|| সেকুলারিষ্টদের অপরাধসমূহ এবং ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই ||
.
.
বাংলাদেশে সেকুলারিষ্টদের অপরাধ অনেক। সবচেয়ে বড় অপরাধঃ নিরেট মিথ্যাচার। সেটি অতি বিচিত্র ও বীভৎসভাবে। দ্বিতীয় অপরাধঃ মুসলমানদের বিপুল সম্পদহানী, প্রাণহানী, শক্তিহানী ও ইজ্জতহানী। বাংলাদেশকে তারা তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বানিয়ে ছেড়েছে। তৃতীয় অপরাধঃ দুর্বৃত্তির সীমাহীন প্রসার। এবং চতুর্থ অপরাধঃ স্বাধীনতার মুখোশ পড়িয়ে দেশটিকে একনিষ্ঠ গোলামে পরিণত করেছে ভারতের।
বিশ্বের প্রায় দুই শত দেশকে পর পর ৫ বার হারিয়ে বাংলাদেশ যে দুর্বৃত্তিতে শিরোপা পেল সেটিও এই সেকুলারিষ্টদের একক অবদান। দূর্নীতিকে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে ব্যবহার করেছে দেশের রাজনীতি, পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, শিক্ষাব্যবস্থাকে। আগামী হাজারো বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ আর কোন গৌরব নিয়ে না হোক অন্ততঃ এ অর্জন নিয়ে বিশ্ববাসীর স্মৃতিতে প্রবলভাবে বেঁচে থাকবে। আজ পার পেলেও এ অপরাধ নিয়ে শত বছর পরও বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্যই বিচার বসবে।
আগামী দিনের প্রজন্ম অবশ্যই প্রশ্ন তুলবে, “আমাদের পূর্বপুরুষগণ কি এতটাই অযোগ্য ও অপদার্থ ছিল যে এমন দুর্বৃত্তদেরও মাথায় তুলেছিল?”
অবাক বিস্ময়ে আগামী বংশধরেরা এ প্রশ্নও তুলবে, এসব দুর্বৃত্তদের তারা আবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে! নেতা বলে মাথায়ও তুলেছে! তবে অপমান শুধু দেশের অতীত এবং বর্তমানকে নিয়ে নয়, ভয়াবহ দূর্দীন সামনেও। কারণ, এ বিপর্যয়কে ভবিষ্যতে আরো ভয়ানক করার প্রস্তুতি তাদের বিশাল। দেশটির ড্রাইভিং সিটে এখন তারাই। বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানের উপর তাদেরই পুরা দখলদারি। আর বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানটি যাদের দখলে যায় তারাই দখলে নেয় দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতি। পাল্টে যায় তখন সাধারণ মানুষের ধ্যান-ধারণা ও মূল্যবোধ। ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন তার মগজ, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তেমনি হলো বুদ্ধিজীবীগণ।
হাত-পা ও দেহের অন্য অঙ্গগুলো যেমন মগজ থেকে নির্দেশ পায়, তেমনি দেশের রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও প্রশাসন নির্দেশনা পায় বুদ্ধিজীবীদের থেকে। ফলে রাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে দুর্বৃত্তি ঢুকলে দুর্বৃত্তিতে শিরোপা পাওয়াটিই অতিসহজ হয়ে যায়। তখন আযাব আসতেও দেরী হয় না। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও মূল্যবোধের যে ভয়ানক বিপর্যয় সে জন্য দায়ী কি দেশের ভূ-প্রকৃতি বা জলবায়ু? দায়ী কি সাধারণ মানুষ? দেশের উপর তাদের দখলদারি তো সামান্যই। একজন বেহুশ, বিভ্রান্ত বা উদভ্রান্ত মানুষকে দেখে নিশ্চিত বলা যায়, লোকটির মাথা ঠিক নাই। তেমনি দেশের রাজনৈতিক বা নৈতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও। তখনও নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, দেশের বুদ্ধিজীবীরা সঠিক পথে নেই।
বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর উপর সেকুলারিষ্টদের দখলদারি নিছক একাত্তর থেকে নয়, বরং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই। তবে এর আগেও যে তারা ছিল না তা নয়। তবে তাদের জোয়ার বইতে শুরু করে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর। প্যান-ইসলামিক চেতনার জোয়ারের দিন তখন শেষ হয় এবং শুরু হয় লাগাতার ভাটা। আজও সে ভাটার টান শেষ হয়নি।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ইসলামি চেতনার পক্ষের বুদ্ধিজীবীরা ভেবেছিল, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে এবার গণিমতের মালে ভাগ বসাবার পালা। তারা ভূ্লেই গিয়েছিল বা তাদের অজানা ছিল, বুদ্ধিবৃত্তির লড়াই কখনো শেষ হয়না। সীমান্তের লড়াই আপাত শেষ হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই চলে অবিরাম। বরং রুঢ় বাস্তবতা হলো, বিশ্বসংসারে যুদ্ধ কখনই শেষ হয় না। সাময়িক হার-জিতের পর নীরবে আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি চলে মাত্র। এজন্যই যুদ্ধ শেষে কোন দেশেই সেনাসদস্যদের ঘরে পাঠানো হয়না। রাষ্ট্রীয় বাজেটের বিশাল অংশ ব্যয় হয় আরেক যুদ্ধের প্রস্তুত নিতে। আর বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইটি প্রতিদিন চলে সৈনিক প্রতিপালনে মনবল, নৈতিক বল ও আর্থিক বল জোগানের কাজে। তাই বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে পরাজিত হলে রণাঙ্গণে স্বপক্ষে সৈনিক পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
একাত্তরে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছিল। তখন কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে যে সব বাঙালী সৈনিকেরা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় লড়াই করবে বলে কসম খেয়েছিল এবং বহুকোটি টাকা ব্যয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, তাদেরই অনেকে সে চেতনার সাথে সেদিন গাদ্দারী করেছিল। পাকিস্তানী সহযোদ্ধাদের খুন করতে পেরে তারা ততটাই খুশী হয়েছিল যেমন একজন ভারতীয় কা*ফের সৈনিক হয়ে থাকে। অথচ ১৯৪৮ বা ১৯৬৫ সালে সেটি অভাবনীয় ছিল। তাই একাত্তরে পাকিস্তানের পরাজয়টি যতটা না ছিল সামরিক, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক।
সেকুলারিষ্টদের হাতে ইসলামপন্থিদের একই রূপ পরাজয় এসেছিল আরব ভূমিতে ও তুরস্কে। সে পরাজয়ের ফলে নির্মূল হয়েছে ওসমানিয়া খেলাফত। ব্রিটিশ সৈনিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এসব সেকুলারিষ্টরা সেদিন হাজার হাজার মুসলিম হত্যা করেছে। এমনকি মক্কার পবিত্র ভূমিতেও। অখন্ড আরব ভূমিতে তারা জন্ম দিয়েছে বিশটিরও বেশী রাষ্ট্রের। আর এভাবেই সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে যোগসাজসে বিলুপ্ত করে দিয়েছে সে আমলের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের। একাত্তরে তারা বিলুপ্ত করে তৎকালের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে। ফলে মুসলিম উম্মাহর শক্তিহানী করার মিশনে তাদের সফলতা বিশাল। আর তাদের বর্তমান মিশন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে লাগাতর শত্রুশক্তির পদতলে রাখা। আজকের বাংলাদেশ তারই শিকার।