শিক্ষা ব্যবস্থা || পর্ব-৩ || অষ্টম শ্রেণিতে ‘মানব ধর্ম’-এর নামে নাস্তিকতা পাঠদান
শিশু বয়সে বাচ্চাদের যা শেখানো হয়, তারা সেটাকেই সঠিক ও ধ্রুব সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শেখে। স্বাভাবিকভাবেই, বড় হয়েও তারা ঐ শিক্ষার অনুসারী হয়। এ কারণে মুসলিম ছেলেমেয়েদের ঈমানী চর্চা শিশুকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় – নিজ পরিবারে বা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে।
অথচ ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশ বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছেলেমেয়েদেরকে সরাসরি কুফ্রি বিষয়বস্তু পাঠদান করা হচ্ছে। শিক্ষাক্রমের উন্নয়নের নামে ইসলামী বিষয়বস্তুগুলো বাদ দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে হিন্দুয়ানী ও নাস্তিক্যবাদি বিষয়বস্তু।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের (সাহিত্য কণিকা) প্রথম কবিতাটি শুরু করা হয়েছে মুসলিম শিক্ষার্থীদের নাস্তিকতা শিক্ষা দানের মাধ্যমে। বইয়ের ৮০ পৃষ্ঠায় ‘মানব ধর্ম’ নামে কবিতাটি লিখেছে কুখ্যাত লালন শাহ্। সে নিজেই এই ‘মানব ধর্ম’ নামক নাস্তিক্যবাদী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ছিল বলে অনেকের মত।
লালন শাহ হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলেও, সে হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিল না। কারো কারো মতে লালন ছিল ওহেদানিয়াত নামক একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদের অনুসারী। ওহেদানিয়াতের মাঝে বৌদ্ধধর্ম এবং বৈষ্ণব ধর্মের সহজিয়া মতবাদ, সুফিবাদসহ আরও অনেক ধর্মীয় মতবাদ বিদ্যমান।
মূল বিষয় হলো, লালন শাহ নিজের মতবাদের উপর কিছু নারী-পুরুষকে নিয়ে একটি ঢেরা ঘরে তুলে। সেখানে তারা সামাজিক রীতিনীতি বিরুদ্ধ জীবন-যাপন করতে থাকে। মানুষ তার ধর্ম পরিচয় জানতে চাইলে এক সময় সে গানের মাধ্যমে নিজের পরিচয় তুলে ধরে একটি গান রচনা করে। আর এই গানটিকেই ‘মানব ধর্ম’ কবিতা হিসেবে আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করেছে সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠী।
এই গানে সে নিজেকে একজন মানব ধর্মের অনুসারী অর্থাৎ নাস্তিক্যবাদী হিসেবে উল্লেখ্য করেছে। যুক্তি হিসেবে সে দাবি করেছে যে, কেউ যদি তাসবিহ হাতে নেয় তাহলে তার পরিচয় হয় মুসলিম, আর কেউ যদি মালা গলায় পড়ে তাহলেই কি হিন্দু পরিচয় হয়? পানি গঙ্গায় গেলে হয় গঙ্গাজল আর গর্তে গেলে হয় কূপজল, দুইটি তো একই।
এ ধরনের কিছু খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে নিজের মতবাদ মানব ধর্মের গুণগান গেয়েছে সে। আর এমন একটি গানকেই কি না মুসলিম শিশুদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে নাস্তিক্যবাদী সরকার।
বইয়ের ৮১ পৃষ্ঠায় কবিতাটি পাঠের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, “এই কবিতা পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বুঝতে সক্ষম হবে যে, ধর্ম বা সম্প্রদায়গত পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়। তারা জাত-পাত বা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বা মিথ্যে গর্ব করা থেকে বিরত থাকবে।”
অর্থাৎ, এই কবিতার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী মুসলিম হিসেবে নিজের পরিচয় না দিয়ে বরং নিজেকে ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচয় প্রদান করবে। মুসলিমরা যে তাদের ধর্ম নিয়ে গর্ব করে, তাকে স্পষ্টভাবেই মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে। কতটা মারাত্মক কুফরি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এদেশের মুসলিম শিশুদের।
শুধু এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। ৮২ পৃষ্ঠায় কবিতাটির বহুনির্বাচনি প্রশ্নের ১নং প্রশ্ন করা হয়েছে, মানুষের কোন পরিচয়ে বড় হওয়া উচিত? এই প্রশ্নের চারটি বিকল্প উত্তর দেয়া আছে – (১) সামাজিক (২) ধর্মীয় (৩) মানবিক (৪) পেশাগত। কবিতাটির আলোকে এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হচ্ছে “মানবিক”। অর্থাৎ কখনোই ধর্মীয় পরিচয় দেয়া উচিৎ নয়!
