Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || দশম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || দশম পর্ব

    ফিলিস্তিনের স্মৃতি
    ।।শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
    এর থেকে– দশম পর্ব

    জিহাদ ফরযে আইন

    আরেকটি বিষয় হলো জিহাদ ফরয। মুসলমানরা যখন তাদের ঘরে নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত থাকবে তখন জিহাদ ফরযে কেফায়া। ফকিহগণ বলেন, ফরযে কেফায়ার সর্বনিম্ন স্তর হলো ইমাম প্রতিবছর একটি বা দুটি সেনাদল শত্রুদেশে প্রেরণ করবেন। তারা সেখানে অভিযান চালাবে এবং ফিরে আসবে। তারা তাদেরকে জিযিয়া দিতে বাধ্য করবে। তারা বলেন, বছরে অন্তত একবার ইমাম অভিযান প্রেরণ করবেন। যদি মুসলমানদের দেশ থেকে কাফেরদের ভূমিতে বছরে একবারও অভিযান চালানো না হয় তাহলে ফরযে কেফায়া আদায় হবে না। কিন্তু নিম্নলিখিত অবস্থাগুলোতে জিহাদ ফরযে আইন হিসেবে পরিগণিত হবে

    ১. যখন মুসলমানদের ভূমি আক্রান্ত হবে;
    ২. যখন কাফেররা মুসলমানদের আক্রমণ করার জন্যে সীমান্তে উপনীত হবে;
    ৩. ইমাম যখন অভিযানের জন্যে কোনো দল প্রেরণ করবেন-তাদের "ওপর জিহাদ ফরযে আইন;
    ৫. যখন বৃহৎ দল আক্রান্ত হবে;
    ৬. পৃথিবীর পূর্ব বা পশ্চিম যেকোনো প্রান্তে যখন কোনো নারী বা মুসলমানের গৃহ আক্রান্ত হবে।

    তাহলে বর্তমান সময়ে কোথায় জিহাদ ফরয নয়? দুনিয়ার কোন জায়গায় জিহাদ ফরয নয়? এখন কেবল ফিলিস্তিনে জিহাদ ফরয নয়, কেবল আফগানিস্তানে জিহাদ ফরয নয়; বরং আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনে যেমন জিহাদ ফরয তেমনি যেখানে বা যে ভূখন্ডে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র হুকুম নেই সেখানেও জিহাদ ফরয। ফরযে আইনের হুকুম মুসলমানদের কাঁধে ততোদিন থাকবে যতোদিন না পৃথিবীর শেষ ভূখন্ডটিতে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র শাসন চালু হয়। ফরযে আইনের হুকুম আমাদের ওপর অব্যাহত থাকবে যতো দিন না আমরা বুখারা, তাশকন্দ, সমরকন্দ, আন্দালুসিয়া (মুসলিম স্পেন), ককেশাস, সাইবেরিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, আলবেনিয়া, রোমানিয়া এবং এরকম আরো যেসকল রাষ্ট্রে কোনো একদিন এই দীনের ছায়া ছিলো এবং মহানবীর শরীয়তের শাসন ছিলো সেসকল রাষ্ট্র আমাদের অধিকারে ফিরিয়ে না আনতে পারি।

    সুতরাং ফরযিয়াতে আইন (চূড়ান্ত আবশ্যকতা) এখন কোনো ভূখণ্ড বা কোনো সময়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট নয়। কোনো একটি জাতির মধ্যে তা সীমাবদ্ধ নয়। শুধু আফগানিস্তান আর ফিলিস্তিনে জিহাদের ফরযিয়াত সীমাবদ্ধ নয়। যদিও এই দুটি স্থানে জিহাদ চালিয়ে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিটি মুসলমানের কাঁধে বালেগ হওয়ার পর থেকে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত ফরযিয়্যতে আইন আবশ্যকভাবে বিদ্যমান থাকে। সুতরাং আমরা বলতে চাই, ইসলামি দেশগুলো ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত জিহাদের ফরযিয়াতে আইন অব্যাহত থাকবে। ফরযিয়্যতে আইনের ব্যাপারটির সমাধান কেবল কাগজ-কলমের দ্বারা হবে না; অধিকার আদায়ের দাবি-দাওয়া করেও কাজ হবে না। কেননা আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে এবং আমরা কোনো প্রাপ্য পাই নি। কবি যথার্থই বলেছেন-

    لنطلبن بحد السيف مطلبنا فلن يخيب لنا في جنبه إرب
    أجاب كل سؤال عن هل بلم من إقتضى بسوى الهندى حاجته

    আমরা আমাদের দাবি তরবারির ধার দিয়ে আদায় করবো, তাহলে সে- ক্ষেত্রে আমাদের বুদ্ধি প্রতারণা করবে না। কেউ যদি তার অধিকার দাবি করে তরবারি ছাড়া তাহলে তার প্রতিটি চাওয়ার জবাব দেয়া হয় 'কিছুতেই না' দিয়ে।' কবিতার মূলকথা হলো তরবারিই কেবল অধিকার আদায় করতে পারে।

    সা'দ জুমআ তাঁর গ্রন্থ المؤامرة ومعركة المصير (ষড়যন্ত্র ও শেষ লড়াই)-এ লেখেন, আমি ১৯৬৭ সালের পর ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আমরাই ফিলিস্তিনের প্রকৃত অধিকারী। জবাবে তিনি বললেন, ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে সত্য বলে কিছু নেই। তাদের রাজনীতিতে সংস্কার জরুরি। সত্য প্রতিষ্ঠা নয়; বরং তারা দণ্ডনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা যে রাজনীতি করছে সেই রাজনীতি করার অধিকার তাদের নেই। ব্যস, এ পর্যন্তই । তারা বলেই যাচ্ছে, তোমাদের রাজনীতিতে সত্য বলে কিছু নেই, রাজনীতি করার অধিকার তোমাদের নেই। তাহলে কীভাবে আপনারা অধিকার দাবি করতে পারেন? আর জাতিসঙ্ঘ আপনাদেরকে কোনো দিন কোনো অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে কি? আর শক্তি প্রদর্শন ছাড়া কবে আমাদের শত্রুরা আমাদের দিকে তাকিয়েছে? তাকান, ভালো করে চারপাশে তাকান! আফগানিস্তান এবং অন্য যেকোনো ইসলামি ভূখণ্ডের মাঝে তুলনা করে দেখুন। মুসলিম জাতি সেখানে তরবারি হাতে নিয়েছে। শত্রু নেতাদের জাহান্নামে পাঠাচ্ছে। কণ্ঠনালী জবাইয়ের জন্যে প্রস্তুত করছে এবং শত্রুদের প্রতিহত করছে। শহীদের মিছিল চলতে শুরু করেছে এবং রক্তের সাগরে জিহাদের জাহাজ এগিয়ে যাচ্ছে। সেই জাতির গান হচ্ছে—
    وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّا أَنْ قَالُوا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَاوَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

    ‘আর তাদের কথা এই ছিলো যে, তারা বললো, হে আমাদের রব, আমাদের পাপ এবং আমাদের কাজে বাড়াবাড়িকে ক্ষমা করুন। আমাদের পদক্ষেপ সুপ্রতিষ্ঠিত করুন এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয় দান রুন।’ [সুরা আলে ইমরান : আয়াত ১৪৭]

    প্রত্যাশার যন্ত্রণা

    মানুষ মনে করে আফগানিস্তান সহজেই এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অথচ আফগানিস্তানে এমন কোনো ঘর নেই যেখানে এতিমের কান্না নেই, বিধবার বিলাপ নেই, সন্তানহারার হাহাকার নেই। আমি আমাদের এক ভাইয়ের জন্যে বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে আমার স্ত্রীকে এক আফগান বোনের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তার বড়ো বোন আমার স্ত্রীকে বললেন, হে উম্মে মুহাম্মদ, আপনি কি মনে করেন আমাদের ভেতর বংশধর সৃষ্টির বাসনা বা কামাকাঙ্ক্ষা অবশিষ্ট আছে? আল্লাহর কসম, আমি বিয়ে করেছিলাম এই ভেবে যে, যাওয়া-আসার পথে যেনো আমার একজন পুরুষ থাকে, মাহরাম থাকে। অথচ বিয়ের পর দুইমাস চলে গেলো আমিও তাকে দেখি নি, সেও আমাকে দেখে নি।

