Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || একাদশ পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৭ || “ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।। শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. || একাদশ পর্ব

    ফিলিস্তিনের স্মৃতি
    ।।শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
    এর থেকে – একাদশ পর্ব

    সাদাকাতুল ফিতর জিহাদে দেয়ার বিধান

    হে বন্ধুরা, ভালো করে শুনুন। আবদুল্লাহ ইবনে বায ফতোয়া দিয়েছেন, সাদাকাতুল ফিতর আফগানিস্তানে পাঠানো জায়েয হবে। রাবেতা আল আলম আল ইসলামি রিয়াদে তিন মিলিয়ন রিয়াল সংগ্রহ করেছে। তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছেন, সব রিয়াল খরচ করে ফেলুন। একদিনের বেশি যেনো তা অবশিষ্ট না থাকে। তিন মিলিয়ন রিয়াল দিয়ে খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করুন এবং দ্রুত বণ্টন করে দিন। যারা আফগানিস্তান থেকে ইরানে হিজরত করেছে তারা এখন তীব্র সঙ্কটে আছে। তাদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

    তাদের কাছে কোনো জনকল্যাণমূলক সংস্থা যায় নি; আরব থেকেও যায় নি, আরবের বাইরে থেকেও আসে নি। না কোনো মুসলমান সংস্থা, না কোনো খ্রিস্টান সংস্থা, কোনো ধরনের সংস্থাই ইরানে প্রবেশ করে নি এবং একটি খাদ্যশস্যও তাদের দিকে বাড়িয়ে দেয় নি। কোনো কোনো সংস্থার ইরানে প্রবেশের বিষয়টি হয়তো নিষিদ্ধ ছিলো। ইরানের সরকারও হয়তো মুহাজিরদেরকে তেমনকিছু দেয়নি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমার বন্ধুরা ঈদুল ফিতরের রাতে খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করেন এবং ইরানে আশ্রিত আফগান মুহাজিরদের মাঝে বণ্টন করে দেন। এক কিলোগ্রাম, দেড় কিলোগ্রাম, দুই কিলোগ্রাম—এইভাবে তাঁরা মুহাজিরদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বণ্টন করেন। আমার ভাইয়েরা আমাকেও সামান্য দায়িত্ব দেন। আমরা দুই কিলোগ্রাম খাদ্যসামগ্রী নিয়ে একেকটি পরিবারের কাছে যেতাম আর তারা ঈদুল ফিতরের রাতে এই খাদ্যসামগ্রী পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলতো। দীর্ঘ দিন তারা অনাহারে থেকেছে, দীর্ঘ সময় তারা কোনো খাবার দেখে নি। আমরা শিশুদেরকে এতিমখানায় নিয়ে আসতাম। তারা এতিমখানায় একমাস দুইমাস থাকলেও ভাত খেতে জানতো না। তারা জানতো না কীভাবে ভাত খেতে হয়। তারা জীবনে কখনো ভাত দেখে নি।

    হেরাতে, আফগানিস্তান-ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকায় অনেক উদ্বাস্তু ছিলো। তারা দীর্ঘদিন ঘাস খেয়ে বেঁচেছে। দীর্ঘদিন ঘাস খাওয়ার ফলে তাদের ঠোঁট ছাগলের ঠোটের মতো খসখসে-কালো-শক্ত হয়ে গিয়েছিলো। সবুজ রং তাদের চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছিলো এবং তাদের ঘামে দেখা যাচ্ছিলো ঘাসের রং। তাদের দলপতি তাদের কাছে এলো এবং তাদেরকে বললো, 'তোমরা যদি এই জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে। এখানে তো কোনো পানি পাওয়া যায় না। তোমরা যদি কোনো ঝরনার পাশে চলে যেতে এবং সেখানে বসবাস করতে।' লোকেরা বললো, "ঝরনার পাশে ঘাস কোথায় পাবো? ঝরনার পাশে তো ঘাস নেই। ঘাস খেয়েই তো আমরা বাঁচি।'

    তারা টক ও জমাটবাধা দুধ খেতো। রুটি তাদের জুটতো না, ভাত তাদের জুটতো না, কোনোকিছুই তাদের জন্যে জুটতো না। ফলে তারা পাকস্থলীর রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের পাকস্থলীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তারা অস্থির হয়ে খাবার খুঁজে বেড়াতো। পুরোনো খাবার, গত বছরের পুরোনো খাবার। টক দুধ ছাড়া তারা কিছুই পেতো না। টক দুধ খেয়ে তারা জীবন ধারণ করতো। ফলে তাদের পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়। হায়, তারা সামান্য রুটিও পেতো না, সামান্য ভাতও পেতো না। অবশেষে তারা পাকস্থলীর চিকিৎসা নিতে আসতো। আল্লাহপাক হয়তো তাদেরকে লক্ষ্য করেই বলেছেন—

    أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ

    "তোমরা কি মনে করো যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহপাক জানবেন না তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে আর তোমাদের মধ্যে কে ধৈর্যশীল?' [সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৪২]


    জিহাদের ময়দানে থেকে ইসলামকে বোঝা

    মানবজাতি জানের জিহাদ করা ছাড়া ইসলামকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারবে না। আমি মালের জিহাদের কথা বলছি না; আমি বলছি জানের জিহাদের কথা। আমি বলছি 'জিহাদ বিন নাফস'-এর কথা। দৃশ্যটি কল্পনা করুন, আমাদের সামনে একটি পাহাড় আছে। পাহাড়টির উচ্চতা চার হাজার মিটার। কোনো আফগানকে বলা হলো, সে যেনো তার গাধার ওপর তার অস্ত্র-আসবাব-খাদ্য বোঝাই করে এবং গাধাটিকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে। তারপর গাধাটিকে নিয়ে নিচে নেমে আসে। দেখা যাবে, গাধাটি পথেই মারা গেছে এবং তার মালিকেরও প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনও দেখা গেছে, হয়তো কেউ খচ্চর নিয়ে পাহাড়ে উঠতে গেছে, খচ্চরটি পাহাড়ে ওঠার পথেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং রাস্তার কিনারায় এসে উপত্যকায় উল্টে পড়েছে। ফলে খচ্চর ও খচ্চরের আরোহী মারা পড়েছে। পাহাড়ে ওঠার এক মাইলের ভেতরে হয়তো ৭৫টি খাঁজ বা সিঁড়ি কাটা আছে। সিঁড়িগুলো বরফে ঢাকা। আপনাকে বলা হলো, আপনি এখন পাহাড়ে উঠবেন। আপনার পাশে একজন আফগানও আছে। তার সামনে আছে তার গাধাটি। সে তার গাধাটিকে উপরের দিকে ঠেলে তোলার চেষ্টা করছে। নামার সময়ও হয়তো সে তার গাধাটির সহায়তা নেবে। কিন্তু হঠাৎ গাধাটির পা পিছলে গেলো এবং সেটি উপত্যকায় পতিত হয়ে মারা পড়লো। সঙ্গে তার আরোহীও মারা পড়লো। আপনি ভাবুন যে আপনি ওপরের দিকে আরোহণ করছেন। আর ওপর থেকে অনেকগুলো ঘোড়া বা গাধা মালামাল নিয়ে নামছে। হঠাৎ কোনো ঘোড়ার বা গাধার পা পিছলে গেলো এবং আপনার ওপর এসে পড়লো। ঘোড়াটি বা গাধাটি হয়তো তার মাথায় আপনাকে সেঁধিয়ে নিয়ে নিচে পতিত হবে এবং আপনি আপনার জীবনের চূড়ান্ত পরিণতিতে উপনীত হবেন। আপনি বিষয়টিকে হালকা ভাববেন না এবং এটিকে সহজ মনে করার উপায় নেই। আপনি মনে করবেন না তাদের এই বিজয় এতো সহজেই সূচিত হয়েছে। আল্লাহপাক বলেছেন—

    أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ


    'তোমরা কি মনে করো তোমাদের কাছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের নিদর্শন আসার পূর্বেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? তাদেরকে গ্রস্ত করেছিলো দুর্দশা ও কষ্ট এবং তারা প্রকম্পিত হয়েছিলো। অবশেষে রাসুল এবং তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিলো তারা বলেছিলো, আল্লাহর সাহায্য আসবে কখন?' [সুরা বাকারা : আয়াত ২১৪]

    চিন্তা করুন কী ভয়াবহ দুর্দশায় তাঁরা পতিত হয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত রাসুলও আর্তস্বরে বললেন, আল্লাহর সাহায্য আসবে কখন?

    ফজরের আযানের পর আমরা নামায পড়তাম। তারপর আমরা ঘোড়ায় আরোহণ করতাম। সাধারণত এই পরিস্থিতিতে ঘোড়ায় আরোহণ করে কোথাও যাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা ঘোড়ায় চড়ে কিছুদূর যেতাম এবং নেমে পড়তাম। কিন্তু আরোহণ না করে কোনো উপায় থাকতো না। চারদিকে বরফের আস্তর পড়ে আছে। আপনি যেখানেই পা রাখবেন আপনার পা পিছলে যাবে। আমরা এক খণ্ড মাটি, কোনো পাথর পা পাথুরে জমিন অথবা মৃত গাধা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতাম, যাতে আমরা সেটার ওপর কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়াতে পারি। আমরা দুই হাত ও দুই পা— চারপায়ে হাঁটতাম। অর্থাৎ আমরা হামাগুঁড়ি দিয়ে এগোতাম। সেখানে মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে হাঁটা সম্ভব ছিলো না। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার যখন আরো একশো মিটার বাকি থাকতো, আমরা ক্লান্তিতে এতোটাই অবসন্ন হয়ে যেতাম যে নিজেদেরকে আর উঁচু করতে পারতাম না। এখনো আমার বিস্ময় জাগে, কীভাবে তখন আমার পক্ষে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা সম্ভব হয়েছিলো! এভাবে ক্লান্ত হয়ে যখন কোনো গাধা পতিত হওয়ার উপক্রম করতো, তার আরোহী তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করতো। সে সেটির পেছনে পেছনে কিছুদূর যেতো তারপর হতাশ হয়ে পড়তো। তারপর সে তার গাধাটিকে মৃত্যুর পথেই ছেড়ে দিতো।

