Announcement

Collapse
No announcement yet.

📌 বন্দীত্বের নির্মম কিছু বাস্তবতা___

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • 📌 বন্দীত্বের নির্মম কিছু বাস্তবতা___

    বন্দীত্বের কিছু নির্মম কথা... আনুমানিক এক বছর পর্যন্ত
    বিভিন্ন টর্চার সেন্টারে থাকার পর...
    যখন আমাকে জেলে প্রেরণ করা হলো, তখন জেলখানা ভালোই লাগলো ।

    কেননা,,
    এখানে চিৎকার, আহাজারি ও করুণ আর্তনাদ নেই,
    নেই লজ্জাজনক ও বেহায়াপূর্ণ কোন দৃশ্য, যা টর্চার সেন্টারের নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয় ছিলো।

    জেলখানায় আমাকে খুব গুরুত্ব দেয়া হলো।

    অর্থাৎ,,
    এমন ওয়ার্ডে আমাকে নিয়ে রাখা হলো, যেখানে বড় বড় দাগী অপরাধীকে রাখা হয়।

    মূলত ,,
    এটি জেলখানার জেল,
    যেখানে কোন অবাধ্য কয়েদীকে একেবারে অপারগতার সময় সর্বোচ্চ একমাস রাখা হয়।

    কিন্তু আমাকে প্রথমেই এখানে রাখা হলো। এরপরও এটাকে কঠিন রোদের সময় বৃক্ষের ছায়ার ন্যায় মনে করলাম ।

    কারণ...
    এর পূর্বে যেখানে রাখা হয়েছিলো, সেখানে কাক ডাকা ভোরে জোরপূর্বক ঘুম থেকে উঠিয়ে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিয়ে বন্দুকের নলের সামনে রেখে পেটাতে পেটাতে ও অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে ইস্তিঞ্জাখানায় নিয়ে যাওয়া হতো।

    যেহেতু চব্বিশ ঘণ্টায় মাত্র একবারই ইস্তিঞ্জা করার সুযোগ দেয়া হতো, তাই শত কষ্ট ও গালিগালাজের মধ্যেও লেংড়াতে লেংড়াতে মুশকিল ও জরুরী এ কাজটি থেকে ফারিগ হতো সবাই ।


    সকাল নয়টার পরই পুরো টর্চার সেন্টার চিৎকার ও আহাজারিতে কেঁপে উঠতো।

    শুরু হতো বিভিন্ন রকম জিজ্ঞাসার পালা। কেউ উল্টাভাবে লটকানো অবস্থায় কুরআনের আয়াত পড়ছে ও আহাজারি করছে, কেউ বৈদ্যুতিক শকের দরুন আল্লাহ আল্লাহ চিৎকার করছে, কারো পা ধরে হেঁচড়ানো হচ্ছে, আবার কাউকে একেবারে বিবস্ত্র করে মারা হচ্ছে চাবুক।


    কারো উপড়ানো হচ্ছে এক একটি করে দাড়ি, আবার কাউকে নির্মমভাবে পদদলিত করে বাধ্য করা হচ্ছে মদ পান করতে।

    আহা!
    সে এক করুণ দৃশ্য।

    অধিকাংশ কয়েদিকে উলঙ্গ করে জোরপূর্বক একজনের লজ্জাস্থানকে অন্যের মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করা হতো,

    কোথায় তোমাদের মদদগার?
    দেখেছো,
    এই হলো তোমাদের স্বাধীনতা!

    কেউ পাগলের মতো চিৎকার করছে তার গায়ে পেট্রোলের ইনজেকশন দেয়ার দরুন, আবার কাউকে দু’হাত বেঁধে ফেলে রেখে খেতে দেয়া হচ্ছে নাপাকি মিশ্রিত খাবার।

    সেখানে তাদের সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিলো একজন মুজাহিদকে বিবস্ত্র করে তাকে নিয়ে খেলা করা, স্থানে অস্থানে মারপিট করা।


    এ সময় তারা বলতো—
    এখন জিহাদ করো।
    গালি দাও তোমার মাকে, শ্লোগান দাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, শ্লোগান দাও জিহাদের বিরুদ্ধে ।

    যে মুজাহিদ ঘর থেকে বের হয়েছে নিজেদের মায়ের ইজ্জতের হিফাজতের জন্য, বের হয়েছে জিহাদকে জিন্দা করার জন্য, সে কস্মিম কালেও তাদের কথা মানতে পারে না। অনুসরণ করতে পারে না তাদের কমান্ডের ।

    সুতরাং ,,
    তারা তাদের জুলুম আরো বাড়িয়ে দিতো, চাবুক মারতো সজোরে, পেশাব করে দিত কারো মুখে।

    আবার কারো উপর অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যেতো নানা রকম জুলুম-নির্যাতন ।

    আহ! সে এক আজব জায়গা ছিলো। জি হ্যা!

