উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ’র বিশেষ সাক্ষাৎকার | (দ্বিতীয় পর্ব)
উপমহাদেশ ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলন – প্রকৃত বাস্তবতা!
পার্ট - ৬
উপমহাদেশ ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলন – প্রকৃত বাস্তবতা!
পার্ট - ৬
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ কাশ্মীরে আল-কায়েদার হস্তক্ষেপের ফলে কি কাশ্মীর জিহাদের ভিত্তির কোনো ক্ষতি হবে না? কেউ কেউ বলেন এতে আমেরিকা অভিযান চালানোর বৈধতা পাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ প্রথম কথা হলো কাশ্মীরের মুসলমানদের রক্ত ঝরানো থেকে আমেরিকার ভূমিকা কবে মুক্ত ছিল যে, আজ মার্কিন অভিযান চালানোর কথা বলে ভয় দেখানো হচ্ছে? অত্যাচার এবং বলপ্রয়োগের সাথে আমেরিকার ভূমিকা এখানে সব সময় ছিল। প্রশ্ন হলো একদিকে যখন দক্ষিণ সুদান এবং পূর্ব তিমুরে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের থেকে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে তখন আমেরিকা সাথে সাথে সক্রিয় হয়ে যায় এবং তাদের স্বাধীন করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু অন্যদিকে বিগত সত্তর সাল থেকে এখানে কাশ্মীরি মুসলমানরা আগুনে জ্বলছে, আমেরিকার টনক নড়েনি, বরং মুসলমানদের হত্যাকারী ভারতকে শক্তিশালী করছে। বাস্তবতা এটাই যে, কাশ্মীরি মুসলমানদের উপর চালানো প্রত্যেকটি জুলুমের পিছনে আমেরিকার সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা আছে।
আমেরিকার পক্ষ থেকে ভারতকে সাহায্য করার বিষয়টা বর্তমান বা নিকট অতীতের কোন বিষয় নয় যে, এ থেকে এটা বলা যাবে— কাশ্মীরে কোনো জামাআতের জিহাদের কারণে এসব হচ্ছে … আমেরিকা ভারত পারমাণবিক চুক্তি, একে অপরের সামরিক ঘাটি ব্যবহারের চুক্তি, মহাশূন্যভিত্তিক কার্যক্রমে ব্যাপক সহযোগিতা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং এমন অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্রে সাহায্য, এসব কিছু আল-কায়েদার কথা আসার আগেই হচ্ছিল … এরপর ইসরায়েলের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতা, সামরিক সহযোগিতা, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা এবং অস্ত্র কারখানা ভারতে স্থানান্তরিত করা … এসব সহযোগিতা বিশেষ কোনো সংগঠন বা জামাআতের বিরুদ্ধে অথবা এরকম কোনো কারণে নয়, এটা মুসলিম উম্মতের বিরুদ্ধে! একইভাবে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ২০০৩-২০০৪ সালে আমেরিকার নির্দেশে যেসব কাশ্মীরি জামাআতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তো ঐ সংগঠনগুলোর মাঝে আল-কায়েদা ছিল না! … অতীতে আল-মায়েদা নামে এক সাংবাদিক পাকিস্তানি শাসক এবং জেনারেলদের মাঝে হওয়া এক মিটিং ফাঁস করেন, যাতে উল্লেখ আছে আমেরিকাকে খুশি করার জন্য পাকিস্তানে থাকা কাশ্মীরি নেতাদের হত্যা করার ব্যাপারে পরামর্শ হয়েছিল, এই কাশ্মীরি নেতারাও তো আল-কায়েদার কেউ ছিলেন না! এসব বলার উদ্দেশ্য হলো, আমেরিকা এবং ভারত আগেও একসাথে ছিল এবং ভবিষ্যতেও ইসলামের বিরুদ্ধে একসাথে থাকবে। الکفر ملۃ واحدۃ অর্থাৎ “সব কাফেররা আসলে একই ধর্মের অনুসারী।” ইসলাম এবং মুসলমানদের মোকাবেলায় যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিকা যাই হোক না কেন- এদের সবার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ইসলামের প্রতি শত্রুতা হয়ে থাকে।
