তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন-আল্লামা সাইয়েদ কুতুব শহীদ রহ.।
২য় পর্ব।
'' যারা কুফুরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়েছে,আল্লাহ তায়ালা তাদের সকল সৎকাজকে বিপথগামী করে দেবেন,আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে....।'(আয়াত১-৩)
কোনো পূর্ব ঘোষনা বা হুমকি হুশিয়ারী ছাড়া সম্পূর্ণ আকস্মিক আক্রমনের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু করলে যে ধরনের পরিস্হিতির উদ্ভব ঘটে, এই সূরার সূচনাও হয়েছে তদ্রূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে, অনেকটা ভূমিকাহীনভাবে। 'যারা কুফরী করেছে এবং নিজেদেরকে বা অন্যদেরকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে,তাদের যাবতীয় সৎকাজকে আল্লাহ তায়ালা বিপথগামী করে দেবেন'--অর্থাৎ সেগুলোকে তিনি ব্যর্থ ও বিনষ্ট করে দেবেন। তবে এই বিনষ্ট ও বাতিল হওয়াটা একটু সক্রিয় ধরনের। যেন আমরা এই সৎকাজগুলোকে উদভ্রান্তভাবে চলতে চলতে অবশেষে ধংষ ও নষ্ট হয়ে যেতে দেখতে পাই। এই সৎকাজগুলোকে সজীব প্রানীর দেয়া হয়েছে। এখানে এমন একটা যুদ্ধের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যে যুদ্ধে জনগন থেকে সৎকাজগুলোকে এবং সৎকাজগুলো থেকে জনগনকে বিচ্ছিন্ন করা হবে--যার পরিণামে ধংষ ও বিপথগামিতা অনিবার্য হয়ে উঠবে।
মোমেন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য:-----
ধংষ ও নষ্ট হয়ে যাওয়া এই সৎকাজগুলো দ্বারা সম্ভবত সেই সৎকাজগুলোকেই বুঝানো হয়েছে, যার পিছনে কাফেরদের সদুদ্দেশ্য নিহিত থাকে এবং যাকে বাহ্যত মহৎ কাজ বলেই মনে হয়। কিন্তু যেহেতু ঈমান ছাড়া সৎকাজের কোনো মূল্য নেই,তাই এই সদুদ্দেশ্য প্রবণতা নিতান্তই বাহ্যিক ও লোক দেখানো। এর অন্তরালে কোন বাস্তব ও সার পদার্থের অস্তিত্ব থাকে না। কাজের পিছনে যে প্রেরণা ও উদ্দীপনা থাকে, সেটাই আসল বিবেচ্য বিষয় ,কাজের শুধু বাহ্যিক রূপ বিবেচ্য বিষয় নয়। এই বেরওনা ও উদ্দীপনা ভালো হতে পারে। তবে প্রেরণা ও উদ্দীপনায় ভিত্তি ও উৎস যদি ঈমান না হয়, তাহলে তা একটি ক্ষণস্থায়ী ও তাৎক্ষণিক ভাবাবেগ বা হুজুক ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী ভাবাবেগ এমন কোন শাশ্বত আদর্শ জীবন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত নয়, যার চির স্থায়ী পরকালীন জীবনের সাথে বা সৃষ্টি জগতের মূল নিয়ম বা বিধির সাথে যোগসূত্র রয়েছে। সুতরাং যে মূল উৎস থেকে মানব সত্তার উৎপত্তি, তার সাথে মানুষ থাকে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য অপরিহার্য। ঈমান আনার মাধ্যমে তাঁর প্রতিষ্ঠিত হলে মানবসত্তার সকল দিক বিকশিত হবে এবং তার সব রকমের আবেগ অনুভুতির উপর ঈমান এর প্রভাব পড়বে । তখন ঐ ভালো কাজ হবে অর্থবহ ও তাৎপর্যবহ। তখন ঐ ভালো কাজের শুধু সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকবে। তখন ঐ তার ভাল কাজ স্থিতিশীল ও স্থায়ী হবে, আর তখনই তা হবে সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতির অংশ ও অঙ্গ কে সুসংহত কারী ও নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর বিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ,আর তখন ঐ এই ঈমান মুমিনের প্রত্যেকটা কাজ ও প্রত্যেকটা তৎপরতার জন্য এই বিশ্বজগতের অবকাঠামোতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিবে এবং তাকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে।
