আন নাসর মিডিয়ামিডিয়া পরিবেশিত
“‘মুসলিম উম্মাহর প্রতি ইমামের বার্তা
।।শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– প্রথম পর্ব
بسم الله الرحمن الرحيم
শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ:
“আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের প্রতি! আপনাদের সন্তানদের রক্ত তো আমাদেরই সন্তানদেরই রক্ত। আর আপনাদের রক্ত তো আমাদেরই রক্ত। রক্তের বিনিময়ে রক্ত ঝরানো হবে, আর ধ্বংসের বিনিময়ে ধ্বংস চালানো হবে। মহান আল্লাহকে সাক্ষী করে বলছি, আমরা আপনাদেরকে ভুলে যাবো না। যতদিন না সাহায্য আসে, অথবা আমরা সেই স্বাদ আস্বাদন করি যা আস্বাদন করেছিলেন হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু”।
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وصحبه ومن والاه
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ: আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, তার পরিবার পরিজনের ওপর, তার সাহাবীদের ওপর এবং তার পদাঙ্ক অনুসারী সকলের ওপর।
বিশ্বের সকল প্রান্তের মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
হামদ ও সালাতের পর…
ইমাম, মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদেনের শাহাদাতের পর প্রায় এগার বছর অতিক্রম হতে চলেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর জন্যে যথেষ্ট।
আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন তার দাওয়াত যেন নিজস্ব ‘ প্রাণশক্তি’ ধরে রেখে উত্তরোত্তর বিস্তৃত হতে থাকে এবং মানুষ বেশি বেশি তা গ্রহণ করতে থাকে। যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে ইসলামের ক্ষতিসাধনে মুসলিমদের শত্রুদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এই দাওয়াতের সাহায্যকারী যেন দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এ দাওয়াতের ব্যাপারে শত্রুদের অপপ্রচার, মিথ্যাচার, অপবাদ আরোপসহ সকল অপচেষ্টা অব্যাহত রাখা সত্ত্বেও এর গতি থেমে থাকেনি। এত রকমের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, অপবাদ, মিথ্যা অপপ্রচার সত্ত্বেও একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহে এই দাওয়াত আজও শত্রুর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে আছে। তাদের শিরক, নাস্তিকতা, ধর্মহীনতা, বিশৃঙ্খলা, অনৈতিকতা, লোভ-লালসা – সবকিছুর ধ্বংসের এক মহা ঘোষণা হয়ে আছে এই দাওয়াত।
এটি এমন দাওয়াত যেখানে শরিয়তকে ফয়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়ার কথা বলা হয়। এর বাইরে যত আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, যত সংবিধান ও সন্ধি চুক্তি রয়েছে, সবকিছু অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করার কথা বলা হয় এই দাওয়াতে।
এটি আগ্রাসন কবলিত মুসলিমদের ভূমিগুলো পুনরুদ্ধার করার দাওয়াত।
এটি মুসলিমদের জাতীয় সম্পদ অবৈধ দখলমুক্ত করার দাওয়াত।
এটি শাসকের স্বৈরাচার থেকে উম্মাহকে স্বাধীন করার দাওয়াত।
এটি মুসলিম উম্মাহকে এমন ক্ষমতা প্রদানের দাওয়াত – যেখানে উম্মাহ নিজেদের শাসকদেরকে নিজেরাই নির্বাচন করবে। তাদের কাছে কৈফিয়ত তলব করবে এবং চাইলে তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে।
এটি শত্রুর মোকাবেলায় সকল মুসলিমকে এক কাতারে দাঁড়ানোর দাওয়াত।
এটি মজলুম ও আর্ত-নিপীড়িতদেরকে সাহায্যের দাওয়াত; চাই সেই মজলুম গোষ্ঠী মুসলিম হোক কিংবা কাফের।
উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ এ দাওয়াত পেশ করার মাধ্যমে – কোন বিদায়াত করেননি কিংবা নব উদ্ভাবিত বিষয় আবিষ্কার করেননি। বরং তিনি ইসলামের বিধি-বিধান অনুসরণ করেছেন মাত্র। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর কিতাবে কারীমে ইরশাদ করেছেন—