নাস্তিক্যবাদী সরকার কূট-কৌশলে এ দেশের কোমলমতি মুসলিম শিশুদের নাস্তিক বানানোর জন্য লালনের গানকে শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করেছে। এমন কুফরি মতবাদ শুধু এটিই নয়, এমন অসংখ্য কুফুরি মতবাদ মুসলিম শিশুদের শিখানো হচ্ছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। দালাল সরকার চায় এ দেশের মানুষ যেন সবাই ইসলামকে ভুলে নাস্তিক, মুরতাদ হয়ে যায়। এটি তাদের এজেন্ডার অংশ। এ বিষয়ে আরেকটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ্।
মুসলিম শিশুদের নাস্তিক বানানোর জন্য আগামী বছর আরও ভয়ংকর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে দালাল সরকার। নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই কুফুরি আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে আপামর মুসলিম জনতাকে এই শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ধ্বংসাত্মক সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও জানতে আগের পর্বগুলো পড়ুন –
১। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার নেপথ্য কাহিনী – (১)-
https://alfirdaws.org/2020/11/19/44369/
২। নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবই: মুসলিমরাও ‘ঈশ্বরের সন্তান’-শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেয়া হচ্ছে?-
https://alfirdaws.org/2022/10/11/59874/
লিখেছেন : মাহমুদ উল্লাহ্
তথ্যসূত্র :
১। ফকির লালান শাহ্-
– https://tinyurl.com/yckjxycd
২। মানব ধর্ম-
– https://tinyurl.com/2hwduedu
শিশু বয়সে বাচ্চাদের যা শেখানো হয়, তারা সেটাকেই সঠিক ও ধ্রুব সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে শেখে। স্বাভাবিকভাবেই, বড় হয়েও তারা ঐ শিক্ষার অনুসারী হয়। এ কারণে মুসলিম ছেলেমেয়েদের ঈমানী চর্চা শিশুকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় – নিজ পরিবারে বা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে।
অথচ ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশ বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছেলেমেয়েদেরকে সরাসরি কুফ্রি বিষয়বস্তু পাঠদান করা হচ্ছে। শিক্ষাক্রমের উন্নয়নের নামে ইসলামী বিষয়বস্তুগুলো বাদ দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে হিন্দুয়ানী ও নাস্তিক্যবাদি বিষয়বস্তু।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের (সাহিত্য কণিকা) প্রথম কবিতাটি শুরু করা হয়েছে মুসলিম শিক্ষার্থীদের নাস্তিকতা শিক্ষা দানের মাধ্যমে। বইয়ের ৮০ পৃষ্ঠায় ‘মানব ধর্ম’ নামে কবিতাটি লিখেছে কুখ্যাত লালন শাহ্। সে নিজেই এই ‘মানব ধর্ম’ নামক নাস্তিক্যবাদী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ছিল বলে অনেকের মত।
লালন শাহ হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলেও, সে হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিল না। কারো কারো মতে লালন ছিল ওহেদানিয়াত নামক একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদের অনুসারী। ওহেদানিয়াতের মাঝে বৌদ্ধধর্ম এবং বৈষ্ণব ধর্মের সহজিয়া মতবাদ, সুফিবাদসহ আরও অনেক ধর্মীয় মতবাদ বিদ্যমান।
মূল বিষয় হলো, লালন শাহ নিজের মতবাদের উপর কিছু নারী-পুরুষকে নিয়ে একটি ঢেরা ঘরে তুলে। সেখানে তারা সামাজিক রীতিনীতি বিরুদ্ধ জীবন-যাপন করতে থাকে। মানুষ তার ধর্ম পরিচয় জানতে চাইলে এক সময় সে গানের মাধ্যমে নিজের পরিচয় তুলে ধরে একটি গান রচনা করে। আর এই গানটিকেই ‘মানব ধর্ম’ কবিতা হিসেবে আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করেছে সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠী।
