সতর্কতাঃ শেয়ারকৃত লিঙ্কসমূহে বেপর্দা নারীর উপস্থিতি ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার থাকতে পারে। - মডারেটর
শত্রুর ধারণা
“নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শক্র"। [ সূরা নিসা ১০১]
Carl Schmitt তার The Concept of The Political বইয়ে 'বন্ধু-শত্রু'-র ধারণা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন-
“The enemy is not merely any competitor or just any partner of a conflict in general. He is also not the private adversary whom one hates. An enemy exists only when, at least potentially, one fighting collectivity of people confronts a similar collectivity. The enemy is solely the public enemy, because everything that has a relationship to such a collectivity of men, particularly to a whole nation, becomes public by virtue of such a relationship.”
“শত্রু নিছক কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী বা সাধারণভাবে কোনো সংঘাতের অংশীদার নয়। তিনি ব্যক্তিগত প্রতিপক্ষও নন, যাকে কেউ ঘৃণা করে। একটি শত্রু তখনই বিদ্যমান থাকে যখন, অন্তত সম্ভাব্যভাবে, লড়াইরত গোষ্ঠী অনুরূপ সমষ্টির মুখোমুখি হয়। একজন শত্রু কেবল জনসাধারণের শত্রু, কারণ এমন গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখলেই সে গণশত্রুতে পরিণত হয়"।i
কোনর ডয়েসও [1982] একই কথা বলেছেন যে, দ্বন্দ্বের কারণ হল 'আমরা-তারা' [Us-Them] মনোভাব।
রাজনীতির অংশ
“The friend, enemy, and combat concepts receive their real meaning precisely because they refer to the real possibility of physical killing. War follows from enmity. War is the existential negation of the enemy. War as the most extreme political means discloses the possibility which underlies every political idea, namely, the distinction of friend and enemy.”
“But as an ever-present possibility it is the leading presupposition which determines in a characteristic way human action and thinking and thereby creates a specifically political behaviour”
"বন্ধু, শত্রু এবং যুদ্ধের ধারণাগুলি তাদের প্রকৃত অর্থ তখনই যথাযথভাবে গ্রহণ করে যখন তা দ্বারা শারীরিক হত্যার সম্ভাবনাকে বুঝায়। যুদ্ধ শত্রুতা থেকে হয়। যুদ্ধ হল শত্রুর অস্তিত্বের অস্বীকার। সবচেয়ে চরম রাজনৈতিক উপায় হিসাবে যুদ্ধ সেই সম্ভাবনাকে প্রকাশ করে যা প্রতিটি রাজনৈতিক ধারণার অন্তর্নিহিত, যথা, বন্ধু এবং শত্রুর পার্থক্য।"
"কিন্তু একটি চির-বর্তমান সম্ভাবনা হিসাবে এটি একটি অগ্রণী অনুমান, যা মানুষের কর্ম এবং চিন্তাভাবনার চারিত্রিকভাবে নির্ধারণ করে। ফলে একটি বিশেষ রাজনৈতিক আচরণ তৈরি করে"
"কিন্তু একটি চির-বর্তমান সম্ভাবনা হিসাবে এটি একটি অগ্রণী অনুমান, যা মানুষের কর্ম এবং চিন্তাভাবনার চারিত্রিকভাবে নির্ধারণ করে। ফলে একটি বিশেষ রাজনৈতিক আচরণ তৈরি করে"
'যুদ্ধ বাস্তবায়িত হতে পারে', এটা একজন সুশৃঙ্খল চিন্তাবিদ হিসাবে স্মিটের বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনামূলক দাবি। এই দাবির মাধ্যমে, 'যুদ্ধ একটি অনিবার্য রাজনৈতিক পার্থক্য থেকে উদ্ভূত চিরস্থায়ী যৌক্তিক সম্ভাবনা' বলে শ্মিট অসাধারণ যুক্তি প্রদান করছেন। এর দ্বারা আমি বলতে চাচ্ছি যে, শ্মিট, রাজনৈতিক বিশ্বের একটি অনিবার্য শর্ত থেকে সংঘাতের সম্ভাবনা উদ্ভূত হয় বলে দাবি করেছেন।
এই সাধারণ জিনিসটা শিম্পাঞ্জি এবং অশিক্ষিত লোকেরাও বোঝে। অথচ উদারপন্থী, মার্কসবাদী এবং অনেক জাতীয়তাবাদী বোঝে না। কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই শিম্পাঞ্জির চেয়ে বোকা।
রাজনীতিতে সব কিছুই বন্ধু-শত্রুর পার্থক্য। রাজনীতি হল ক্ষমতার ইতিহাস এবং আধিপত্যের জন্য সংগ্রামের দ্বারা ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ করাই রাজনীতি।
সীমান্তের ধারণা
ডারিয়া ডুগিনা লিখেছেন, Where is the borderline that can clearly separate what is ours from what is not ours. In principle, this borderline can be drawn in terms of ideology. We can say who WE are and who THEY are.
