বন্দি মুক্তি: একটি ভুলে যাওয়া ফরজ!
জালিমের কারাগার ভরে যাচ্ছে দেশের উলামায়ে কেরামদের দ্বারা। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে একের পর বরেণ্য আলেমদের কারাগারে পাঠাচ্ছে দেশের জালিম সরকার। সম্মানিত আলেমদের অসহায়ত্ব দেখার মত আজ আর কেউ নেই! কতটা অপমানের সাথেই না তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে!! গ্রেফতারের পর কী অমানবিক আচরণই না তাদের সাথে করা হচ্ছে! জনমনে ঘৃণা ও প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে! আলেমদের প্রতি বাড়ছে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা! দ্বীন দরদী প্রতিটি হৃদয়েই আজ শোকের ছায়া বিরাজমান। জালিম অধ্যুষিত এই ভূমির প্রতিটি ধূলিকণাও আজ ব্যাথায় মুহ্যমান! সবকিছুকে উপেক্ষা করে জালিম সরকার নিজের পোষা গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে শ্রদ্ধেয় আলেমদের উপর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। আলেমদের এই কঠিন মুহূর্তে আমরা যেনো নিজেদের দায়িত্ব ভুলে না যাই।
যুগের একটি তিক্ত বাস্তবতা হলো, সুন্নাত ও মুস্তাহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে করতে আমরা ভুলে গেছি শরীয়তের অনেক ফরজ বিধানও। এক যুগেরও বেশি সময় মাদরাসায় পড়াশোনা করার পরেও অনেক ফরজের ইলমও আমাদের অর্জিত হয় না।তেমনি একটি ভুলে যাওয়া ফরজ হলো, মুসলিম বন্দিকে জালিমের কারাগার থেকে মুক্ত করা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইরশাদ করেন:
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلْوِلْدَٰنِ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلظَّالِمِ أَهْلُهَا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا
অর্থ, আর তোমাদের হলোটা কী, তোমরা যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছো না! অথচ দুর্বল নারী-পুরুষ ও শিশুরা চিৎকার করে করে বলছে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে অত্যাচারীর এ নগর থেকে নিষ্কৃতি দিন,এবং স্বীয় সন্নিধান থেকে আমাদের জন্য পৃষ্ঠপোষক এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী প্রেরণ করুন! সূরা নিসা, আয়াত নং-৭৫,
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি রা: বলেন:
قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿وَما لَكُمْ لَا تُقاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ﴾ حَضٌّ عَلَى الْجِهَادِ. وَهُوَ يَتَضَمَّنُ تَخْلِيصَ الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنْ أَيْدِي الْكَفَرَةِ الْمُشْرِكِينَ الَّذِينَ يَسُومُونَهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ، وَيَفْتِنُونَهُمْ عَنِ الدِّينِ، فَأَوْجَبَ تَعَالَى الْجِهَادَ لِإِعْلَاءِ كَلِمَتِهِ وَإِظْهَارِ دِينِهِ وَاسْتِنْقَاذِ الْمُؤْمِنِينَ الضُّعَفَاءِ مِنْ عِبَادِهِ، وَإِنْ كَانَ فِي ذَلِكَ تَلَفُ النُّفُوسِ. وَتَخْلِيصُ الْأُسَارَى وَاجِبٌ عَلَى جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ إِمَّا بِالْقِتَالِ وَإِمَّا بِالْأَمْوَالِ، وَذَلِكَ أَوْجَبُ لِكَوْنِهَا دُونَ النُّفُوسِ إِذْ هِيَ أَهْوَنُ مِنْهَا. قَالَ مَالِكٌ: وَاجِبٌ عَلَى النَّاسِ أَنْ يَفْدُوا الْأُسَارَى بِجَمِيعِ أَمْوَالِهِمْ. وَهَذَا لَا خِلَافَ فِيهِ، لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ (فُكُّوا الْعَانِيَ) و كذلك قالوا: عليهم أن يواسوهم فإن المواساة دون المفاداة)