    এইসব কষ্টে কখনো কখনো আমি অট্টহাসি হাসতাম। ভয়াবহ বিপদ কি মানুষকে অট্টহাসি হাসায়? মনে করুন, আমার সঙ্গে আপনি সফরে আছেন। আপনার গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পথে রয়েছে সাতটি পাহাড়। আপনি সেখানে আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলে আছেন ।

    ফজরের নামাযের সময় নামায পড়তে চাইতাম। তেমনিভাবে যোহরের ও আসরের নামায পড়তে চাইতাম। কিন্তু কোথায় পড়বো নামায? সে-সময়ে তো আমরা পাহাড়ের নিচে নামতে পারি না। মাগরিবের আযানের পর অবশ্য নামা যায়। সেই ফজর থেকে নিয়ে মাগরিব পর্যন্ত একটানা পহাড়ের ওপর দিয়ে পথচলা। যুবকেরা পাহাড়ের ওপর ক্লান্তির তীব্রতায় মৃত্যু কামনা করতো। কখনো কখনো ক্লান্তি মানুষকে পেয়ে বসে। পাহাড়ের ওপরে থাকতো বরফের স্তূপীকৃত স্তর। জ্যাকেট বা শীতের পোশাক থাকতো অল্প। বুক-পিঠ জ্যাকেট দিয়ে শুধু শরীরের মধ্যাংশ ঢাকা যেতো। সে-জ্যাকেটও বহন করা যেতো না। আমি তা খুলে গাধা বা ঘোড়ারপিঠে রেখে দিতাম। একবার একটি ঘটনা ঘটলো। পাহাড়ের শিখরে ওঠার আগে আমার কাছে এক আফগান এগিয়ে এলো। সে বললো, ঘোড়া তো মরে গেছে। তারপর সে ঘোড়ার পিঠের সব আসবাব নিজের কাঁধে তুলে নিলো এবং এগিয়ে চললো।

    পথে এক যুবকের দেখা পেলাম। তার বাড়ি ইরাক এবং নাম আলি। সে আমাকে বললো, 'তারা কি আমাকে এখানে এই জন্যে ফেলে রেখে গিয়েছে যে আমি এখানে মারা যাই?' আসলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এখানে কারো পক্ষে করার কিছু নেই। আপনি তার গাঁটরি বহন করতে পারবেন না। এমনকি তার কোনো কলমও আপনার পক্ষে বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তারা তাকে ফেলে গিয়েছে যাতে সে বরফের মাঝে মৃত্যুবরণ করে। তার কাছে স্লিপিং ব্যাগ ছিলো। সঙ্গীরা তাকে স্লিপিং ব্যাগের ভেতর ভরে শুইয়ে রেখে গিয়েছিলো। সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো এবং মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করছিলো। রাতে সে ছিলো একা। তারা তাকে পাহাড়ের চূড়ায় রেখে গিয়েছিলো যাতে সে সেখানে মারা যায়। তাদের কেউ তাকে কোনো সহায়তা করতে পারে নি। তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি তাদের ছিলো না। তারা জানিয়েছিলো, তুমি ধৈর্য ধরো, তোমার সঙ্গে আল্লাহপাক আছেন। সে সেখানে তিনদিন সেভাবে পড়ে ছিলো। অবশেষে একটি দল তার কাছে এলো এবং তাকে বহন করে নিয়ে গেলো। তারা তাকে হাসপাতালে পাঠালো। তার দুই পা অবশ হয়ে গিয়েছিলো। ফলে তার দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলতে হলো।

    কতো মানুষ এভাবে বরফের কবলে পড়ে ঠাণ্ডায় মৃত্যুবরণ করেছে। এরা সব আরব যুবক। আমরা আশা করি আল্লাহপাক তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।