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন পড়েনি, প্রয়োজন হয়েছিল প্রকান্ড এক বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের। লড়াইটি ছিল সেকুলারিজমের সাথে প্যান-ইসলামিক চেতনার। ভারতবর্ষে তখন জাতীয়তাবাদী সেকুলার দর্শনের পতাকাবাহী ছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস হিন্দু-মুসলিম মিলে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার ডাক দেয়। কিন্তু মুসলমানের কাছে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই বড় কথা নয়। কলকারখানা গড়া ও রাস্তাঘাট নির্মাণও বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সে রাষ্ট্রে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও মুসলমানের ইহলৌকিক কল্যাণের পাশাপাশি পরকালীন কল্যাণের পথপ্রাপ্তিও সহজ হতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিমদের সাথে মিলে রাষ্ট্র গড়লে সংখ্যালঘু মুসলমানদের সে সুযোগ থাকে না।
১৯৪৭এ পৃথক পাকিস্তান নির্মানের প্রয়োজনীয়তা এতটা প্রকট রূপ নেয় তো একারণেই। ভারতীয় হিন্দুরা বুঝতে ভূল করেনি, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পেলে সেটি হবে সমগ্র বিশ্বে সর্ব বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। তাতে ভারতীয় মুসলমানেরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। তাই ভারত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেনি। মেনে নিতে রাজী ছিল না ব্রিটিশ সরকারও। কিন্তু উপমহাদেশের মুসলমানেরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার চেতনায় এতটাই উজ্জিবীত হয়েছিল যে সে দাবী মেনে না নিলে বিশাল রক্তক্ষয় লড়াই এড়ানো অসম্ভব হতো। ফলে পাকিস্তান দাবীকে মেনে নিতে বাধ্য হয়।
তবে সে সময় চাপের মুখে মেনে নিলেও পাকিস্তানের ভবিষ্যতকে বিপন্ন করতে কোন সুযোগই ভারত হাতছাড়া করেনি। বরং লাগাতার আঘাত হানতে শুরু করে পাকিস্তানের আদর্শিক ভিত্তির উপর তথা প্যান-ইসলামিক দর্শনের উপর। বুদ্ধিবৃত্তিক সে লড়াইয়ে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে সেক্যিউলারিজমকে।
.
.
–নু'য়াইম বিন মুকাররিম
.
.
বাংলাদেশে সেকুলারিষ্টদের অপরাধ অনেক। সবচেয়ে বড় অপরাধঃ নিরেট মিথ্যাচার। সেটি অতি বিচিত্র ও বীভৎসভাবে। দ্বিতীয় অপরাধঃ মুসলমানদের বিপুল সম্পদহানী, প্রাণহানী, শক্তিহানী ও ইজ্জতহানী। বাংলাদেশকে তারা তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বানিয়ে ছেড়েছে। তৃতীয় অপরাধঃ দুর্বৃত্তির সীমাহীন প্রসার। এবং চতুর্থ অপরাধঃ স্বাধীনতার মুখোশ পড়িয়ে দেশটিকে একনিষ্ঠ গোলামে পরিণত করেছে ভারতের।
বিশ্বের প্রায় দুই শত দেশকে পর পর ৫ বার হারিয়ে বাংলাদেশ যে দুর্বৃত্তিতে শিরোপা পেল সেটিও এই সেকুলারিষ্টদের একক অবদান। দূর্নীতিকে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে ব্যবহার করেছে দেশের রাজনীতি, পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, শিক্ষাব্যবস্থাকে। আগামী হাজারো বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ আর কোন গৌরব নিয়ে না হোক অন্ততঃ এ অর্জন নিয়ে বিশ্ববাসীর স্মৃতিতে প্রবলভাবে বেঁচে থাকবে। আজ পার পেলেও এ অপরাধ নিয়ে শত বছর পরও বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্যই বিচার বসবে।
আগামী দিনের প্রজন্ম অবশ্যই প্রশ্ন তুলবে, “আমাদের পূর্বপুরুষগণ কি এতটাই অযোগ্য ও অপদার্থ ছিল যে এমন দুর্বৃত্তদেরও মাথায় তুলেছিল?”