অর্থ, উক্ত আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করছেন। কাফের-মুশরিকদের অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাসরত সহায়-সম্বলহীন দুর্বল মুসলমানদেরকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করার বিধানটিও রয়েছে উক্ত আয়াতে। যারা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিয়ে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা জিহাদকে ফরজ করেছেন নিজের একত্ববাদের বাণীকে বুলন্দ করা ও নিজের মনোনীত দ্বীনকে বিশ্বের বুকে বিজয়ী করার জন্যে। সেই সাথে নিজের দুর্বল বান্দাদেরকে কাফের মুশরিকদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্যে। আল্লাহ তা'আলা জিহাদকে ফরজ করেছেন যদিও তাতে রয়েছে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা!! মুসলিম বন্দিদেরকে মুক্ত করা মুসলমানদের উপর একটি ফরজ বিধান। সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে হোক, বা অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে হোক! তবে অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে মুক্ত করা অগ্রাধিকার পাবে। কেননা, সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে মুক্ত করা সশস্ত্র যুদ্ধের চেয়ে তুলনামূলক সহজ। ইমাম মালেক রাঃ বলেন, প্রয়োজনে সমস্ত মাল খরচ করে হলেও মুসলিম বন্দিদের মুক্ত করা স্বাধীন মুসলমানদের উপর ফরজ।
এটি এমন এক বিধান যাতে কোনো মতবিরোধ নেই।
কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন: (فُكُّوا الْعَانِيَ) অর্থাৎ বন্দিকে মুক্ত করো!!
এমনিভাবে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন: স্বাধীন মুসলমানদের উপর বন্দিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করাও আবশ্যক। কেননা, সহমর্মিতা প্রদর্শন হলো বন্দিমুক্তির দ্বিতীয় স্তর।(তাফসীরে কুরতুবী-৫/২৫৭,)
এমনিভাবে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে:
عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه أنه قال : ( فكوا العاني ـ يعني الأسير ـ و أطعموا الجائع و عودوا المريض ) .
অর্থ, হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা বন্দিকে মুক্ত করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করো, এবং অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-শুশ্রূষা করো। (সহীহ বুখারী, ৩০৪৬,)
উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় বুখারীর বিখ্যাত ব্যখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাঃ বলেন:
قال ابن بطال : فكاك الأسير و اجب على الكفاية ، و به قال الجمهور ، و قال إسحاق بن راهويه : من بيت المال ، و روي عن مالك أيضاً ) .
অর্থ, ইবনে বাত্তাল রাঃ বলেছেন: মুসলিম বন্দিকে মুক্ত করা ফরজে কিফায়া। এটিই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মাজহাব। ইসহাক ইবনে রাহিওয়াহ বলেন: তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে বাইতুল মাল থেকে। ইমাম মালিক রাঃ থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে। (ফাতহুল বারী- ৬/১৬৭,)
হযরত আবু জুহাইফাহ রাঃ বলেন:
قُلتُ لِعَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عنْه: هلْ عِنْدَكُمْ شيءٌ مِنَ الوَحْيِ إلّا ما في كِتابِ اللَّهِ؟ قالَ: لا والذي فَلَقَ الحَبَّةَ، وبَرَأَ النَّسَمَةَ، ما أعْلَمُهُ إلّا فَهْمًا يُعْطِيهِ اللَّهُ رَجُلًا في القُرْآنِ، وما في هذِه الصَّحِيفَةِ، قُلتُ: وما في الصَّحِيفَةِ؟ قالَ: العَقْلُ، وفَكاكُ الأسِيرِ، وأَنْ لا يُقْتَلَ مُسْلِمٌ بكافِرٍ.