    মানুষ সেখানে পেরেক ও কাঁটায় আকীর্ণ পথে হেঁটেছে। দাউদাউ আগুনে গড়াগড়ি খেয়েছে এবং জ্বলন্ত কয়লায় বসবাস করেছে। চলমান পেষণযন্ত্র মানুষকে; তাদের হাড় ও পাঁজরকে, স্নায়ু-শিরা-আত্মাকে পিষেছে। এমন আফগান কমান্ডারও আপনি পাবেন যিনি রাশিয়ার পায়ের নিচের মাটিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। রুশ বাহিনী শুধু তার নাম শুনেই ভয়ে কেঁপে উঠেছে। অথচ কোনো আকস্মিক ঘটনায় তার মগজ বিক্ষিপ্ত হয়েছে, তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়েছে। ওষুধ কেনার পয়সা নেই, খাবার কেনার পয়সা নেই। কিছু কেনার পয়সা নেই।

    হ্যাঁ, আমি ঠিকই বলেছি, ওষুধের পয়সা নেই, খাবারের পয়সা নেই। তাদের প্রত্যেকে চারপাশে তাকাচ্ছে, বাবাকে খুঁজছে আর বাবা মাটির নিচে চাপা পড়েছে। মাকে খুঁজছে আর মায়ের ওপর ঘর ধসে পড়েছে। বড়ো ভাইকে খুঁজছে, আর সে অনেক আগে থেকেই বন্দি আছে। তারা জানে না তাদের গন্তব্য কী।

    তারা তাদের সন্তানদের খুঁজছে; তাদের কেউ হয়তো গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে, কেউ হয়তো মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড আঘাতের ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কেউ হয়তো অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েছে। কেননা ছোটোবেলা থেকেই প্রতিদিনই সে দেখে আসছে তাদের বাড়িঘরে গোলা আঘাত হেনেছে, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। সুতরাং তার মানসিক বিকৃতি ঘটা বা বিকৃতমস্তিষ্ক হওয়াই স্বাভাবিক। কেউ কেউ বা স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়েছে। আপনারা কী বলবেন? আপনারা তাদের ব্যাপারে কী চিন্তা করেন?

    বর্তমান সময়ে পাকিস্তানের পেশোয়ারে পঁয়ত্রিশ লাখ মুহাজির রয়েছেন। ইরানে পনেরো লাখ মুহাজির রয়েছেন। (লোকে তাদের বলে আফগান শরণার্থী।) এবং আফগানিস্তানের ভেতরে বাস্তুচ্যুত হয়ে—চার লাখ দুই হাজার চারশো চব্বিশ বর্গমাইলের আফগানিস্তানের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়—দুই কোটি আফগান নাগরিকের ভেতর হিজরত করেছেন সত্তর লাখ বা এক কোটি বিশ লাখ নাগরিক। (২০১০ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী আফগান লোকসংখ্যা দুই কোটি বিরাশি লাখ।) এই হিজরত হয়তো চলতেই থাকবে। তারপরও... আলহামদুলিল্লাহ।

    এক আফগান কমান্ডার নাম তাঁর আগা ওয়ালিদ, তাখার ও উত্তরাঞ্চলের ইশকামাশ এলাকায় বড়ো কমান্ডার ছিলেন—আমাকে বলেছেন, 'একদিন আমাদের বাড়িতে বিমান হামলা হয় এবং বাইশজন নিহত হয়। আমার স্ত্রীসহ আমার সকল আত্মীয়-স্বজন একমুহূর্তের ভেতর মাটিতে মিশে যায়। এই খবর নতুন কিছু নয়; এইসব ঘটনা আফগানিস্তানে স্বাভাবিক ব্যাপার। তারপরও তারা অভীষ্ট লক্ষ্যে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে।

    আরেকদিন এক আফগান আমাকে তাদের গল্প বলছিলেন। হঠাৎ তিনি বললেন, ‘একবার আমাদের কাছে খবর আসে যে আমার আত্মীয়-স্বজনের বিশজন বা বাইশজন শাহাদাত বরণ করেছেন।’ এই কথা বলেই তিনি থেমে গেলেন এবং জিহাদের আরেক গল্প শুরু করলেন। এইসব গল্প তাকে বিচলিত করছিলো না, তাকে উদ্বিগ্ন করছিলো না। যেনো তিনি হামযা রা., মুয়াবিয়া রা. বা বাদশা হারুনুর রশিদের সময়কার বা অন্য কোনো সময়ের গল্প বলছেন।

