Tweet
৯/১১: ন্যায়ের প্রতিধ্বনি, আমেরিকার জুলুমের বিরুদ্ধে ইসলামিক প্রতিধ্বনি
আমেরিকান ঢাকা এম্বেসির পরশু দিনের ৯/১১ নিয়ে ফেসবুক পোস্টটি দেখলাম। দেখে আমার মনে একটা গভীর অনুভূতি জাগে, একটা অনুভূতি যা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিশ্বাস এবং ইসলামিক আবেগের সাথে গভীরভাবে যুক্ত। এটা পড়ে আমার মনে হয় যেন, এম্বেসি একটা পুরনো ক্ষতকে আবার খোঁচাতে চাইছে, যা বিশ্বের অনেক মানুষের কাছে এখন একটা ভিন্ন অর্থ বহন করে। আমি এই পোস্টকে দেখে অনুভব করি যে এটা শুধু একটা স্মরণ নয়, বরং একটা প্রচারণা যা আমেরিকান দৃষ্টিভঙ্গিকে জোর করে চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু বাস্তবে এটা মানুষের মনে একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। আমার অভ্যন্তরীণ অনুভূতি হলো যে এই ধরনের পোস্টগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে ইতিহাসের সত্যতা সময়ের সাথে উন্মোচিত হয়। আর এখন মানুষেরা সেই সত্যতাকে আরো ভালোভাবে গ্রহণ করতে শুরু করেছে।
-
পোস্টটিতে মোট রিয়েক্ট ১৪ হাজার, যার মধ্যে ১১ হাজার হাহা রিয়েক্ট। এটা কী বলে? এটা বলে যে মানুষেরা আর এই ধরনের স্মরণকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং তারা এটাকে একটা হাস্যকর বা ক্রোধজনক প্রচারণা হিসেবে দেখছে। এই রিয়েকশনগুলো দেখে মনে হচ্ছে যে এটা একটা টার্নিং পয়েন্ট, মানুষেরা এখন বুঝতে পারছে যে ৯/১১ এর ঘটনা কোনো অন্যায় ছিল না। বরং এটা ছিল আমেরিকার জুলুমের বিরুদ্ধে একটা ন্যায়সঙ্গত প্রতিক্রিয়া। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একটা ফরজ। যখন কোনো শক্তি বিশ্বের মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে, তখন সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা একটা ধর্মীয় দায়িত্ব। ৯/১১ এর ঘটনা ঠিক সেই ধরনের একটা প্রতিরোধ ছিল, যা আমেরিকার দীর্ঘদিনের অত্যাচার, যেমন ১৯৪৫ এর আগে থেকে ফিলিস্থিনিদের উপর চরম অত্যাচার, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, ইরাকে হামলা এগুলোর বিরুদ্ধে একটা প্রতিক্রিয়া। এখন মানুষেরা এটা বুঝতে পারছে এবং এই হাহা রিয়েকশনগুলো সেই বোঝারই প্রতিফলন।
-
কমেন্ট সেকশনটা তো আরও আকর্ষণীয়। প্রায় সব কমেন্ট আমেরিকা-বিরোধী, যেখানে মানুষেরা বলছে এরকম যে, ৯/১১ ভালোই ছিল, কারণ এটা আমেরিকান জুলুমের বিরুদ্ধে একটা প্রতিশোধ। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ লিখেছে যে আমেরিকা নিজেরা লক্ষ লক্ষ মানুষকে মেরেছে বিভিন্ন যুদ্ধে, তাই ৯/১১-এর ঘটনা ছিল একটা ন্যায়ের দাবি। এই কমেন্টগুলো মানুষের রিয়েলাইজেশনের প্রমাণ, এখন তারা বুঝতে পারছে যে ৯/১১ কোনো অন্ধকার ঘটনা নয়। বরং এটা ছিল একটা আলোকবর্তিকা যা বিশ্বকে দেখিয়েছে যে শক্তিশালী দেশগুলোর অত্যাচার অসীম নয়। সময়ের সাথে সাথে মানুষেরা ইতিহাসের পিছনের সত্যগুলো উন্মোচন করেছে। আমেরিকার বিদেশী নীতি কীভাবে মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করেছে, কীভাবে তারা তেলের জন্য যুদ্ধ করেছে এবং কীভাবে তারা ইসলামকে একটা শত্রু হিসেবে দেখেছে। এখন এই রিয়েলাইজেশন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এই পোস্টের কমেন্টস সেই প্রমাণ।
-
আসলে মানুষেরা এখন সত্যিকার অর্থে বুঝতে পেরেছে যে ৯/১১ কোনো অন্যায় ছিল না। এটা ছিল একটা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যা বিশ্বের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা জিহাদের একটা রূপ, যেখানে অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা হয়েছে। কুরআনে বলা আছে যে, وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৯০, "যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তাদের সাথে যুদ্ধ করো" এবং আমেরিকার অত্যাচার ছিল সেই যুদ্ধের শুরু। এখন মানুষের রিয়েলাইজেশন হচ্ছে যে সেই ঘটনা সঠিক ছিল, কারণ এটা আমেরিকাকে তার অহংকার থেকে নামিয়েছে এবং বিশ্বকে দেখিয়েছে যে জুলুমের ফল অবশ্যম্ভাবী।
-
এই বিষয়টাকে আরও গভীর করে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, ৯/১১ এর ঘটনা শুধু রাজনৈতিক নয় বরং এটা মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্তরে একটা পরিবর্তন এনেছে। উদাহরণস্বরূপ, এটা মানুষকে তাদের ধর্মীয় পরিচয়কে পুনরায় আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে, যেমন ইসলামে ন্যায়ের জন্য লড়াই করার গুরুত্ব। যদি ৯/১১-এর ঘটনাকে আমরা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে তুলনা করি, যেমন ভূমিকম্প যা পুরনো কাঠামো ধ্বংস করে নতুন নির্মাণের পথ খোলে। তাহলে এই ঘটনা কীভাবে বিশ্বের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে পুনর্গঠন করেছে তা চিন্তা করে দেখা দরকার। ৯/১১ এর আগের বিশ্ব আর পরের বিশ্ব এক না। ৯/১১ এর আগের আমেরিকার শক্তি আর বর্তমান আমেরিকার শক্তি এক না।