এদের অপরাধ এরা শুধু মুসলমান
প্রিয় ভাই ও বোন!
আজকে ভূমিকা ছাড়াই শুরু করবো। সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। শ্রেষ্ঠ জাতির সস্তা জীবনের কথা শুনতে গিয়ে ভূমিকা পরে সময় নষ্ট করা বিরাট এক অপরাধ। ভাই! আমি কিন্তু বলে নিচ্ছি আজকের আলোচনা ব্যতিক্রম কিছু না। নিত্যদিনই ঘটছে। প্রতিনিয়তই রটছে। রাতের আঁধার আর দিনের আলোতেই ঝরছে। শুরু করি তাহলে! একটু বিবেক খাটিয়ে পড়ুন। বোঝোন। আর উপলদ্ধি করুন।
আমাদের আশপাশে, চোখের সামনে, চোখের অগোচরে। মুসলিমদের সীমারেখার ভিতরে বাহিরে। ইহুদিদের হাতের নাগালে আর দৃষ্টির বাহিরে যেগুলো স্বীকৃত।
১) চার সন্তানের জননী সুপ্রীতি। তিন সন্তান এবং স্বামীকে তার সামনে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেদিন তাকেও বন্দী করা হয় একটা ঘরে। আরও সাতজন নারীর সাথে তিনিও গণধর্ষিত হন। ধর্ষণে বাঁধা দেওয়ার সময়- তার মাথায় বেয়নেট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। আজও তিনি সেই আঘাতের ফলে ঠিকভাবে হাঁটতে-চলতে পারেন না।
২) রাহেনা, মাত্র পনেরো বছর বয়স। দুপুরের খাবার বেড়ে দিচ্ছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকদের। সেনারা অকস্মাৎ গ্রামে ঢুকে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। মেয়েদেরকে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে।এরপর একজন একজন করে প্রতিটা মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বেশিরভাগ মেয়েই বেহুঁশ হয়ে যায়। রাহেনাও তাদের একজন ছিলেন। জ্ঞান ফিরতেই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করেন তিনি।
গণধর্ষণের শিকার রাহেনার ভাষ্যে, 'আমার তখনও ভীষণ রক্তপাত হচ্ছিল। গ্রাম পেরুতেই বালির উপর আমার স্বামীর লাশ দেখতে পাই।'
৩) সেদিন ছিল শুক্রবার সকাল, মানসীর গ্রাম সেনারা ঘিরে ফেলে। তার বাবা, তার স্বামী এবং চারবোন মিয়ানমারের সেনাদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে।মানসীর ভাষ্যে, ' ছয়/সাত জন সৈন্য আমাদের ঘরে ঢুকে আমাকে ধর্ষণ করে। আমি অচেতন হয়ে পড়ি। প্রচুর লাশ পড়ে ছিল। অন্তত হাজারখানেক রোহিঙ্গা মুসলমানের লাশ।'
৪) ১৭ বছরের সামিরা। বিয়ের মাত্র তিন-চার মাস পর তার স্বামী মিয়ানমার সেনাদের হাতে হত্যার শিকার হয়। একদিন গ্রামে ঢুকে সৈন্যরা গ্রামের সব পুরুষকে হত্যা করে। স্বজনদের লাশ নিয়ে, অসহায় অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকে নারীরা। এর দুদিন পর তিনজন সৈন্য আমার ঘরে আসে। আরও দুজন রোহিঙ্গা মেয়েকে সাথে এনেছিল ওরা। তিনজন মেয়েই সেদিন গণ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সেদিন।
৫) ১৮ বছরের হামিদা বেগম। বিয়ের মাত্র দুমাস পেরিয়েছে। একদিন প্রায় মধ্যরাতে শয্যাপাশ থেকে তার স্বামীকে নিয়ে যায় সৈন্যরা। ভীত অবস্থায় স্বামীকে ফিরে পেতে আল্লাহ্র কাছে কান্নাকাটি করতে থাকে।রাত তিনটেয় বাইরে থেকে আওয়াজ শুনে ভেবেছিলেন, হয়ত তার স্বামী ফিরে এসেছে। না- এসেছিল তিনজন সৈন্য। পালাক্রমে ভোর পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ করে। প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।
৬) ১৭ বছরের আরেফার সংসার ছিল মাত্র দেড় মাসের। তার স্বামী, যে ছিল তারচে' মাত্র এক বছরের বড়ো-সে মিয়ানমার সৈন্যদের হাতে হত্যার শিকার হয়। স্বামীর লাশটা কোনও মতে দাফন করে বাংলাদেশে ফেরার সময় সে ধর্ষিত হয়।
৭) ১৫ বছরের শফিকা, শিলপাটায় মরিচ বাটছিলেন। হঠাৎ চারদিক থেকে গুলির আওয়াজ। ভয়ে সে দরজা আটকে দিচ্ছিলো। সেইসময় দুজন সৈন্য ঘরে ঢুকে তার মায়ের সামনে তাকে ধর্ষণ করে। সেদিন তার স্বামীও মারা গিয়েছিল।
৮) মরিয়াম, যিনি ১৬ বছরেই স্বামীহারা হয়েছেন। মরিয়মকে সৈন্যরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল।'সৈন্যদের দুজন ধরে রাখত। একজন ধর্ষণ করত। একজন থাকত পাহারায়।'আরও দুজন মেয়েকে মরিয়মের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছিল। একজনের জিহ্বাও কেটে নেওয়া হয়েছিল।
৯) সিএনএনের বরাতে এই গল্পগুলো আমরা জেনেছিলাম। এইরকম অসংখ্য ভয়ানক না বলা বাস্তব গল্প রয়েছে প্রতিটা রোহিঙ্গা নারী পুরুষের। এখানে যে কয়েকজনের কথা বলা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই সেই ধর্ষণের কারণে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন নিজ গর্ভে সন্তান নিয়ে। এই মায়েরা শত্রুর সন্তান গুলোকেও হত্যা করার পথ বেছে নেয়নি। এইরকম হাজার হাজার রোহিঙ্গা মা আছেন।
