আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখআইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৮ম পর্ব
===================
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখআইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৮ম পর্ব
===================
০৩. তাদেরকে ঘনিষ্ঠ বানানো এবং মুসলমানদের গোপন তথ্য ফাঁস করা থেকে নিষেধাজ্ঞা:
মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ ﴿آلعمران: ١١٨﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোনো ক্রটি করে না; তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখ থেকেই প্রকাশিত হয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরও অনেক বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দেওয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।” (সূরাআলে-ইমরান: ১১৮)
আল্লামা কুরতুবী রহ. বলেন, البطانة শব্দটি মাসদার। একবচন ও বহুবচন দু’টোর জন্য ব্যবহৃত হয়। অর্থ হলো, মানুষের এমন সব ঘনিষ্ঠজন; যারা তার কথা গোপন রাখে। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে কাফের, ইয়াহুদী ও প্রবৃত্তিপূজারিদেরকে এমন অন্তরঙ্গ বন্ধু ও অনুপ্রবেশকারী বানানো থেকে নিষেধ করেছেন, যাদেরকে পরামর্শে শরীক করা হয়, নিজেদের ধন-সম্পদ তাদের নিকট গচ্ছিত রাখা হয়। বলা হয়, যে ব্যক্তি তোমার দ্বীন ও নীতিবিরোধী তার সাথে কোনো কথা ভাগাভাগি করতে নেই। কবি বলেন-
عن المرء لاتسأل وسل عن قرينه فكل قرين بالمقارن يقتدى
‘ব্যক্তি সম্পর্কে নয়; বরং তার বন্ধু সম্পর্কে শোধাও।
প্রত্যেক বন্ধু তার বন্ধুরই অনুগামী হয়।’
সুনানে আবু দাউদে আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلْ.
“মানুষ তার বন্ধুর নীতির উপর থাকে। সুতরাং দেখ, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।” (সুনানেআবুদাউদ, হাদীসনং-৪৮৩৫)
ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- اعْتَبِرُوا النَّاسَ بِإِخْوَانِهِمْ“মানুষকে তার বন্ধু দেখে মাপ।” এরপরে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে বলার কারণ আল্লাহ তা‘আলা এভাবে বর্ণনা করছেন, لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا “তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোনো ত্রুটি করবে না।” অর্থাৎ তোমাদেরকে ফাসাদে না ফেলে ছাড়বে না। তারা বাহ্যত যদিও তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে, তোমাদেরকে ধোঁকা-প্রতারণায় ফেলতে চেষ্টার কমতি করবে না। وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ তোমরা কষ্টে থাক; তাতেই তাদের আনন্দ। এটি মাসদারিয়্যাহ। অর্থাৎ, তারা তোমাদের কষ্ট চায়। যা তোমাদের কষ্ট দেয়। আর العنت অর্থ কষ্ট।” (তাফসীরে কুরতুবী, ৪/১৭৮-১৮১)
০৪. গুরুত্বপূর্ণ পদে কাফেরদেরকে বসানো থেকে নিষেধাজ্ঞা:
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-
فروى الإمام أحمد بإسناد صحيح عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه قال: قلت لعمر رضي الله عنه: إن لي كاتبا نصرانياً ، قال: "مالك قاتلك الله، أما سمعت الله يقول: { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصارٰى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ} ألا اتخذت حنيفاً" قال: قلت يا أمير المؤمنين لي كتابته وله دينه، قال: "لا أكرمهم إذ أهانهم الله، ولا أعزهم إذ أذلهم الله، ولا أدنيهم إذ أقصاهم الله"
‘ইমাম আহমাদ রহ. বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেন, আবু মুসা আশআরী রাযি. বলেন, “আমি উমর রাযি.কে বললাম, আমার একজন খ্রিস্টান কেরাণী আছে। উমর রাযি. বললেন, আল্লাহ তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিন। কেন? আল্লাহ তা‘আলা কি কুরআন মাজীদে বলেননি?-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصارٰى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
“হে মু’মিনগণ, তোমরা ইয়াহুদী-খ্রিস্টানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না। তারা পরস্পর বন্ধু।” তবুও তুমি কি তাকে বন্ধু বানিয়েছ? আমি বললাম, আমীরুল মুমিনীন! তার লেখালেখি আমার জন্য আর তার ধর্ম তার জন্য। তিনি বললেন, আল্লাহ যখন তাদেরকে অপমানিত করেছেন, আমি তাদেরকে সম্মান দেব না। আল্লাহ যখন তাদেরকে লাঞ্ছিত করেছেন, আমি তাদেরকে মর্যাদা দেব না। আল্লাহ যখন তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন, আমি তাদেরকে কাছে টানব না।” (ইকতিজাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, ১/৫০)
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন-
وعن عمر رضي الله عنه قال: "لا تستعملوا أهل الكتاب فإنهم يستحلون الرشا، واستعينوا على أموركم وعلى رعيتكم بالذين يخشون الله تعالى" ، وقيل لعمر رضي الله عنه: إن ههنا رجلا من نصارى الحيرة لا أحد أكتب منه ولا أخط بقلم، أفلا يكتب عنك؟ فقال: "لا آخذ بطانة من دون المؤمنين". فلا يجوز استكتاب أهل الذمة ولا غير ذلك من تصرفاتهم في البيع والشراء والاستنابة إليهم.