البخاري (ت ٢٥٦)، صحيح البخاري ٣٠٤٧ • [صحيح] •
অর্থ, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্*র কুরআনে যা কিছু আছে তা ব্যতীত আপনাদের নিকট ওয়াহীর কোন কিছু আছে কি? তিনি বললেন, না। সেই আল্লাহ তা‘আলার কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ণ করেছেন এবং প্রাণীকুলকে সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ্* কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করেছেন এবং এ সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না। আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী রয়েছে? তিনি বললেন, ‘দীয়াত ও বন্দীমুক্তির বিধান, এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয়।’(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩০৪৭)
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাতে বর্ণিত আছে, হযরত উমর ফারুক রাঃ বলতেন:
"لأن أستنقذَ رجلا من المسلمين من أيدي المشركين أحبُّ إليّ من جزيرة العرب".مصنف ابن ابى شيبة
অর্থ, মুশরিকদের হাত থেকে একজন মুসলিমকেও মুক্ত করা আমার নিকট সমগ্র জাযিরাতুল আরবের ক্ষমতা লাভের চেয়েও বেশি পছন্দনীয়।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাঃ বলেন:
"إذا سُبيتْ امرأةٌ في المشرق وجبَ على أهل المغرب فكُّ أسرها"؛
অর্থ, যদি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তেও একজন মুসলিম নারী কারারুদ্ধ হন তাহলে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সকল মুসলমানের উপর তাকে মুক্ত করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
সারকথা হলো, জুমহুর উলামায়ে কেরামের মত এটাই যে, যখন কোনো মুসলিম কারাগারে বন্দি হবে তখন তাকে মুক্ত করা বাকীদের উপর ফরজে কিফায়া হয়ে যাবে৷ যদি সকলের পক্ষ থেকে কেউ একজন এই দায়িত্ব পালন করে তাহলে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে৷ কিন্তু কেউই যদি এই দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সকলেই ফরজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য গোনাহগার হবে।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোন!!
আল্লাহ তা'আলার একত্ববাদে বিশ্বাসী কোনো একজন মুসলিম শুধু মুসলিম হওয়ার অপরাধে কাফের মুরতাদদের কারাগারে বন্দিত্ব জীবন-যাপন করবে অথচ অন্য মুসলিমরা হাসি-খুশি, স্বাচ্ছন্দ্যে দিনাতিপাত করবে-ইসলামী শরীয়ত এটি কখনোই অনুমোদন করে না৷ বরং ইসলামের সুমহান শিক্ষা হলো, গোটা মুসলিম জাতি একটিমাত্র দেহের মত। যার একটি অঙ্গ কখনো ব্যাথায় আক্রান্ত হলে সে ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে গোটা দেহে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন।
সহীহ বুখারীতে হযরত নু'মান ইবনে বাশীর রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন:
" تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى ".
অর্থ, পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মু'মিনদের একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগাক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬০১১)
পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে কোনো একজন মুসলিম আক্রান্ত হলে সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীর অপর প্রান্তে বসবাসরত মুসলিমদের দেহেও। এটাই ইসলামের শিক্ষা। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস এর জ্বলন্ত সাক্ষী। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মত কঠিন হৃদয়ের অধিকারী একজন মানুষও একজন মাত্র মুসলিম বন্দিনীর আর্তনাদ সহ্য করতে পারেনি৷ সূদুর আরব থেকে তিন তিনবার বাহিনী পাঠিয়েছিলো ভারতবর্ষে। শুধুমাত্র একজন আরব নারীর আর্তনাদে সাড়া দিয়ে।
অথচ আজ হাজার হাজার মুসলিম ভাই বোন কাফের মুশরিকদের কারাগারে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছে। গুয়ান্তানামা এবং আবু গারীব কারাগারে মুসলিম বন্দিদের উপর চালানো হচ্ছে পৈশাচিক নির্যাতন! বাংলাদেশের কারাগারগুলোও নির্যাতনের দিক থেকে আবু গারীব আর গুয়ান্তামার চেয়ে কোনো দিক থেকে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের ভূমিতে যে বা যারাই ইসলামের পক্ষে কথা বলে তাদের জীবনেই নেমে আসে কারাগারের বন্দিজীবন। রিমান্ডের নামে তাদের উপর চলে পৈশাচিক নির্যাতন। সাম্প্রতিককালে দেড়শতাধিক শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন জালিমের কারাগারে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের মুক্তিকে ত্বরান্বিত করুন, আমীন!!
