Announcement

Collapse
No announcement yet.

(26) আপনি কি সিরাতে মুস্তাকীম ( সঠিক পথ) এর পরিচয় জানতে ইচ্ছুক?(5)

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • (26) আপনি কি সিরাতে মুস্তাকীম ( সঠিক পথ) এর পরিচয় জানতে ইচ্ছুক?(5)

    (26) আপনি কি সিরাতে মুস্তাকীম (সঠিক পথ) এর পরিচয় জানতে ইচ্ছুক? (5)

    اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۶۰﴾
    নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে।
    এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।


    ****
    ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ (5)
    ****

    7-8)

    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. চমৎকার বলেছেন:

    وفي الجملة
    من عدل عن مذاهب الصحابة والتابعين وتفسيرهم إلى ما يخالف ذلك كان مخطئا في ذلك، بل مبتدعا، وإن كان مجتهدا مغفورا له خطؤه. ونحن نعلم أن القرآن قرأه الصحابة والتابعون وتابعوهم، وأنهم كانوا أعلم بتفسيره ومعانيه، كما أنهم أعلم بالحق الذي بعث الله به رسوله صلى الله عليه وسلم، فمن خالف قولهم وفسر القرآن بخلاف تفسيرهم فقد أخطأ في الدليل والمدلول جميعا.

    মোটকথা, যে ব্যক্তি সাহাবা-তাবেয়ীনের মত ও পথ এবং তাদের তাফসীর ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে সরে ভিন্ন কিছু গ্রহণ করে সে এক্ষেত্রে ভুলের উপর আছে; বরং সে মুবতাদি‘ অর্থাৎ বিদআতের শিকার।
    …আর আমরা জানি যে, সাহাবা-তাবেয়ীন এবং তাবে তাবেয়ীন কুরআন পড়েছেন। তাঁরা কুরআনের তাফসীর, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও অর্থ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন। যেমনি তারা ঐ সত্য সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞান রাখতেন, যে সত্য দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন। অতএব যে ব্যক্তি তাদের মতের বিরোধিতা করল এবং তাদের তাফসীরের বিপরীত তাফসীর করল সে নিঃসন্দেহে দলীল ও মর্ম উভয় ক্ষেত্রেই ভুলের শিকার হল। (আলমুকাদ্দিমা ফী উসূলিত তাফসীর, পৃ. ২৪)
    মনে রাখতে হবে, দ্বীনী কাজে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতের কাজ।
    কিন্তু তা হতে হবে শরীয়তবর্ণিত পন্থায়। আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতার সবকিছুই ফরয সদকা তথা যাকাত দিয়ে করা যাবে না।

    যাকাত কেবলমাত্র এর নির্ধারিত খাতেই ব্যয় করা যাবে। যে খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না সেখানে কোনো বিচ্ছিন্ন মত গ্রহণ করে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা সঠিক কাজ নয়।

    আবু বকর রা. ওমর রা.-এর প্রতি ওসিয়তে বলেন:
    مَنْ أَدَّى الزَّكَاةَ إلَى
    غَيْرِ أَهْلِهَا لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ زَكَاةٌ، وَلَوْ تَصَدَّقَ بِالدُّنْيَا جَمِيعِهَا.


    যে ব্যক্তি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয় এমন কাউকে যাকাত প্রদান করল তা গ্রহণযোগ্য হবে না; যদিও সে দুনিয়ার সকল সম্পদ দান করে দেয়। [আলমুহাল্লা বিল আসার, ইবনে হাযাম ৪/২৭৬, বর্ণনা ৭২১; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৬৯৩৪]

    দ্বীনী প্রয়োজন পূরণের জন্য এসব ক্ষেত্রে সাধারণ দান-সদকার পথ তো খোলাই আছে। সে পথই অবলম্বন করতে হবে।
    এটিই ছিল সালাফের যুগের কর্মপন্থা, যার অনুসরণ আমাদের কর্তব্য। যাকাতের অর্থ দিয়ে মসজিদ–মাদরাসা নির্মাণ, স্কুল–কলেজ, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও জলাধার–কূপ ইত্যাদি খনন জায়েয নয় একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জনসাধারণের জন্য রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, মসজিদ নির্মাণ, সুপেয় পানি বা জলাধারের ব্যবস্থা করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ এবং সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এ কাজ ফরয সদকা তথা যাকাতের অর্থ দিয়ে করার সুযোগ নেই।