“কোন ভূমি আমাদের আর কোনটা আমাদের নয়-তার স্পষ্ট সীমারেখা কোথায়। নীতিগতভাবে, আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে এই সীমারেখা টানা যেতে পারে। আমরা বলতে পারি আমরা কে এবং তারা কে।”ii
প্রকারভেদ
গ্রীকদের মতে, যুদ্ধ দুই প্রকার- বিদেশীদের সাথে [ভাল যুদ্ধ] এবং নিজেদের সাথে [ধ্বংসাত্মক]।
ভালো যুদ্ধ হল বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ, যা থুসিডাইডস, বা সক্রেটিস, বা জেনোফোনের মত অনুসারে গ্রহণযোগ্য। প্রাচীন গ্রীকরা বহিরাগত শত্রুর সাথে যুদ্ধকে ন্যায়সঙ্গত করেছিল। একটি বাহ্যিক যুদ্ধ বলতে অন্যদের সাথে, অপরিচিতদের সাথে, বর্বরদের সাথে যুদ্ধ হিসাবে বুঝানো হতো, যাদেরকে সাধারণত দখল করা যায়।
এছাড়া ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ আছে যেগুলোকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। পরবর্তীতে, প্লেটোর 'সংলাপ আইন’-এ, এগুলোকে বহিরাগত যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। প্লেটো স্বজাতির অভ্যন্তরীণ যুদ্ধকে গ্রীক শব্দ "polemoy" (pólemoj) দ্বারা নামকরণ করেছেন। গ্রীকরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের যুদ্ধ পরিচালনা করত, যেমন এথেন্স এবং স্পার্টার যুদ্ধ; এগুলোর ব্যাপারে প্লেটো এবং তার পূর্বসূরিদের মত হল, ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ না করে আপোষে মিটমাট করা উচিত। পলেময় হল, যখন স্বজাতিকে বহিরাগত ভাবা হয় কিংবা ধ্বংসাত্মক যুদ্ধকে ভাল যুদ্ধ বিবেচনা করা হয়। গ্রীকদের প্রকারভেদের মাঝেও আমরা স্মিটের 'আমরা-তারা' পার্থক্যকরণ লক্ষ্য করছি। তবে প্লেটো এটাকে একই আত্মার দুই নীতির কোন্দল বলতেন; দুই নীতি হল- পশুপালক ও ঘোড়ার বিরোধ। ঘোড়া কথা না শুনলে মনিব একটু চাবুক হাঁকাবে এটাই স্বাভাবিক। মানে, এক দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে 'আমরা-তারা' পার্থক্যকরণ নেই।
উল্লেখ্য ইসলামে জিহাদ ৩ প্রকার। এর মধ্যে জিহাদে কিতাল ২ প্রকার।
যৌক্তিকতা
যুদ্ধ একটি বাস্তবতা
প্রাকৃতিক বাস্তবতা
নাস্তিকদের মতে, কোন কিছু প্রকৃতিতে দেখা গেলেই তা ভাল কাজ, আর তাই পায়ুকামীরা ভাল কাজ করছে। সেই একই যুক্তিতে, যুদ্ধ ভাল কাজ। কারণ এই কাজ আমাদের চাচাতো ভাইয়েরা নিয়মিত করে। এখানে ঐতিহাসিক 'গম্বে শিম্পাঞ্জি যুদ্ধ' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল সম্পদ ও এলাকা দখল কেন্দ্র করে। বিজ্ঞানী গুডাল Goodall] American Journal of Physical Anthropology-তে এই ব্যাপারে লম্বা গবেষণা প্রকাশ করেছে।
“Do other animals go to war? Since our close relative the chimpanzee is often thought of as war-like, we took the question to Nicholas E. Newton-Fisher, a primate behavioral ecologist at the University of Kent.