অপরদিকে যারা ঈমানদার ও সৎ কাজে লিপ্ত এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা কিছু নাজিল হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছে। তা তাদের মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত প্রকৃত সত্য। এখানে দুইবার ঈমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম ঈমানের যদিও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করা ওহীর উপর ঈমান আনা অন্তর্ভুক্ত কিন্তু পরবর্তীতে পুনরায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে তাকে অধিকতর স্বচ্ছতা দান করা হয়েছে এবং তার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রকৃত বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, ওটাই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত একমাত্র প্রকৃত সত্য বিধান, মুমিনের হৃদয়ে সুদৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল, এই ঈমানের পাশাপাশি অবস্থান করে তার সৎ কাজ যা তার বাস্তব জীবনে প্রতিনিয়ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। তারই ফল ও ফসল প্রমাণ করে যে, তার অন্তরে ঈমান রয়েছে এবং তা সর্বক্ষণ তাকে সৎ কাজের প্রেরণা ও উদ্দীপনা যোগাচ্ছে।
সৎকর্মে উদ্দীপ্ত ঈমানদারদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সমস্ত গুনাহ মোচন করে দিবেন। অথচ কাফেরদের কার্যকলাপ সৎকর্ম বলে মনে হলেও তার অবস্থা ঠিক এর বিপরীত সৎ কাজ হলেও তা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে মুমিনদের গুনাহ হলেও তা মাফ করে দেয়া হবে, এ দুটো সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী। একথা বলে বুঝিয়ে দেয়া হলো যে আল্লাহর কাছে ঈমানের মূল্য কত বেশি। শুধু আল্লাহর কাছেই নয় জীবনের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ও ঈমানের মূল্য ও মর্যাদা অত্যাধিক তাই বলা হয়েছে। 'এবং তিনি তাদের মনকে সংশোধন করে দিবেন।'
মনের সংশোধন এত বড় একটা নেয়ামত যে, এর সুফল গুরুত্ব ও মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনা করে এটিকে ঈমানের পরেই স্থান দেয়া হয়েছে মনকে সংশোধন করার তাৎপর্য এই যে, ঈমানের মাধ্যমে পরিপূর্ণ প্রশান্তি বিশ্রাম আত্মবিশ্বাস সন্তোষ ও শান্তি লাভ করে থাকে। মন যখন পরিশুদ্ধ হয় চিন্তা ও চেতনা তখন ও সরল হয় হৃদয় ও বিবেক সন্দেহ ও জড়তা থেকে মুক্ত হয়। স্নায়ু ও অনুভূতি নিখুঁত ও নির্মল হয় এবং শান্তি ও নিরাপত্তার আশ্বাসে মানব সত্তা পুণ্য আস্যস্ত ও সন্তুষ্ট হয় এরপর আর কোন নেয়ামত ও সম্পদ আর কি হতে পারে? বস্তুত এটাই মনুষ্যত্বের উজ্জ্বলতম ও মহাউত্তম স্তর।
মুমিন ও কাফেরের এই বিপরীতধর্মী অবস্থার কারণ কি? এর কারণ কোন স্বজনপ্রীতি নয় এটা কোন কাকতালীয় ঘটনা নয় এবং কোন বিবেচনাহীন স্বেচ্ছাচারিতাও নয়। এর পিছনে শাশ্বত মৌল সত্যের সম্পর্ক রয়েছে। এর পিছনে রয়েছে আল্লাহর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে চলে আসা চিরন্তন প্রাকৃতিক নিয়ম। সত্যকে তিনি সেদিন থেকেই সব কাজের ভিত্তি বানিয়েছেন।
