রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার : লায়লাতুর রাগায়েবঃ
এটা একটা আবিস্কৃত রজনী। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে প্রথম কথা হল, এখানে বৃহস্পতিবারকে লাইলাতুর রাগায়েব বলা হয়েছে। অথচ ‘লাইলাতুন’ অর্থ রাত। ফলে একটি ভুল বিষয় বলতে গিয়ে আরেকটি ভুল করেছেন। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত-এর স্থলে সরাসরি বৃহস্পতিবার বলে দিয়েছেন। আর যে ভিত্তিহীন বর্ণনার আলোকে তা আবিষ্কার করা হয়েছে তা এই-
১. যারা রজব মাসে রোযা রাখে তাদের গুনামাফীর জন্য ফেরেশতাকুল রজবের প্রথম জুমআর রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুআয় মগ্ন থাকেন।
২. যে ব্যক্তি রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার রোযা রাখে অতপর মাগরিব ও ইশার মাঝখানে দু’ রাকাত করে (বিশেষ পদ্ধতিতে) বার রাকাত নামায আদায় করে তার সকল প্রয়োজন পূরণ করা হয় এবং তার সকল গোনাহ মাফ করা হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা, বালুকণা, পাহাড়ের ওজন এবং বৃক্ষের পাতার সমপরিমাণ হয়। আর কিয়ামতের দিন সে তার পরিবারের সাতশ গোনাহগার জাহান্নামের উপযোগী মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
এ দুই বানোয়াট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রয়োজন পূরণের কথিত এ রাতের নাম রাখা হয়েছে ‘লাইলাতুর রাগায়েব’ আর বিশেষ পদ্ধতির নামাযের নাম রাখা হয়েছে ‘সালাতুর রাগায়েব’।
ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেছেন, সালাতুর রাগায়েব ও এর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীস বানোয়াট ও মিথ্যা। আবু ইসমাইল আনসারী, আবু বকর সামআনী, আবুল ফযল ইবনে নাসির, ইবনুল জাওযী সকলেই এ সংক্রান্ত রেওয়ায়াতকে ভিত্তিহীন বলেছেন।-লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ১৭১; মা সাবাতা বিস্সুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ,পৃ. ১৮০
১৫ই রজব : শবে এস্তেফতাহঃ
‘শবে এস্তেফতাহ’ অর্থ নতুন করে শুরু করার রজনী। ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘এস্তেফতাহ’ অর্থ নতুন করে শুরু করা।
এখানেও ১৫ রজব বলতে ১৫ এর দিবস উদ্দেশ্য নয়; বরং রাত। অর্থাৎ ১৪ই রজব দিবাগত রাত।
একটি জাল বর্ণনার উপর ভিত্তি করে এ রাতের আবিষ্কার। বর্ণনাটি হল, ‘এ রাতে চার রাকাত নামায বিশেষ নিয়মে আদায় করে নির্দিষ্ট পরিমাণ দুরূদ, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল আদায় করলে আল্লাহর পক্ষ হতে তার নিকট এক হাজার ফেরেশতা পাঠানো হয়। যারা ঐ ব্যক্তির জন্য নেকী লিখতে থাকেন এবং ঐ রাত পর্যন্ত যত গুনাহ সে করেছে সব মাফ করে দেন। অবশেষে তার কাঁধে হাত রেখে একজন ফেরেশতা বলেন, তুমি নতুন করে আমল শুরু কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন ...।’
গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নতুন করে আমল শুরু করার এই বানোয়াট বর্ণনার কারণেই সম্ভবত এই রাতের নাম রাখা হয়েছে ‘শবে ইস্তেফতাহ’।
উল্লেখিত বর্ণনা ছাড়াও এ রাত সম্পর্কে এ ধরনের আরো ভিত্তিহীন বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু আসল কথা হল, শরীয়তে ‘শবে ইস্তেফতাহ’ নামে বিশেষ কোনো রাতের অস্তিত্বই নেই। ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন, রজব মাসের বিশেষ পদ্ধতির নামাযের কোনো বর্ণনাই প্রমাণিত নয়।-লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ১৭১
২৭ শে রজব : লাইলাতুল মিরাজঃ
