বিজাতীর অনুকরণে নয়, বিকল্প শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের মধ্যেই রয়েছে সম্মান
পশ্চিমের অনুসরণে ইসলামকে মর্ডানাইজেশনের নামে ফেরি করে বেড়ানো আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। প্রায়ই আমরা কুরআনকে বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ করতে শত শত দলিল-আদিল্লা পেশ করি। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে আল-জাবির, ইবনে সিনা, আল-খাওয়ারিজমিদের ভূমিকা দুনিয়ার সামনে ঠোল পেটাতে থাকি। কখনও বা সাহিত্যের মানদণ্ডে কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে থাকি। পশ্চিমের মঞ্চে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে এবং তাদের স্বীকৃতি পেতে কেন এত প্রচেষ্টা? কেনই বা আমরা তাদের কাছে সম্মান খুঁজতে যাই?
এর কারণ হচ্ছে আমাদের অন্তরে সুপ্ত ইনসিকিউরিটি বা হীনমন্যতা। জাতে উঠার একটা প্রচেষ্টা এবং বাদ পরে যাওয়ার ভয়। আমি মনে করি এটা একটা মানসিক ব্যাধী এবং এতে আক্রান্ত হয় তারাই যারা ইজ্জত-সম্মানের প্রকৃত সজ্ঞা ও অনুধাবন থেকে বঞ্চিত।
জেরুজালেম বিজয়ের পর আমিরুল মুমিনিন উমর আল-ফারুক রা. সুদূর মদিনা থেকে সফর করে সামে আসলেন জেরুজালেমের চাবি অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যে। পরণে ১৪ তালি বিশিষ্ট একটি অতিসাধারণ কাপড়। তা দেখে প্রধাণ সেনাপতি আমিনু হাযিহিল উম্মাহ আবু-উবাইাহ রা. চিন্তা করলেন, এটা দেখে রোমানরা কি মনে করবে! তিনি পরামর্শ দিলেন, হে আমিরুল মুমিনীন! মোবারক এই সফরে আপনি গোটা মুসলিম আধিপত্যের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আমরা এমন এক জায়গায় আছি, যেখানকার লোকেরা চাকচিক্য পছন্দ করে। মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য্য দেখে মানুষের মর্যাদার বিচার করে। তাই আপনি যদি একটু ভালো পোষাক পরতেন, তাহলে তা কতই না উত্তম হতো! হযরত ওমর রা. আবু উবাইদা রা. এর কথায় রেগে গেলেন এবং ঐতিহাসিক একটি বক্তব্য দিয়েছেন যা স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা উচিত। তিনি বললেন:
إِنَّا كُنَّا أَذَلَّ قَوْمٍ فَأَعَزَّنَا اللَّهُ بِالْإِسْلَامِ فَمَهْمَا نَطْلُبُ الْعِزَّةَ بِغَيْرِ مَا أَعَزَّنَا اللَّهُ بِهِ أَذَلَّنَا اللَّهُ
"আমরা ছিলাম এক লাঞ্চিত জাতি। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। সুতরাং আল্লাহ আমাদেরকে যা দ্বারা সম্মানিত করেছেন, তা ব্যতীত অন্য কিছুতে যখনই আমরা সম্মান অনুসন্ধান করব, তখনই আল্লাহ আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।"
সুবহানাল্লাহ!!! রোমানদের কাছে সামান্য এতটুকু শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়ার চেষ্টা করারও প্রয়োজন মনে করলেন না তিনি। কারণ সাহাবায়ে কেরামগণ প্রকৃত ইজ্জত বুঝতেন। তারা বুঝতেন যে পোশাক-আশাক আর স্টেটাস প্রদর্শন সম্মানের বহিপ্রকাশ নয় বরং বিজয়ীবেশে আল্লাহর জমিন চশে বেড়ানোর মধ্যে রয়েছে প্রকৃত সম্মান। গাইরুল্লাহর দাসত্ব থেকে যুগ যুগ প্রবৃদ্ধির চেয়ে এক আল্লাহর আনুগত্য মেনে মাত্র একটি নিশ্বাস অধিকতর সম্মানের। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ
"সম্মান ও মর্যাদা তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্য৷ কিন্তু মুনাফেকরা তা জানে না।"