'কেননা কাফেররা বাতিলের অনুসারী আর মুমিনরা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্যের অনুসারী'. এই মহাবিশ্বে বাতিলের কোনো শেকড় নেই, তাই বাতিল ক্ষয়িষ্ণু, ধ্বংসশীল ও ক্ষণস্থায়ী। আর যারা বাতিলের অনুসারী এবং বাতিলের উপর ভিত্তি করে যেসব মতাদর্শের সৃষ্টি হয়েছে তাও মরণশীল ও ধ্বংসশীল। আর কাফেররা যখন বাতিলের অনুসারী তখন তাদের যাবতীয় নেক আমল নষ্ট হতে বাধ্য এবং তার কিছু আর অবশিষ্ট থাকতে পারে না।
অপরদিকে সত্য চিরন্তন ও শাশ্বত সত্যের উপর আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত সত্যের শেকড় গাথা রয়েছে। সমগ্র মহাবিশ্বের পরতে পরতে, গভীর থেকে গভীরে। এজন্য যা কিছুই সত্যের সাথে যুক্ত ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত তা চিরন্তন শাশ্বত ও অবিনশ্বর। আর মুমিন রা যখন সত্যের অনুসারী তখন আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাদের গুনাহ মাফ করবেন এবং তাদের অন্তর আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবেন। বস্তুত সত্য এটা স্পষ্ট জিনিস, সত্য তার স্থায়ী শিকড়ের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তার উপাদানসমূহ অবিনশ্বর। সত্য কখনো ক্ষণস্থায়ী নয় কাকতালীয় নয় এবং আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়।
' এভাবেই আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য তাদের উদাহরণসমূহ তুলে ধরেন।'
আর এভাবেই তাদের জন্য সেই মৌলিক নীতিমালা রচনা করেন যার আলোকে তারা নিজেদেরকে ও নিজেদের কার্যকলাপকে সংগঠিত করে ফলে তারা কোন আদর্শ ও উদাহরণ এর আওতাধীন তা তাদের কাছে পরিচিত ও চিহ্নিত থাকে তারা আদর্শহীন হয় না এবং জীবন-যাপনের মূলনীতি নিয়ে তারা দিশেহারা হয় না।
২য় পর্ব।
'' যারা কুফুরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়েছে,আল্লাহ তায়ালা তাদের সকল সৎকাজকে বিপথগামী করে দেবেন,আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে....।'(আয়াত১-৩)
কোনো পূর্ব ঘোষনা বা হুমকি হুশিয়ারী ছাড়া সম্পূর্ণ আকস্মিক আক্রমনের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু করলে যে ধরনের পরিস্হিতির উদ্ভব ঘটে, এই সূরার সূচনাও হয়েছে তদ্রূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে, অনেকটা ভূমিকাহীনভাবে। 'যারা কুফরী করেছে এবং নিজেদেরকে বা অন্যদেরকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে,তাদের যাবতীয় সৎকাজকে আল্লাহ তায়ালা বিপথগামী করে দেবেন'--অর্থাৎ সেগুলোকে তিনি ব্যর্থ ও বিনষ্ট করে দেবেন। তবে এই বিনষ্ট ও বাতিল হওয়াটা একটু সক্রিয় ধরনের। যেন আমরা এই সৎকাজগুলোকে উদভ্রান্তভাবে চলতে চলতে অবশেষে ধংষ ও নষ্ট হয়ে যেতে দেখতে পাই। এই সৎকাজগুলোকে সজীব প্রানীর দেয়া হয়েছে। এখানে এমন একটা যুদ্ধের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যে যুদ্ধে জনগন থেকে সৎকাজগুলোকে এবং সৎকাজগুলো থেকে জনগনকে বিচ্ছিন্ন করা হবে--যার পরিণামে ধংষ ও বিপথগামিতা অনিবার্য হয়ে উঠবে।
মোমেন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য:-----