    টর্চার সেন্টারগুলোতে এমনি হাজারো শেরে খোদার উপর চালানো হচ্ছে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বিবিধ জুলুম-নির্যাতন।

    তারা মনে করছে, এভাবে ইসলাম মিটে যাবে, থেমে যাবে এসব দেওয়ানা।

    অথচ ,, এই অগ্নিকুণ্ডগুলো এমন, যাতে একবার যাকে জ্বালানো হয়,
    সে খাঁটি সোনা হয়ে বের হয়।

    এখানে শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়, কিন্তু মজবুত হয় ঈমান।

    এখানে দুশমন আসল চেহারায় আবির্ভূত হয়, কিন্তু শক্তিশালী হয় মুমিনের হৃদয়।

    এখানে শরীর থেকে রক্তঝরতে থাকে, কিন্তু মজবুত হয় আদর্শ; বুলন্দ হয় হিম্মত এটা সেই তরবিয়ত খানা,

    যেখানে সাইয়িদিনা বিলাল (রা.) ও সাইয়িদিনা খাব্বাব (রা.) খাঁটি সোনা হয়ে বের হয়েছিলেন।

    নিশ্চয়ই এখানে গোত পোড়ার গন্ধ আসে, কিন্তু হৃদয়বানরা হৃষ্ট-পুষ্ট ফুলের সুবাসের ন্যায় ঈমানের খুশবু অনুভব করেন।

    আমি এখানে ঈমান ও কুফরের সেই বাস্তবতাকে স্বচক্ষে দেখেছি,
    যা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে
    কুফরের বাস্তবতা এবং ঈমানের বাস্তব নমুনা দেখেছি।

    জেলখানায় ঈমানদারীর এই দৃশ্য দেখেছি যে,

    যখন কোন ভাইয়ের উপর জুলুম-নির্যাতন চলতো,

    তখন অন্য বন্দী ভাইয়েরা নিজ নিজ সেলে সিজদায় পড়ে মজলুম ভাইয়ের জন্য অশ্রু বহাতে থাকতো।

    মনে হতো মজলুম ভাইয়ের চাইতে অন্যারাই দুঃখিত হতো বেশি ।

    একবার আমার উপর বিশেষ ধরনের টর্চারিং করা হলো।


    এতে ভাইয়েরা মুখে চাদর পেচিয়ে ডুকরে কাঁদতে লাগলো।

    কাফিরদের নির্যাতনে আমি এক ফোঁটা চোখের পানিও ফেলিনি।


    কিন্তু ভাইদের হামদর্দী দেখে তাদের সাথে আমিও ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকলাম।

    এ সময় এজন্য আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেছি যে,

    কাফিরদের জুলুমের দরুন নয়, ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দরুন অশ্রু ঝরেছে

    সেখানে কেউ কারো খিদমত করা কিংবা কাউকে সম্মানের সাথে ডাকা নিষেধ ছিলো।

    কিন্তু কতো সাথী যে অপরকে ইজ্জতের সাথে ডাকার দরুন মার খেয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।


    আমি সেসব ঈমানী দৃশ্য কিভাবে ভুলতে পারি যে,
    যখন আমরা রাতে শুইতে যেতাম, তখন কোন সাথী কোন মলম কিংবা ব্যথা উপশমের কোন ওষুধ সংগ্রহ করতে পারলে তা কম্বলের নীচে লুকিয়ে ততোদূর চলে আসতো, যতোদূর পর্যন্ত তার শিকল যেতো।


    এরপর অপর সাথীর জখমীতে তা মালিশ করতো।

    মোটকথা,,
    এ ধরনের মানবতার অবস্থায় ঈমানী শক্তি যতোটুকু হৃষ্ট-পুষ্ট হতে দেখেছি, অন্য কোথাও তা দেখিনি।

    সেটি আমার জীবনের মূল্যবান সময়। সে সব মুহূর্ত আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

    মজবুত করেছে আমার আদর্শকে । এ ধরনের জুলুম-নির্যাতনের পর যখন জেলখানায় আসলাম,

    তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটু আরাম অনুভব করলাম।

    কিন্তু তারা জেল কর্তৃপক্ষকে খুবই ভয় দেখিয়েছিলো। এ জন্য তারা আমার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতো এবং কঠোরতা করতো।

    📒 মুজাহিদের পথ ও পাথেয়

    ✍️ প্রিয় শায়েখ মুহাতারাম
    মাওলানা মাসুদ আযহার হাফিঃ

    বন্দী ভাই ও তাদের পরিবারের জন্য আপনার সাহায্যের হাতকে প্রসারিত করুন
Working...
X