(25) আপনি কি সিরাতে মুস্তাকীম (সঠিক পথ) এর পরিচয় জানতে ইচ্ছুক? (4)
****
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۶۰﴾
নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে।
এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
****
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ (4)
****
5-6)
যাকাত ব্যক্তির হক; দল বা প্রাতিষ্ঠানের নয় এখানে আরেকটি বিষয়ও স্পষ্টভাবে বোঝা গেল যে, যাকাত ব্যক্তির হক। যাকাত কেবলমাত্র ব্যক্তিকেই দেওয়া যায়।
যাকাতের হকদার আটটি খাতের দিকে আবার নজর দেওয়া যাক।
১. ফকীর।
২. মিসকীন।
৩. আমিলীন। অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান আমীরুল মুমিনীনের পক্ষ থেকে যাকাত, উশর ইত্যাদি উসূলের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত (ব্যক্তি)।
৪. আলমুআল্লাফা কুলূবুহুম। অর্থাৎ দুর্বল ঈমানওয়ালা কোনো নওমুসলিম, যার মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য।
৫. আররিক্বাব। অর্থাৎ মুকাতাব (গোলাম) বা (কারো মতে) পূর্ণ দাস (ব্যক্তি)।
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
৭. আল্লাহর রাস্তায় কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদকারী। কারো মতে পাথেয়শূন্য হজ¦যাত্রীও এর অন্তর্ভুক্ত।
৮. মুসাফির ব্যক্তি।
উপরের আটটি খাতের কোনোটিই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক নয়।
সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠান বা জনকল্যাণমুখী কাজ যাকাতের খাত নয়। সেখানে যাকাত দেওয়া যাবে না।
ঐ কাজগুলো হয়ত রাষ্ট্র আঞ্জাম দেবে, নতুবা মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদান থেকে তার ব্যবস্থা করা হবে।
যাকাতের একটি বড় উদ্দেশ্য হল, সমাজের দারিদ্র্র্য বিমোচন। আর সমাজের দরিদ্র গোষ্ঠীর অভাব মোচন তখনই সম্ভব হবে, যদি তাদেরকে সম্পদের মালিক বানিয়ে দেয়া হয়।
রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, হাসপাতাল-স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, পানির কূপ, জলাধার খনন ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজ দ্বারা ধনি-দরিদ্র সব শ্রেণির মানুষ উপকার লাভ করে বটে, কিন্তু তা দরিদ্র শ্রেণির মালিকানাধীন সম্পদ নয়।
তাই যাকাতের অর্থ এসব জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যয় করার কোনোও সুযোগ নেই।
হাদীস শরীফে যাকাত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
সহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
…أَنّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ.
…আল্লাহ তাআলা তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে অতঃপর তাদের গরীবদের তা দেওয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৯৬]
পক্ষান্তরে এই আট খাতের বাইরে কোনো খাতে যাকাতের নিয়তে সমুদয় সম্পদ দিয়ে দিলেও যাকাত আদায় হবে না।
আবু বকর রা. ওমর রা.-এর প্রতি ওসিয়তে বলেন:
مَنْ أَدّى الزَّكَاةَ إلَى غَيْرِ أَهْلِهَا لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ زَكَاةٌ، وَلَوْ تَصَدَّقَ بِالدُّنْيَا جَمِيعِهَا.