Newton-Fisher says by email to National Geographic;
“It probably depends on the definition of war, there’s good evidence that chimpanzees conduct deliberate raids on neighbouring communities, and that this can lead to annexation of territory. For instance, during a ten-year study of a chimp family in Uganda's Kibale National Park, the primates killed or injured 18 chimps from other groups and took over their land.”
“অন্য প্রাণীরা কি যুদ্ধে যায়? যেহেতু আমাদের নিকটাত্মীয় শিম্পাঞ্জিকে প্রায়শই যুদ্ধবাজ মনে করা হয়, তাই আমরা প্রশ্নটি নিকোলাস ই. নিউটন-ফিশারের কাছে করেছিলাম, কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাইমেট আচরণগত পরিবেশবিদ"। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে ইমেলের মাধ্যমে নিউটন-ফিশার বলেছেন; "এটি সম্ভবত যুদ্ধের সংজ্ঞার উপর নির্ভর করে, এর ভাল প্রমাণ রয়েছে যে, শিম্পাঞ্জিরা প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের উপর ইচ্ছাকৃত অভিযান পরিচালনা করে এবং ভূমি দখল করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উগান্ডার কিবালে ন্যাশনাল পার্কে একটি শিম্প পরিবারের দশ বছর যাবত পর্যবেক্ষণের সময়, প্রাইমেটরা অন্যান্য গোষ্ঠীর 18 জন শিম্পকে হত্যা বা আহত করেছিল এবং তাদের জমি দখল করেছিল।"iii
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Richard Wrangham নিউইয়র্ক টাইমসে ‘Going ape’ শিরোনামের খবরে, যুদ্ধকে জৈবিক অভিযান বলে উল্লেখ করেছেন।iv শুধু তাই নয়, যুদ্ধের কৌশলগত দিক থেকেও চাচাতো ভাইয়েরা সাদৃশ্য রক্ষা করে। বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী E.O. Wilson-এর মতে, বিবর্তনের দ্বারা পরার্থবাদ ও আগ্রাসনের মত মানুষের সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া নির্দিষ্ট হয়।v
তবে নাস্তিকদের এখানে একটা অহংকার মিশ্রিত দাবি আছে, তা হল- প্রাচীন যুগের মানুষরা অশিক্ষিত, মূর্খ, বর্বর, হিংস্র, জংলি ছিল; যুদ্ধ হল অসভ্যদের জন্য সমাধান। এটা তারা অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, যা তাদের কথাবার্তা শুনলেই বুঝা যায়। তারা মনে করে, শুধু তারাvi এবং পশ্চিমারাvii হল সর্বাধিক বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, সভ্য ও উন্নত মানব। যদিও আজকের দিনে আমরা এরিস্টটল, সক্রেটিস তেমন জন্মাতে দেখি না; আর আমাদের বুদ্ধি ব্যাপক হারে কমছে বলেই জানা যায়।viii
রাজনৈতিক বাস্তবতা
‘only the dead have seen end of war’. – Plato
মহাজাগতিক ক্রিয়া
‘war is the father of all, and king of all’. – Heraclitus
আইনসিদ্ধ
Ben Bruce Blakeney (July 30, 1908 – March 4, 1963) একজন আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা এবং আইনজীবী ছিলেন। টোকিওর বিচারে, তিনি শিগেনোরি টোগো এবং ইয়োশিজিরো উমেজু-এর পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছিলেন৷ 14 মে, 1946 তারিখে, তিনি লিখেছিলেন:
"War is not a crime. The laws of war are evidence of the legality of war. The laws by which wars are started, announced, how they are fought, and how they are ended are not the same as war itself. If it is illegal, it is utterly meaningless. International law has never considered war to be illegal in the pursuit of national interests.”