আলেমদের এই কঠিন মুহূর্তে আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো, কারাবন্দী আলেমদেরকে মুক্ত করার জন্য সম্ভাব্য সকল উপায়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
দ্বিতীয়ত, বন্দি আলেমদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া। কোনো আলেমের পরিবার পরিজন যদি আর্থিক দৈন্যতার ভুক্তভোগী হয়ে থাকে তাহলে তাদের প্রতি আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। গ্রেফতারকৃত যে সকল আলেমে দ্বীনের পরিবার শুধুমাত্র তাঁর উপার্জনের উপর ভর করে টিকেছিলো তাদের অবস্থা তো খুবই নাজুক! আমরা যখন হাসি-আনন্দে ডুবে থাকবো তখন যেনো তারা নীরবে অশ্রুপাত না করে।
আমাদের তৃতীয় দায়িত্ব হবে, সম্মানিত আলেমদের চরিত্রকে কলুষিত করতে তাদের উপর যে সকল মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর বাস্তবতা মানুষের সামনে তুলে ধরবো। যেনো আলেমদের ব্যাপারে সাধারণ দ্বীনদার মানুষের অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি না হয়।নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের সামনে আলেমদের মর্যাদা তুলে ধরবো।
ইনশাআল্লাহ, আলেমদের এ কুরবানী বৃথা যাবে না।
যে ভূমিতে উম্মাহর উলামায়ে কেরাম দ্বীনের জন্য এমন ত্যাগ ও কুরবানি দিয়ে যাচ্ছেন অচিরেই সে ভূমিতে তাওহীদের কালিমা খচিত পতাকা পতপত করে উড়বে, ইনশাআল্লাহ!! সকল জালিম ও তাদের তাবেদার গোলামরা অচিরেই নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই তাগুত ও তার প্রশাসন দেশের উলাম-ত্বালাবা ও জনগণের উপর যে জুলুম করে আসছে তার কোনোটিই আমরা ভুলিনি,ভুলবোও না! তাদের পাওনা তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে তবেই আমরা ক্ষান্ত হবো ইনশাআল্লাহ!
নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন ক্বারীব....
জালিমের কারাগার ভরে যাচ্ছে দেশের উলামায়ে কেরামদের দ্বারা। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে একের পর বরেণ্য আলেমদের কারাগারে পাঠাচ্ছে দেশের জালিম সরকার। সম্মানিত আলেমদের অসহায়ত্ব দেখার মত আজ আর কেউ নেই! কতটা অপমানের সাথেই না তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে!! গ্রেফতারের পর কী অমানবিক আচরণই না তাদের সাথে করা হচ্ছে! জনমনে ঘৃণা ও প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে! আলেমদের প্রতি বাড়ছে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা! দ্বীন দরদী প্রতিটি হৃদয়েই আজ শোকের ছায়া বিরাজমান। জালিম অধ্যুষিত এই ভূমির প্রতিটি ধূলিকণাও আজ ব্যাথায় মুহ্যমান! সবকিছুকে উপেক্ষা করে জালিম সরকার নিজের পোষা গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে শ্রদ্ধেয় আলেমদের উপর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। আলেমদের এই কঠিন মুহূর্তে আমরা যেনো নিজেদের দায়িত্ব ভুলে না যাই।
যুগের একটি তিক্ত বাস্তবতা হলো, সুন্নাত ও মুস্তাহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে করতে আমরা ভুলে গেছি শরীয়তের অনেক ফরজ বিধানও। এক যুগেরও বেশি সময় মাদরাসায় পড়াশোনা করার পরেও অনেক ফরজের ইলমও আমাদের অর্জিত হয় না।তেমনি একটি ভুলে যাওয়া ফরজ হলো, মুসলিম বন্দিকে জালিমের কারাগার থেকে মুক্ত করা।
জালিমের কারাগার থেকে মুসলিম বন্দিদের মুক্ত করা নিঃসন্দেহে একটি ফরজ কাজ
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইরশাদ করেন:
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلْوِلْدَٰنِ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلظَّالِمِ أَهْلُهَا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا
অর্থ, আর তোমাদের হলোটা কী, তোমরা যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছো না! অথচ দুর্বল নারী-পুরুষ ও শিশুরা চিৎকার করে করে বলছে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে অত্যাচারীর এ নগর থেকে নিষ্কৃতি দিন,এবং স্বীয় সন্নিধান থেকে আমাদের জন্য পৃষ্ঠপোষক এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী প্রেরণ করুন! সূরা নিসা, আয়াত নং-৭৫,
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি রা: বলেন:
قَوْلُهُ تَعَالَى: ﴿وَما لَكُمْ لَا تُقاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ﴾ حَضٌّ عَلَى الْجِهَادِ. وَهُوَ يَتَضَمَّنُ تَخْلِيصَ الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنْ أَيْدِي الْكَفَرَةِ الْمُشْرِكِينَ الَّذِينَ يَسُومُونَهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ، وَيَفْتِنُونَهُمْ عَنِ الدِّينِ، فَأَوْجَبَ تَعَالَى الْجِهَادَ لِإِعْلَاءِ كَلِمَتِهِ وَإِظْهَارِ دِينِهِ وَاسْتِنْقَاذِ الْمُؤْمِنِينَ الضُّعَفَاءِ مِنْ عِبَادِهِ، وَإِنْ كَانَ فِي ذَلِكَ تَلَفُ النُّفُوسِ. وَتَخْلِيصُ الْأُسَارَى وَاجِبٌ عَلَى جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ إِمَّا بِالْقِتَالِ وَإِمَّا بِالْأَمْوَالِ، وَذَلِكَ أَوْجَبُ لِكَوْنِهَا دُونَ النُّفُوسِ إِذْ هِيَ أَهْوَنُ مِنْهَا. قَالَ مَالِكٌ: وَاجِبٌ عَلَى النَّاسِ أَنْ يَفْدُوا الْأُسَارَى بِجَمِيعِ أَمْوَالِهِمْ. وَهَذَا لَا خِلَافَ فِيهِ، لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ (فُكُّوا الْعَانِيَ) و كذلك قالوا: عليهم أن يواسوهم فإن المواساة دون المفاداة)
অর্থ, উক্ত আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করছেন। কাফের-মুশরিকদের অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাসরত সহায়-সম্বলহীন দুর্বল মুসলমানদেরকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করার বিধানটিও রয়েছে উক্ত আয়াতে। যারা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিয়ে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা জিহাদকে ফরজ করেছেন নিজের একত্ববাদের বাণীকে বুলন্দ করা ও নিজের মনোনীত দ্বীনকে বিশ্বের বুকে বিজয়ী করার জন্যে। সেই সাথে নিজের দুর্বল বান্দাদেরকে কাফের মুশরিকদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্যে। আল্লাহ তা'আলা জিহাদকে ফরজ করেছেন যদিও তাতে রয়েছে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা!! মুসলিম বন্দিদেরকে মুক্ত করা মুসলমানদের উপর একটি ফরজ বিধান। সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে হোক, বা অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে হোক! তবে অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে মুক্ত করা অগ্রাধিকার পাবে। কেননা, সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে মুক্ত করা সশস্ত্র যুদ্ধের চেয়ে তুলনামূলক সহজ। ইমাম মালেক রাঃ বলেন, প্রয়োজনে সমস্ত মাল খরচ করে হলেও মুসলিম বন্দিদের মুক্ত করা স্বাধীন মুসলমানদের উপর ফরজ।
এটি এমন এক বিধান যাতে কোনো মতবিরোধ নেই।
কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন: (فُكُّوا الْعَانِيَ) অর্থাৎ বন্দিকে মুক্ত করো!!
এমনিভাবে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন: স্বাধীন মুসলমানদের উপর বন্দিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করাও আবশ্যক। কেননা, সহমর্মিতা প্রদর্শন হলো বন্দিমুক্তির দ্বিতীয় স্তর।(তাফসীরে কুরতুবী-৫/২৫৭,)
এমনিভাবে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে:
عن أبي موسى الأشعري رضي الله عنه أنه قال : ( فكوا العاني ـ يعني الأسير ـ و أطعموا الجائع و عودوا المريض ) .
