আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“কুদসের মুক্তির পথ!”
।।উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– প্রথম পর্ব
“কুদসের মুক্তির পথ!”
।।উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– প্রথম পর্ব
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، أما بعد
সমস্ত সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবীদের সর্দার হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার, সাহাবায়ে কেরাম এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসারীদের প্রতি।
সালাত ও সালামের পর…
গাজা যুদ্ধ সামান্যতমও সচেতন প্রতিটি বুদ্ধিমান ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত গভীর তাৎপর্য বহন করে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ যে নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের সংগ্রামে অংশগ্রহণ তার উপর ফরয। এই লেখার উদ্দেশ্য হলো এসব গুরুত্বপূর্ণ বার্তাকে আলোকিত করা। প্রথমে আমরা এই যুদ্ধে প্রকাশিত কিছু মৌলিক সত্য নিয়ে আলোচনা করব, তারপর এই প্রশ্নের উত্তর প্রদান করব যে, ব্যক্তি ও সমষ্টি হিসেবে আমাদের কী করণীয়। কোন সচেতনতা ও জ্ঞান আজ ছড়িয়ে দেওয়া অপরিহার্য, আর কোন পথ অবলম্বন করা মাসজিদুল আকসাকে মুক্ত করা এবং আমাদের দেশগুলোতে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আবশ্যক? মাসজিদুল আকসাকে মুক্ত করা এবং আমাদের দেশগুলোতে দ্বীন বিজয়ী করতে সক্ষম হওয়ার জন্য করণীয় কি?
গাজাবাসীদের শিক্ষা
তবে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার আগে এই কথাটি বলা অত্যন্ত প্রয়োজন যে, গাজাবাসী এই পনেরো মাসে ধৈর্য ও অবিচলতার মূর্ত প্রতীক হয়ে যে ঈমান, দৃঢ় বিশ্বাস এবং আল্লাহর উপর ভরসার প্রমাণ দিয়েছে, তা বস্তুবাদের এই যুগে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার প্রতি বিশ্বাসের এক মহান উদাহরণ স্থাপন করেছে। আল্লাহর প্রতি এই ঈমান ও ভরসা এবং তারপর সেই মহান রবের সাহায্য ও সহায়তা যদি তাদের সঙ্গী না হতো, তবে মাংস-মজ্জার মানুষ কীভাবে এমন কঠিন পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে পারত এবং কিভাবে এতে সফল হতে পারত? বন্দীদের মুক্ত করার জন্য তারা যে শর্তগুলো দিয়েছিল, আলহামদুলিল্লাহ, তার একটিতেও তারা পিছপা হয়নি। অন্যদিকে, খোদা হবার মিথ্যা দাবিদার শয়তানরা তাদেরকে কোনো একটি শর্তও মানাতে সক্ষম হয়নি।
এই যুদ্ধ মুসলিম উম্মাহকে ঈমান, জিহাদের ফরযিয়াত, আখিরাতের চিন্তা এবং শাহাদাতের মূল্যবান শিক্ষা দিয়েছে। এটি পশ্চিমা শয়তানদের অতি নোংরা মুখোশ উন্মোচন করেছে, তাদের মিথ্যাকে ধ্বংস করেছে এবং তাদের এই বার্তাও দিয়েছে যে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত দুনিয়ার পেছনে চলার জন্য নয়, বরং দুনিয়াকে নিজেদের পেছনে নিয়ে চলার জন্য প্রেরিত হয়েছে। আর তাদের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের দ্বীন, পবিত্র স্থানসমূহ এবং মহান রবের সন্তুষ্টি।
পথ আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে!