"Never in history has the planning or conduct of war been tried as a crime in a court of law. We are aware of the prosecution's aspiration to establish new laws in this trial. However, Such an attempt would prevent the realization of a new and higher law, and the count labeled 'crimes against peace' must therefore be dismissed from this court."
"যুদ্ধ কোনও অপরাধ নয়৷ যুদ্ধের আইন যুদ্ধের বৈধতার প্রমাণ৷ কোন আইন দ্বারা যুদ্ধ শুরু হয়েছে, ঘোষণা করা হয়েছে, কীভাবে যুদ্ধ করা হয়েছে এবং কীভাবে শেষ করা হয়েছে তা স্বয়ং যুদ্ধের অনুরূপ নয়। যদি এটা বেআইনি হয় তবে তা সম্পূর্ণ অর্থহীন। আন্তর্জাতিক আইন কখনোই জাতীয় স্বার্থের জন্য যুদ্ধকে অবৈধ বলে মনে করেনি।
ইতিহাসে কখনও যুদ্ধের পরিকল্পনা বা পরিচালনাকে আইনের আদালতে অপরাধ হিসাবে বিচার করা হয়নি। আমরা এই বিচারে প্রসিকিউশনের নতুন আইন প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে অবগত। যাইহোক, এই ধরনের একটি প্রয়াস একটি নতুন এবং উচ্চতর আইনের বাস্তবায়নকে বাধা দেবে, এবং তাই এই আদালত থেকে 'শান্তিবিরোধী অপরাধ' লেবেলকে বরখাস্ত করতে হবে।"
ইতিহাসে কখনও যুদ্ধের পরিকল্পনা বা পরিচালনাকে আইনের আদালতে অপরাধ হিসাবে বিচার করা হয়নি। আমরা এই বিচারে প্রসিকিউশনের নতুন আইন প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে অবগত। যাইহোক, এই ধরনের একটি প্রয়াস একটি নতুন এবং উচ্চতর আইনের বাস্তবায়নকে বাধা দেবে, এবং তাই এই আদালত থেকে 'শান্তিবিরোধী অপরাধ' লেবেলকে বরখাস্ত করতে হবে।"
যুদ্ধের কারণ
দ্বিমত
যুদ্ধের মতই আরেকটি বাস্তবতা হল, মানব জাতি কখনও একটি বিষয়ে সর্বসম্মত হয় না, কখনও হয় নি, কখনও হবেও না। আর এমন বহু পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়, যখন শুধু তরবারি আমাদের মাঝে মীমাংসা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দেশ কি দ্বারা পরিচালিত হবে, গণতন্ত্র নাকি সমাজতন্ত্র? অর্থনীতি কি হবে, পুঁজিবাদ নাকি মার্ক্সবাদ? একই সঙ্গে উভয় মতবাদ সত্য হওয়া তো পরের কথা, সহাবস্থান করতে পারে না। মতবাদের বিষয়টা-ই এমন; কখনো একমত হওয়া যায় না।
https://image.slideserve.com/1088690/hobbes-approach-to-conflict-l.jpg
“তোমার প্রতিপালক চাইলে মানুষকে অবশ্যই এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে"। [সূরা হুদ ১১৮]
Ideas are bulletproof. প্রত্যেক মতবাদ মৃত্যুঞ্জয়ী। ঈমানের মত কুফর-শিরক কিয়ামাত অবধি টিকে থাকবে। ঈসা [আঃ] সব কাফির হত্যা করলেও কুফর আবার ফিরে আসবে; কাফিরদের উপর কিয়ামাত অবতীর্ণ হবে। এমতাবস্থায়, যেকোন একটি মতাদর্শকে অপরের উপরে বিজয়ী হতে হয়, নতুবা ইতিহাস স্থবির হয়ে যায়।
মুসলমান কখনও তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ দ্বিমতের ব্যাপারে যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে না। তার কাছে যুদ্ধের জন্য একমাত্র যথাযথ কারণ হল- ঈমান ও কুফরের দ্বন্দ্ব। আল্লাহ বলেন-
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاهُمۡ صٰلِحًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ فَاِذَا هُمۡ فَرِیۡقٰنِ یَخۡتَصِمُوۡنَ .۴۵
“আমি অবশ্যই সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম, এ আদেশসহ যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর। কিন্তু ওরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হল"। [ কুরআন ২৭:৪৫]