অবাক বিস্ময়ে আগামী বংশধরেরা এ প্রশ্নও তুলবে, এসব দুর্বৃত্তদের তারা আবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে! নেতা বলে মাথায়ও তুলেছে! তবে অপমান শুধু দেশের অতীত এবং বর্তমানকে নিয়ে নয়, ভয়াবহ দূর্দীন সামনেও। কারণ, এ বিপর্যয়কে ভবিষ্যতে আরো ভয়ানক করার প্রস্তুতি তাদের বিশাল। দেশটির ড্রাইভিং সিটে এখন তারাই। বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানের উপর তাদেরই পুরা দখলদারি। আর বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানটি যাদের দখলে যায় তারাই দখলে নেয় দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতি। পাল্টে যায় তখন সাধারণ মানুষের ধ্যান-ধারণা ও মূল্যবোধ। ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন তার মগজ, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তেমনি হলো বুদ্ধিজীবীগণ।
হাত-পা ও দেহের অন্য অঙ্গগুলো যেমন মগজ থেকে নির্দেশ পায়, তেমনি দেশের রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও প্রশাসন নির্দেশনা পায় বুদ্ধিজীবীদের থেকে। ফলে রাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে দুর্বৃত্তি ঢুকলে দুর্বৃত্তিতে শিরোপা পাওয়াটিই অতিসহজ হয়ে যায়। তখন আযাব আসতেও দেরী হয় না। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও মূল্যবোধের যে ভয়ানক বিপর্যয় সে জন্য দায়ী কি দেশের ভূ-প্রকৃতি বা জলবায়ু? দায়ী কি সাধারণ মানুষ? দেশের উপর তাদের দখলদারি তো সামান্যই। একজন বেহুশ, বিভ্রান্ত বা উদভ্রান্ত মানুষকে দেখে নিশ্চিত বলা যায়, লোকটির মাথা ঠিক নাই। তেমনি দেশের রাজনৈতিক বা নৈতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও। তখনও নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, দেশের বুদ্ধিজীবীরা সঠিক পথে নেই।
বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর উপর সেকুলারিষ্টদের দখলদারি নিছক একাত্তর থেকে নয়, বরং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই। তবে এর আগেও যে তারা ছিল না তা নয়। তবে তাদের জোয়ার বইতে শুরু করে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর। প্যান-ইসলামিক চেতনার জোয়ারের দিন তখন শেষ হয় এবং শুরু হয় লাগাতার ভাটা। আজও সে ভাটার টান শেষ হয়নি।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ইসলামি চেতনার পক্ষের বুদ্ধিজীবীরা ভেবেছিল, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে এবার গণিমতের মালে ভাগ বসাবার পালা। তারা ভূ্লেই গিয়েছিল বা তাদের অজানা ছিল, বুদ্ধিবৃত্তির লড়াই কখনো শেষ হয়না। সীমান্তের লড়াই আপাত শেষ হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই চলে অবিরাম। বরং রুঢ় বাস্তবতা হলো, বিশ্বসংসারে যুদ্ধ কখনই শেষ হয় না। সাময়িক হার-জিতের পর নীরবে আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি চলে মাত্র। এজন্যই যুদ্ধ শেষে কোন দেশেই সেনাসদস্যদের ঘরে পাঠানো হয়না। রাষ্ট্রীয় বাজেটের বিশাল অংশ ব্যয় হয় আরেক যুদ্ধের প্রস্তুত নিতে। আর বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইটি প্রতিদিন চলে সৈনিক প্রতিপালনে মনবল, নৈতিক বল ও আর্থিক বল জোগানের কাজে। তাই বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে পরাজিত হলে রণাঙ্গণে স্বপক্ষে সৈনিক পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