এ দেশে তারা এসে অধিক সন্তান জন্ম দিচ্ছেন- গণমাধ্যমের এইসব সংবাদের সূত্রে ফেসবুকে অগুনতি ট্রল ও বিদ্রূপ দেখেছি। অথচ সেই প্রত্যেকটা সন্তান তাদের উপর হওয়া অবর্ণনীয় জুলুমের স্মারক। নিঃসন্দেহে আরশের অধিপতি সব মুনাফেকির হিসেব রাখেন। এমনকি হৃদয়ের দূরতম গহ্বরে লুকায়িত অনাচারও তার দৃষ্টির অগোচর নয়।
১০) ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ বছর বয়সী সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সাফুরা জারগারের বাড়িতে এসে তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ২০২০ এর এপ্রিলের ১০ তারিখে তাকে তুলে নিয়ে গেলেও তার জামিনের কোন নামগন্ধ নেই আজো। রমজানের মধ্যে করোনার এই দুঃসময়ে ২১ সপ্তাহের গর্ভবতী সাফোরা জারগার রেহাই পায়নি ৷ তার জামিন নাকচ করে দিয়েছে আদালত! অপরাধ কী ছিলো? ইন্ডিয়ান সরকারের মুসলিম বিরোধী আইনের প্রতিবাদ৷
১১) ইরাকে ৩৫ বছর বয়সী নাবিহাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল । বহনকারী গাড়িতে প্রসব যন্ত্রণায় যখন ছটফট করছিল, হাসপাতালের কাছাকাছি আসতেই পুরো গাড়ী আগুনে জ্বালিয়ে দেয় ইউএস মিলিটারী ।ফিলিস্তিনে ১৪ মাসের সিবা যখন গর্ভবতী মায়ের কোলে ঘুমন্ত, তখন হঠাৎ ইসরাইলী প্লেন বোমা মেরে নিমিষেই তাদের কয়লা বানিয়ে দেয় । গত ১৮ই মে বিবিসি হৃদয়বিদারক নিউজ ছেপেছে । কাবুলের এক হাসপাতালে খাবারের জন্য কাঁদছে অনেক নবজাতক । তাদের মা আমেরিকার নিক্ষিপ্ত বোমায় মৃত । বাচ্চাদেরকে পাউডার দুধ দেয়া হচ্ছিল কিন্তু খাচ্ছে না । খবর পেয়ে আরেক নবজাতকের মা ছুটে আসেন । ফিরোজা ওমর বড় জোর চারটা বাচ্চাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পেরেছিলেন ।
১২) জেরুজালেমের আল-আসবাত গেইটের
নিকট জারজ ইজ্রাঈলী সেনাদের গুলিতে শহীদ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ইয়াদ হাল্লাক্বের করুণ মৃত্যুতে শোকাহত মা। ছেলে শহীদ হবার পর ইয়াদ হাল্লাক্বের শোকাহত মা বলেছিলেন,"সে ছাড়া আমার আর কোন ছেলে নেই।"জারজ ইজ্রাঈলী সেনারা তার কাছে সন্দেহজনক বস্তু আছে সন্দেহ করে এই বর্বরতা চালিয়েছে। পরে জানা যায় তার কাছে একটি খেলনা ছিল। প্রতিদিন এরকম নির্বিচারে হত্যা করে মারা এই জারজদের কেউ স'ন্ত্রাসী বলে না।
১৩) ফিলিস্তিনি বন্দী আয়া আল-খাতিব (৩১) এর ছেলেরা ঈদের দিন প্রথম প্রহরে তাকে দেখতে ই'জ্রাঈলী দামন কারাগারে গিয়েছিল, যেখানে তাদের মা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বন্দী আছেন। তারা বাইরে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল যাতে লিখা ছিলো "
আমরা আপনাকে ভালোবাসি, মা। আপনি যেন প্রতিটিবছর মুক্তি পান।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আল-আকসা মসজিদের ভেতর ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন মুসল্লীরা। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটে। পুলিশ এ সময় মুসল্লীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস, বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকলে বুলেটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই এক যুবক নিহত হন। মসজিদ প্রাঙ্গণে লাঠিচার্জ, কাঁদানের গ্যাস ছুড়ার ফলে আরও ৫শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম তীর ও অন্যান্য জায়গায় ইসরাইলী নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে আরও দু’যুবক নিহত হয়েছেন ওইদিন।
এরপর থেকেই ফিলিস্তিন জুড়ে প্রতিদিনই সংঘর্ষ চলে আসছে পুলিশ ও ইসরাইলী নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সেখানকার অধিবাসিদের। পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশীর নামে হামলা করছে ফিলিস্তিনিদের উপর। এসব বর্বর হামলার হাত থেকে রক্ষা পাননি বৃদ্ধ মহিলা থেকে শুরু করে ছোট্ট শিশু পর্যন্ত। এছাড়া অসংখ্য ফিলিস্তিনি যুবককে গ্রেফতার করেছে ইসরাইলী পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। কতদিন যে ইসরাইলী জেলের গ্লানী টানতে হবে তাদের, তারও কোনো সঠিক হিসেব জানা নেই কারও।