যে ব্যক্তি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয় এমন কাউকে যাকাত প্রদান করল তা গ্রহণযোগ্য হবে না; যদিও সে দুনিয়ার সকল সম্পদ দান করে দেয়। Ñআলমুহাল্লা বিল আসার, ইবনে হাযাম ৪/২৭৬, বর্ণনা ৭২১; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৬৯৩৪
******
6)
ফী সাবীলিল্লাহর স্বীকৃত অর্থ বাদ দিয়ে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ জায়েয নয় ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত মুজাহিদ; যা হাদীস-আসার দ্বারা, সাহাবা-তাবেয়ীনের বক্তব্য ও কর্মপন্থা দ্বারা; এবং হাদীস, ফিকহ ও তাফসীরবিশারদ ও মুজতাহিদ ইমামগণের সুস্পষ্ট বক্তব্য দ্বারা সুপ্রমাণিত।
নির্ভরযোগ্য বরাতসহ যার কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কোনো কোনো ফকীহের মতে পাথেয়শূন্য হজে¦ গমনেচ্ছু ব্যক্তিও এতে শামিল আছে।
‘ফী সাবীলিল্লাহ’র পারিভাষিক ও স্বীকৃত অর্থ বাদ দিয়ে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী নির্ধারিত খাতের ব্যক্তিকে যাকাত না দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা জনকল্যাণমূলক কাজে যাকাত আদায় করা কিছুতেই জায়েয হবে না।
‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর শাব্দিক অর্থ যে এখানে উদ্দেশ্য নয় তা তো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
‘সাবীলুল্লাহ’কে ব্যাপক অর্থ ধরে যে কোনো দ্বীনী কর্মকাণ্ডকেই যদি ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর আওতাভুক্ত ধরা যেত তাহলে এর স্বপক্ষে কোনো না কোনো হাদীস-আসার পাওয়া যেত এবং সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে নির্ভরযোগ্য দলীল পাওয়া যেত।
অথচ এর স্বপক্ষে একটি সহীহ হাদীসও নেই।
দ্বিতীয়ত, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র যদি শাব্দিক অর্থই উদ্দেশ্য হত তাহলে যাকাতের ৮টি খাতকে ভিন্ন ভিন্ন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না। কেননা আট খাতের প্রত্যেকটিই শাব্দিক অর্থে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। ফকীর মিসকীনকে দান করা আক্ষরিক অর্থেই ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত।
‘আমিলীন’কে সহযোগিতা করা শাব্দিক অর্থের বিচারে ‘ফী সাবীলিল্লহ’-এর অন্তর্ভুক্ত।
‘মুআল্লাফা কুলূব’, ঋণগ্রস্ত ও নিঃস্ব মুসাফিরকে দান করা সবই শাব্দিক অর্থের বিবেচনায় ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর অন্তর্ভুক্ত।
তাহলে এক কথায়
إنما الصدقات في سبيل الله
বলে দেওয়াই যথেষ্ট ছিল। ভিন্ন ভিন্ন করে আটটি খাত উল্লেখ করার দরকার ছিল না।
তৃতীয়ত, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’কে যদি শাব্দিক অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে আয়াতের বাকি যে খাতগুলো রয়েছে সবগুলোরইও তো শাব্দিক অর্থ রয়েছে। ঐগুলোর শাব্দিক অর্থ কেন ধরা হবে না?
যেমন, ‘ইবনুস সাবীল’। এর অর্থ হল, পথিক। শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হলে যে কোনো পথিককেই যাকাত দেওয়া যাবে। অথচ এটা যে অগ্রহণযোগ্য এবং বাতিল কথা তা তো বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
কেননা ‘ইবনুস সাবীল’ শরীয়ত তথা কুরআন-সুুন্নাহর একটি পরিভাষা। এটা শরীয়ত কতৃর্ক স্বীকৃত এবং এর গণ্ডি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। ঐ আওতার বাইরে গেলে কুরআন-সুন্নাহর পরিভাষা ও অর্থের বিকৃতি অনিবার্য। যা কোনোক্রমেই জায়েয নয়।
অনুরূপ ‘আলগারিমীন’-এর শাব্দিক অর্থ ঋণগ্রস্ত। এ অর্থে সকল ঋণগ্রস্তই যাকাতের অধিকারী হয়ে যায়।
কোটিপতি ঋণখেলাপি ব্যক্তিও তখন এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তদ্রুপ যার কাছে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু পাওনা পরিশোধ করছে না সেও যাকাত গ্রহণ করতে পারবে।
কেননা সেও তো ঋণগ্রস্ত; তার কাছেও লোকজন ঋণের টাকা পাবে। এভাবে প্রতিটি খাতের শাব্দিক অর্থ ধরা হলে অধিকাংশ মানুষ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বিবেচিত হবে।
অথচ এটা যে সম্পূর্ণ বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য কথা তা ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র শাব্দিক অর্থের প্রবক্তারাও স্বীকার করেন।