এ রাতকে লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ বলা হয়ে থাকে। কোনো কোনো পুস্তক-পুস্তিকায় স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে এবং সাধারণ জনগণের মাঝে তা প্রসিদ্ধ যে, মিরাজের ঘটনা রজব মাসের ২৭ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। এ কথাটি শুধু ইতিহাসের একটি বর্ণনার ভিত্তিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যার সনদ সহীহ নয়। অন্যথায় এটি কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস দ্বারাও প্রমাণিত নয়, হাদীস শরীফ কিংবা কোনো সাহাবীর উক্তি দ্বারা তো নয়ই। নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুধু এটুকুই পাওয়া যায় যে, মিরাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মাস, দিন, তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল নেই।
অনেক আলেম বলেছেন, মিরাজের রাত নিঃসন্দেহে একটি বরকতময় রাত ছিল কিন্তু এই রাতে যেহেতু বিশেষ কোনো আমল বা ইবাদত উম্মতের জন্য বিধিবদ্ধ হয়নি তাই এর দিন-তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত থাকেনি। -আলমাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া, ইমাম ইবনে কাছীর ২/৪৭১; লাতাইফুল মাআরিফ, ইমাম ইবনে রজব ১৩৪; ইসলাহি খুতুবাত, আল্লামা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ১/৪৬-৪৮
রজব মাস যেহেতু কুরআনে বর্ণিত চার সম্মানিত মাসের একটি সুতরাং এর পুরোটাই বরকতময়। তাই এ মাসের সবকটি দিন ও সবকটি রাতেই ইবাদাত বন্দেগীর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিৎ। কিন্তু এর ২৭ তারিখ যেহেতু শবে মিরাজ হিসেবে প্রমাণিত নয় তাই এ রাতকে বিশেষ ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট না করা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রসম রেওয়াজও ত্যাগ করা উচিত।
সমাপ্ত।
সূত্রঃ মাসিক আল কাউসার || ডিসেম্বর-২০১২ সংখ্যা।
এটা একটা আবিস্কৃত রজনী। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে প্রথম কথা হল, এখানে বৃহস্পতিবারকে লাইলাতুর রাগায়েব বলা হয়েছে। অথচ ‘লাইলাতুন’ অর্থ রাত। ফলে একটি ভুল বিষয় বলতে গিয়ে আরেকটি ভুল করেছেন। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত-এর স্থলে সরাসরি বৃহস্পতিবার বলে দিয়েছেন। আর যে ভিত্তিহীন বর্ণনার আলোকে তা আবিষ্কার করা হয়েছে তা এই-
১. যারা রজব মাসে রোযা রাখে তাদের গুনামাফীর জন্য ফেরেশতাকুল রজবের প্রথম জুমআর রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুআয় মগ্ন থাকেন।
২. যে ব্যক্তি রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার রোযা রাখে অতপর মাগরিব ও ইশার মাঝখানে দু’ রাকাত করে (বিশেষ পদ্ধতিতে) বার রাকাত নামায আদায় করে তার সকল প্রয়োজন পূরণ করা হয় এবং তার সকল গোনাহ মাফ করা হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা, বালুকণা, পাহাড়ের ওজন এবং বৃক্ষের পাতার সমপরিমাণ হয়। আর কিয়ামতের দিন সে তার পরিবারের সাতশ গোনাহগার জাহান্নামের উপযোগী মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
এ দুই বানোয়াট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রয়োজন পূরণের কথিত এ রাতের নাম রাখা হয়েছে ‘লাইলাতুর রাগায়েব’ আর বিশেষ পদ্ধতির নামাযের নাম রাখা হয়েছে ‘সালাতুর রাগায়েব’।
ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেছেন, সালাতুর রাগায়েব ও এর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীস বানোয়াট ও মিথ্যা। আবু ইসমাইল আনসারী, আবু বকর সামআনী, আবুল ফযল ইবনে নাসির, ইবনুল জাওযী সকলেই এ সংক্রান্ত রেওয়ায়াতকে ভিত্তিহীন বলেছেন।-লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ১৭১; মা সাবাতা বিস্সুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ,পৃ. ১৮০