হয়েতা এর সুত্র ধরে আবারো অসংখ্য ফিলিস্তিনি মায়ের বুক খালি হবে, চোখের সামনে ধরে নিয়ে যাবে আপন বুকের মানিককে; যার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে এক সময় পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া হয়ে যাবে কিন্তু সে মানিকের আর ফেরা হবে না। বছরের পর বছর ধরে তাদের আটকে রাখা হবে ইসরাইলী বন্দি কারাগারে। শুধুমাত্র বুলেটের বিপরীতে কয়েকটি পাথর নিক্ষেপের কারণেই তাদের এসব শাস্তি ভোগ করতে হবে। নিজ দেশে আজ যারা পরবাসী এরাই দখলদার ইসরাইলীদের চোখে ভয়ংকর সন্ত্রাসী।
ইসরাইলের জারিকৃত বিধি-নিষেধের মধ্যে অন্যতম হল ৫০ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তি আল-আকসা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন না। মসজিদের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে মেটাল ডিডেক্টর। এতে করে যে কেউ মসজিদের ভেতরে ঢুকতে চাইবে তাকে ওই মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশী শেষেই কেবল ঢুকতে হবে। সাথে মসজিদ প্রাঙ্গণে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
আল-আকসা শুধুমাত্র একটি মসজিদেই নয়, মর্যাদার দিক দিয়ে মসজিদে হারমাইন ও মসজিদে নববীর পরেই যার অবস্থান এবং মুসলিম মিল্লাতের প্রথম কিবলাহ। এই মসজিদের উপর হামলা বা বিধিনিষেধ আরোপ করা সমগ্র মুসলিম জাতির সাথে তামাশা করার সামিল। প্রতিটি মুসলমানের উচিত যার যার সাধ্যমত এর প্রতিবাদ করা। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে কুটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা যাতে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ নিয়ে দখলদার ইসরাইল কোন ষড়যন্ত্র চরিতার্থ করতে না পারে।ফিলিস্তিনই পৃথিবীর একমাত্র জনপদ যেখানকার মানুষ পূথিবীর সবচেয়ে অসহায়, নির্যাতিত ও নিপীড়িত। যে ভূখন্ডের মানুষ স্বপ্ন গড়ে শুধু ভাঙ্গার জন্য। যেখানকার শিশুদের সকালের ঘুম ভাঙ্গে বোমা অথবা বুলেটের আওয়াজ শোনে। যারা গত সত্তোর বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে দখলদার ইসরাইলিদের হাতে।
১৪) জাতিসংঘের বিশেষ নিরাপত্তা ক্যাম্প, চিনকারা ফ্যাক্টরি। সেখানে আশ্রিতদের অভয় দেওয়া হয়েছিল তারা সেখানে নিরাপদ। ১২ বছর বয়সী মিনা স্মেইলোভিক আর তাঁর ১৪ বছর বয়সী চাচাত বোন ফাতা স্মেইলোভিক বসে ছিলেন।তাদের দিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের পোশাক পরা কিছু সৈন্যের নজর পড়ে। এই দুই বোন আর সাথে নিজামা অরিক নামে আরও এক যুবতীকে তুলে নিয়ে যায় স্বৈন্যরা। মেয়ে তিনটি কয়েক ঘণ্টা পর ফেরত আসে।তাদের গায়ে কোনও কাপড় ছিল না, দেহজুড়ে আঁচড় আর কামড়ের চিহ্ন ছিল। মাত্র ১২ বছরের মিনা আর ১৪ বছর বয়সী ফাতার লজ্জাস্থান থেকে রক্তপাত হচ্ছিল প্রবলভাবে। এমনকি রক্তাক্ত শরীর ধোয়ার মত পানিও সেখানে ছিল না।
১৫) সেই শহরেরই আরেকটি ঘটনা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে, যারা পাহারায় ছিল নেদারল্যান্ডের শান্তিরক্ষী বাহিনী। জারা তুর্কোভিচ এক রাতের বর্ণনা দেন, তারা আধঘুমে।
চার জন সার্ব সৈন্য তাদের মধ্য থেকে একজন তরুণীকে তুলে নিল, আর কয়েক পা দূরেই ধর্ষণ করতে শুরু করে। দুজন সৈন্য দুই পা ধরেছিল, তৃতীয়জন রেপ করছিল, মেয়েটি যখন প্রচণ্ড কান্নাকাটি আর সাহায্য প্রার্থনা করছিল, তখন সৈন্যরা তাঁর মুখে.......।
জারার ১৯ বছর বয়সী বোন ফাতেমাও সেখানেই ছিল, সে ভয়ে তাঁর বোনের চার সন্তানকে আঁকড়ে ধরে। ফাতেমা বলেছিল, তিনি ভেবে ছিলেন তারা হয়ত একজন মায়ের প্রতি আগ্রহী নাও হতে পারে। কিন্তু ফাতেমাকেও একই কায়দায় ধর্ষণ করা হয়।
পূর্ব বসনিয়ায় পটোকারি শহর ছিল জাতিসংঘের বিশেষ নিরাপত্তা এলাকার অন্তর্গত। সেখানেই এই চিনকারা ফ্যাক্টরি। শুধু কি মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে? তা নয় বরং ছেলে শিশুদের উপরও একইরকম নির্যাতন হয়েছে।
এমন বহু ঘটনার কথা জানা গেছে যখন বেছে বেছে ১০/১১ বছরের বালকদের নিয়ে যাওয়া হত, আর যাদের কখনোই ফিরে পাওয়া যায়নি। আন্দাজ করতে অসুবিধে হয় না, এরা হত্যার আগে বলৎকারের শিকার হয়েছিলেন।
১৬) মুসলমানদের উপর বসনিয়ায় যে ভয়াবহ জাতিগত নিধন চলছিল এর এক পর্যায়ে নানা নাটকের পর জাতিসংঘ সেখানে শান্তিরক্ষী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যেখানে ৩৭ হাজারের বেশি সৈন্য প্রয়োজন ছিল সেখানে মাত্র ৭ হাজারের মত সৈন্য মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যে কার্যকরভাবে মোতায়েন ছিল মাত্র ৩ হাজারের কিছু বেশি সৈন্য।জাতিসংঘ সেব্রেনিকা শহরকে সেফ জোন হিসেবে ঘোষণা করলেও সেখানে ৬ হাজার সৈন্যের প্রয়োজনের বিপরীতে মোতায়েন করেছিল মাত্র কয়েকশ ডাচ শান্তিরক্ষী। সেটাও আবার খুবই সাধারণ অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায়।