এই যুদ্ধের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি চিন্তা ও কর্মের সঠিক দিক এখন সম্পূর্ণ স্পষ্ট করে দিয়েছে। যদি চোখ খোলা থাকে ও মন নির্মল হয়, তবে উম্মাহর মুক্তির পথ বুঝতে এখন কোনো অস্পষ্টতা থাকার কথা না। পথটি সহজ না কঠিন—এ প্রশ্ন শুধু তারাই তুলবে, যাদের মুসলিম উম্মাহর বর্তমান দুর্দশার কোনো জ্ঞান বা অনুভূতি নেই এবং যারা এই সত্য মেনে নিতে প্রস্তুত নয় যে, আজ আল্লাহর পথে জিহাদ নামায-রোযার মতো ফরয, এমনকি তার চেয়েও সম্ভবত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই জিহাদই এখন ঈমান ও আমল রক্ষার মাধ্যম হবে—যেখানে মৃত্যুর বাইয়াত নেওয়া হয়, যেখানে বিজয় ও সাফল্যের আকাঙ্ক্ষার চেয়ে বেশি রবের সন্তুষ্টির আশায় জীবন বিলিয়ে দেওয়া হয়, আর বিনিময়ে শুধু জান্নাতের সুসংবাদই কামনা করা হয়। এই বিনিময় অতীতেও উম্মাহর সাফল্যের গ্যারান্টি ছিল, আজও তাই [[1]]। অতীতেও এটি ব্যক্তির জন্য পরীক্ষা ছিল, আজও তাই। আর অতীতেও আল্লাহ রব্বুল আলামীন এমন মুমিনদের সাহায্য করতে সক্ষম ছিলেন, আজও তাই।
অতএব, যতক্ষণ না আমরা সহজ পথ খোঁজার বদলে এটা খুঁজতে শুরু করি যে, আল্লাহ আমার কাছ থেকে কী চান; যতক্ষণ না আমরা দেখি যে বাস্তবতা ও পরিস্থিতি কোন পথকে গন্তব্যে পৌঁছানোর দিকে নির্দেশ করছে—ততক্ষণ আমাদের পরিণতি হবে এই যে, আমরা সেই ‘তীহ’ মরুভূমিতেই ঘুরে বেড়াবো— যেখান থেকে বের হওয়ার শর্ত মহামহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্ধারণ করেছেন আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকা। বনি ইসরাঈলের তীহ প্রান্তরে আটকে থাকা কোনো বাহ্যিক বাধা, কারাগার বা শৃঙ্খলের কারণে হয়নি; বরং তারা নিজেদের উদ্দেশ্য ও কর্মে ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং এটাই তাদের পথভ্রষ্ট হওয়ার মূল কারণ ছিল। সুতরাং যদি আমরাও চিন্তা ও কর্মে এবং পথ ও যাত্রায় ভুলের উপর অটল থাকি, তবে আমাদের পরিণতিও তীহ প্রান্তরের মতোই হবে। পদ্ধতির এই ভ্রান্তিতে থাকলে প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম সত্ত্বেও আমরা গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতে পারব না। গাজাবাসী একা কেন রয়ে গেল?
এই দীর্ঘ সময় ধরে আমরা গাজাবাসীদেরকে ‘আসহাবে উখদুদ’-এর মতো নির্মম পরিণতি ভোগ করতে দেখলাম, অথচ তাদের সাহায্যে আমরা কিছুই করতে পারিনি। আমাদের মধ্যে ঈমানদার ও দ্বীনদার লোকের অভাব নেই, ইসলামী আন্দোলনও কম নেই—তবুও তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একা কেন রয়ে গেল? তারা দাঁড়িয়েছিল এই আশায় যে উম্মাহ তাদের পিছনে দাঁড়াবে, কিন্তু কেউই তাদের পাশে আসেনি। দূরত্ব বা সীমানা যদি বাধা হয়, তাহলে সেগুলো কখন এবং কেন বাধা হয়ে দাঁড়াল? কী সেই শক্তি বা নিয়ন্ত্রণ যা আমাদেরকে প্রতি পদে পদে অক্ষম করে রেখেছে?
আর সেই কোন শক্তি যা ইসরাঈলকে টিকিয়ে রাখছে, অথচ দেশটি ভেতর থেকে আত্মশক্তি হীন? ইসরাঈলের ভিত্তিহীন ও মূল্যহীন হওয়া এই যুদ্ধে আরও স্পষ্ট হয়েছে, তবুও সে আজও দাঁড়িয়ে কিভাবে সমগ্র উম্মাহকে হুমকি দিচ্ছে? এগুলো এমন প্রশ্ন, যেগুলো গাজার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হবে—কে আমাদের ওপর আধিপত্য চালাচ্ছে? এই শক্তির ক্ষমতা, প্রভাব ও বিস্তার কতটা? এর বিরুদ্ধে লড়াই কেন জরুরি এবং এই লড়াই কিভাবে সম্ভব?
এই বিষয়গুলো পরিষ্কার হলে তখন বুঝতে সহজ হবে—মসজিদে আকসাকে মুক্ত করার পথ কোথায় থেকে শুরু হয় এবং কোন পথগুলো অতিক্রম করতে হবে।
[1] পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর হত্যা করে এবং তাদেরকে হত্যা করা হয়।” [সূরা আত-তাওবা ০৯: ১১১]