আহসানুল বায়ানে বলা হয়েছে, এ আয়াত থেকে মু’মিন ও কাফের উভয়কে বুঝানো হয়েছে। আর বিতর্কের অর্থ, প্রত্যেক দলের দাবী যে তারাই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।
দ্বিমত থেকে শত্রুতা থেকে যুদ্ধ
“নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শক্র"। [ সূরা নিসা ১০১]
এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আরও স্পষ্ট, যেখানে রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং প্রায়ই ভিন্ন ভিন্ন দলের সংঘর্ষ লেগে যায়।
একজন মুমিনের দৃষ্টিতে- মুমিন ও কাফির নিয়েই পৃথিবী। কাফিরদের দুনিয়ায় বাঁচিয়ে রাখার পৃথক উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হল-
"আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের নিকট হতে প্রতিশোধ নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি চান তোমাদের কিছুকে অপরদের দ্বারা পরীক্ষা করতে"। [কুরআন ৪৭:৪]
জিওভানি জেনটাইল তার 'Genesis and Structure of Society' বইতে যুদ্ধের লক্ষ্যগুলি এভাবে বর্ণনা করেছেন:
“Thus War does not derive from an inhuman desire for solitude. The other people, with whom we disagree, are our collaborators; they play their part in the formation of that spiritual organization or patrimony which is our world. The cause of war is only dissent, and its end therefore is nothing but the conquest of this dissent”.
“সুতরাং যুদ্ধ একাকীত্ব লাভের একটি অমানবিক আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয় না। অন্যান্য লোকেরা, যাদের সাথে আমরা একমত নই, তারা আমাদের সহযোগী; তারা সেই আধ্যাত্মিক সংগঠন বা দেশ গঠনে তাদের ভূমিকা পালন করে যা আমাদের পৃথিবী। যুদ্ধের কারণ শুধুমাত্র ভিন্নমত, এবং এর পরিণতি তাই এই ভিন্নমতের বিজয় ছাড়া আর কিছুই নয়।"
একই স্বার্থ
মুসলিমরা রব্বুল আলামীনের স্বার্থকে সামনে রেখে কাজ করলেও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বৈরাচারী স্বার্থে তা আঘাত হানে। এভাবে যুদ্ধের সূচনা হতে পারে। ফলদায়ী [consequentialist] নৃতত্ত্বের গবেষক René Girard তার Violence and The Sacred বইয়ে বলেছেন যে, একই বস্তু লাভের চেষ্টায় রত গোষ্ঠীসমূহ বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এই দ্বন্দ্বটি 'বলির পাঁঠা পদ্ধতি' দ্বারা সমাধান করা হয়, যেখানে গোষ্ঠীর একটি নির্দিষ্ট অংশের উপর পরিচালিত সহিংসতার মাধ্যমে অপর গোষ্ঠীর ধ্বংসাত্মক শক্তি পরিশুদ্ধ হয়। তিনি Eric Gans ও Adam Katz-এর মত-ই বলির পাঁঠা পদ্ধতিকে সংস্কৃতি ও ভাষার উদ্ভব হিসাবে দেখেন।
পাশাপাশি, ইসলামি খিলাফাতের নীতি হল, 'এক দেশ, এক নেতা'। কথিত গণতান্ত্রিক দেশের মত বিরোধী দল না থাকায়, অভ্যন্তরীণ কলহ থাকে না; রাষ্ট্র নিজের উৎকর্ষ সাধনের জন্য পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে এবং জনগণ একজন মাত্র আমিরুল মুমিনীনের নেতৃত্বে থাকায় একটি দেহের ন্যায় কাজ করে। সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন হয়, 'তাওহীদের সংরক্ষণ'।
এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা নাগরিকদের আগ্রাসনের সুযোগ দেয়, নিজ রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয়, বরং যারা তাদের রাজনৈতিক এবং সম্ভবত সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনধারাকে ধ্বংস করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে। কথিত গণতন্ত্রের ন্যায় মতবিরোধপূর্ণ জনমত প্রভাবিত দোদুল্যমান ও সিদ্ধান্তহীনতায় আক্রান্ত সরকার ব্যবস্থার আপাদমস্তক [বটোম-আপ] বিপ্লব নয়; বরং ইমামের একক সিদ্ধান্ত-ই জনগণের পূর্ণ ঐক্যমত, মস্তক নিয়ন্ত্রিত [টপডাউন] বিপ্লব। এই রাজনৈতিক কাঠামো-তে বিজয় সুনিশ্চিত ও সুনির্ধারিত, যদি অন্য নিয়ামক প্রভাব না ফেলে। যে কেউ এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে, সে হয় আবেগ তাড়িত নতুবা সাধারণ বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা অস্বীকারকারী।
https://odysee.com/@pmartinuzs:2/Ant...-truediltom-:d
উদ্দেশ্য
আত্মরক্ষা ও শত্রুর বিনাশ
“নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শক্র"। [ সূরা নিসা ১০১]
মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন,
“কেবল বিপুল পরিমাণ শত্রুকে ধ্বংস করেই নিজেকে কার্যকরীভাবে রক্ষা করা যায়। অতএব, 'নিজেকে রক্ষা করা ও শত্রুকে ধ্বংস করা'- এই উদ্দেশ্যটাই হল যুদ্ধের দর্শনগত সারমর্ম"।ix
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদিন ও একরাতের ‘রিবাত’ (সীমান্ত প্রহরা) ক্রমাগত এক মাসের সিয়াম এবং সমগ্র রাত ইবাদাতে কাটিয়ে দেয়া অপেক্ষা উত্তম। যদি এমতাবস্থায় কারো মৃত্যু হয়, তাহলে তার সীমান্ত প্রহরার পর্যায়ক্রমিক সওয়াব সর্বদা অব্যাহত থাকবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে তার রিযক জারী থাকবে এবং সে কবরের ফেতনা বা পরীক্ষা (প্রশ্নোত্তর) থেকে নিরাপত্তা পাবে। [মুসলিমঃ ১৯১৩]
কার্ল স্মিট তার কনসেপ্ট অফ পলিটিক্যাল বইয়ে লিখেছেন,
“War follows from enmity. War is the existential negation of the enemy. It is the most extreme consequence of enmity. It does not have to be common, normal, something ideal, or desirable. But it must nevertheless remain a real possibility for as long as the concept of the enemy remains valid”
"যুদ্ধ শত্রুতা থেকে হয়। যুদ্ধ হল শত্রুর অস্তিত্বের অস্বীকার। এটা শত্রুতার চরম পরিণতি। একে সাধারণ, স্বাভাবিক, আদর্শ কিছু বা পছন্দনীয় কিছু হতে হবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও যতদিন শত্রুর ধারণা যৌক্তিক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এটি একটি বাস্তব সম্ভাবনা হয়ে থাকবে।
মজলুমকে সাহায্য করা
আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নর-নারী এবং শিশুদের জন্য, যারা বলে, হে আমাদের রব! এ জনপদ-যার অধিবাসী যালিম, তা-থেকে আমাদেরকে বের করুন; আর আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কাউকে অভিভাবক করুন এবং আপনার পক্ষ থেকে কাউকে আমাদের সহায় করুন"। [নিসা ৭৫]
প্রতিশোধ
আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদের হাতে অপরাধীদের শাস্তি দিবেন। তিনি বলেন, "এবং ওদের হৃদয়ের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে তওবা করার তওফীক দিয়ে থাকেন। [সূরা তাওবাহ ১৫]
ওয়াকার লিখেছেন, "Revenge was necessary in historical intertribal warfare, just as in modern gang conflicts, because showing weakness would result in further attacks, that cycle of revenge could result in tribes eradicating each other."