সব কিছু সাজানোই ছিল। ফলে কোনও রকম বাঁধা ছাড়াই ডাচ সৈন্যদের একপ্রকার সহায়তায় সেখানে ১১ জুলাই শহরটি দখলে নিয়ে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে সার্বরা।
লাইনে দাঁড়িয়ে হত্যা করে ৮ হাজার মুসলিম যুবক ও নাবালেগ ছেলেদের। অথচ জাতিসংঘের তরফে বলা হয়েছিল এখানে এলে তারা নিরাপত্তা পাবে।অথচ সেই গণহত্যার প্রমাণ থাকা ভিডিও চিত্রটি ধ্বংস করেন সেখানে জাতিসংঘের নিযুক্ত ডাচ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা । এভাবেই খোদ জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে যাবতীয় প্রমাণ লোপাট করা হয়। এই খবরগুলো গোপন কিছু না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, নিউইয়র্ক টাইমস এবং দি ইন্ডিপেনডেন্টের রিপোর্টে এগুলো আলোচনায় এসেছিল।
১৭) পনেরো শতকের শেষে ১৪৯০ সালে বসনিয়াতে যখন উসমানি খিলাফত বিজয়ী বেশে প্রবেশ করে তখন সেখানে মুসলিম ছিল ৯৯ জন। যুদ্ধবর্তী এক বছরেই সে সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৫৪৬ জনে। এমনকি সমগ্র বসনিয়া বিজিত হওয়ার পূর্বেই সেখানকার মুসলিমরা হয়ে উঠে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। সেই বসনিয়াতেই ১৯৯২-৯৫ যুদ্ধে ১ লাখ মুসলিম পুরুষ হত্যার শিকার হয়েছিলেন। আর ২৫ হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছিল। আর ৯৫-এর ১১ জুলাই কেবল একদিনেই হত্যা করা হয়েছিল ৮ হাজার জনকে। বসনিয়ার এই ঘটনা মুসলমানের জন্য পশ্চিমা দুনিয়া আর জাতিসংঘকে বুঝার জন্য যথেষ্ট সহায়ক।
১৮) উল্লেখ করার মত ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৯ সালে পিটার হ্যান্ড নোবেল পেলো সাহিত্যে। ৯০ এর দশকের তামাম সময়টা জুড়েই সে ছিলো সার্বিয়ানদের চালানো এই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে প্রত্যক্ষ প্রচারণা চালানো লোক। ৯৫ এর জুলাইয়ে চালানো হত্যাকাণ্ডের কিছুদিনের মধ্যেই সে লিখতে শুরু করে "A Journey to the Rivers: Justice for Serbia" নামে ভ্রমণ কাহিনী। সেখানে সে সার্বিয়ান দানবদের মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর চালানো গণহত্যাকে অস্বীকার করে।
সে তার লেখালেখি, বক্তৃতা ও আলোচনার মধ্য দিয়ে সার্বিয়ানদের গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অন্যসব জুলুমের লেজিটিমেসি দেন, এডভোকেসি করেন।
এইরকম ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী, সন্ত্রাসের মদদদাতা, গণহত্যার বিস্তারে ভূমিকা পালনকারী, শিশু ধর্ষণ ও খুনের বৈধতাদানকারী এবং প্রত্যক্ষ প্রচারণায় শামিল একজনকে নোবেল দেওয়া হলো সাহিত্যে। যে তার অপরাধের মাধ্যম বানিয়েছিলো সাহিত্যকে।
নোবেল ঘোষণার সময় এইসব কিছুই যে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি- তা কিন্তু কেবল এইজন্যই যে- এই খুন, গণহত্যা, ধর্ষণের শিকার মুসলমানেরা৷ ভিক্টিম মুসলমান না হলে ঠিকই দুনিয়ার সর্বত্র পিটার হ্যান্ড ঘৃণিত থাকতো।শিগগিরই আমরা দেখতে পাব, এই রক্তলুলুপ পিটার হ্যান্ডও মহৎ হয়ে উঠেছে এদেশের পত্রিকায়, সেক্যুলার পাড়ার সাহিত্যাঙ্গণের আলাপে। এই নীল নকশা কাজ আমাদের সমাজেরও চলমান। অবশেষে তাই হলো।
আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের পাঠে, শ্রদ্ধাতেও সে উঠে আসবে। এমনকি উঠেও এসেছে। তার অসংখ্য উত্তরসূরী বাংলায় এখন বুক উচিয়ে চলাফেরা করছে। যারা মুক্তমনা গ্রপের স্থায়ী সদস্য।
যে জাতি কৃতিত্বের বিচার এভাবে করে যে, মুসলমানদের থেকে ইহুদিরা নোবেল বেশি পেয়েছে। সে জাতির জন্য আফসোস ব্যতিত আমাদের অধিক প্রত্যাশার আর কিছুই নেই।আদতে পশ্চিমা সভ্যতার যে স্বরূপ তা মাত্র পঁচিশ বছর আগেও আমরা নগ্নভাবে দেখেছি। এরপরেও আমাদের যে মোহান্ধতা পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতি তা থেকে উত্তরণের কোনো লক্ষণ নেই।
১৯) ফিলিস্তিন এ যেন এক জলন্ত অঙ্গারখানা। সর্বমহলে স্বীকৃত পরাধীন মানুষ এরা।
২০)কাশ্মীর সোমালিয়া মালি এগুলোর ঘটনা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। এরা নিজেরই এক একটা ঘটনা।
প্রিয় ভাই ও বোন!