قلت: وقد انقلبت الأحوال في هذه الأزمان باتخاذ أهل الكتاب كتبة وأمناء، وتسودوا بذلك عند الجهلة الأغبياء من الولاة والأمراء.
قلت: وقد انقلبت الأحوال في هذه الأزمان باتخاذ أهل الكتاب كتبة وأمناء، وتسودوا بذلك عند الجهلة الأغبياء من الولاة والأمراء.
“উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো আহলে কিতাবকে (ইয়াহুদী-নাসারা) সরকারি পদে বসাবে না। কারণ, তারা ঘুষকে বৈধ মনে করে। তোমরা তাদেরকে নিজেদের এবং জনকল্যাণমুখী কাজে বসাও, যারা আল্লাহকে ভয় করে। উমর রাযি.কে বলা হলো, এখানে হীরার জনৈক খ্রিস্টান আছে। সে লেখালেখি ও কলম চালনায় বেশ পারঙ্গম। সে কি আপনার লেখার কাজ করতে পারে না? তিনি বললেন, আমি কোনো অমুসলিমকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করব না। সুতরাং জিম্মিকে কেরাণী পদে নিয়োগ দেওয়া কিংবা ব্যবসায়ের পরিচালক ও অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া জায়েয নেই।
আমি বলি, এ যুগে অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। আহলে কিতাবকে রেজিস্টার ও আমানতদার বানানো হচ্ছে। এ কারণে একদল মূর্খ গবেটের নিকট তারা নেতৃত্বদানকারী ও অভিভাবকে পরিণত হচ্ছে।” (তাফসীরে কুরতুবী, ৪/১৭৯)
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, জিম্মিকে প্রশাসনিক বা রেজিস্টারি দায়িত্বে রাখা যাবে না। কারণ, তাতে সমস্যা হতে পারে অথবা সমস্যার পথ তরান্বিত হতে পারে। আবু তালিবের একটি বর্ণনায় জানা যায়, ইমাম আহমাদ রহ. কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, খারাজ উসুল করার দায়িত্বে কি বসানো যাবে? তিনি বললেন, না। কোনো ব্যাপারেই তাদের মদদ নেওয়া হবে না। তাদের কেউ যদি কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পায়, তার চুক্তি কি ভেঙে যাবে? যার কর্মকাণ্ডে মুসলমানরা কষ্ট পায় বা যে কোনো ধরনের দুর্নীতি করে তাকে দায়িত্ব দেওয়া জায়েয নেই। তাহলে অন্যদেরকে তো আরও অধিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া জায়েয হবে না। কারণ, আবু বকর রাযি. অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তিনি কোনো মুরতাদকে সরকারি পদে নিয়োগ দেবেন না; যদিও তারা ইসলামে ফিরে আসুক। কারণ, তাদের দ্বীনদারী নিয়ে আশঙ্কা আছে।” (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, আল-ইখতিয়ারাতুল ইলমিয়্যাহ, কিতাবুল জিহাদ, ৪/৬০৭)
Comment