Announcement

Collapse
No announcement yet.

সিরিয়াতে তুর্কীর ইন্টারভেনশন মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের জন্য কতটা কল্যাণকর?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সিরিয়াতে তুর্কীর ইন্টারভেনশন মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের জন্য কতটা কল্যাণকর?

    তানজীম ক্বায়িদাতুল জিহাদের দুইজন শাইখের বয়ান বা রিসালাহ এমন হয় যে "শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।" যদি ২ পৃষ্ঠার বার্তা তারা দেন তাহলে মনে হয় যদি তা ২০ পৃষ্ঠার হতো! যদি ২০ পৃষ্ঠার দেন তাহলে মনে হয়, ২০০ পৃষ্ঠার হলে ভালো হতো। একজন হলেন শাইখ যাওয়াহিরী অন্যজন শাইখ সাইফ আল আদল।

    ২০১৯ সাল। সিরিয়ার জিহাদ তার স্মরণকালের ভয়াবহ বিপদে উপনীত হয়েছে। বাশার আল আসাদ মুজাহিদদের সর্বশেষ ঘাঁটি ইদলিবকে পুনঃর্দখল করার জন্য পূর্ণ শক্তিতে হামলা শুরু করেছে। সঙ্গে রয়েছে রাশিয়া, ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ, রমযান কাদিরভের দুধর্ষ চেচেন যোদ্ধা, হাসান নাসরুল্লার নেতৃত্বে হাজার হাজার হিজবুল্লার যোদ্ধা, আর কাসেম সুলাইমানির নেতৃত্বে আইআরজিসি। অপারেশনের কোডনেইম দেয়া হলো "Operation Dawn Of Idlib"। দেখে মনে হলো এই বুঝি ইদলিব হাতছাড়া হয়ে গেলো।
    ইদলিবে ফাইনাল হামলার জন্য জেনারেলদের নিয়ে ছক কষছে ফিরআউন আসাদ​



    এরই মধ্যে তুর্কী সেনাদের দেখা গেলো ইদলিবের ফ্রন্টলাইনে। ড্রোন আর আর্টিলারি দিয়ে তারা বাশারের বাহিনীর পজিশন লক্ষ্য করে হামলা করতে লাগলো। রাশিয়ানরা চাইলেও তুর্কীর পজিশনে হামলা করতে পারবে না। কারণ তুর্কি হচ্ছে ন্যাটো সদস্য। ন্যাটোর এক সদস্যের ওপর হামলা করা মানে বাকিদের ওপরও ।
    তুর্কী সেনাদের কনভয় ভারী অস্ত্র নিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করছে।


    এদিকে এরদোগান আর পুতিনের মধ্যে আলোচনা। ২০২০ সালের মার্চ মাসে এরদোগান উড়াল দিলেন মস্কোর উদ্দেশ্যে। বিশ্বমিডিয়াতে আসলো সিরিয়ার ব্যাপারে মেজর প্লেয়ার "তুরস্ক" আর রাশিয়া "সিজফায়ারে" এসেছে। এর মাধ্যমে সিরিয়ার যুদ্ধ কার্যতঃ সমাপ্ত হয়েছে। তাদের প্রক্সিগুলো আর একে অপরকে আক্রমণ করবে না। সিরিয়াতে তাহলে যুদ্ধ হচ্ছে তুরস্ক আর রাশিয়ার মধ্যে।

    ভিডিও: তুর্কী সেনাদের প্রবেশ।


    ভিডিও: তুর্কী সেনাদের গাড়িতে ঢিল ছুড়ছে সিরিয়ানরা।

    এই সিজফায়ার ছিলো নিঃসন্দেহে মুজাহিদদের জন্য অপমানজনক। কারণ এখানে তাদেরকে গোনায়ই রাখা হয়নি। যুদ্ধবিরতি হয়েছে তুর্কী আর রাশিয়ার মধ্যে। মুজাহিদগণ কিংবা বাশার আল আসাদ তো এখানে উহ্য। কিন্তু অধিকাংশ মুজাহিদই লিডারশীপ এটা মেনে নিয়েছিলেন। ভূমি রক্ষার জন্য নিজেদেরকে তুর্কীর হাতে সঁপে দেয়ার ব্যাপারে এটা ভুলিয়েই দেয় তাদের যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিজয় তো আসবেই।

    সিরিয়াতে প্রধান সকল মুজাহিদ গ্রুপগুলোকে কব্জা করে ফেলাটা আসলে এরদোগানের এক মেজর ভিক্টোরি ছিলো। ইতোমধ্যে তিনি অনেকগুলো অর্জন করে ফেলেছেন। তিনি জাবহাত আন নুসরাকে বিদায় করেছেন। এতোদিন মুজাহিদ জামাআতগুলোর মধ্যে অনৈক্য থাকলেও দেখা গেলো তুর্কীর ছায়াতলে অনেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলো। তাহলে আল কায়েদা সিরিয়ান জিহাদের বিপর্যয়ের কারণ ছিলো?