    এ ধরনের জনকল্যাণধর্মী কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করলে যাকাত যে আদায় হবে না এবিষয়ে মুজতাহিদ ইমাম ও ফিকহবিশারদদের মতামত উল্লেখ করা হল।
    দ্বিতীয়-তৃতীয় শতাব্দীর মুজতাহিদ ইমাম আবু উবাইদ কাসেম ইবনে সাল্লাম রাহ. (জন্ম : ১৫৭ হি.-মৃত্যু : ২২৪ হি.) বলেন

    فأما قضاء الدين عن الميت، والعطية في كفنه، وبنيان المساجد، واحتفار الأنهار، وما أشبه ذلك من أنواع البر، فإن سفيان وأهل العراق وغيرهم من العلماء يجمعون على أن ذلك لا يجزئ من الزكاة؛ لأنه ليس من الأصناف الثمانية.

    মৃতের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ, মাইয়েতের কাফনের খরচ, মসজিদ নির্মাণ ও খাল খননÑ এজাতীয় পুণ্যের কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা হলে যাকাত আদায় হবে না।
    এ বিষয়ে সুফিয়ান রাহ. এবং ইরাক ও অন্যান্য অঞ্চলের ফকীহগণ একমত। কেননা এসকল খাত যাকাতের ৮টি খাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। [কিতাবুল আমওয়াল, বর্ণনা ১৯৮০]


    ইমাম কাসানী রাহ. বলেন:

    صرف الزكاة إلى وجوه البر من بناء المساجد، والرباطات، والسقايات، وإصلاح القناطر، وتكفين الموتى ودفنهم أنه لايجوز.

    যাকাতের অর্থে জনকল্যাণমূলক কাজ করা, যেমন মসজিদ নির্মাণ, সরাইখানা ও জলাধার নির্মাণ এবং পোল মেরামত ও মৃতের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা জায়েয নয়। [বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪২]

    ইবনে কুদামা রাহ. বলেন:

    ولا يجوز صرف الزكاة إلى غير من ذكر الله تعالى، من بناء المساجد، والقناطر، والسقايات، وإصلاح الطرقات وسد البثوق، وتكفين الموتى، …وأشباه ذلك من القرب التي لم يذكرهاالله تعالى.

    আর আল্লাহ তাআলা যেসব খাতের কথা উল্লেখ করেননি সেসব খাতে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়।
    যেমন মসজিদ নির্মাণ, পুল নির্মাণ, জলাধার তৈরি করা, রাস্তা মেরামত ও বাঁধ নির্মাণ কিংবা মৃতের কাফনের ব্যবস্থা করা …এ জাতীয় সওয়াবের কাজ, যাকাতের খাতের আলোচনায় আল্লাহ তাআলা যার উল্লেখ করেননি। [আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৪/১২৫]


    জনকল্যাণমূলক কাজে যাকাত আদায় না হওয়ার কারণ হল, যাকাত ব্যক্তির হক।

    সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

    تؤخذ من أغنيائهم فترد على فقرائهم

    ‘মুসলমানদের সম্পদশালীদের থেকে যাকাত গ্রহণ করা হবে। অতঃপর তাদের গরীবদের তা দেওয়া হবে।’ Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৯৬

    সুতরাং যাকাত আদায়ের জন্য ব্যক্তিকে যাকাতের অর্থের সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দিতে হবে। যেন যাকাতের সম্পদে তার একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে যে, সে চাইলে তা নিজে ভোগ করতে পারে, চাইলে সে বিক্রিও করে দিতে পারে, আবার কাউকে দানও করে দিতে পারে। এভাবে মালিক বানিয়ে দিলে যাকাত আদায় হবে।

    পক্ষান্তরে মালিকানা নিজের কাছে রেখে বা যাকাতের অর্থ দ্বারা জনকল্যাণমূলক কাজ করে, যেমন জলাধার বানিয়ে বা রাস্তা মেরামত করে বা প্রতিষ্ঠান করে দিয়ে তা থেকে উপকার ভোগ করার অনুমতি দিয়ে দিলেও যাকাত আদায় হবে না।
    কেননা এর দ্বারা যাকাতের সম্পদে ব্যক্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না।


    ********

    8)


    সমকালীন আরব শায়েখদের ফতোয়া মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলে শায়েখ– (মৃত্যু : ১৩৮৯ হি.) –এর ফতোয়া যাকাত সম্পর্কে তৎকালীন সৌদী বাদশাহর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন

    إن صرف الزكاة للمساجد والأعمال الخيرية مما لا ينطوي تحت الأصناف الثمانية التي ذكرها الله تعالى وحصر صرف الزكاة فيها لا يجوز.