একাত্তরে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছিল। তখন কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে যে সব বাঙালী সৈনিকেরা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় লড়াই করবে বলে কসম খেয়েছিল এবং বহুকোটি টাকা ব্যয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, তাদেরই অনেকে সে চেতনার সাথে সেদিন গাদ্দারী করেছিল। পাকিস্তানী সহযোদ্ধাদের খুন করতে পেরে তারা ততটাই খুশী হয়েছিল যেমন একজন ভারতীয় কা*ফের সৈনিক হয়ে থাকে। অথচ ১৯৪৮ বা ১৯৬৫ সালে সেটি অভাবনীয় ছিল। তাই একাত্তরে পাকিস্তানের পরাজয়টি যতটা না ছিল সামরিক, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক।
সেকুলারিষ্টদের হাতে ইসলামপন্থিদের একই রূপ পরাজয় এসেছিল আরব ভূমিতে ও তুরস্কে। সে পরাজয়ের ফলে নির্মূল হয়েছে ওসমানিয়া খেলাফত। ব্রিটিশ সৈনিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এসব সেকুলারিষ্টরা সেদিন হাজার হাজার মুসলিম হত্যা করেছে। এমনকি মক্কার পবিত্র ভূমিতেও। অখন্ড আরব ভূমিতে তারা জন্ম দিয়েছে বিশটিরও বেশী রাষ্ট্রের। আর এভাবেই সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে যোগসাজসে বিলুপ্ত করে দিয়েছে সে আমলের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের। একাত্তরে তারা বিলুপ্ত করে তৎকালের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে। ফলে মুসলিম উম্মাহর শক্তিহানী করার মিশনে তাদের সফলতা বিশাল। আর তাদের বর্তমান মিশন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে লাগাতর শত্রুশক্তির পদতলে রাখা। আজকের বাংলাদেশ তারই শিকার।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন পড়েনি, প্রয়োজন হয়েছিল প্রকান্ড এক বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের। লড়াইটি ছিল সেকুলারিজমের সাথে প্যান-ইসলামিক চেতনার। ভারতবর্ষে তখন জাতীয়তাবাদী সেকুলার দর্শনের পতাকাবাহী ছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস হিন্দু-মুসলিম মিলে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার ডাক দেয়। কিন্তু মুসলমানের কাছে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই বড় কথা নয়। কলকারখানা গড়া ও রাস্তাঘাট নির্মাণও বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সে রাষ্ট্রে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও মুসলমানের ইহলৌকিক কল্যাণের পাশাপাশি পরকালীন কল্যাণের পথপ্রাপ্তিও সহজ হতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিমদের সাথে মিলে রাষ্ট্র গড়লে সংখ্যালঘু মুসলমানদের সে সুযোগ থাকে না।
১৯৪৭এ পৃথক পাকিস্তান নির্মানের প্রয়োজনীয়তা এতটা প্রকট রূপ নেয় তো একারণেই। ভারতীয় হিন্দুরা বুঝতে ভূল করেনি, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পেলে সেটি হবে সমগ্র বিশ্বে সর্ব বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। তাতে ভারতীয় মুসলমানেরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। তাই ভারত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেনি। মেনে নিতে রাজী ছিল না ব্রিটিশ সরকারও। কিন্তু উপমহাদেশের মুসলমানেরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার চেতনায় এতটাই উজ্জিবীত হয়েছিল যে সে দাবী মেনে না নিলে বিশাল রক্তক্ষয় লড়াই এড়ানো অসম্ভব হতো। ফলে পাকিস্তান দাবীকে মেনে নিতে বাধ্য হয়।
তবে সে সময় চাপের মুখে মেনে নিলেও পাকিস্তানের ভবিষ্যতকে বিপন্ন করতে কোন সুযোগই ভারত হাতছাড়া করেনি। বরং লাগাতার আঘাত হানতে শুরু করে পাকিস্তানের আদর্শিক ভিত্তির উপর তথা প্যান-ইসলামিক দর্শনের উপর। বুদ্ধিবৃত্তিক সে লড়াইয়ে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে সেক্যিউলারিজমকে।
.
.
–নু'য়াইম বিন মুকাররিম