Announcement

Collapse
No announcement yet.

মডারেইট শায়েখ ও স্কলারগণ কর্তৃক বহুল সমালোচিত জঙ্গিবাদ ও কট্টরপন্থার শ্রেণিবিন্যাস ও স্বরূপ সন্ধান

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মডারেইট শায়েখ ও স্কলারগণ কর্তৃক বহুল সমালোচিত জঙ্গিবাদ ও কট্টরপন্থার শ্রেণিবিন্যাস ও স্বরূপ সন্ধান

    বাংলাদেশের জনৈক ইসলামিক স্কলার শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন— আমরা ধাপে ধাপে শরিয়াহ আইনের দিকে যাবো। ইন্ট্যালেকচুয়ালি এবং গ্র্যাজুয়ালি শরিয়াহ আইনের দিকে মুভ করব। তবে জঙ্গিবাদ ও কট্টরপন্থার মাধ্যমে নয়। (অর্থাৎ জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা দিয়ে তারা শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করবেন না)।

    এই স্কলাররা সব সময় ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মাসলাকগত ইখতিলাফের উপরে উঠে ইসলামের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। নিঃসন্দেহে এটি মহৎ ও প্রশংসনীয়। কিন্তু যারা জিহাদের কথা বলেন, কিতালের মাধ্যমে শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার দাওয়াত দেন তাদের ব্যাপারে এই উদারপন্থী শায়েখরা কেন যেন চরমভাবে কট্টরপন্থার পরিচয় দেন! কোনোভাবেই তারা জিহাদিদেরকে মেনে নিতে পারেন না। তাদের মতকে সম্মান জানিয়ে ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে ঐকমত্য পোষণ করতে পারেন না। তারা এ ব্যাপারে যিরো টলারেন্ট। তাদের এক দফা এক দাবি— বাংলাদেশে জিহাদিদের উত্থান ঠেকাতেই হবে। ওরা জঙ্গি, মানহাজি, চরমপন্থি। ওদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। ওদের কারণেই এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা আটকে আছে।

    এই মডারেইট স্কলাররা হেকমতের দোহাই দিয়ে পারলে ভারত-আমেরিকার সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হবে তবুও জিহাদিদের সাথে বিন্দুমাত্র কোনো আপোষ করবে না।

    যাইহোক, এইসব দা'ইয়দের দ্বারা সমালোচিত 'চরমপন্থা' কিংবা 'কট্টরপন্থা' আসলে কী?

    সাধারণভাবে কট্টরপন্থা হলো এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি বা আন্দোলন যা প্রচলিত সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ব্যবস্থা ও আদর্শের বিরোধিতা করে এবং তা পরিবর্তন বা বিপ্লব করার চেষ্টা করে। তবে ইসলামি কট্টরপন্থার সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। আসলে এটি পরিস্থিত ও অবস্থান ভেদে ভিন্ন হয়। যে স্থানে ইসলামের যে যে বিধান কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের জন্য যতটুকু হুমকিস্বরূপ সেখানে ইসলামের সে সে বিধান সেই পরিমাণে কট্টরপন্থা।


    বাস্তব কিছু উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনা করা যাক—

    ১. বাংলাদেশ যদিও একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র, মুসলিমরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে বাংলাদেশে নামায রোজা পালন করা কিংবা তাবলিগি ধাঁচের দ্বীনি দরসগাহগুলোর অস্তিত্ব কট্টরপন্থার সিম্বল না। এমনকি নারীরা শরয়ী পর্দা করলেও সাধারণত এটাকে চরমপন্থা হিসেবে দেখা হয় না। তবে জিহাদপ্রেমী প্রজন্মের উত্থান, কিতালের মাধ্যমে দ্বীন কায়েমের পক্ষাবলম্বনকারী দা'ইয়দের বয়ান, মিছিলে কালিমা খচিত সাদা/কালো পতাকা উত্থোলনসহ গণতন্ত্রের বিরুধিতা করাকে চরমপন্থা হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ এগুলো চলমান সেক্যুলারিসমের জন্য চরম হুমকি। বাংলার জনগণ এগুলোর প্রতি যত বেশি ঝুঁকবে, সেক্যুলাঙ্গারদের লেজ ঘুঁটিয়ে পালানোর সময় ততই ঘনিয়ে আসবে। তাই পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া অনবরত প্রোপাগান্ডা চালিয়ে এগুলোর বিরুদ্ধে একটি ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়ে রেখেছে। পশ্চিমাদের কলোনাইজড গোলামরাও এটিকে বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করে নিয়েছে। (যদিও স্বদেশী কিছু গণমাধ্যম দাড়ি,টুপি ও সাধারণ দ্বীনদারিতাকেও জঙ্গিবাদের আলামত হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই ন্যারেটিভকে এখনো গ্রহণ করে নি।)

    ২. ইউরোপ আমেরিকায় চরমপন্থার সংজ্ঞা আরেকটু ব্যাপক। সেখানে নামায রোযা সহ অন্যান্য সাধারণ ইসলামি বিধিবিধানগুলো পালন করা যাবে, তবে শর্ত হলো সেগুলো হবে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও নিয়মনীতির অনুগামী। নারীরা পর্দা করতে পারবে। তবে সেটা হতে হবে আধুনিক। জিন্সের প্যান্ট পড়ে মাথায় একটা স্কার্ফ জড়িয়ে নিলেই যতেষ্ট। শরীর কেবল ঢাকা থাকলেই হলো। কোনো শায়েখ যদি এর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেন কিংবা কোনো মুসলিম পরিপূর্ণভাবে শরয়ী পর্দা মেনে চলতে চান তাহলে তাকে কট্টরপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

    যদি কোনো ইসলামিক স্কলার দাওয়াতি কাজ করতে চান, করতে পারবেন সমস্যা নেই। তবে তিনি নারী পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিত করে প্রোগ্রাম এরেঞ্জ করতে হবে। অনুষ্ঠানে নারী পুরুষের অবাধ উপস্থিতি তথা ফ্রি-মিক্সিয়ের সুযোগ করে দিতে হবে। পারলে কুরআন হাদিস বিকৃত করে কিছু দলিলও এর পক্ষে উপস্থাপন করতে হবে। এগুলো না করতে পারলে ঐ শায়েখ কট্টরপন্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে উনাকে ডিটেনশন সেন্টারেও যাওয়া লাগতে পারে।

    আমেরিকার বিভিন্ন ভার্সিটিতে মুসলিম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন (msa) আছে। এমনই এক msa প্রোগ্রামে একজন মুসলিম ছাত্র মুহতারাম উস্তাদ ড্যানিয়েল হাকিকাতজুকে সমকামীদের অধিকারের ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। তিনি কোনো হীনম্মন্যতায় না ভুগে সুস্পষ্টভাবে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরেন। পরে শুনা গেল, মুসলিম ছাত্ররাই প্রশ্ন তুলেছে— এমন একজন কট্টরপন্থি দাঈকে কেন প্রোগ্রামে আনা হলো।

    এই হলো ইউরোপ-আমেরিকায় অবস্থানরত মুসলমানদের জন্য কট্টরপন্থার সীমারেখা। এখানে জিহাদের আলোচনা তো দূরের কথা, সাধারণ ইবাদত ও প্রাথমিক ইসলামি আকিদার ক্ষেত্রেও কুফফারদের সিস্টেমের বাইরে চলে গেলে কট্টরপন্থি ট্যাগ খেতে হয়।

    ৩. আমরা যদি হান চাইনিজ কর্তৃক উইঘুর মুসলিমদের উপর চলমান নির্যাতনের বিষয়টি লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো সেখানে কট্টরপন্থার সংজ্ঞাটি আরো জঘন্য। সেখানে ইউরোপের মতো সিস্টেমের ভিতরে থেকেও ইসলামি বিধি বিধান পালন করার সুযোগ নেই। নামায রোযা সেখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ঘরে কেবল কুরআনের কপি কিংবা কোনো ইসলামি বই রাখাও কট্টরপন্থার আলামত। কোনো উইঘুর মুসলিম এই কাজ করলে কট্টরপন্থি মনোভাব থেকে মুক্ত করার জন্য তাকে কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়।

    তাই আজ পশ্চিমা মদদপুষ্ট সেক্যুলার ও মডারেইট স্কলাররা যেগুলোকে কট্টরপন্থ আখ্যা দিচ্ছে সেগুলোকে যদি আমরা মেনে নেই তাহলে পরিস্থিতির অধঃপতন হতে হতে এমন এক দিন আসবে যখন কেবল মুসলিম পরিচয়ের কারণেই আমাদেরকে কট্টরপন্থি ট্যাগ দেওয়া হবে। জিহাদের নাম নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আমাদের উপর বম্বিং করার জন্য মার্কিনিরা আর টুইন টাওয়ারে হামলার অজুহাত খুঁজে সময় নষ্ট করবে না।

    যেসব সম্মানিত স্কলারগণ মাহফিলে বসে কথিত কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে স্লোগান তুলছেন, দেখা যাবে অবস্থার পরিবর্তনে একসময় তাদের এই মাহফিলগুলোই কট্টরপন্থার সবচেয়ে বড় আইকন হয়ে গেছে। তাগুতের কট্টরপন্থিদের লিস্টেও তাদের নাম চলে এসেছে।

    চীনের রি-এডুকেশন ক্যাম্পে কিন্তু এমন অনেক শায়েখও বন্দি আছেন যারা এক সময় হান চাইনিজদের তোষামোদিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে ফেলেছিলেন। তবুও কাজ হয় নি। প্রয়োজন শেষে হানরা তাদেরকে ব্যবহৃত টিস্যুর মতো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে।


    তাহলে কি কট্টরপন্থা একেবারেই নেই?

    কট্টরপন্থা যে একেবারেই নেই তা না। আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কিছু লোক এমন আছে যারা অযথাই মানুষদের জানমালের ক্ষতি করছে। ইসলামি শরিয়াহ এর কোনো তোয়াক্কা না করে ইসলামের নামে অবলা আদম সন্তানদের রক্তপাত ঘটাচ্ছে। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও।

    এই গোষ্ঠিটি সব সময়ই বিদ্যমান ছিল। হযরত আলি রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে এদের সূচনা হয়েছে। সময়ে সময়ে মুসলিমদেরকে নানা সংকটে ফেলে এখনো তারা টিকে আছে। বর্তমান সময়ের আইএস খারেজিরা যার জ্বলন্ত উদাহরণ।

    মডারেইট স্কলারগণ চরমপন্থা বলতে যদি এটাই বুঝিয়ে থাকেন তাহলে বলব, আপনারা মুজাহিদ ভাইদের ব্যাপারে আরো গবেষণা করুন। আরো জানুন। আইএস খারেজিরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দল। এদের সাথে জামাতুল কায়েদা কিংবা তালেবানের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং বলা যায়, স্বয়ং তালেবান-আল কায়দার মুজাহিদরাই তাদের ভিক্টিম। আপনারা সবাই জানেন, অল্প কিছু দিন আগেও একজন তালেবান মন্ত্রী আইএসের আত্বঘাতি হামলায় শহিদ হয়েছেন। অতীতেও তারা বিভিন্ন জিহাদি উমারাহকে তাদের টার্গেট বানিয়েছে। তাদের আচরণ বড়ই অদ্ভূত। তারা জিহাদ করে, অথচ তাদের টার্গেট মার্কিনিরা না হয়ে হয় স্বয়ং মুজাহিদরা!

    আল কায়দা সব সময় ফিকহি ইখতিলাফাত পিছনে রেখে পুরো উম্মাহকে এক প্লাটফর্মে আসার আহ্বান করে। অপরদিকে আইএস খারেজিরা সম্ভবত তাদের দলের সদস্য ছাড়া দুনিয়ার বাকি সব মুসলমানকেই কাফের মুরতাদ মনে করে। তারা মনে করে, কেউ মুসলিম হলে তাদের দলে যোগ দিতে হবে অথবা তাদেরকে সমর্থন করতে হবে। নতুবা সে মুরতাদ। তার রক্ত হালাল। তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যুগের পর যুগ ধরে দুনিয়ার সুপার পাওয়ার তাগুতদের সাথে জিহাদ করেও তালেবান, আল-কায়দা তাদের কাছে ভালো হতে পারে নি।

    যেসব শ্রদ্ধেও শায়েখগণ ও তাদের ভক্তকূল ভুলবশত মুজাহিদদেরকে কট্টরপন্থি মনে করছেন তাদেরকে বলবো, কুফফাদের মিডিয়ার মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় ধোঁকা না খেয়ে হক্বপন্থি মুজাহিদগণ সম্পর্কে অথেন্টিক সোর্সগুলো থেকে জানার চেষ্টা করুন। তাঁদের উপর অযথা অপবাদ আরোপ করা থেকে নিজে বাঁচুন, উম্মাহকে বাঁচান। আর আমেরিকা এবং তার দূসরদের দৃষ্টীকোণ থেকে নয়, বরং কুরআন হাদিসের আলোকে যদি মুজাহিদ ভাইদের কোনো ভুল ত্রুটি খুঁজে পান, আল্লাহর ওয়াস্তে তাদেরকে জানান। ওয়াল্লাহি, তারা আপনাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।






    ১৪ শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
    ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি.​
Working...
X