তদ্রুপ إنما الصدقات -এর মধ্যে ‘সাদাকাত’ শব্দটিই ধরুন। এর শাব্দিক অর্থ দান-খয়রাত। এখানে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হলে নফল-ফরয সব ধরনের দান-খয়রাত অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নফল দান-খয়রাতের খাতও আটটির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। এটা যে বাতিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বরং এখানে সাদাকাতের পারিভাষিক অর্থই উদ্দেশ্য।
তা হল, যাকাত ও ফরয সদকা।
পারিভাষিক ও সালাফের নিকট স্বীকৃত অর্থ বর্জন করে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হলে কুরআন মাজীদের অর্থ ও মর্ম বিকৃত হয়ে যাবে, যা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
সংক্ষিপ্তভাবে এখানে তিনটি উদাহরণ দেখানো হয়েছে। অন্যথায় আটটি খাতের প্রত্যেকটিতেই শাব্দিক অর্থ ও পারিভাষিক অর্থের এই পার্থক্য বিদ্যমান।
এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ ও স্বীকৃত কথা যে, কুরআন মাজিদের কোনো আয়াতের অর্থ ও মর্ম যা নবীযুগ, ছাহাবা যুগ তথা খাইরুল কুরূনে সালাফের নিকট স্বীকৃত ও নির্ধারিত ছিল তার অনুসরণ জরুরি।
এক্ষেত্রে হাদীস-আসারের বর্ণনা এবং সাহাবা-তাবেয়ীন ও মুজতাহিদ ইমামগণের কুরআন-সুন্নাহসম্মত ফাহ্ম ও বুঝের বাইরে গিয়ে নতুন কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ গ্রহণযোগ্য নয়।
Aaকেউ করলে তা প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
*****
****
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۶۰﴾
নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে।
এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
****
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ (4)
****
5-6)
যাকাত ব্যক্তির হক; দল বা প্রাতিষ্ঠানের নয় এখানে আরেকটি বিষয়ও স্পষ্টভাবে বোঝা গেল যে, যাকাত ব্যক্তির হক। যাকাত কেবলমাত্র ব্যক্তিকেই দেওয়া যায়।
যাকাতের হকদার আটটি খাতের দিকে আবার নজর দেওয়া যাক।
১. ফকীর।
২. মিসকীন।
৩. আমিলীন। অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান আমীরুল মুমিনীনের পক্ষ থেকে যাকাত, উশর ইত্যাদি উসূলের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত (ব্যক্তি)।
৪. আলমুআল্লাফা কুলূবুহুম। অর্থাৎ দুর্বল ঈমানওয়ালা কোনো নওমুসলিম, যার মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য।
৫. আররিক্বাব। অর্থাৎ মুকাতাব (গোলাম) বা (কারো মতে) পূর্ণ দাস (ব্যক্তি)।
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
৭. আল্লাহর রাস্তায় কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদকারী। কারো মতে পাথেয়শূন্য হজ¦যাত্রীও এর অন্তর্ভুক্ত।
৮. মুসাফির ব্যক্তি।
উপরের আটটি খাতের কোনোটিই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক নয়।
সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠান বা জনকল্যাণমুখী কাজ যাকাতের খাত নয়। সেখানে যাকাত দেওয়া যাবে না।
ঐ কাজগুলো হয়ত রাষ্ট্র আঞ্জাম দেবে, নতুবা মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদান থেকে তার ব্যবস্থা করা হবে।
যাকাতের একটি বড় উদ্দেশ্য হল, সমাজের দারিদ্র্র্য বিমোচন। আর সমাজের দরিদ্র গোষ্ঠীর অভাব মোচন তখনই সম্ভব হবে, যদি তাদেরকে সম্পদের মালিক বানিয়ে দেয়া হয়।
রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, হাসপাতাল-স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, পানির কূপ, জলাধার খনন ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজ দ্বারা ধনি-দরিদ্র সব শ্রেণির মানুষ উপকার লাভ করে বটে, কিন্তু তা দরিদ্র শ্রেণির মালিকানাধীন সম্পদ নয়।
তাই যাকাতের অর্থ এসব জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যয় করার কোনোও সুযোগ নেই।
হাদীস শরীফে যাকাত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
সহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
…أَنّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ.