    তারা এগিয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর ভয়ে তারা পিছু হটছে না এবং মৃত্যু তাদের অন্তরে কোনো ভয় সৃষ্টি করতে পারছে না। আপনি যদি আফগানিস্তানে যান এবং হাঁটেন, দেখবেন পুরো আফগানিস্তানের মাটি পুড়ে তামা হয়ে গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের কাঠামো, বোমার স্প্রিন্টার ও গোলার খোসায় আফগানিস্তানের মাটি পরিপূর্ণ। অন্তত পাঁচবার ক্ষেপণাস্ত্র আর বোমা আর গোলায় আফগানিস্তানের মাটি ঢেকে দেয়া হয়েছে। টনকে টন গোলা সেখানে নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমি অনেক জায়গা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আগুনের লাভা বের হতে দেখেছি। অন্যান্য গোলার চেয়ে ক্ষেপণাস্ত্র বেশি ধ্বংসাত্মক, ভূত্বকের জন্যে অধিক ক্ষতিকারক। রুশ বাহিনী দেখলো গোলা আঘাত হানছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলোর শক্তি মাটির ভেতরেই নিঃশেষ হচ্ছে। তখন তারা আরেকটি কাজ করলো। প্যারাশ্যুটে বেঁধে গোলা ফেলতে লাগলো, যাতে সেগুলো মটির ভেতরে ঢুকে না যায় এবং সব শক্তি ভূপৃষ্ঠ-ধ্বংসে কাজে লাগে।

    আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকতাম, বোমারু বিমান আসতো এবং ছোটোছোটো মাইন ফেলতো। সেগুলো ঘাসফড়িংয়ের মতো সবুজ ঘাসের ওপর পড়ে থাকতো। সামান্য শব্দের আঘাতেই সেগুলো বিস্ফোরিত হতো। সেগুলোর ওপর পাড়া দেয়ার দরকার নেই আপনার। আপনি সেগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই বিস্ফোরিত হবে এবং আপনাকে উড়িয়ে দেবে।


    জালালাবাদের পতন ঘটে নি কেনো

    এই জালালাবাদ, লোকেরা বলে, হায়, জালালাবাদের তো পতন ঘটে নি। প্রথমত, জালালাবাদ শিয়াদের উৎসভূমি। দ্বিতীয়ত, জালালাবাদ এমন শহর, যাতে এক লাখ শিয়া রয়েছে। তৃতীয়ত, জালালাবাদে রয়েছে বিমান বন্দর। চতুর্থত, তারা মরণপণ লড়াই করে। কেননা তারাও আফগান। আফগানরা সবসময় কঠোর হয়ে থাকে। বিশেষ করে শিয়ারা অধিক কঠোর। এক মুজাহিদ আমাকে গল্প বলেছেন। তিনি বলেন, “আমরা একটি শিয়াকে পাকড়াও করলাম এবং তার মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিলাম। আমরা তাকে বললাম, 'তুমি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলো।' সে বললো, 'সম্ভব নয়। বিশ বছর ধরে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি, এর এখন আমি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলবো?' আমরা তার গলায় রশি লাগালাম এবং তাকে বললাম, বলো 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সে বললো, 'না, সম্ভব না।' আমরা তার গলায় রশি শক্ত করে এঁটে দিলাম। তার চোখ ঘোলাটে হয়ে এলো এবং তার নাক থেকে রক্ত ঝরতে লাগলো। তারপর আমরা রশি ঢিল করলাম এবং তাকে বললাম, বলো 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'। সে বললো, 'না, সম্ভব না।' অবশেষে আমরা রশি শক্ত করে কষে ধরলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সে মারা গেলো এবং জাহান্নামে পৌঁছালো। তা কতোই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল।”

    এখন সরকার মুজাহিদদের ওপর টনকে টন গোলা নিক্ষেপ করছে। সাড়ে পাঁচ টন ওজনের গোলাও রয়েছে। এসব গোলা এক বর্গমাইলব্যাপী সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। আপনারা কেউ ভাববেন না আফগানিস্তানে জিহাদ ও লড়াইয়ের বিষয়টি খুব সহজ। শত শত মানুষ সেখানে ধূলির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। তাই আরবদের আগমন তাদের জন্যে ছিলো রহমত। আরবরা তাদের মনোবল চাঙ্গা করেছে। তাদেরকে উজ্জীবিত করেছে। আফগানরা তাদের ভাইদেরকে তাদের পাশে পেয়েছে। ফলে তাদের চেতনা নতুনভাবে শাণিত হয়েছে এবং তাদের সংকল্প সুদৃঢ় হয়েছে। তারাও পুরুষ। তাদেরও পৌরুষ আছে। আত্মসম্মানবোধ আছে। তাদেরও বীরত্ব আছে। তারা যখন আরবদের দেখলো তারা সামনে এগিয়ে গেলো। যদিও মৃত্যু ছিলো তাদের প্রতীক্ষায়। তারা আরবদেরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলো। যদিও তারা ছিলো ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। অধিক আত্মত্যাগের লক্ষ্যে তারা আরবদেরকে ছাড়িয়ে গেলো। মানুষ তো রক্ত-মাংস ছাড়া কিছু নয়। মাংস হাড়-শিরা।

    হেরাতে একদিনে চব্বিশ হাজারও নিহত হয়েছে। বাক্যটি আরো একবার পড়ুন—একদিনে চব্বিশ হাজারও নিহত হয়েছে। কাবুলে মুজাহিদরা রুশ ও শিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছে। তারা শিয়াদেরকে পরাস্ত করেছে। শিয়ারা অন্যভাবে নির্মম প্রতিশোধ নিয়েছে। তারা মুজাহিদদের পরিবারকে ধ্বংস করেছে, তাদের সন্তানদের ধ্বংস করেছে। লোকেরা মসজিদে সমবেত হয়েছে। দুর্বল নারীরা ও শিশুরা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। শিয়ারা যখন জিহাদের ময়দানে পরাস্ত হয়েছে, তারা মসজিদে বিমান হামলা করেছে। নারী ও শিশুদের ওপর গোলা বর্ষণ করেছে। তাদেরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। মসজিদে কেউ আর জীবিত থাকে নি। তবে এক মায়ের কোলে একটি শিশু রক্ষা পায়। সেই মা ছিলো মৃত। গোলার আঘাতে সে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিলো। তার মাথা দ্বিখণ্ডিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো। তার মগজের একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে শিশুটির মুখের ওপর পড়ে। ফলে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে যায়। সৌদি আরবের এক যুবক আদেল তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন, “সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আমি ও কমান্ডার (তিনি ছিলেন কঠিন আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন) মসজিদে এলাম। আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। কমান্ডার আমাকে বললেন, তুমি কাঁদছো কেনো? দেখুন আফগান কমান্ডার আরব যুবককে বলছে, তুমি কাঁদছো কেনো? আমি বললাম, আমি কাঁদবো না? এরা কি আপনার পরিবার-পরিজন, আপনার আত্মীয়-স্বজন নয়? তিনি আমাকে বললেন, তাতো অবশ্যই। তবে যুদ্ধ এক দীর্ঘ-ব্যাপক ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া। যুদ্ধ দাবি করে আগুন ও রক্ত। এবং আমরা এই পথেই হাঁটবো। আর আমি এবং তুমি, দুইজনের জীবনই এই পথে শেষ হতে পারে। এখানে আরেকটি বিষয় আছে যা আমাদেরকে আরো বেশি আঘাত দেয়। তুমি কি জানো তা কী? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, এই বিনাশসাধনের পাশাপাশি আমাদের জাতিরই একটি দল আমাদেরকে মুশরিক আখ্যা দেয়। এইসব দৃশ্য দেখার চেয়ে তাদের এই অপবাদ আমাদের আরো বেশি আঘাত করে, আরো বেশি পীড়া দেয়।”





    আরও পড়ুন
    নবম পর্ব

  • #2
    মানুষ মনে করে আফগানিস্তান সহজেই এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
    অথচ আফগানিস্তানে এমন কোনো ঘর নেই যেখানে এতিমের কান্না নেই, বিধবার বিলাপ নেই, সন্তানহারার হাহাকার নেই।
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment

    Working...
    X