এটাও উল্লেখ করতে চাই, দুনিয়ার সব জালেম ও কাফের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ, তাহলে কেন কাশ্মীরি মুসলমানদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে মুসলিম উম্মত নীরব দর্শক হয়ে থাকবে এবং উম্মাহর মুজাহিদ সন্তানেরা নিজেদের ভাইদের ডাকে সামনে আগাবে না? বাস্তবতা হলো দুনিয়া জুড়ে মুসলমান এক উম্মত আর কাফেরদের এবং তাদের এজেন্টদের প্রচেষ্টা হলো মুসলমানদেরকে তাদের টেনে দেওয়া লাইনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ করে রাখা, আল্লাহর ইবাদতের জায়গায় দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতিমার সামনে ঝুঁকিয়ে রাখা, যাতে জুলুম ও কুফরের এই বিজয় টিকে থাকে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, এটা আল্লাহর নেয়ামত এবং জিহাদি আন্দোলনের বরকত যে, মুসলমান আজ উম্মত হয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের এই প্রতিমাকে পদদলিত করে কুফরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আজ কাশ্মীর জিহাদ যে দিকে অগ্রসর হচ্ছে তাতে আপনার কি মনে হয় এটা আমেরিকা এবং এর মিত্রদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আমেরিকা এবং এর মিত্রদের তো নিশ্চিতভাবে কষ্ট হচ্ছে এবং হওয়াও উচিত। এই কষ্টের কারণ কাশ্মীরি জনসাধারণের এমন জিহাদের দিকে অগ্রসর হওয়া, যা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রভাবমুক্ত এবং যার উদ্দেশ্য শরীয়ত ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা। এমন জিহাদ না আমেরিকার পছন্দ, আর না পাকিস্তানের আর না ভারতের। অর্থাৎ ভারতও যখন ‘জিহাদ শেষ করতে পারবে না’ এটা বুঝতে পারে, তখন এর জন্য শেষ উপায় হলো নিয়ন্ত্রিত জিহাদ, যাতে যখন চায় আমেরিকা ও পাকিস্তানের মাধ্যমে একে দুর্বল করে দিতে পারে।
সত্য এটাই যে, মাজলুমদের নুসরত এবং শরীয়তের শাসনের জন্য জিহাদ আল-কায়েদার নামে হোক অথবা অন্য কোনো নামে, এমন জিহাদ যেহেতু মুসলমানদের স্বাধীনতা, সম্মান এবং প্রতিরক্ষা দেয়; এজন্য সব শয়তানই সম্মিলিতভাবে এর রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা দিবে … কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ কাশ্মীরি মুসলমান আজ বন্ধু ও শত্রু চিনে। তাঁরা স্বাধীনতার পথ আজ জেনে গেছে এবং এখন তাঁরা হয়তো শরীয়ত নয়তো শাহাদাত থেকে সরে অন্য কোনো ঠিকানায় ইনশাআল্লাহ যাবে না।
এখানে আমি যারা আমেরিকার ভয় দেখায় তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, আমেরিকা কোন তীর নিক্ষেপ করেছে, কোন দুনিয়াতে জিহাদ শেষ করেছে যে, এখন কাশ্মীরি মুসলমানদেরকেও চুপ করিয়ে দেবে? আমেরিকা যেখানে এসেছে, উম্মতের মুজাহিদরা পূর্ব ও পশ্চিম থেকে তার পিছনে ধাওয়া করেছে এবং এরপর আলহামদুলিল্লাহ মুজাহিদরা তো ময়দানে আছে কিন্তু আমেরিকা পালাচ্ছে। আল্লাহর অনুগ্রহে আজ উম্মত এবং এর মুজাহিদেরা বিজয়ী, অন্যদিকে আমেরিকা এবং তার পূজারিরা হতাশা ও উদ্বেগের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে...