Announcement

Collapse
No announcement yet.

সেক্যুলার স্বৈরতন্ত্রের আড়ালে: নিপীড়ন ও পাশ্চাত্যের সমর্থন || দ্বিতীয় পর্ব - পশ্চিমাদের স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন এবং ইসলামের প্রতি ভয়

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সেক্যুলার স্বৈরতন্ত্রের আড়ালে: নিপীড়ন ও পাশ্চাত্যের সমর্থন || দ্বিতীয় পর্ব - পশ্চিমাদের স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন এবং ইসলামের প্রতি ভয়

    সেক্যুলার স্বৈরতন্ত্রের আড়ালে: নিপীড়ন ও পাশ্চাত্যের সমর্থন

    দ্বিতীয় পর্ব - পশ্চিমাদের স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন এবং ইসলামের প্রতি ভয়

    - স্পেনের ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কোঃ ফ্রাঙ্কো ছিল একজন সেক্যুলার শাসক, যে ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। তার শাসনামলে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ছিল ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ। ফ্রাঙ্কোর শাসনে যারা তার বিপক্ষে কথা বলত, তাদের গ্রেফতার, নির্যাতন এমনকি গণহত্যার শিকার হতে হয়েছে। এটা ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটা জঘন্য উদাহরণ। পশ্চিমা শক্তিগুলো তখন চুপচাপ তার এই দমন-পীড়নকে সমর্থন করেছে। এটা তাদের দ্বিমুখী নীতির আরেকটা প্রমাণ। যখন তাদের সুবিধা হয়, তখন এসব অন্যায় নিয়ে কিছু বলে না, বরং চোখ বন্ধ করে থাকে। অথচ এরকম ঘটনা অন্য কোথাও হলে হয়তো তারা মানবাধিকার আর স্বাধীনতার নামে বিশাল ক্যাম্পেইন চালিয়ে দিত।
    .
    - সালাজারঃ সে ১৯২২ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পর্তুগাল শাসন করেছে, আর তার শাসন ছিল একদম কঠোর সেক্যুলার নীতিতে। সে এক ধরনের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, যেখানে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করা আর স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ বন্ধ করা ছিল সাধারণ বিষয়। তার এই সব কর্মকাণ্ডে পশ্চিমা দেশগুলো কোনো সমস্যাই দেখেনি। বরং সামরিক আর অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে তারা নীরবভাবে তাকে সমর্থন করেছে। কিন্তু আজ যদি কেউ ইসলাম নিয়ে কিছু বলে বা কাজ করে, তাহলেই পশ্চিমারা প্রথমে ইসলামকেই টার্গেট করবে। অথচ এরকম সেক্যুলার শাসকদের নিয়ে কোনো সমালোচনা করতে গেলেও কেউ একবারও বলবে না যে, তারা সেক্যুলার ছিল। এটা তাদের দ্বিমুখী নীতির সবচেয়ে বড় প্রমান।
    .
    - ফের্ডিনান্ড মার্কোসঃ ফের্ডিনান্ড মার্কোস ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইন শাসন করেছে। তার শাসন ছিল দুর্নীতি, দমননীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ভয়ানক উদাহরণ। নির্বাচনে প্রতারণা, রাজনৈতিক বিরোধীদের গ্রেফতার, আর গণহত্যা ছিল তার শাসনের নিত্যদিনের চিত্র। মার্কোস ধর্মনিরপেক্ষ নীতির উপর ভিত্তি করে কঠোর একনায়কতন্ত্র চালাতো, যা সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ধুলিসাৎ করে দিয়েছিল। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, তখন পশ্চিমা দেশগুলো এসব দেখেও কিছুই বলেনি। কেন? কারণ তাদের নিজস্ব সামরিক আর অর্থনৈতিক স্বার্থ ঠিক রাখতে মার্কোসের দমন নীতিগুলো তারা একপ্রকার উপেক্ষা করেছিল। ফিলিপাইনে সেই সময় আমেরিকার অনেক সামরিক ঘাঁটি আর অর্থনৈতিক স্বার্থ ছিল। তাই মার্কোস কী করলো বা না করলো, সেটা তাদের কাছে তেমন কোনো বড় বিষয় ছিল না।
    .
    - কামাল আতাতুর্কঃ কামাল আতাতুর্ক তুরস্ককে ১৯২৩ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেছিলে। আতাতুর্কের শাসনকালে তুরস্কে সেক্যুলার নীতিতে নেয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। তবে, এই প্রচেষ্টাগুলো মূলত পশ্চিমা শক্তির প্রভাব এবং তাদের অধীনেই পরিচালিত হয়েছিল।
    .
    আতাতুর্ক ধর্ম ও রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করার নীতি গ্রহণ করে এবং ধর্মনিরপেক্ষ আইনাবলী প্রবর্তন করেন। সে নিজেকে একটি আধুনিক ও সেক্যুলার রাষ্ট্র গঠনের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু এই নীতিমালা বাস্তবে তুরস্কের সাধারণ জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে চাপিয়ে দেওয়া হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে, ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধগুলোকে মুছে ফেলা হয়, এবং সমাজকে পশ্চিমা মডেলের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল অতিমাত্রায় জুলুমের মাধ্যমে।
    .
    আতাতুর্কের শাসনকালে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল ব্যাপকভাবে। স্বাধীন মতপ্রকাশ সহ অন্যান্য অধিকারগুলোর উপর কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছিল, যা সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আতাতুর্ক তুরস্ককে আধুনিক করার নামে মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয় এবং অনেকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।
    .
    পশ্চিমা শক্তিগুলো আতাতুর্কের এই সেক্যুলার এবং আধুনিকীকরণমূলক নামের 'মানবাধিকার লঙ্ঘনকে' সমর্থন করেছিল, কারণ এটি তাদের কৌশলগত স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। তুরস্কের এই পরিবর্তনগুলি মূলত পশ্চিমা মডেলের অনুকরণে ঘটেছিল, যেখানে জনগণের স্বাভাবিক চাহিদা ও ইচ্ছাগুলোকে উপেক্ষা করে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়েছিল।
    .
    - পশ্চিমারা কেন ইসলামকে এত ভয় পায়? সংক্ষিপ্ত কারণঃ পশ্চিমা হেজিমনির দৃষ্টিতে, ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা যা তাদের ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে এবং বিজয়ী হতে সক্ষম। এই ভীতি মূলত ইতিহাসের বিভিন্ন সংঘর্ষ, সামরিক চ্যালেঞ্জ, এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের ফলশ্রুতি। ইসলামিক আন্দোলনগুলো পশ্চিমা শক্তির আধিপত্যে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে বলে মনে করা হয়, যা পশ্চিমা হেজিমনির জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। তাই, পশ্চিমা দেশগুলো ইসলামি আন্দোলন ও শাসনব্যবস্থাকে দমন করতে যেকোনো ধরনের নির্যাতনকে সমর্থন করে, সহযোগিতা করে এবং নিজেরাও এতে সরাসরি অংশ নেয়। এছাড়াও, পশ্চিমা সমাজে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো হয় এবং মিডিয়ার প্রচারের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করাও তাদের সুনির্দিষ্ট কাজ।
    .
    পশ্চিমা দেশগুলো প্রায়ই "সেক্যুলার" বা "উদারপন্থী" শাসনকে একটা উচ্চ আদর্শ হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু বাস্তবে তারা নিজেদের কৌশলগত স্বার্থে এসব শাসনের দমননীতি নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর কঠোর নীতি নিয়ে কোনো সমালোচনা হয় না। Noam Chomsky তার Hegemony or Survival বইয়ে (২০০৩) বলেছে, "যখন যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপ 'সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' বা 'আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা'র কথা বলে, তখন এ ধরনের স্বৈরাচারী নীতির বিষয়ে কোনো কথা বলে না।" মানে, ইসলামপন্থীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য কেউ যা খুশি করুক, মানবাধিকার নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।
    .
    "পশ্চিমা মিডিয়া আর তাদের নীতিনির্ধারকরা ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় এলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে বলে ভয় দেখায়। ইসলামিক শাসনকে তারা কোনভাবেই মেনে নিতে রাজি না। তাই সেক্যুলার শাসকরা যতই স্বৈরতান্ত্রিক হোক, তাদের সমর্থন দিতে কোনো সমস্যা নেই।"— জিল কেপেল, জিহাদ: দ্য ট্রেইল অব পলিটিক্যাল ইসলাম, ২০০২ (Gilles Kepel, Jihad: The Trail of Political Islam, ২০০২)
    .
    বাংলাদেশের প্রসঙ্গে বললে, হাসিনার এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার একটা বড় কারণ এই "ওয়ার অন টেরর" এর পক্ষে তার অবস্থান। পশ্চিমারা তাকে থাকতে দিয়েছে কারণ সে তাদের স্বার্থ ঠিক রাখতে পেরেছে। হাসিনা যা-ই বলেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ আর তার অর্থনীতি নিয়ে, পশ্চিমারা তা সবসময় মেনে নিয়েছে। অথচ আজ দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ ন্যূনতম খাবারও কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
    .
    সেক্যুলার শাসনের নামে একনায়কতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্রের আড়ালে অনেকেই নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। এর ফলে সাধারণ মানুষ আর বিশেষ করে ইসলামপন্থী আন্দোলনকারীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পশ্চিমা দেশগুলো এসব শাসনের অত্যাচার আর নিপীড়ন নিয়ে চুপ থাকে, এমনকি নীরবভাবে সমর্থনও দেয়।
    .
    তবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের জন্য আল্লাহ তা'আলাই যথেষ্ট, আমরা তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করি, কেবল তাঁর কাছেই সাহায্য চাই।

    وَمَا لَنَا أَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللَّهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا ۚ وَلَنَصْبِرَنَّ عَلَىٰ مَا آذَيْتُمُونَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ

    "আর আমরা কেন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করব না, যখন তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন? তোমাদের দেওয়া কষ্টের উপর আমরা অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করব। আর যারা তাওয়াক্কুল করে, তাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (সুরা ইব্রাহিম: ১৪:১২)​
Working...
X