    যিনি (কাতারের রাজধানী) দোহার মতো শহরে বাস করেন, যেখানে আছে স্নিগ্ধ ছায়া, কোমল পানীয়, সুপেয় পানি, আছে পর্যাপ্ত ফল ও মিষ্টান্ন, আছে রুটি এবং হরেক রকমের গোশত ও কাবাব, রসনাবিলাসের সব উপকরণ আছে, আছে আরাম-আয়েশের সব উপকরণ—তাঁর মনে হয়তো ইসলামের খেদমত করার আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে। তিনি তাঁর আকাঙ্ক্ষা মেটাবার জন্যে কোনো মজলিসে অংশগ্রহণ করবেন বা কোনো উপস্থিত মজলিসে বক্তৃতা দেবেন। তারপর দ্রুত তাঁর সুবাসিত স্নিগ্ধ আবাসে ফিরে আসবেন। এভাবেই তিনি ইসলামের খেদমত করার চেষ্ট করবেন।

    আর যারা আসলেই ইসলামের খেদমত করতে চায় নিজেদের জান দিয়ে, শরীরের রক্তবিন্দুকে জলে পরিণত করে, যারা ইসলামকে অধিষ্ঠিত করতে চায় চূড়ান্ত মর্যাদার আসনে, তাদের অবস্থা দেখুন। তারা সকালে পানশির থেকে তাখারের অভিমুখে রওয়ানা হয়। সারাদিন পথ হেঁটে সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ। মাগরিবের নামায পড়ে তারা আবার চলতে শুরু করে। শৈত্যপ্রবাহের ভেতর দিয়ে তারা চলতে থাকে। বরফ পড়তে শুরু করে। বরফের স্তূপ মাড়িয়ে তারা এগিয়ে যেতে থাকে। বরফের ছোটো ছোটো টুকরো তাদের জুতার ভেতর ঢুকে পড়ে। তারা হয়তো তা টের পায় না। তারা চলতে থাকে এবং তাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে। অবশেষে তারা আঞ্জুমানে পৌঁছায়। তারা তাদের মোজা খুলতে চায়। কিন্তু বিধিবাম! তাদের পা ফুলে গেছে এবং মোজা পায়ের সঙ্গে আটকে গেছে। ব্যথা শুরু হয়। তারা যতোই মোজা খোলার চেষ্টা করে ব্যথা ততোই বাড়ে। তারা চিৎকার শুরু করে। আশপাশের গ্রামের লোকজন এসে তাদের পাশে জড়ো হয়। তারা দেখতে পায় আগন্তুকদের পায়ের আঙ্গুলগুলো বরফের ছাঁচে পরিণত হয়েছে এবং কোনো কোনো আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে।

    জিহাদের বিষয়টা আসলেই কঠিন বিষয়। জিহাদ ছাড়া সব ইবাদতই ঘরে থেকে স্ত্রী-কন্যা-পুত্রদের মাঝে বাস করে পালন করা আপনার পক্ষে সম্ভব। আপনি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে নামায আদায় করছেন। আপনি রোযা রাখছেন, আপনার চারপাশে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা আছে। আপনি হজের সফরে গেলেন, ফোনে আপনার পরিবারের সবার খোঁজখবর রাখলেন। মনে হবে, কতো সুখেই না আছেন আপনি! আর জিহাদ ! আপনি সেখানে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে পারবেন না। আপনার পুত্রকন্যাদের নিয়ে যেতে পারবেন না। এয়ারকন্ডিশনারও নিয়ে যেতে পারবেন না। মার্সিডিস পাজেরো গাড়ি নিয়েও জিহাদে যাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি পাহাড়ের ওপর আপনার মার্সিডিস-পাজেরো চালাতে পারবেন না। নুরসাতান বা হিন্দুকুশ পর্বতের ওপর আপনার পাজেরো-মার্সিডিস চলবে না। সেখানে আপনার পা- ই আপনার গাড়ি। পাহাড়ের খাঁজই আপনার মার্সিডিস।

    একারণেই জিহাদ মানুষকে পার্থিব জীবন থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন রাখে। আপনি আপনার কোম্পানিতে থেকে রোযা আদায় করতে পারবেন। আপনি আপনার অফিসে থেকে নামায আদায় করতে পারবেন। আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যাকাত আদায় করতে পারবেন। কিন্তু আপনি এগুলোর কোনো একটিতে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ-কারণেই আল্লাহপাক বলেছেন-

    قُلْ إن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجِارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

    'বলো, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসাবাণিজ্য, যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা তোমরা করো এবং তোমাদের বাসস্থান, যা তোমরা ভালোবাসো, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহপাক সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।' [সুরা তওবা : আয়াত ২৪]

    যদি সমস্ত দুনিয়া একহাতে থাকে তাহলে অপর হাতে থাকবে জিহাদ। কারণ এই দুটিকে একত্র করা সম্ভব নয়।





    আরও পড়ুন
    দশম পর্ব
Working...
X