ لَنْ تَخْرُجُوا مَعِيَ أَبَدًا وَلَنْ تُقَاتِلُوا مَعِيَ عَدُوًّا إِنَّكُمْ رَضِيتُمْ بِالْقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٍ فَاقْعُدُوا مَعَ الْخَالِفِينَ
“যদি আল্লাহ্ তা’আলা (এ অভিযানেরপর) তোমাকে এদের কোন একটি দলের কাছে ফেরত নিয়ে আসেন এবং তারা যদি তোমারকাছে (পুনরায় কোন যুদ্ধে যাবার) অনুমতি চায়, (তাহলে) তুমি বলো (না) কখনোতোমরা আমার সাথে (আর কোন অভিযানে) বের হবে না, তোমরা আমার সাথী হয়ে আর কখনোশত্রুর সাথে লড়বে না; কেননা তোমরা আগের বার (যুদ্ধের বদলে) পেছনে বসে থাকাপছন্দ করেছিলে, (আজ যাও) যারা পেছনে থেকে গেছে তাদের সাথে তোমরাও (পেছনে)বসে থাকো।”
আল-কুরতুবী বলেছেনঃ “ইহা ইঙ্গিত দেয় যে, নির্বোধদেরকে জিহাদে অন্তর্ভূক্ত করা জায়েয নয়। অধিকাংশ ফুক্বাহাগণ বলেছেন জিহাদে অহংকারী, নিরাশাবাদী, সন্দিগ্ধ, কাপুরুষ ব্যক্তিদেরকে সেনা বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করা জায়েয নয়।”
আরও পড়ুন
১৪ তম পর্ব --------------------------------------------------------------------------------------------- শেষ পর্ব
Comment