১৫ই রজব : শবে এস্তেফতাহঃ
‘শবে এস্তেফতাহ’ অর্থ নতুন করে শুরু করার রজনী। ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘এস্তেফতাহ’ অর্থ নতুন করে শুরু করা।
এখানেও ১৫ রজব বলতে ১৫ এর দিবস উদ্দেশ্য নয়; বরং রাত। অর্থাৎ ১৪ই রজব দিবাগত রাত।
একটি জাল বর্ণনার উপর ভিত্তি করে এ রাতের আবিষ্কার। বর্ণনাটি হল, ‘এ রাতে চার রাকাত নামায বিশেষ নিয়মে আদায় করে নির্দিষ্ট পরিমাণ দুরূদ, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল আদায় করলে আল্লাহর পক্ষ হতে তার নিকট এক হাজার ফেরেশতা পাঠানো হয়। যারা ঐ ব্যক্তির জন্য নেকী লিখতে থাকেন এবং ঐ রাত পর্যন্ত যত গুনাহ সে করেছে সব মাফ করে দেন। অবশেষে তার কাঁধে হাত রেখে একজন ফেরেশতা বলেন, তুমি নতুন করে আমল শুরু কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন ...।’
গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নতুন করে আমল শুরু করার এই বানোয়াট বর্ণনার কারণেই সম্ভবত এই রাতের নাম রাখা হয়েছে ‘শবে ইস্তেফতাহ’।
উল্লেখিত বর্ণনা ছাড়াও এ রাত সম্পর্কে এ ধরনের আরো ভিত্তিহীন বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু আসল কথা হল, শরীয়তে ‘শবে ইস্তেফতাহ’ নামে বিশেষ কোনো রাতের অস্তিত্বই নেই। ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন, রজব মাসের বিশেষ পদ্ধতির নামাযের কোনো বর্ণনাই প্রমাণিত নয়।-লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ১৭১
২৭ শে রজব : লাইলাতুল মিরাজঃ
এ রাতকে লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ বলা হয়ে থাকে। কোনো কোনো পুস্তক-পুস্তিকায় স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে এবং সাধারণ জনগণের মাঝে তা প্রসিদ্ধ যে, মিরাজের ঘটনা রজব মাসের ২৭ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। এ কথাটি শুধু ইতিহাসের একটি বর্ণনার ভিত্তিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যার সনদ সহীহ নয়। অন্যথায় এটি কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস দ্বারাও প্রমাণিত নয়, হাদীস শরীফ কিংবা কোনো সাহাবীর উক্তি দ্বারা তো নয়ই। নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুধু এটুকুই পাওয়া যায় যে, মিরাজের ঘটনা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মাস, দিন, তারিখের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল নেই।
অনেক আলেম বলেছেন, মিরাজের রাত নিঃসন্দেহে একটি বরকতময় রাত ছিল কিন্তু এই রাতে যেহেতু বিশেষ কোনো আমল বা ইবাদত উম্মতের জন্য বিধিবদ্ধ হয়নি তাই এর দিন-তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত থাকেনি। -আলমাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া, ইমাম ইবনে কাছীর ২/৪৭১; লাতাইফুল মাআরিফ, ইমাম ইবনে রজব ১৩৪; ইসলাহি খুতুবাত, আল্লামা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ১/৪৬-৪৮
রজব মাস যেহেতু কুরআনে বর্ণিত চার সম্মানিত মাসের একটি সুতরাং এর পুরোটাই বরকতময়। তাই এ মাসের সবকটি দিন ও সবকটি রাতেই ইবাদাত বন্দেগীর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিৎ। কিন্তু এর ২৭ তারিখ যেহেতু শবে মিরাজ হিসেবে প্রমাণিত নয় তাই এ রাতকে বিশেষ ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট না করা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রসম রেওয়াজও ত্যাগ করা উচিত।
সমাপ্ত।
সূত্রঃ মাসিক আল কাউসার || ডিসেম্বর-২০১২ সংখ্যা।