এই গানে সে নিজেকে একজন মানব ধর্মের অনুসারী অর্থাৎ নাস্তিক্যবাদী হিসেবে উল্লেখ্য করেছে। যুক্তি হিসেবে সে দাবি করেছে যে, কেউ যদি তাসবিহ হাতে নেয় তাহলে তার পরিচয় হয় মুসলিম, আর কেউ যদি মালা গলায় পড়ে তাহলেই কি হিন্দু পরিচয় হয়? পানি গঙ্গায় গেলে হয় গঙ্গাজল আর গর্তে গেলে হয় কূপজল, দুইটি তো একই।
এ ধরনের কিছু খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে নিজের মতবাদ মানব ধর্মের গুণগান গেয়েছে সে। আর এমন একটি গানকেই কি না মুসলিম শিশুদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে নাস্তিক্যবাদী সরকার।
বইয়ের ৮১ পৃষ্ঠায় কবিতাটি পাঠের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, “এই কবিতা পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বুঝতে সক্ষম হবে যে, ধর্ম বা সম্প্রদায়গত পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়। তারা জাত-পাত বা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বা মিথ্যে গর্ব করা থেকে বিরত থাকবে।”
অর্থাৎ, এই কবিতার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী মুসলিম হিসেবে নিজের পরিচয় না দিয়ে বরং নিজেকে ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচয় প্রদান করবে। মুসলিমরা যে তাদের ধর্ম নিয়ে গর্ব করে, তাকে স্পষ্টভাবেই মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে। কতটা মারাত্মক কুফরি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এদেশের মুসলিম শিশুদের।
শুধু এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। ৮২ পৃষ্ঠায় কবিতাটির বহুনির্বাচনি প্রশ্নের ১নং প্রশ্ন করা হয়েছে, মানুষের কোন পরিচয়ে বড় হওয়া উচিত? এই প্রশ্নের চারটি বিকল্প উত্তর দেয়া আছে – (১) সামাজিক (২) ধর্মীয় (৩) মানবিক (৪) পেশাগত। কবিতাটির আলোকে এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হচ্ছে “মানবিক”। অর্থাৎ কখনোই ধর্মীয় পরিচয় দেয়া উচিৎ নয়!
নাস্তিক্যবাদী সরকার কূট-কৌশলে এ দেশের কোমলমতি মুসলিম শিশুদের নাস্তিক বানানোর জন্য লালনের গানকে শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করেছে। এমন কুফরি মতবাদ শুধু এটিই নয়, এমন অসংখ্য কুফুরি মতবাদ মুসলিম শিশুদের শিখানো হচ্ছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। দালাল সরকার চায় এ দেশের মানুষ যেন সবাই ইসলামকে ভুলে নাস্তিক, মুরতাদ হয়ে যায়। এটি তাদের এজেন্ডার অংশ। এ বিষয়ে আরেকটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ্।
মুসলিম শিশুদের নাস্তিক বানানোর জন্য আগামী বছর আরও ভয়ংকর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে দালাল সরকার। নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই কুফুরি আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে আপামর মুসলিম জনতাকে এই শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ধ্বংসাত্মক সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও জানতে আগের পর্বগুলো পড়ুন –
১। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার নেপথ্য কাহিনী – (১)-
https://alfirdaws.org/2020/11/19/44369/
২। নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবই: মুসলিমরাও ‘ঈশ্বরের সন্তান’-শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেয়া হচ্ছে?-
https://alfirdaws.org/2022/10/11/59874/
লিখেছেন : মাহমুদ উল্লাহ্
তথ্যসূত্র :
১। ফকির লালান শাহ্-
– https://tinyurl.com/yckjxycd
২। মানব ধর্ম-
– https://tinyurl.com/2hwduedu