…আল্লাহ তাআলা তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে অতঃপর তাদের গরীবদের তা দেওয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৯৬]
পক্ষান্তরে এই আট খাতের বাইরে কোনো খাতে যাকাতের নিয়তে সমুদয় সম্পদ দিয়ে দিলেও যাকাত আদায় হবে না।
আবু বকর রা. ওমর রা.-এর প্রতি ওসিয়তে বলেন:
مَنْ أَدّى الزَّكَاةَ إلَى غَيْرِ أَهْلِهَا لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ زَكَاةٌ، وَلَوْ تَصَدَّقَ بِالدُّنْيَا جَمِيعِهَا.
যে ব্যক্তি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয় এমন কাউকে যাকাত প্রদান করল তা গ্রহণযোগ্য হবে না; যদিও সে দুনিয়ার সকল সম্পদ দান করে দেয়। Ñআলমুহাল্লা বিল আসার, ইবনে হাযাম ৪/২৭৬, বর্ণনা ৭২১; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৬৯৩৪
******
6)
ফী সাবীলিল্লাহর স্বীকৃত অর্থ বাদ দিয়ে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ জায়েয নয় ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত মুজাহিদ; যা হাদীস-আসার দ্বারা, সাহাবা-তাবেয়ীনের বক্তব্য ও কর্মপন্থা দ্বারা; এবং হাদীস, ফিকহ ও তাফসীরবিশারদ ও মুজতাহিদ ইমামগণের সুস্পষ্ট বক্তব্য দ্বারা সুপ্রমাণিত।
নির্ভরযোগ্য বরাতসহ যার কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কোনো কোনো ফকীহের মতে পাথেয়শূন্য হজে¦ গমনেচ্ছু ব্যক্তিও এতে শামিল আছে।
‘ফী সাবীলিল্লাহ’র পারিভাষিক ও স্বীকৃত অর্থ বাদ দিয়ে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী নির্ধারিত খাতের ব্যক্তিকে যাকাত না দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা জনকল্যাণমূলক কাজে যাকাত আদায় করা কিছুতেই জায়েয হবে না।
‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর শাব্দিক অর্থ যে এখানে উদ্দেশ্য নয় তা তো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
‘সাবীলুল্লাহ’কে ব্যাপক অর্থ ধরে যে কোনো দ্বীনী কর্মকাণ্ডকেই যদি ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর আওতাভুক্ত ধরা যেত তাহলে এর স্বপক্ষে কোনো না কোনো হাদীস-আসার পাওয়া যেত এবং সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে নির্ভরযোগ্য দলীল পাওয়া যেত।
অথচ এর স্বপক্ষে একটি সহীহ হাদীসও নেই।
দ্বিতীয়ত, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র যদি শাব্দিক অর্থই উদ্দেশ্য হত তাহলে যাকাতের ৮টি খাতকে ভিন্ন ভিন্ন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না। কেননা আট খাতের প্রত্যেকটিই শাব্দিক অর্থে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। ফকীর মিসকীনকে দান করা আক্ষরিক অর্থেই ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত।
‘আমিলীন’কে সহযোগিতা করা শাব্দিক অর্থের বিচারে ‘ফী সাবীলিল্লহ’-এর অন্তর্ভুক্ত।
‘মুআল্লাফা কুলূব’, ঋণগ্রস্ত ও নিঃস্ব মুসাফিরকে দান করা সবই শাব্দিক অর্থের বিবেচনায় ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর অন্তর্ভুক্ত।
তাহলে এক কথায়
إنما الصدقات في سبيل الله
বলে দেওয়াই যথেষ্ট ছিল। ভিন্ন ভিন্ন করে আটটি খাত উল্লেখ করার দরকার ছিল না।
তৃতীয়ত, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’কে যদি শাব্দিক অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে আয়াতের বাকি যে খাতগুলো রয়েছে সবগুলোরইও তো শাব্দিক অর্থ রয়েছে। ঐগুলোর শাব্দিক অর্থ কেন ধরা হবে না?