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
“অর্থঃ তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে”। (সুরা আল-ইমরান ৩:১১০)
শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ’ র একটি ঘোষণা ছিল এমন –
“জিহাদ ঐ দিন থেকে ফরযে আইন হয়ে আছে যেদিন আন্দালুসের পতন হয়েছে।
আমাদের লক্ষ্য হলো, আফগানিস্তানকে স্বাধীন করা। জি হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদেরকে আফগানিস্তান স্বাধীন করতে হবে। কারণ এটা আমাদের দ্বীনের একটি অংশ এবং আমাদের কাঁধে চেপে থাকা দায়িত্ব। আবার বাইতুল মুকাদ্দাসও আমাদের স্বাধীন করতে হবে। আল–আকসাকে তাওহীদের ছায়াতলে এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ র কালিমার পতাকাতলে ফিরিয়ে আনতে হবে। …
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُم مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
“অর্থঃ হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন”। (সুরা আত-তাওবা ৯:123)
কিন্তু আমি যেমনটা বলছিলাম যে, আজ আমাদের হাত বাঁধা। শিকল দিয়ে আমাদের হাত গলার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই শিকল আবার আমাদের পায়ের সঙ্গে জড়ানো। আমাদেরকে শ্বাসরুদ্ধ করা হয়েছে। আমাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আমাদের নাড়ি চেপে ধরা হয়েছে। আমাদের হৃৎস্পন্দন পর্যন্ত গণনা করা হচ্ছে। এরপর আমরা আর কি করতে পারি?
জিহাদের সুযোগ ও ক্ষেত্র আমাদেরকে অবশ্যই খুঁজতে হবে। আন্তরিকভাবে খোঁজাখুঁজি করে আমরা রব্বুল আলামীনের কাছে নিজেদের অপারগতা পেশ করব। এখন আমরা নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে থাকবো, যেন ভূখণ্ডগুলো পবিত্র করার কাজে আমরা নিয়োজিত হতে পারি।
আফগানিস্তানের জিহাদ – ফিলিস্তিনের ইসলামী ইস্যুর ব্যাপারে অবহেলার কারণ – এমনটা যারা মনে করে, নিশ্চয়ই তারা ভুল ধারণাপোষণকারী ও গাফেল। তাদের জানা নেই, নেতৃত্ব কিভাবে পরিচালনা ও প্রস্তুত করতে হয়?! আন্দোলন কিভাবে দানা বাঁধে? কীভাবে একটি মূল শক্তি দাঁড় করাতে হয়, যাকে ঘিরে সুবিশাল ইসলামী বাহিনী সমবেত হবে এবং সে বাহিনী ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা ও অপবিত্রতা থেকে পৃথিবীকে পবিত্র করবে।
আমাদের অবস্থা হল – মানুষ আমাদের কাছে এসে বলে, আপনারা ফিলিস্তিনকে ছেড়ে দিয়েছেন এবং আফগানিস্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এটা ঠিক আমরা আফগানিস্তান নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমাদের ওপর ওয়াজিব ও আবশ্যক – আফগানিস্তানের মুজাহিদ মুসলিম জনগণকে সহায়তা দেয়া। আমাদের জন্য জরুরী আফগানিস্তানের ভূমিকে পবিত্র করা।
নিশ্চয়ই আফগানিস্তানই হলো ফিলিস্তিন, আবার ফিলিস্তিনই হলো আফগানিস্তান। নিশ্চয়ই দুঃখ ‘ কলহ’ তৈরি করে। কিন্তু আমরা চাইনা – আমাদের কাঁধে দায়িত্ব ঝুলে থেকে এই জিহাদের অঙ্গার নিভে যাক। আমরা চাই না – আল্লাহর দ্বীনের মর্যাদাবোধের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, দুর্বলদেরকে জুলুম থেকে উদ্ধার করার স্পৃহা, অভ্যন্তরীণ পরিমণ্ডলে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর প্রতিরক্ষার আগ্রহবোধ আমাদের ধমনী থেকে ঝিমিয়ে যাক।
আমরা চাই – আগ্রহ ও স্পৃহার এসব অঙ্গার জ্বলন্ত থাকুক। কারণ আমাদেরকে নিরবচ্ছিন্নভাবে জিহাদ চালিয়ে যেতেই হবে। আফগানিস্তানে, ফিলিস্তিনে, ফিলিপাইনে এবং অন্যান্য বিভিন্ন ভূখণ্ডে—যেখানে অত্যাচারী, পাপাচারী, স্বৈরাচারী শাসকরা জুলুম–অত্যাচারে সীমালঙ্ঘন চালিয়ে যাচ্ছে — সেখানে জিহাদই হল সময়ের দাবি ও ফরজ দায়িত্ব।
[ফিল জিহাদি ফিকহুন ওয়া ইজতিহাদ, শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ পৃষ্ঠা: ২৪১—২৪৪]