    মসজিদ এবং জনকল্যাণমূলক কাজÑ যা কিনা আল্লাহ নির্ধারিত সেই আটটি খাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। যাকাত প্রদানকে তিনি যার মাঝে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন এসব ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা জায়েয হবে না। [ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলে শায়েখ, ফতোয়া নং ১০৭০]


    শায়েখ বিন বায রাহ.–এর ফতোয়া এক প্রশ্নের উত্তরে শায়েখ বিন বায রাহ. বলেন:

    الصحيح أن المراد بقوله سبحانه: وفي سبيل الله عند أهل العلم هم الغزاة والجهاد في سبيل الله، فلا تصرف في المساجد ولا المدارس عند جمهور أهل العلم. وذهب بعض المتأخرين إلى جواز صرفها في المشاريع الخيرية، ولكنه قول مرجوح؛ لأنه يخالف ما دلت عليه الأدلة، ويخالف ما مضى عليه أهل العلم.

    আলেমগণের নিকট সঠিক কথা হল, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীগণ।
    অতএব জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতানুযায়ী যাকাত মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণে ব্যয় করা যাবে না।
    পরবতীর্দের কেউ কেউ জনকল্যাণমূলক কাজে যাকাত ব্যয় করাকে জায়েয বলেছেন। কিন্তু এটি একটি অগ্রহণযোগ্য কথা।
    কেননা এ কথা দলীল-পরিপন্থী এবং পূর্ববতীর্ আহলে ইলমের মতের বিপরীত। [মাজমূউ ফাতাওয়া বিন বায ১৪/২৯৭]


    তিনি আরেক ফতোয়ায় বলেছেন:

    “وفي سبيل الله” تختص بالجهاد، هذا هو المعروف عند أهل العلم وليس من ذلك صرفه في تعمير المساجد، ولا في تعمير المدارس، ولا الطرق ولا نحو ذلك. والله ولي التوفيق.

    ‘আর ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ জিহাদের সাথে খাস। এটা আহলে ইলমের নিকট স্বীকৃত কথা। মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ ও রাস্তা ঘাট ইত্যাদি নিমার্ণে যাকাতের অর্থ খরচ করা জায়েয নয়’। আল্লাহই তাওফীকদাতা।

    মাজমূউ ফাতাওয়া বিন বায ১৪/২৯৪ শায়েখ উসাইমীন রাহ.–এর ফতোয়া শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আলউসাইমীন রাহ. বলেছেন:

    السابع: في سبيل الله، و”سبيل الله” هنا المراد به الجهاد في سبيل الله لا غير، ولا يصح أن يراد به جميع سبل الخير؛ لأنه لو كان المراد به جميع سبل الخير لم يكن للحصر فائدة في قوله تعالى: اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْعٰمِلِیْنَ عَلَیْهَا وَ الْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الْغٰرِمِیْنَ وَ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ فَرِیْضَةً مِّنَ اللهِ وَ اللهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ.

    সপ্তম নাম্বার হল, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’।

    আর এখানে ‘সাবীলুল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, অন্য কিছু নয়। এর দ্বারা সকল কল্যাণমূলক কাজ উদ্দেশ্য নেওয়া সহীহ নয়। কেননা এর দ্বারা যদি সকল কল্যাণমূলক কাজ উদ্দেশ্য হয় তাহলে
    اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَ الْمَسٰكِیْنِ …

    এই আয়াতে যাকাতের খাতকে আটটিতে সীমাবদ্ধ করার কোনো অর্থ থাকে না। [মাজমূউ ফাতাওয়া উসাইমীন ১৮/৩৩৬]
    ****
Working...
X