আজকে ভূমিকা ছাড়াই শুরু করবো। সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। শ্রেষ্ঠ জাতির সস্তা জীবনের কথা শুনতে গিয়ে ভূমিকা পরে সময় নষ্ট করা বিরাট এক অপরাধ। ভাই! আমি কিন্তু বলে নিচ্ছি আজকের আলোচনা ব্যতিক্রম কিছু না। নিত্যদিনই ঘটছে। প্রতিনিয়তই রটছে। রাতের আঁধার আর দিনের আলোতেই ঝরছে। শুরু করি তাহলে! একটু বিবেক খাটিয়ে পড়ুন। বোঝোন। আর উপলদ্ধি করুন।
আমাদের আশপাশে, চোখের সামনে, চোখের অগোচরে। মুসলিমদের সীমারেখার ভিতরে বাহিরে। ইহুদিদের হাতের নাগালে আর দৃষ্টির বাহিরে যেগুলো স্বীকৃত।
১) চার সন্তানের জননী সুপ্রীতি। তিন সন্তান এবং স্বামীকে তার সামনে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেদিন তাকেও বন্দী করা হয় একটা ঘরে। আরও সাতজন নারীর সাথে তিনিও গণধর্ষিত হন। ধর্ষণে বাঁধা দেওয়ার সময়- তার মাথায় বেয়নেট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। আজও তিনি সেই আঘাতের ফলে ঠিকভাবে হাঁটতে-চলতে পারেন না।
২) রাহেনা, মাত্র পনেরো বছর বয়স। দুপুরের খাবার বেড়ে দিচ্ছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকদের। সেনারা অকস্মাৎ গ্রামে ঢুকে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। মেয়েদেরকে মুখে স্কচটেপ প্যাঁচিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে।এরপর একজন একজন করে প্রতিটা মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বেশিরভাগ মেয়েই বেহুঁশ হয়ে যায়। রাহেনাও তাদের একজন ছিলেন। জ্ঞান ফিরতেই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করেন তিনি।
গণধর্ষণের শিকার রাহেনার ভাষ্যে, 'আমার তখনও ভীষণ রক্তপাত হচ্ছিল। গ্রাম পেরুতেই বালির উপর আমার স্বামীর লাশ দেখতে পাই।'
৩) সেদিন ছিল শুক্রবার সকাল, মানসীর গ্রাম সেনারা ঘিরে ফেলে। তার বাবা, তার স্বামী এবং চারবোন মিয়ানমারের সেনাদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে।মানসীর ভাষ্যে, ' ছয়/সাত জন সৈন্য আমাদের ঘরে ঢুকে আমাকে ধর্ষণ করে। আমি অচেতন হয়ে পড়ি। প্রচুর লাশ পড়ে ছিল। অন্তত হাজারখানেক রোহিঙ্গা মুসলমানের লাশ।'
৪) ১৭ বছরের সামিরা। বিয়ের মাত্র তিন-চার মাস পর তার স্বামী মিয়ানমার সেনাদের হাতে হত্যার শিকার হয়। একদিন গ্রামে ঢুকে সৈন্যরা গ্রামের সব পুরুষকে হত্যা করে। স্বজনদের লাশ নিয়ে, অসহায় অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকে নারীরা। এর দুদিন পর তিনজন সৈন্য আমার ঘরে আসে। আরও দুজন রোহিঙ্গা মেয়েকে সাথে এনেছিল ওরা। তিনজন মেয়েই সেদিন গণ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সেদিন।
৫) ১৮ বছরের হামিদা বেগম। বিয়ের মাত্র দুমাস পেরিয়েছে। একদিন প্রায় মধ্যরাতে শয্যাপাশ থেকে তার স্বামীকে নিয়ে যায় সৈন্যরা। ভীত অবস্থায় স্বামীকে ফিরে পেতে আল্লাহ্র কাছে কান্নাকাটি করতে থাকে।রাত তিনটেয় বাইরে থেকে আওয়াজ শুনে ভেবেছিলেন, হয়ত তার স্বামী ফিরে এসেছে। না- এসেছিল তিনজন সৈন্য। পালাক্রমে ভোর পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ করে। প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।
৬) ১৭ বছরের আরেফার সংসার ছিল মাত্র দেড় মাসের। তার স্বামী, যে ছিল তারচে' মাত্র এক বছরের বড়ো-সে মিয়ানমার সৈন্যদের হাতে হত্যার শিকার হয়। স্বামীর লাশটা কোনও মতে দাফন করে বাংলাদেশে ফেরার সময় সে ধর্ষিত হয়।
৭) ১৫ বছরের শফিকা, শিলপাটায় মরিচ বাটছিলেন। হঠাৎ চারদিক থেকে গুলির আওয়াজ। ভয়ে সে দরজা আটকে দিচ্ছিলো। সেইসময় দুজন সৈন্য ঘরে ঢুকে তার মায়ের সামনে তাকে ধর্ষণ করে। সেদিন তার স্বামীও মারা গিয়েছিল।
৮) মরিয়াম, যিনি ১৬ বছরেই স্বামীহারা হয়েছেন। মরিয়মকে সৈন্যরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল।'সৈন্যদের দুজন ধরে রাখত। একজন ধর্ষণ করত। একজন থাকত পাহারায়।'আরও দুজন মেয়েকে মরিয়মের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছিল। একজনের জিহ্বাও কেটে নেওয়া হয়েছিল।
৯) সিএনএনের বরাতে এই গল্পগুলো আমরা জেনেছিলাম। এইরকম অসংখ্য ভয়ানক না বলা বাস্তব গল্প রয়েছে প্রতিটা রোহিঙ্গা নারী পুরুষের। এখানে যে কয়েকজনের কথা বলা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই সেই ধর্ষণের কারণে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন নিজ গর্ভে সন্তান নিয়ে। এই মায়েরা শত্রুর সন্তান গুলোকেও হত্যা করার পথ বেছে নেয়নি। এইরকম হাজার হাজার রোহিঙ্গা মা আছেন।
