তাওহিদের পতাকা বনাম ডলারের গোলামী: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ- ১

আল ফিরদাউসের সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম:
যখন আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারাত তাদের একজন মুসলিম ভাইকে শত্রুর হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে, এমনকি এর বিপরীতে নিজেদের শাসন ও ক্ষমতাকে কুরবানী করে দেয়। কিন্তু তবুও তারা বিক্রি করেনি নিজেদের আদর্শ, ঈমান। তারা আল ওয়ালা- ওয়াল বারা কে প্রাধান্য দিয়েছে।
ইমারাতে ইসলামিয়ার মুজাহিদরা দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে দাঁড়িয়েছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর পতাকার নিচে- তাওহিদের ভিত্তিতে, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের শাসকরা? তারা মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের নাম। ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাষ্ট্রকে তারা ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা আমেরিকার প্রভুত্বের কাছে এতটাই নত হয়েছে যে মুসলিম ভাই-বোনদের রক্তে তাদের হাত রঙিন। “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ” নামে তারা নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, নিজেদের ঘরেই আগুন ধরিয়েছে।
তারা একদিকে ইসলামের দোহাই দেয়, আর অন্যদিকে মার্কিন ড্রোনকে তাদের আকাশে উড়তে দেয়। তারা সীমান্তে মুসলিম যোদ্ধাদের গুলি করে, আবার ওয়াশিংটনে গিয়ে করজোড়ে প্রভুর সন্তুষ্টি চায়। আফিয়া সিদ্দিকীর মতো নিরপরাধ মুসলিম নারীকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়া—এটা শুধু একটি নারীকে বিক্রি করা নয়; এটি পুরো উম্মাহর সম্মানকে পদদলিত করা।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, যেখানে মুজাহিদরা ইসলামের জন্য লড়ছে, যেখানে নারী, শিশু, বৃদ্ধ সবাই দ্বীনের জন্য মুজাহিদদের কাতারে লড়ছে- সেই ভূমি আজ রক্তে ভিজে আছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গুলিতে ও আমেরিকার ড্রোনে। হাজারো পরিবার ছিন্নভিন্ন, অসংখ্য শিশু অনাথ—আর এর পেছনে রয়েছে ইসলামাবাদের অনুমতি, তাদের গোয়েন্দা সহযোগিতা, তাদের “প্রভুর” নির্দেশ পালন।
তারা নিজেদের সীমান্তে মুসলমান হত্যা করে, আবার জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে মুসলিম একতার কথা বলে। তাদের মুখে এক, অন্তরে আরেক। তাদের নীতি নেই, কেবল স্বার্থ আছে। তাদের ধর্ম নেই, কেবল নির্দেশ আছে—যা কেবল ওয়াশিংটন থেকে আসা।
কিন্তু আফগানিস্তান ভিন্ন। ইমারতে ইসলামিয়া প্রমাণ করেছে, যদি ঈমান থাকে, তাহলে কোনো পরাশক্তির সামনে মাথা নত করার প্রয়োজন নেই। তারা রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে, কিন্তু ঈমান বিক্রি করেনি। যখন পুরো দুনিয়া তাদের বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল, তখন তারা নিজেদের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলেছে: “আমরা মুসলমান, আমরা স্বাধীন জাতি।”
আজ ইতিহাস সাক্ষী, কারা আল্লাহর পথে দৃঢ় ছিল, দৃঢ় আছে আর কারা ডলারের দাসে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের শাসকরা আমেরিকার সন্তুষ্টি অর্জনে মুসলিম রক্তের লেনদেন করেছে, অথচ আফগানিস্তানের মুজাহিদরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জীবন দান করেছে।
এই দুই সরকারের মাঝে পার্থক্য এখানেই —
একদল স্বাধীনতার প্রতীক,
অন্যদল দাসত্বের প্রতিচ্ছবি।
আল্লাহর ইচ্ছায় খুব শীঘ্রই এই গোলামী, এই রক্তপাত, এই বিশ্বাসঘাতকতার অবসান হওয়া হবে। পাকিস্তানের জনগণের উচিত তাদের শাসকদের জবাবদিহি করা। যারা ডলারের লোভে মুসলিম জনগণের রক্ত বিক্রি করে, তাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সম্মান ও স্বাধীনতার জন্য আমাদের জাগতে হবে। আফিয়া সিদ্দিকীর মতো মাজলুমদের মুক্তির জন্য, মানুষের সম্মানের জন্য, এবং ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পাকিস্তান গাদ্দার সরকারের সাথে আমাদের জিহাদ অব্যাহত রাখতে হবে।
পাকিস্তানের শাসকদের প্রতি আমাদের বার্তা স্পষ্ট: আমাদের প্রভু আমেরিকা নয়, আমাদের প্রভু একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। মুসলিম জনগণের রক্তের দামে তোমাদের গোলামী চলতে পারে না। এই বিশ্বাসঘাতকতার অবসান হবে, এবং মুসলিম উম্মাহ আবারও তার মর্যাদা ফিরে পাবে। এই বিদ্রোহের আগুন বহুগুণে জ্বলে উঠবে, এবং পাকিস্তানের মাটি থেকে আমেরিকার গোলামীর শেকড় উপড়ে ফেলা হবে ইনশাআল্লাহ।