অর্থ, হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা বন্দিকে মুক্ত করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করো, এবং অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-শুশ্রূষা করো। (সহীহ বুখারী, ৩০৪৬,)
উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় বুখারীর বিখ্যাত ব্যখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাঃ বলেন:
قال ابن بطال : فكاك الأسير و اجب على الكفاية ، و به قال الجمهور ، و قال إسحاق بن راهويه : من بيت المال ، و روي عن مالك أيضاً ) .
অর্থ, ইবনে বাত্তাল রাঃ বলেছেন: মুসলিম বন্দিকে মুক্ত করা ফরজে কিফায়া। এটিই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মাজহাব। ইসহাক ইবনে রাহিওয়াহ বলেন: তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে বাইতুল মাল থেকে। ইমাম মালিক রাঃ থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে। (ফাতহুল বারী- ৬/১৬৭,)
হযরত আবু জুহাইফাহ রাঃ বলেন:
قُلتُ لِعَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عنْه: هلْ عِنْدَكُمْ شيءٌ مِنَ الوَحْيِ إلّا ما في كِتابِ اللَّهِ؟ قالَ: لا والذي فَلَقَ الحَبَّةَ، وبَرَأَ النَّسَمَةَ، ما أعْلَمُهُ إلّا فَهْمًا يُعْطِيهِ اللَّهُ رَجُلًا في القُرْآنِ، وما في هذِه الصَّحِيفَةِ، قُلتُ: وما في الصَّحِيفَةِ؟ قالَ: العَقْلُ، وفَكاكُ الأسِيرِ، وأَنْ لا يُقْتَلَ مُسْلِمٌ بكافِرٍ.
البخاري (ت ٢٥٦)، صحيح البخاري ٣٠٤٧ • [صحيح] •
অর্থ, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্*র কুরআনে যা কিছু আছে তা ব্যতীত আপনাদের নিকট ওয়াহীর কোন কিছু আছে কি? তিনি বললেন, না। সেই আল্লাহ তা‘আলার কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ণ করেছেন এবং প্রাণীকুলকে সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহ্* কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করেছেন এবং এ সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না। আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী রয়েছে? তিনি বললেন, ‘দীয়াত ও বন্দীমুক্তির বিধান, এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয়।’(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩০৪৭)
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাতে বর্ণিত আছে, হযরত উমর ফারুক রাঃ বলতেন:
"لأن أستنقذَ رجلا من المسلمين من أيدي المشركين أحبُّ إليّ من جزيرة العرب".مصنف ابن ابى شيبة
অর্থ, মুশরিকদের হাত থেকে একজন মুসলিমকেও মুক্ত করা আমার নিকট সমগ্র জাযিরাতুল আরবের ক্ষমতা লাভের চেয়েও বেশি পছন্দনীয়।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাঃ বলেন:
"إذا سُبيتْ امرأةٌ في المشرق وجبَ على أهل المغرب فكُّ أسرها"؛
অর্থ, যদি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তেও একজন মুসলিম নারী কারারুদ্ধ হন তাহলে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সকল মুসলমানের উপর তাকে মুক্ত করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
সারকথা হলো, জুমহুর উলামায়ে কেরামের মত এটাই যে, যখন কোনো মুসলিম কারাগারে বন্দি হবে তখন তাকে মুক্ত করা বাকীদের উপর ফরজে কিফায়া হয়ে যাবে৷ যদি সকলের পক্ষ থেকে কেউ একজন এই দায়িত্ব পালন করে তাহলে সকলেই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে৷ কিন্তু কেউই যদি এই দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সকলেই ফরজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য গোনাহগার হবে।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোন!!
আল্লাহ তা'আলার একত্ববাদে বিশ্বাসী কোনো একজন মুসলিম শুধু মুসলিম হওয়ার অপরাধে কাফের মুরতাদদের কারাগারে বন্দিত্ব জীবন-যাপন করবে অথচ অন্য মুসলিমরা হাসি-খুশি, স্বাচ্ছন্দ্যে দিনাতিপাত করবে-ইসলামী শরীয়ত এটি কখনোই অনুমোদন করে না৷ বরং ইসলামের সুমহান শিক্ষা হলো, গোটা মুসলিম জাতি একটিমাত্র দেহের মত। যার একটি অঙ্গ কখনো ব্যাথায় আক্রান্ত হলে সে ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে গোটা দেহে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন।
সহীহ বুখারীতে হযরত নু'মান ইবনে বাশীর রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন:
" تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى ".