এ দেশে তারা এসে অধিক সন্তান জন্ম দিচ্ছেন- গণমাধ্যমের এইসব সংবাদের সূত্রে ফেসবুকে অগুনতি ট্রল ও বিদ্রূপ দেখেছি। অথচ সেই প্রত্যেকটা সন্তান তাদের উপর হওয়া অবর্ণনীয় জুলুমের স্মারক। নিঃসন্দেহে আরশের অধিপতি সব মুনাফেকির হিসেব রাখেন। এমনকি হৃদয়ের দূরতম গহ্বরে লুকায়িত অনাচারও তার দৃষ্টির অগোচর নয়।
১০) ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ বছর বয়সী সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সাফুরা জারগারের বাড়িতে এসে তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ২০২০ এর এপ্রিলের ১০ তারিখে তাকে তুলে নিয়ে গেলেও তার জামিনের কোন নামগন্ধ নেই আজো। রমজানের মধ্যে করোনার এই দুঃসময়ে ২১ সপ্তাহের গর্ভবতী সাফোরা জারগার রেহাই পায়নি ৷ তার জামিন নাকচ করে দিয়েছে আদালত! অপরাধ কী ছিলো? ইন্ডিয়ান সরকারের মুসলিম বিরোধী আইনের প্রতিবাদ৷
১১) ইরাকে ৩৫ বছর বয়সী নাবিহাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল । বহনকারী গাড়িতে প্রসব যন্ত্রণায় যখন ছটফট করছিল, হাসপাতালের কাছাকাছি আসতেই পুরো গাড়ী আগুনে জ্বালিয়ে দেয় ইউএস মিলিটারী ।ফিলিস্তিনে ১৪ মাসের সিবা যখন গর্ভবতী মায়ের কোলে ঘুমন্ত, তখন হঠাৎ ইসরাইলী প্লেন বোমা মেরে নিমিষেই তাদের কয়লা বানিয়ে দেয় । গত ১৮ই মে বিবিসি হৃদয়বিদারক নিউজ ছেপেছে । কাবুলের এক হাসপাতালে খাবারের জন্য কাঁদছে অনেক নবজাতক । তাদের মা আমেরিকার নিক্ষিপ্ত বোমায় মৃত । বাচ্চাদেরকে পাউডার দুধ দেয়া হচ্ছিল কিন্তু খাচ্ছে না । খবর পেয়ে আরেক নবজাতকের মা ছুটে আসেন । ফিরোজা ওমর বড় জোর চারটা বাচ্চাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পেরেছিলেন ।
১২) জেরুজালেমের আল-আসবাত গেইটের
নিকট জারজ ইজ্রাঈলী সেনাদের গুলিতে শহীদ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ইয়াদ হাল্লাক্বের করুণ মৃত্যুতে শোকাহত মা। ছেলে শহীদ হবার পর ইয়াদ হাল্লাক্বের শোকাহত মা বলেছিলেন,"সে ছাড়া আমার আর কোন ছেলে নেই।"জারজ ইজ্রাঈলী সেনারা তার কাছে সন্দেহজনক বস্তু আছে সন্দেহ করে এই বর্বরতা চালিয়েছে। পরে জানা যায় তার কাছে একটি খেলনা ছিল। প্রতিদিন এরকম নির্বিচারে হত্যা করে মারা এই জারজদের কেউ স'ন্ত্রাসী বলে না।
১৩) ফিলিস্তিনি বন্দী আয়া আল-খাতিব (৩১) এর ছেলেরা ঈদের দিন প্রথম প্রহরে তাকে দেখতে ই'জ্রাঈলী দামন কারাগারে গিয়েছিল, যেখানে তাদের মা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বন্দী আছেন। তারা বাইরে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল যাতে লিখা ছিলো "
আমরা আপনাকে ভালোবাসি, মা। আপনি যেন প্রতিটিবছর মুক্তি পান।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আল-আকসা মসজিদের ভেতর ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন মুসল্লীরা। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটে। পুলিশ এ সময় মুসল্লীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস, বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকলে বুলেটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই এক যুবক নিহত হন। মসজিদ প্রাঙ্গণে লাঠিচার্জ, কাঁদানের গ্যাস ছুড়ার ফলে আরও ৫শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম তীর ও অন্যান্য জায়গায় ইসরাইলী নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে আরও দু’যুবক নিহত হয়েছেন ওইদিন।
এরপর থেকেই ফিলিস্তিন জুড়ে প্রতিদিনই সংঘর্ষ চলে আসছে পুলিশ ও ইসরাইলী নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সেখানকার অধিবাসিদের। পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশীর নামে হামলা করছে ফিলিস্তিনিদের উপর। এসব বর্বর হামলার হাত থেকে রক্ষা পাননি বৃদ্ধ মহিলা থেকে শুরু করে ছোট্ট শিশু পর্যন্ত। এছাড়া অসংখ্য ফিলিস্তিনি যুবককে গ্রেফতার করেছে ইসরাইলী পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। কতদিন যে ইসরাইলী জেলের গ্লানী টানতে হবে তাদের, তারও কোনো সঠিক হিসেব জানা নেই কারও।