ধংষ ও নষ্ট হয়ে যাওয়া এই সৎকাজগুলো দ্বারা সম্ভবত সেই সৎকাজগুলোকেই বুঝানো হয়েছে, যার পিছনে কাফেরদের সদুদ্দেশ্য নিহিত থাকে এবং যাকে বাহ্যত মহৎ কাজ বলেই মনে হয়। কিন্তু যেহেতু ঈমান ছাড়া সৎকাজের কোনো মূল্য নেই,তাই এই সদুদ্দেশ্য প্রবণতা নিতান্তই বাহ্যিক ও লোক দেখানো। এর অন্তরালে কোন বাস্তব ও সার পদার্থের অস্তিত্ব থাকে না। কাজের পিছনে যে প্রেরণা ও উদ্দীপনা থাকে, সেটাই আসল বিবেচ্য বিষয় ,কাজের শুধু বাহ্যিক রূপ বিবেচ্য বিষয় নয়। এই বেরওনা ও উদ্দীপনা ভালো হতে পারে। তবে প্রেরণা ও উদ্দীপনায় ভিত্তি ও উৎস যদি ঈমান না হয়, তাহলে তা একটি ক্ষণস্থায়ী ও তাৎক্ষণিক ভাবাবেগ বা হুজুক ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী ভাবাবেগ এমন কোন শাশ্বত আদর্শ জীবন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত নয়, যার চির স্থায়ী পরকালীন জীবনের সাথে বা সৃষ্টি জগতের মূল নিয়ম বা বিধির সাথে যোগসূত্র রয়েছে। সুতরাং যে মূল উৎস থেকে মানব সত্তার উৎপত্তি, তার সাথে মানুষ থাকে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য অপরিহার্য। ঈমান আনার মাধ্যমে তাঁর প্রতিষ্ঠিত হলে মানবসত্তার সকল দিক বিকশিত হবে এবং তার সব রকমের আবেগ অনুভুতির উপর ঈমান এর প্রভাব পড়বে । তখন ঐ ভালো কাজ হবে অর্থবহ ও তাৎপর্যবহ। তখন ঐ ভালো কাজের শুধু সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকবে। তখন ঐ তার ভাল কাজ স্থিতিশীল ও স্থায়ী হবে, আর তখনই তা হবে সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতির অংশ ও অঙ্গ কে সুসংহত কারী ও নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর বিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ,আর তখন ঐ এই ঈমান মুমিনের প্রত্যেকটা কাজ ও প্রত্যেকটা তৎপরতার জন্য এই বিশ্বজগতের অবকাঠামোতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিবে এবং তাকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে।
অপরদিকে যারা ঈমানদার ও সৎ কাজে লিপ্ত এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা কিছু নাজিল হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছে। তা তাদের মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত প্রকৃত সত্য। এখানে দুইবার ঈমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম ঈমানের যদিও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করা ওহীর উপর ঈমান আনা অন্তর্ভুক্ত কিন্তু পরবর্তীতে পুনরায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে তাকে অধিকতর স্বচ্ছতা দান করা হয়েছে এবং তার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রকৃত বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, ওটাই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত একমাত্র প্রকৃত সত্য বিধান, মুমিনের হৃদয়ে সুদৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল, এই ঈমানের পাশাপাশি অবস্থান করে তার সৎ কাজ যা তার বাস্তব জীবনে প্রতিনিয়ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। তারই ফল ও ফসল প্রমাণ করে যে, তার অন্তরে ঈমান রয়েছে এবং তা সর্বক্ষণ তাকে সৎ কাজের প্রেরণা ও উদ্দীপনা যোগাচ্ছে।