অর্থ, পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মু'মিনদের একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগাক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬০১১)
পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে কোনো একজন মুসলিম আক্রান্ত হলে সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীর অপর প্রান্তে বসবাসরত মুসলিমদের দেহেও। এটাই ইসলামের শিক্ষা। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস এর জ্বলন্ত সাক্ষী। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মত কঠিন হৃদয়ের অধিকারী একজন মানুষও একজন মাত্র মুসলিম বন্দিনীর আর্তনাদ সহ্য করতে পারেনি৷ সূদুর আরব থেকে তিন তিনবার বাহিনী পাঠিয়েছিলো ভারতবর্ষে। শুধুমাত্র একজন আরব নারীর আর্তনাদে সাড়া দিয়ে।
অথচ আজ হাজার হাজার মুসলিম ভাই বোন কাফের মুশরিকদের কারাগারে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছে। গুয়ান্তানামা এবং আবু গারীব কারাগারে মুসলিম বন্দিদের উপর চালানো হচ্ছে পৈশাচিক নির্যাতন! বাংলাদেশের কারাগারগুলোও নির্যাতনের দিক থেকে আবু গারীব আর গুয়ান্তামার চেয়ে কোনো দিক থেকে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের ভূমিতে যে বা যারাই ইসলামের পক্ষে কথা বলে তাদের জীবনেই নেমে আসে কারাগারের বন্দিজীবন। রিমান্ডের নামে তাদের উপর চলে পৈশাচিক নির্যাতন। সাম্প্রতিককালে দেড়শতাধিক শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন জালিমের কারাগারে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের মুক্তিকে ত্বরান্বিত করুন, আমীন!!
আলেমদের এই কঠিন মুহূর্তে আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো, কারাবন্দী আলেমদেরকে মুক্ত করার জন্য সম্ভাব্য সকল উপায়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
দ্বিতীয়ত, বন্দি আলেমদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া। কোনো আলেমের পরিবার পরিজন যদি আর্থিক দৈন্যতার ভুক্তভোগী হয়ে থাকে তাহলে তাদের প্রতি আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। গ্রেফতারকৃত যে সকল আলেমে দ্বীনের পরিবার শুধুমাত্র তাঁর উপার্জনের উপর ভর করে টিকেছিলো তাদের অবস্থা তো খুবই নাজুক! আমরা যখন হাসি-আনন্দে ডুবে থাকবো তখন যেনো তারা নীরবে অশ্রুপাত না করে।
আমাদের তৃতীয় দায়িত্ব হবে, সম্মানিত আলেমদের চরিত্রকে কলুষিত করতে তাদের উপর যে সকল মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর বাস্তবতা মানুষের সামনে তুলে ধরবো। যেনো আলেমদের ব্যাপারে সাধারণ দ্বীনদার মানুষের অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি না হয়।নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের সামনে আলেমদের মর্যাদা তুলে ধরবো।
ইনশাআল্লাহ, আলেমদের এ কুরবানী বৃথা যাবে না।
যে ভূমিতে উম্মাহর উলামায়ে কেরাম দ্বীনের জন্য এমন ত্যাগ ও কুরবানি দিয়ে যাচ্ছেন অচিরেই সে ভূমিতে তাওহীদের কালিমা খচিত পতাকা পতপত করে উড়বে, ইনশাআল্লাহ!! সকল জালিম ও তাদের তাবেদার গোলামরা অচিরেই নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই তাগুত ও তার প্রশাসন দেশের উলাম-ত্বালাবা ও জনগণের উপর যে জুলুম করে আসছে তার কোনোটিই আমরা ভুলিনি,ভুলবোও না! তাদের পাওনা তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে তবেই আমরা ক্ষান্ত হবো ইনশাআল্লাহ!
নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন ক্বারীব....
Comment