হয়েতা এর সুত্র ধরে আবারো অসংখ্য ফিলিস্তিনি মায়ের বুক খালি হবে, চোখের সামনে ধরে নিয়ে যাবে আপন বুকের মানিককে; যার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে এক সময় পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া হয়ে যাবে কিন্তু সে মানিকের আর ফেরা হবে না। বছরের পর বছর ধরে তাদের আটকে রাখা হবে ইসরাইলী বন্দি কারাগারে। শুধুমাত্র বুলেটের বিপরীতে কয়েকটি পাথর নিক্ষেপের কারণেই তাদের এসব শাস্তি ভোগ করতে হবে। নিজ দেশে আজ যারা পরবাসী এরাই দখলদার ইসরাইলীদের চোখে ভয়ংকর সন্ত্রাসী।
ইসরাইলের জারিকৃত বিধি-নিষেধের মধ্যে অন্যতম হল ৫০ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তি আল-আকসা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন না। মসজিদের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে মেটাল ডিডেক্টর। এতে করে যে কেউ মসজিদের ভেতরে ঢুকতে চাইবে তাকে ওই মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশী শেষেই কেবল ঢুকতে হবে। সাথে মসজিদ প্রাঙ্গণে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
আল-আকসা শুধুমাত্র একটি মসজিদেই নয়, মর্যাদার দিক দিয়ে মসজিদে হারমাইন ও মসজিদে নববীর পরেই যার অবস্থান এবং মুসলিম মিল্লাতের প্রথম কিবলাহ। এই মসজিদের উপর হামলা বা বিধিনিষেধ আরোপ করা সমগ্র মুসলিম জাতির সাথে তামাশা করার সামিল। প্রতিটি মুসলমানের উচিত যার যার সাধ্যমত এর প্রতিবাদ করা। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে কুটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা যাতে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ নিয়ে দখলদার ইসরাইল কোন ষড়যন্ত্র চরিতার্থ করতে না পারে।ফিলিস্তিনই পৃথিবীর একমাত্র জনপদ যেখানকার মানুষ পূথিবীর সবচেয়ে অসহায়, নির্যাতিত ও নিপীড়িত। যে ভূখন্ডের মানুষ স্বপ্ন গড়ে শুধু ভাঙ্গার জন্য। যেখানকার শিশুদের সকালের ঘুম ভাঙ্গে বোমা অথবা বুলেটের আওয়াজ শোনে। যারা গত সত্তোর বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে দখলদার ইসরাইলিদের হাতে।
১৪) জাতিসংঘের বিশেষ নিরাপত্তা ক্যাম্প, চিনকারা ফ্যাক্টরি। সেখানে আশ্রিতদের অভয় দেওয়া হয়েছিল তারা সেখানে নিরাপদ। ১২ বছর বয়সী মিনা স্মেইলোভিক আর তাঁর ১৪ বছর বয়সী চাচাত বোন ফাতা স্মেইলোভিক বসে ছিলেন।তাদের দিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের পোশাক পরা কিছু সৈন্যের নজর পড়ে। এই দুই বোন আর সাথে নিজামা অরিক নামে আরও এক যুবতীকে তুলে নিয়ে যায় স্বৈন্যরা। মেয়ে তিনটি কয়েক ঘণ্টা পর ফেরত আসে।তাদের গায়ে কোনও কাপড় ছিল না, দেহজুড়ে আঁচড় আর কামড়ের চিহ্ন ছিল। মাত্র ১২ বছরের মিনা আর ১৪ বছর বয়সী ফাতার লজ্জাস্থান থেকে রক্তপাত হচ্ছিল প্রবলভাবে। এমনকি রক্তাক্ত শরীর ধোয়ার মত পানিও সেখানে ছিল না।
১৫) সেই শহরেরই আরেকটি ঘটনা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে, যারা পাহারায় ছিল নেদারল্যান্ডের শান্তিরক্ষী বাহিনী। জারা তুর্কোভিচ এক রাতের বর্ণনা দেন, তারা আধঘুমে।
চার জন সার্ব সৈন্য তাদের মধ্য থেকে একজন তরুণীকে তুলে নিল, আর কয়েক পা দূরেই ধর্ষণ করতে শুরু করে। দুজন সৈন্য দুই পা ধরেছিল, তৃতীয়জন রেপ করছিল, মেয়েটি যখন প্রচণ্ড কান্নাকাটি আর সাহায্য প্রার্থনা করছিল, তখন সৈন্যরা তাঁর মুখে.......।
জারার ১৯ বছর বয়সী বোন ফাতেমাও সেখানেই ছিল, সে ভয়ে তাঁর বোনের চার সন্তানকে আঁকড়ে ধরে। ফাতেমা বলেছিল, তিনি ভেবে ছিলেন তারা হয়ত একজন মায়ের প্রতি আগ্রহী নাও হতে পারে। কিন্তু ফাতেমাকেও একই কায়দায় ধর্ষণ করা হয়।
পূর্ব বসনিয়ায় পটোকারি শহর ছিল জাতিসংঘের বিশেষ নিরাপত্তা এলাকার অন্তর্গত। সেখানেই এই চিনকারা ফ্যাক্টরি। শুধু কি মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে? তা নয় বরং ছেলে শিশুদের উপরও একইরকম নির্যাতন হয়েছে।
এমন বহু ঘটনার কথা জানা গেছে যখন বেছে বেছে ১০/১১ বছরের বালকদের নিয়ে যাওয়া হত, আর যাদের কখনোই ফিরে পাওয়া যায়নি। আন্দাজ করতে অসুবিধে হয় না, এরা হত্যার আগে বলৎকারের শিকার হয়েছিলেন।
১৬) মুসলমানদের উপর বসনিয়ায় যে ভয়াবহ জাতিগত নিধন চলছিল এর এক পর্যায়ে নানা নাটকের পর জাতিসংঘ সেখানে শান্তিরক্ষী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যেখানে ৩৭ হাজারের বেশি সৈন্য প্রয়োজন ছিল সেখানে মাত্র ৭ হাজারের মত সৈন্য মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যে কার্যকরভাবে মোতায়েন ছিল মাত্র ৩ হাজারের কিছু বেশি সৈন্য।জাতিসংঘ সেব্রেনিকা শহরকে সেফ জোন হিসেবে ঘোষণা করলেও সেখানে ৬ হাজার সৈন্যের প্রয়োজনের বিপরীতে মোতায়েন করেছিল মাত্র কয়েকশ ডাচ শান্তিরক্ষী। সেটাও আবার খুবই সাধারণ অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায়।
