Announcement

Collapse
No announcement yet.

রি-এডুকেশন ক্যাম্প ও গুয়ান্তানামো বে: কথিত শান্তিকামী ও মানবতাবাদীদের তৈরি ‘পৃথিবীর নরক’ (প্রথম পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • রি-এডুকেশন ক্যাম্প ও গুয়ান্তানামো বে: কথিত শান্তিকামী ও মানবতাবাদীদের তৈরি ‘পৃথিবীর নরক’ (প্রথম পর্ব)

    রি-এডুকেশন ক্যাম্প (Re-education camp) বা কন্সান্ট্রেইশন ক্যাম্প (Concentration camp)


    উইঘুর ও কাযাখ মুসলিমদের জন্য তৈরি চীনের রি-এডুকেশন ক্যাম্প। যেখানে মানবতাকে প্রতিনিয়ত জবাই করা হয় মানবতা রক্ষার নামে। কথিত সন্ত্রাস দমন ও সম্ভাব্য সন্ত্রাসীদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয় হরহামেশা, যাতে তারা সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে।

    কী সেই সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড?
    নামাজ পড়া, রোজা রাখা, কুরআন তেলাওয়াত করা, ইসলামি বই পড়া, মুসলিম স্কলারদের লেকচার শুনা কিংবা লেকচারগুলো কেবল ডিভাইসে সংরক্ষণ করা সহ যাবতীয় ধর্মীয় কাজই সেখানে উগ্রবাদ এবং চরম অপরাধ। রমজান মাসে দিনের বেলা সবার সাথে খাবার খেয়ে মুসলিমদেরকে প্রমাণ করতে হয় যে তারা নিষিদ্ধ কাজ ‘রোজা’ রাখার সাথে জড়িত না। শূকরের মাংস খেয়ে সাক্ষ্য দিতে হয়— তারা ইসলামের কোনো সেকেলে বিধান মান্য করে না।

    ভাবছেন এগুলো তো সরকারি আইন। সরকার সব সময় মুসলিমদের সাথে থাকে না। সুতরাং তারা চাইলে তো লুকিয়ে লুকিয়ে ইসলাম প্র্যাক্টিস করতে পারে।

    না জনাব। সেখানকার পরিস্থিতি আমাদের ধারণার চাইতেও বেশি ভয়াবহ। প্রতিটি কাযাখ ও উইঘুর মুসলিম এলাকার রাস্তাঘাটে এবং দোকানপাটে লাগানো আছে শত শত সার্ভাইল্যান্স ক্যামেরা। বাদ যায় নি তাদের বেড রুম কিংবা রান্না ঘরও। একটু পান থেকে চুন খসলেই তাদের ডাক পড়ে নিকটস্থ পুলিশ ষ্টেশনে। অতঃপর সেখান থেকে ট্রান্সফার করা হয় রি-এডুকেশন ক্যাম্প নামক ভয়াবহ এক নরকে।

    কী হয় সেই নরকে?

    যদি বলি মানুষকে পাশবিক নির্যাতন করা হয় তাহলে কম হবে। সেখানে নির্যাতনের মাত্রা এতোই ভয়াবহ যে, একটি পশুর সাথেও তা কল্পনা করা যায় না। বন্দীদেরকে রীতিমতো জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে আনা হয়। ইল্যাক্ট্রিক শক, ওয়াটার বোর্ডিং সহ নানা জানা অজানা টর্চার করে সন্ত্রাসবাদকে (!) দমন করা হয়। করা হয় অনেক যৌন নির্যাতন। ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণ সেখানে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। নানাধরনের মেডিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট করা হয় তাদের উপর। দেওয়া হয় জ্ঞাত অজ্ঞাত অনেক ইঞ্জেকশন। কোনো রকম অ্যানাস্থেসিয়া বা অচেতন করা ছাড়াই অপারেশন করা হয়। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হয়।

    বর্তমানে চায়নার লাভজনক বিজনেসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অর্গান বিজনেস। অর্গান ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট (Organ Transplant)— এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে মানবদেহের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নিয়ে একই মানবের শরীরের অন্য জায়গায়, অথবা অন্য কোনো মানুষের শরীরে জুড়ে দেওয়া হয়।

    কোথা থেকে আসে এতো অর্গান?