যেমন, ‘ইবনুস সাবীল’। এর অর্থ হল, পথিক। শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হলে যে কোনো পথিককেই যাকাত দেওয়া যাবে। অথচ এটা যে অগ্রহণযোগ্য এবং বাতিল কথা তা তো বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
কেননা ‘ইবনুস সাবীল’ শরীয়ত তথা কুরআন-সুুন্নাহর একটি পরিভাষা। এটা শরীয়ত কতৃর্ক স্বীকৃত এবং এর গণ্ডি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। ঐ আওতার বাইরে গেলে কুরআন-সুন্নাহর পরিভাষা ও অর্থের বিকৃতি অনিবার্য। যা কোনোক্রমেই জায়েয নয়।
অনুরূপ ‘আলগারিমীন’-এর শাব্দিক অর্থ ঋণগ্রস্ত। এ অর্থে সকল ঋণগ্রস্তই যাকাতের অধিকারী হয়ে যায়।
কোটিপতি ঋণখেলাপি ব্যক্তিও তখন এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তদ্রুপ যার কাছে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু পাওনা পরিশোধ করছে না সেও যাকাত গ্রহণ করতে পারবে।
কেননা সেও তো ঋণগ্রস্ত; তার কাছেও লোকজন ঋণের টাকা পাবে। এভাবে প্রতিটি খাতের শাব্দিক অর্থ ধরা হলে অধিকাংশ মানুষ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বিবেচিত হবে।
অথচ এটা যে সম্পূর্ণ বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য কথা তা ‘ফী সাবীলিল্লাহ’র শাব্দিক অর্থের প্রবক্তারাও স্বীকার করেন।
তদ্রুপ إنما الصدقات -এর মধ্যে ‘সাদাকাত’ শব্দটিই ধরুন। এর শাব্দিক অর্থ দান-খয়রাত। এখানে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হলে নফল-ফরয সব ধরনের দান-খয়রাত অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নফল দান-খয়রাতের খাতও আটটির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। এটা যে বাতিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বরং এখানে সাদাকাতের পারিভাষিক অর্থই উদ্দেশ্য।
তা হল, যাকাত ও ফরয সদকা।
পারিভাষিক ও সালাফের নিকট স্বীকৃত অর্থ বর্জন করে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হলে কুরআন মাজীদের অর্থ ও মর্ম বিকৃত হয়ে যাবে, যা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
সংক্ষিপ্তভাবে এখানে তিনটি উদাহরণ দেখানো হয়েছে। অন্যথায় আটটি খাতের প্রত্যেকটিতেই শাব্দিক অর্থ ও পারিভাষিক অর্থের এই পার্থক্য বিদ্যমান।
এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ ও স্বীকৃত কথা যে, কুরআন মাজিদের কোনো আয়াতের অর্থ ও মর্ম যা নবীযুগ, ছাহাবা যুগ তথা খাইরুল কুরূনে সালাফের নিকট স্বীকৃত ও নির্ধারিত ছিল তার অনুসরণ জরুরি।
এক্ষেত্রে হাদীস-আসারের বর্ণনা এবং সাহাবা-তাবেয়ীন ও মুজতাহিদ ইমামগণের কুরআন-সুন্নাহসম্মত ফাহ্ম ও বুঝের বাইরে গিয়ে নতুন কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ গ্রহণযোগ্য নয়।
Aaকেউ করলে তা প্রত্যাখ্যাত ও অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
*****