"আধুনিক গ্যাং-দ্বন্দ্বের মতোই ঐতিহাসিক আন্তঃ-উপজাতি যুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, কারণ দুর্বলতা দেখালে আরও পাল্টা-আক্রমণ হবে, প্রতিশোধের চক্রটি উপজাতিদের একে অপরকে নির্মূল করতে পারে।"x
তবে একমাত্র প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে আক্রমণ বৈধ নয়, প্রতিশোধ হল উপরি পাওনা।
মুনাফিক সনাক্তকরণ
আল্লাহ বলেন, অতঃপর যদি সুস্পষ্ট মর্মবিশিষ্ট কোন সূরা অবতীর্ণ করা হয় এবং তাতে যুদ্ধের কোন নির্দেশ থাকে, তাহলে তুমি দেখবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা মৃত্যুভয়ে বিহ্বল মানুষের মত তোমার দিকে তাকাচ্ছে। [কুরআন মাজীদ ৪৭:২০]
গণিমত
এর দ্বারা মুসলিম দেশ অর্থনৈতিকভাবে সবল হবার সম্ভাবনা থাকে এবং কাফির গোষ্ঠী দূর্বল ও অপমানিত হয়। তবে প্রধান উদ্দেশ্য অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি হতে হবে।
গণহত্যা
এক্ষেত্রে তাদের প্রিয় বিষয় হল, বনু কুরাইজার সেনা বিদ্রোহ। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে একই শাস্তির কথা আছে। বিদ্রোহ আর গণহত্যাকে সমার্থক হিসাবে ব্যবহার করে তারা শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাদের মূর্খতার পরিচয়ই দেয় না, পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার প্রমাণ দেয়।
উল্লেখ্য, গণহত্যার ধারণা ও আইনের প্রবর্তন করা হয়েছিল পরাজিত রাষ্ট্রকে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে। একারণেই গণহত্যার আসামীদের শুধু পরাজিত দেশের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায়, যদিও বিজয়ী রাষ্ট্র বর্বরতায় কোনদিক থেকেই পিছিয়ে ছিল না। এসব পারিভাষিক শব্দ হল পশ্চিমাদের রাজনৈতিক অস্ত্র মাত্র। [পড়ুন- ইরাকে গণহত্যা, সিরিয়ায় গণহত্যা]
মূল আলোচনায় ফেরা যাক, হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফক্বীহ আল্লামা ইবনু হুমাম (রহঃ) (৮৬১ হি.) লিখেন:
في قوله تعالى: "وقاتلوا المشركين كافة كما يقاتلونكم كافة" فأفاد أن قتالنا المأمور به جزاء لقتالهم ومسبب عنه
"আল্লাহর বাণী (সকল মুশরিকদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করো যেমন তারা তোমাদের বিরূদ্ধে সকলে যুদ্ধ করে) [তাওবা: ৩৬] সুতরাং বোঝা গেল, তাদের বিরূদ্ধে আমাদের যুদ্ধ করার আদেশ তাদের যুদ্ধের বদলাস্বরূপ এবং এটাই (যুদ্ধের) কারণ।xi
ইমাম আস সন’আনী (রহঃ) লিখেছেন:
فهذه عشر آيات دالة على أن الأمر بالقتال للمشركين ليس علته وسببه مجرد الكفر، وأما السنة فدلت على ذلك بالأقوال والأفعال
"আর এই দশ আয়াত হচ্ছে এই বিষয়ের দলীল যে, মুশরিকদের বিরূদ্ধে কিতালের কারণ ও মাধ্যম কেবলমাত্র কুফর নয়। আর সুন্নাহ (রাসুলের) কথা ও কাজ দ্বারা এটাই প্রমাণ করে।"xii
আল্লামা শায়বানী আল হানাফী (রহঃ) লিখেছেন:
إن الكفر وإن كان من أعظم الجنايات فهو بين العبد وربه جل وعلا ، وجزاء مثل هذه الجناية يؤخر إلى دار الجزاء
"নিশ্চয়ই কুফর- যদিও তা সবচেয়ে বড় অপরাধ- বান্দা ও তার রবের মাঝে (সীমাবদ্ধ)। আর এমন অপরাধের শাস্তি প্রতিদানের জায়গার (আখিরাহ) জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।"xiii
ইমাম ইবনু হাজার আল ‘আসক্বালানী (রহঃ) (৮২৫ হি.) লিখেছেন:
قال ابن دقيق : لا يلزم من إباحة المقاتلة إباحة القتل لأن المقاتلة مفاعلة تستلزم وقوع القتال من الجانبين , ولا كذلك القتل . وحكى البيهقي عن الشافعي أنه قال : ليس القتال من القتل بسبيل , قد يحل قتال الرجل ولا يحل قتله