সৎকর্মে উদ্দীপ্ত ঈমানদারদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সমস্ত গুনাহ মোচন করে দিবেন। অথচ কাফেরদের কার্যকলাপ সৎকর্ম বলে মনে হলেও তার অবস্থা ঠিক এর বিপরীত সৎ কাজ হলেও তা বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে মুমিনদের গুনাহ হলেও তা মাফ করে দেয়া হবে, এ দুটো সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী। একথা বলে বুঝিয়ে দেয়া হলো যে আল্লাহর কাছে ঈমানের মূল্য কত বেশি। শুধু আল্লাহর কাছেই নয় জীবনের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ও ঈমানের মূল্য ও মর্যাদা অত্যাধিক তাই বলা হয়েছে। 'এবং তিনি তাদের মনকে সংশোধন করে দিবেন।'
মনের সংশোধন এত বড় একটা নেয়ামত যে, এর সুফল গুরুত্ব ও মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনা করে এটিকে ঈমানের পরেই স্থান দেয়া হয়েছে মনকে সংশোধন করার তাৎপর্য এই যে, ঈমানের মাধ্যমে পরিপূর্ণ প্রশান্তি বিশ্রাম আত্মবিশ্বাস সন্তোষ ও শান্তি লাভ করে থাকে। মন যখন পরিশুদ্ধ হয় চিন্তা ও চেতনা তখন ও সরল হয় হৃদয় ও বিবেক সন্দেহ ও জড়তা থেকে মুক্ত হয়। স্নায়ু ও অনুভূতি নিখুঁত ও নির্মল হয় এবং শান্তি ও নিরাপত্তার আশ্বাসে মানব সত্তা পুণ্য আস্যস্ত ও সন্তুষ্ট হয় এরপর আর কোন নেয়ামত ও সম্পদ আর কি হতে পারে? বস্তুত এটাই মনুষ্যত্বের উজ্জ্বলতম ও মহাউত্তম স্তর।
মুমিন ও কাফেরের এই বিপরীতধর্মী অবস্থার কারণ কি? এর কারণ কোন স্বজনপ্রীতি নয় এটা কোন কাকতালীয় ঘটনা নয় এবং কোন বিবেচনাহীন স্বেচ্ছাচারিতাও নয়। এর পিছনে শাশ্বত মৌল সত্যের সম্পর্ক রয়েছে। এর পিছনে রয়েছে আল্লাহর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে চলে আসা চিরন্তন প্রাকৃতিক নিয়ম। সত্যকে তিনি সেদিন থেকেই সব কাজের ভিত্তি বানিয়েছেন।
'কেননা কাফেররা বাতিলের অনুসারী আর মুমিনরা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্যের অনুসারী'. এই মহাবিশ্বে বাতিলের কোনো শেকড় নেই, তাই বাতিল ক্ষয়িষ্ণু, ধ্বংসশীল ও ক্ষণস্থায়ী। আর যারা বাতিলের অনুসারী এবং বাতিলের উপর ভিত্তি করে যেসব মতাদর্শের সৃষ্টি হয়েছে তাও মরণশীল ও ধ্বংসশীল। আর কাফেররা যখন বাতিলের অনুসারী তখন তাদের যাবতীয় নেক আমল নষ্ট হতে বাধ্য এবং তার কিছু আর অবশিষ্ট থাকতে পারে না।
অপরদিকে সত্য চিরন্তন ও শাশ্বত সত্যের উপর আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত সত্যের শেকড় গাথা রয়েছে। সমগ্র মহাবিশ্বের পরতে পরতে, গভীর থেকে গভীরে। এজন্য যা কিছুই সত্যের সাথে যুক্ত ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত তা চিরন্তন শাশ্বত ও অবিনশ্বর। আর মুমিন রা যখন সত্যের অনুসারী তখন আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাদের গুনাহ মাফ করবেন এবং তাদের অন্তর আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবেন। বস্তুত সত্য এটা স্পষ্ট জিনিস, সত্য তার স্থায়ী শিকড়ের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তার উপাদানসমূহ অবিনশ্বর। সত্য কখনো ক্ষণস্থায়ী নয় কাকতালীয় নয় এবং আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়।
' এভাবেই আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য তাদের উদাহরণসমূহ তুলে ধরেন।'
আর এভাবেই তাদের জন্য সেই মৌলিক নীতিমালা রচনা করেন যার আলোকে তারা নিজেদেরকে ও নিজেদের কার্যকলাপকে সংগঠিত করে ফলে তারা কোন আদর্শ ও উদাহরণ এর আওতাধীন তা তাদের কাছে পরিচিত ও চিহ্নিত থাকে তারা আদর্শহীন হয় না এবং জীবন-যাপনের মূলনীতি নিয়ে তারা দিশেহারা হয় না।