ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডার খণ্ডন -(১)

আল ফিরদাউসের সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম:
সম্প্রতি ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভি আমির খান মুত্তাকি হাফিযাহুল্লাহ’র ভারত সফর নিয়ে পাকিস্তানপন্থী কিছু গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের দাবি— “আফগানিস্তান ভারতের দালালি করছে” বা “ইমারতে ইসলামিয়া ভারতের ছত্রছায়ায় চলে গেছে।”
এ ধরনের দাবি শুধু রাজনৈতিক অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং ইমারতে ইসলামিয়ার মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতি অপমান।
.
ইমারতে ইসলামিয়া আজ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মতোই সার্বভৌম কূটনীতি পরিচালনা করছে। কোনো দেশের সঙ্গে সংলাপ করা মানেই দালালি নয়— বরং রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্যই কূটনীতি করা হয়।
ভারতের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মানবিক সহযোগিতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সংযোগ— কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক নির্ভরতার বিষয় নয়।
.
যারা আজ “দালাল” বলে চিৎকার করছে, তারাই বছরের পর বছর পশ্চিমাদের কাছে নিজেদের দেশ বিক্রি করেছে।
আমেরিকার নির্দেশে আফগান মাটিতে বোমা বর্ষণ, ড্রোন হামলায় নিরীহ মানুষ হত্যা, ন্যাটো বাহিনীকে লজিস্টিক সহায়তা— সবই করেছে পাকিস্তান।
“ওয়ার অন টেরর” এর নামে নিজেদের ভূমি অন্যের হাতে তুলে দিয়ে মুসলিমদের খুন ঝরাতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে!
আজ যখন ইমারতে ইসলামিয়া নিজস্ব কূটনীতি গড়ে তুলছে, তখন তাদের স্বাধীন উদ্যোগকেই পাকিস্তানপন্থী প্রচারমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
আজকের আফগানিস্তান কারো দালাল নয়। ইমারতে ইসলামিয়া ভারত, চীন, ইরান, রাশিয়া— সবার সঙ্গে সমান মর্যাদায় কথা বলছে।
এই ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতিই আফগান পররাষ্ট্রনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাচ্ছে।
দাস প্রভুর সম্পর্ক তো পাকিস্তান গড়ে তুলতে পারে তাদের পশ্চিমা প্রভুদের সাথে! কিন্তু ইমারতে ইসলামিয়া পারস্পরিক সম্মান ও বাস্তবতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলছে— নিজেদের স্বকীয়তা বন্ধক রেখে নয়।
যে পাকিস্তান নিজেকে মুসলিমদের তথাকথিত শুভাকাঙ্ক্ষী দাবি করে, সেই পাকিস্তানই দশকের পর দশক আফগান শরণার্থীদের নিপীড়ন করেছে, সীমান্তে গুলি চালিয়েছে, এমনকি আফগান অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে এসেছে।
তাদের প্রকৃত মুখ এখন সবার সামনে— মুসলিম ঐক্যের কথা বলে মুসলিম ভাইকেই শত্রু বানানোই তাদের রাজনীতি।
ইমারতে ইসলামিয়া আজ কোনো দেশের দালাল নয়, বরং একটি স্বনির্ভর ও সম্মানজনক রাষ্ট্রের প্রতীক।
যে আফগান জাতি চার দশক ধরে যুদ্ধ, দখল আর আগ্রাসনের মুখে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তাদেরকে “দালাল” বলা শুধু হাস্যকর নয়, বরং নিজেদের ভন্ডামির মুখোশ সবার সামনে তুলে ধরা।
আজকের আফগানিস্তান কূটনীতিতে নতুন পথ দেখাচ্ছে— যেখানে মুসলিম মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব ও বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।