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ: উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ’ র অন্যতম বড় অবদান ছিল, তিনি শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ’ র এই উক্তিকে নিয়মিত কার্যক্রম, কার্যকরী পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনার দ্বারা নিরবচ্ছিন্ন দাওয়াতি ও জিহাদি হামলায় রূপান্তরিত করেছেন। এই প্রচেষ্টা সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছিল সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখের মোবারক সেই হামলার মাধ্যমে, যা ইতিহাসকে দু’ ভাগে বিভক্ত করেছে। আজও পর্যন্ত সেই হামলার কারণে আমেরিকা তার রক্তক্ষরণ সহ্য করছে। আজও তাদের বিলাপের সুর শোনা যায়।
শাইখের আরও একটি মহান অবদান হলো – মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তার প্রয়াস।
(মুসলমানদের ঐক্য গঠন এবং বিভক্তি, অনৈক্য ও গ্রুপিং নিরসনে তার প্রচেষ্টা)
তিনি বহুধা বিভক্তি, বিচ্ছিন্নতা, গ্রুপিং ইত্যাদি নির্মূলে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এ কারণেই ব্যাপক পরিসরে মুজাহিদিন ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে এবং বিশেষভাবে শাইখ উসামার দাওয়াতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাফেররা মুসলিমদের মাঝে ‘ দলাদলি ও গ্রুপিং’ সৃষ্টির পন্থা অবলম্বন করেছে।
তারা করেছে কল্যাণ, স্বার্থরক্ষা, বাস্তবতার বিবেচনা এবং বিশেষ ফায়দা নামক বিভিন্ন চটকদার দাবির মাধ্যমে। অথচ এগুলো দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনে না।
ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদেরকে শতধা বিভক্ত করার অপচেষ্টা এবং তাদের ঐক্য বিনষ্টের অপপ্রয়াস চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। বরং তারা আরও অগ্রসর হয়ে যে অনিষ্ট সৃষ্টি করেছে তা হলো – ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক্যবাদী, বিশ্বাসঘাতক, শত্রুদের তাবেদার শ্রেণী এবং মীরজাফর চরিত্রের লোকদের সঙ্গে ঐক্য গঠন করতে মুসলিমদের অনেককে বাধ্য করেছে। জাতীয়তা, দেশ প্রেম, মাতৃভূমির ভালোবাসা ইত্যাদির নামে ঐক্য গঠনের জন্য মুসলিমদের ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করেছে।
জাতি রাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধান মেনে চলার মতো আরও বিভিন্ন মিথ্যাচার ও চটকদার বুলি গলাধঃকরণ করানোর মাধ্যমে বড় বড় অপরাধী চক্র অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে নিজেদের দাসত্বের শৃঙ্খলে স্থায়ীভাবে আবদ্ধ করে রাখতে চায়। শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ তাদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাই তিনি সর্বদাই আমাদেরকে সজাগ করে দিতেন, উম্মাহকে সতর্ক করে দিতেন একথা বলে যে, ‘ আমরা হলাম এক উম্মাহ। কোন ধরনের জাতিগত, গোত্রীয় অথবা সীমান্তের ভিন্নতা আমাদেরকে আলাদা করতে পারবে না’ ।
তিনি (শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ) মহান এই উক্তি করেছিলেন— “আজ আমরা আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’ আলার দয়া ও অনুগ্রহে ইসলামী বিশ্বের মানচিত্রকে নতুন করে অঙ্কন করছি, যে মানচিত্রে খেলাফতের পতাকার ছায়াতলে মুসলিম বিশ্ব এক রাষ্ট্ররূপে চিত্রিত হবে। আমরা আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’ আলার অনুগ্রহে ঈমানদারদের জন্য জুলুম, ফেতনা–ফাসাদ ও গোটা বিশ্বে কুফরির জয়জয়কারের এই যুগে এক স্বর্ণালী ইতিহাস রচনা করছি। অতএব, সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’ য়ালা তাওহীদের পতাকার আশ্রয়ে অটল ও প্রতিষ্ঠিত রাখবেন”।
Comment