"ইবনু দাক্বীক্ব(রহঃ)বলেন: যুদ্ধ করার বৈধতা থাকলে হত্যার বৈধতা থাকা আবশ্যক হয় না। কারণ যুদ্ধ হচ্ছে দুই পক্ষের সম্মিলিত কর্ম, কিন্তু হত্যা করা এমন নয়।” বায়হাক্বী (রহঃ) ইমাম আশ-শাফি’য়ী(রহঃ)থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন – যুদ্ধ আর হত্যা একই জিনিস নয়। কখনো কোন ব্যাক্তির বিরূদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ হলেও তাকে হত্যা করা বৈধ হয় না।"xiv
--------------------------------------------------
I Schmitt, C. (2007) in The concept of the political. Chicago: University of Chicago Press, p. 28.
ii Dugina, D. (2023) On the frontier metaphysics, The Fourth Political Theory. Available at: http://www.4pt.su/en/content/frontier-metaphysics (Accessed: 14 August 2023).
iii Langley, L. (2021) Do animals go to war?, Animals. National Geographic. Available at: https://www.nationalgeographic.com/a...anzees-science (Accessed: January 11, 2023).
iv Ridley, M. (1996) Going ape, The New York Times. The New York Times. Available at: https://www.nytimes.com/1996/10/27/books/going-ape.html (Accessed: January 11, 2023).
v Hume, D.W. (2013) Anthropology: Tribal warfare, Nature News. Nature Publishing Group. Available at: https://www.nature.com/articles/494310a (Accessed: January 12, 2023).
vi Osborne, H. (2017) Atheists More Intelligent Because They Can Override "Instinctive" Religious Beliefs—But It Will Be Their Downfall, Newsweek. Newsweek. Available at: https://www.newsweek.com/atheism-int...lection-610982 (Accessed: January 10, 2023).
viiHeck PR, Simons DJ, Chabris CF. 65% of Americans believe they are above average in intelligence: Results of two nationally representative surveys. PLoS One. 2018 Jul 3;13(7):e0200103. doi: 10.1371/journal.pone.0200103. PMID: 29969480; PMCID: PMC6029792.
Viii a) Humans are slowly but surely losing intellectual and emotional abilities, article suggests (2012) ScienceDaily. ScienceDaily. Available at: https://www.sciencedaily.com/release...1112135516.htm (Accessed: January 10, 2023). b) Moody, O. (2018) Dumb and dumber: Why we're getting less intelligent, News | The Times. The Times. Available at: https://www.thetimes.co.uk/article/d...?region=global (Accessed: January 10, 2023). c) Air pollution causes 'huge' reduction in intelligence, study reveals (2018) The Guardian. Guardian News and Media. Available at: https://www.theguardian.com/environm...-study-reveals (Accessed: January 10, 2023). d) Marten Scheffer et al, The rise and fall of rationality in language, Proceedings of the National Academy of Sciences (2021). DOI: 10.1073/pnas.2107848118
ix রহমান আ ল ম ফজলুর (n.d.) “১,” in সমর দর্শন. ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলা একাডেমী, pp. ১১-১১.
X Robert S. Walker, Drew H. Bailey. Body counts in lowland South American violence. Evolution and Human Behavior, 2012; DOI: 10.1016/j.evolhumbehav.2012.08.003
xi ফাতহুল ক্বাদীর, ৪/২৭৭-২৭৯
xii আর-রিসালাহ, ১৬৩
xiii শারহু সিয়ারিল কাবীর, ৩/১৮২
xiv ফাতহুল বারী, ১/৭৬
Comment