    রি-এডুকেশন ক্যাম্পে বন্দী থাকা প্রত্যেক মুসলিমকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ব্লাড গ্রুপ, হিমোগ্লোবিন সহ যাবতীয় তথ্য কর্তৃপক্ষের ডাটাবেজে জমা করে রাখা হয়। কয়েদীদেরকে কয়েক দফা পাশবিক নির্যাতন করার পর প্রয়োজন মাফিক একেকজনকে ল্যাবে নিয়ে কোনো রকম অ্যানাস্থেসিয়া ছাড়াই দেহ থেকে কেটে নেওয়া হয় হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, চোখ, স্কিন, টিস্যু, হাড়, পাকস্থলী, পেনিস, টেস্টিস ইত্যাদি।

    এই অপারেশন চলাকালীন সময়ে যন্ত্রণার তীব্রতায় অনেকেই মারা যায়। কেউ ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা নেই। মৃত হোক বা জীবিত— সার্জারি শেষে ‘অপ্রয়োজনীয়’ এই দেহগুলোকে ভূগর্ভস্থ একটি অগ্নি চুল্লিতে ফেলে দেওয়া হয়। অতঃপর সেগুলো জ্বলেপুড়ে ছাড়খাড় হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বিলীন হয়ে যায় ইতিহাস থেকেও।

    বন্দীদের মধ্য থেকে যারা একটু সৌভাগ্যবান তাদেরকে শ্রম দাস হিসেবে খাটানো হয়। বিনা পয়সায় হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করানো হয়। দশ/বারো বছরের শিশু থেকে নিয়ে নব্বই বছরের বৃদ্ধ, অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার, অফিসার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার— বাদ যায় না কেউই। ‘মুসলিম’ হওয়ার অপরাধে সবাইকেই বরণ করে নিতে হয় এক দূর্বিষহ জীবন। নাইকি, অ্যাপল, অ্যাডিডাস, ক্যালভিন ক্লাইন, গ্যাপ, ফক্সওয়াগ্যানের মতো কোম্পানিগুলো বিশ্ববিখ্যাত হওয়ার পিছনের রহস্য এটাই— আমাদের উইঘুর ও কাযাখ ভাই বোনদের অমানুষিক পরিশ্রম।

    সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টি হচ্ছে, দুনিয়ার অধিকাংশ মুসলিমই তাদের ব্যাপারে বেখবর। চীন সরকার খুব সযত্নে বিশ্ব থেকে এগুলোকে আড়াল করে রেখেছে। কোনো নিউজ সেখান থেকে পাবলিশ করতে দেওয়া হয় না। বহির্বিশ্বের কোনো মিডিয়া সেখানে যেতে পারে না। এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে তা হলো তাদেরই বিভিন্ন ডকুমেন্টারি এবং গোপন নথিপত্র থেকে লিক হওয়া কিছু তথ্য। ভিতরে চলমান ভয়ঙ্কর কিয়ামত শুধু ভোক্তভুগীরাই টের পাচ্ছে। আল ইয়াযু বিল্লাহ!

    যায়োনিস্টরা ফিলিস্তিনে ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে। বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে একটি প্রসিদ্ধ জনপদ। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না তাদের জন্য। তবে মিডিয়াতে সবকিছু উঠে আসার কারণে কমপক্ষে দুআ তো করা যাচ্ছে। পণ্য বয়কট সহ আরো নানা উপায়ে তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন ও সহমর্মিতা জানাতে পারছি। কিন্তু উইঘুরের মুসলিমদের জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া দূর কি বাত, কমপক্ষে দুআ করার কথাও কি কখনো আমাদের মনে আসে? হাশরের ময়দানে কোন মুখে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবো! কী জবাব দেবো!

    বড্ড দেরী হয়ে গেছে আমাদের। আর কালক্ষেপণ নয়। তুর্কিস্তানি মুসলিমদের উপর চলা চাইনিজ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অনলাইন অফলাইন প্লাটফর্মগুলোতে আওয়াজ তুলতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন করে পুরো দুনিয়াকে এই বর্বরতা সম্পর্কে জানিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে আমাদের নেক দুআয় তাদেরকে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে।



    বিস্তারিত জানতে পড়ুন ‘কাশগড় কত না অশ্রুজল’। (বইটি সবাই অবশ্যই পড়বেন ইনশাআল্লাহ।)






    ০৩ জুমাদাল উলা, ১৪৪৬ হি.
    ০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ইংরেজি



Working...
X