সব কিছু সাজানোই ছিল। ফলে কোনও রকম বাঁধা ছাড়াই ডাচ সৈন্যদের একপ্রকার সহায়তায় সেখানে ১১ জুলাই শহরটি দখলে নিয়ে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে সার্বরা।
লাইনে দাঁড়িয়ে হত্যা করে ৮ হাজার মুসলিম যুবক ও নাবালেগ ছেলেদের। অথচ জাতিসংঘের তরফে বলা হয়েছিল এখানে এলে তারা নিরাপত্তা পাবে।অথচ সেই গণহত্যার প্রমাণ থাকা ভিডিও চিত্রটি ধ্বংস করেন সেখানে জাতিসংঘের নিযুক্ত ডাচ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা । এভাবেই খোদ জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে যাবতীয় প্রমাণ লোপাট করা হয়। এই খবরগুলো গোপন কিছু না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, নিউইয়র্ক টাইমস এবং দি ইন্ডিপেনডেন্টের রিপোর্টে এগুলো আলোচনায় এসেছিল।
১৭) পনেরো শতকের শেষে ১৪৯০ সালে বসনিয়াতে যখন উসমানি খিলাফত বিজয়ী বেশে প্রবেশ করে তখন সেখানে মুসলিম ছিল ৯৯ জন। যুদ্ধবর্তী এক বছরেই সে সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৫৪৬ জনে। এমনকি সমগ্র বসনিয়া বিজিত হওয়ার পূর্বেই সেখানকার মুসলিমরা হয়ে উঠে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। সেই বসনিয়াতেই ১৯৯২-৯৫ যুদ্ধে ১ লাখ মুসলিম পুরুষ হত্যার শিকার হয়েছিলেন। আর ২৫ হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছিল। আর ৯৫-এর ১১ জুলাই কেবল একদিনেই হত্যা করা হয়েছিল ৮ হাজার জনকে। বসনিয়ার এই ঘটনা মুসলমানের জন্য পশ্চিমা দুনিয়া আর জাতিসংঘকে বুঝার জন্য যথেষ্ট সহায়ক।
১৮) উল্লেখ করার মত ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৯ সালে পিটার হ্যান্ড নোবেল পেলো সাহিত্যে। ৯০ এর দশকের তামাম সময়টা জুড়েই সে ছিলো সার্বিয়ানদের চালানো এই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে প্রত্যক্ষ প্রচারণা চালানো লোক। ৯৫ এর জুলাইয়ে চালানো হত্যাকাণ্ডের কিছুদিনের মধ্যেই সে লিখতে শুরু করে "A Journey to the Rivers: Justice for Serbia" নামে ভ্রমণ কাহিনী। সেখানে সে সার্বিয়ান দানবদের মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর চালানো গণহত্যাকে অস্বীকার করে।
সে তার লেখালেখি, বক্তৃতা ও আলোচনার মধ্য দিয়ে সার্বিয়ানদের গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অন্যসব জুলুমের লেজিটিমেসি দেন, এডভোকেসি করেন।
এইরকম ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী, সন্ত্রাসের মদদদাতা, গণহত্যার বিস্তারে ভূমিকা পালনকারী, শিশু ধর্ষণ ও খুনের বৈধতাদানকারী এবং প্রত্যক্ষ প্রচারণায় শামিল একজনকে নোবেল দেওয়া হলো সাহিত্যে। যে তার অপরাধের মাধ্যম বানিয়েছিলো সাহিত্যকে।
নোবেল ঘোষণার সময় এইসব কিছুই যে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি- তা কিন্তু কেবল এইজন্যই যে- এই খুন, গণহত্যা, ধর্ষণের শিকার মুসলমানেরা৷ ভিক্টিম মুসলমান না হলে ঠিকই দুনিয়ার সর্বত্র পিটার হ্যান্ড ঘৃণিত থাকতো।শিগগিরই আমরা দেখতে পাব, এই রক্তলুলুপ পিটার হ্যান্ডও মহৎ হয়ে উঠেছে এদেশের পত্রিকায়, সেক্যুলার পাড়ার সাহিত্যাঙ্গণের আলাপে। এই নীল নকশা কাজ আমাদের সমাজেরও চলমান। অবশেষে তাই হলো।
আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের পাঠে, শ্রদ্ধাতেও সে উঠে আসবে। এমনকি উঠেও এসেছে। তার অসংখ্য উত্তরসূরী বাংলায় এখন বুক উচিয়ে চলাফেরা করছে। যারা মুক্তমনা গ্রপের স্থায়ী সদস্য।
যে জাতি কৃতিত্বের বিচার এভাবে করে যে, মুসলমানদের থেকে ইহুদিরা নোবেল বেশি পেয়েছে। সে জাতির জন্য আফসোস ব্যতিত আমাদের অধিক প্রত্যাশার আর কিছুই নেই।আদতে পশ্চিমা সভ্যতার যে স্বরূপ তা মাত্র পঁচিশ বছর আগেও আমরা নগ্নভাবে দেখেছি। এরপরেও আমাদের যে মোহান্ধতা পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতি তা থেকে উত্তরণের কোনো লক্ষণ নেই।
১৯) ফিলিস্তিন এ যেন এক জলন্ত অঙ্গারখানা। সর্বমহলে স্বীকৃত পরাধীন মানুষ এরা।
২০)কাশ্মীর সোমালিয়া মালি এগুলোর ঘটনা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। এরা নিজেরই এক একটা ঘটনা।