    ২০১৯ সালে তুর্কী যখন সিরিয়াতে চরমভাবে ইন্টারভিন করছে তখন শাইখ সাইফ আল আদল হাফিজাহুল্লাহ একটি ছোট বার্তা প্রেরণ করেন।
    বিলাদুশ শামের হালতের ব্যাপারে শাইখ সাইফ আল আদেলের বার্তা।​


    শাইখ বলেন "সিরিয়ার যুদ্ধের হালত যাদের জানাশোনা আছে তাদের সকলের কাছেই পরিষ্কার।"

    "আমরা যতগুলো দলকেই ঐক্যবদ্ধ করি না কেনো, পরাজিত হতেই থাকবো।"

    "আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মিলিটারি ডিসিশনকে সঠিকভাবে প্রয়োগ না করতে পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো যুদ্ধেই গোনায় ধরার মতো নয়।"

    অনেকগুলো জামাআতকে একীভূত করে তাহরীরুশ শাম কিংবা ফাতহুম মুবীন অপারেশন রুম তৈরী করলেও তা তাতে সেক্যুলার তুর্কী হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলো। মুজাহিদদের পলিসি থেকে শুরু করে অপারেশন সবকিছুতে তুর্কীর গোয়েন্দা বিভাগ নজরদারি রাখছিলো। এমনকি নিজেদের ধরে রাখা ইদলিবেও ততটুকু স্বাধীনতা ছিলো না যা ছিলো তুর্কী আসার আগে। তুর্কীর ইগোটা এরকম ছিলো, "আমরা তোমাদের দয়া করে বাঁচিয়ে দিয়েছি। নইলে বাশার আর রাশিয়া তোমাদের বিলুপ্ত করেই ফেলতো। আমাদের প্রতি তোমরা আজ্ঞাবহ থাকতে হবে।"

    শায়খ সাইফ আল আদল সিরিয়ার মুজাহিদদেরকে ঐ সময় নসীহাহ করেন, "(শামের মুজাহিদদের জন্য) তাদের সামরিক চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনা জরুরী। যাতে তা পারিপার্শ্বিক হালতের সঙ্গে যুৎসই হয় এবং শত্রুদের ষড়যন্ত্র কিংবা তুর্কির প্ল্যানকে রুখে দিবে যার সঙ্গে কিছু দল ঐকমতে গিয়েছে।"

    তুর্কির প্ল্যানটা কি? শাইখ সাইফ বলেন, "সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য হলো যেসব জামাআত খাঁটি(নববী) ইসলামকে যারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তাদের তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। তুর্কী এবং অন্যান্যরা এর চেয়ে কম মানবে না কিছুতেই।"

    আসলে তুর্কীপন্থি মিলিটারি এনালিস্টরা যে লজিক দেখায় যে তুর্কী না আসলে সিরিয়ার বিদ্রোহ বিলুপ্ত হয়ে যেতো, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। পৃথিবীর কোন জায়গায় শত্রুর বিমান হামলায় মুজাহিদ জামাআত বিলুপ্ত হয়ে গেছে? তুর্কী না আসলে হয়তো ইদলিব হাতছাড়া হতো কিন্তু সিরিয়া কি ইদলিবেই সীমাবদ্ধ ছিলো। গ্রামীন সিরিয়া কি ছিলো না? তালিবানের হাত থেকে তো সবগুলো শহরই হাতছাড়া হয়েছে।

    বিজয়ের পরে আজ দেখুন, তুর্কী সিরিয়াতে তার ওপেন প্লেস পেয়েছে। সে নিজের ইচ্ছামত সিরিয়াতে ঢুকে প্রতিপক্ষকে দমন করছে। নিজের মতো অপারেশন পরিচালনা করছে। সিরিয়ার ফরেইন পলিসিতে তারা হস্তক্ষেপ করছে। বিশ্বকে তারা দেখাচ্ছে যে আমরা আমরা সিরিয়াতে বিজয়ী হয়েছি।

    অথচ জাওলানী ফাইনাল আক্রমণ করার জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা এই বিষয়টা নিয়ে তুর্কী ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে বসলে তুর্কী এই বিষয়ে সোজা 'না করে দেয়' এবং এবং কোনো সহায়তা করেনি তাদেরকে। এমনকি এও শোনা যায় যে তারা ছয় মাস আগেই বাশার আল আসাদকে এই অপারেশনের ব্যাপারে জানিয়ে দেয়। কিন্তু বাশারের অবস্থা ছিলো ডানা কাটা পাখির মতো। রাশিয়া ইউক্রেনে, ইজবুল্লাহ-ইরান ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত থাকায় তার কিছু করার ছিলো না। এরই মধ্যে পেজার বিস্ফোরণহাসান নাসরুল্লাহের মৃত্যুতে হিজবুল্লাহর লিডারশীপ অকেজো হয়ে যাওয়াতে বাশারের ফাউন্ডেশনও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

    সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জাওলানী ডিসিশন নিয়েছেন, সেটা হলো ইসরায়েলের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে এবার সিরিয়াতে তুর্কীর সামরিক ঘাঁটি ও এয়ারবেইস নির্মান করবে। রয়টার্স এই রিপোর্ট করা মাত্রই এরদোগান প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জানায় যে, এই বেইসগুলো আসলে এমনিতেই সিরিয়ার স্ট্যাবিলিটির জন্য, এগুলো ইসরায়েলের জন্য হুমকি না।

    ভিডিওঃ এরদোগান ও প্রেসিডেন্ট জাওলানী।



    তারপরেও ইসরায়েল ফুল স্কেল হামলা করে হামা শহরের কয়েকটি বিমানঘাটি ধ্বংস করে দেয় যেখানে তুর্কীর ৩ জন তুর্কী ইঞ্জিনিয়ার মারা যায়। ইসরায়েল এটা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, "সিরিয়াতে ক‌োনো ফরেইন শক্তির বেইস নির্মান সুস্পষ্টভাবে রেড লাইন অতিক্রম করার মতো।" এরদোগান কিছু ফাঁকা বুলি ছুঁড়লেও পরে তুর্কী আর ইসায়েল ডিপ্লোম্যাটিক ডিসকাশনে বসে যে সিরিয়াতে তারা কনফ্লিক্টে যাবে না।
    ইসরায়েলের বোম্বিংয়ে ধ্বংস সিরিয়ার একটি এয়ারবেইস​

    সিরিয়াতে ইসরায়েলের হামলা যেমন বিপদজনক তেমনি সেক্যুলার তুর্কির বেইস নির্মান করাটা সেখানকার মুসলিম ও ইসলামের জন্য লং টার্মে বিপদজনক। জাওলানীর এই ডিসিশন নিঃসন্দেহে ভুল। ​এই মুহুর্তে হয়তো সিরিয়ার বিপ্লবীদের রেভ্যুলেশনারী ইনফ্লুয়েন্সের কারণে সেটা ঠের পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু আস্তে আস্তে যখন রেভ্যুলেশনারী প্রভাব হ্রাস পাবে তখন সেটার প্রভাব ঠের পাওয়া যাবে। বেইস নির্মান করলে তো সিরিয়ার প্রত্যেকটা বিষয়ে তুর্কী নাক গলাবে। ইসরায়েলকে হটানো তো দূরে থাক, প্রত্যেকটা ইসলামিক দলকে ধ্বংস কিংবা ডিরেডিক্যালাইজড করে দেয়ার নোংরা প্ল্যান নিয়ে আগাবে। সিরিয়ায় ইসলামপন্থী জামাআতগুলোকে সবসময় তুর্কীর সরাসরি সারভেইল্যান্সে থাকতে হবে। সিরিয়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে সবার আগে যে শয়তান বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে সেটা হলো সেক্যুলার তুর্কী।
    অপারেশন তুফান আল আকসার মাত্র ১৯ দিন আগে নিউ ইয়র্কে এরদোগান ও নেতানিয়াহু। পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি আলোচনা চলছিল কিভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যায়।​


    সেক্যুলার তুর্কী কখনোই সিরিয়াকে একটি শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়না। এটা তার জন্যই বিপদজনক হবে। কারণ সিরিয়ার ইসলামিক রেনেসাঁ তুর্কীতে ছড়িয়ে পড়বে। সেখানে ইসলামিক বিপ্লবের সূচনা হবে। এতে সেখানকার কামালের প্রতিষ্ঠিত সেক্যুলার শাসনের পতন হবে। এই কারণেই তো এরদোগান প্রচুর পরিশ্রম করেছে সিরিয়া থেকে তার এক্সিস্টেনশিয়াল থ্রেট আল কায়েদাকে বিতাড়িত করতে ও সিরিয়ার মুজাহিদ বা বিপ্লবী লিডারশীপকে ডি-রেডিক্যালাইড করতে। আপাত দৃষ্টিতে সে ভালোই সফল হয়েছে। যদিও আল্লাহর প্ল্যানের ব্যাপারে আমরা জানি না। হয়তো কয়েক বছরের ব্যবধানে আমাদের কাছে সবকিছু সুস্পষ্ট হতে থাকবে।​
    Last edited by Rakibul Hassan; 16 hours ago.

  • #2
    জাজাকাল্লাহু খাইরান__সিরিয়া নিয়ে আপনার একটা স্ট্যাটাসের অপেক্ষায় ছিলাম অনেক কিছু ই পরিষ্কার হল আলহামদুলিল্লাহ্‌। ঈমান ও কুফর এক সাথে চলতে পারে না , সেকুলারদের সাথে মুজাহিদ্দের সহ অবস্থান করা সম্ভব না ।আলেম/ উমারা এই মুলনীতি অনেক আগেই ডিফাইন করেছেন


    Omayer Binyameen ভাই, আল কায়দা সিরিয়া থেকে আপদত স্থগিত হওয়ার স্ট্রেজি কি হতে পারে ?

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ খাইরান।

      Comment

      Working...
      X